আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্যক্তিগত স্বীকারোক্তি

নিজের সম্পর্কে লেখার কিছু নেই । সাদামাটা । ব্যক্তিগত স্বীকারোক্তি (কবি নির্মলেন্দু গুন কে – তার কাছে ঋণী বলে ) আমি পালাতে চাই আশৈশব পলাতক কোনও আশ্চর্য্য যুবকের মতো ‘ভালোবাসা – ভালোবাসা’ বলে রৌদ্রময় কারো বুকের ভেতর, সেঁধিয়ে যেতে চাই পরম বিশ্বাসে। কোনও শায়ক বেঁধা পাখির মতোন যেতে চাই শীতল মরনের ভেতর । অথচ পারিনা আপনারা জানেন না কী দুর্বিসহ জ্বালায় পুনঃপৌনিক লোকালয়ে ফিরে যেতে হয় আমায় ।

“বনানী … বনানী” বলে যে বাসটা আজীবন লক্ষ্যভেদ করে ফেলে নির্ভুল গন্তব্যের আমি তার আগেই মধ্যপথে নেমে পড়ি কোথাও কোনও বাঁকে ক্রুশবিদ্ধ যীশুর মতোন নগ্নপদে হেটে যাই চোখের যমজ পেন্ডুলামে অলিখিত গন্তব্যকে ধরে রেখে। বগলের নীচে রাখা কারো ফেলে যাওয়া পত্রিকার ভাজে কোনও সামুদ্রিক ঘূর্ণীঝড় ফুঁসে উঠতে দেখলেই দ্রুত দেখে নিই – “চা’ল ডা’লের বাজারে আগুন” “দ্রব্যমূল্য আকাশ ছোঁয়া” “বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার” “উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশ যাত্রা” অথবা “যে কোনও মূল্যে গণতন্ত্র রক্ষা করা হবে” ইত্যাকার খবরা-খবর, লোভনীয় বাণী । আসন্ন ঝড়ের সংকেত ধরা পরে গেলে নির্বিধায় আপনারা যারা যারা আছেন ধারে কাছে কুলি-মজুর-শ্রমিক ছুতোর-মুচি-জেলে শিক্ষক-ছাত্র-বুদ্ধিজীবি রিক্সাওয়ালা- ফেরীওয়ালা এবং জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মা-জননী নিশ্চিত নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাবেন জানি, শুধু আমি একক এবং একাকী লেপ্টে থাকবো জনপদে । বিশ্বাস করুন হে অকৃতজ্ঞ জনতা, মাঝে মাঝে আমার বেলুন ফাটাতে ইচ্ছে করে সমস্ত দেয়ালে দেয়ালে লিখে রাখতে ইচ্ছে করে সমুদয় সুখের বিজ্ঞাপন । ট্রিগারে আঙ্গুল রেখে মারতে ইচ্ছে করে দূর্বিনীত কাক, অসভ্য শেয়ালের দল, অর্থাৎ চৌরাস্তায় অকস্মাৎ ব্যারিকেড পড়ে গেলে যেমন ধাবমান রায়টকারে কর্তব্যরত নীলরঙা পুলিশ ‘কিছু একটা করতে হবে’ বলে – নির্বিকার মৃত্যু ছুঁড়ে দেয় আকাশের দিকে মাঝেমাঝে, আপনাদের সাথে আমার আত্মীয়তা হয়ে গেলে মাঝেমাঝে – কিছু একটা করা উচিৎ বলে আমিও ছুটতে চাই জনতায় ট্রিগারে আঙ্গুল রেখে ।

চোখের দূরবীনে জনাকীর্ণ পল্টনকে দেখে নিই, তারপরে সুতীব্র চীৎকারে “যুদ্ধ থামাও, যুদ্ধ থামাও-শান্তি চাই” বলে অযথা মাথা কুটে মরি সকল শক্তিমান দ্বারে দ্বারে । “হঠ্‌ যাও, বেত্তমিজ কাহিকে” বলে পাছায় খাই লাথি, গলা ধাক্কা খাই, ছিড়ে যায় ধুসর শার্ট, বুক তবুও দু’চোখে নেভেনা আশার রৌদ্র-করোজ্বল হিরস্ময় বাতি । তখন আপনারা আগের মতোন আবার আমাকেই ছেড়ে যান । ক্রোধ জন্ম নিতে থাকে, তৈরী হ’তে থাকে প্রতিশোধ । লোকালয়ে ফিরে যাই একাই, ডায়াসে দাঁড়াই, প্রস্তুত হ’তে থাকে ধ্রুপদী বর্ণমালা ।

তৃতীয় আঘাত আসার আগেই একদৌড়ে প্রথমশ্রেনীর রাজনৈতিক নেতা হ’য়ে যাই একজন এবং তখন আপনারা হে নির্বোধ জনতা ; বিদীর্ণ হাততালিতে ‘জনগনের মহান সেবক’ এর ম্যান্ডেট দিয়ে ফেলেন আমাকে । অথচ জানেননা, দিয়ে ফেলাটাই কোনও কাজের কথা নয় যেমন ধ্বণীতত্বে ব্যঞ্জনবর্ণ নির্বিকার নিশ্চুপ নির্মানাধীন পড়ে থাকে স্বরবর্ণের যৌথ প্রযোজনা ছাড়া, যেমন পান থেকে চুন খসলেই ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের চুক্তি’ বাতিল বলে গন্য হয়, যেমন স্ত্রীর সহযোগীতা ছাড়া হে মানুষ, অসুখী পড়ে থাকে যাবতীয় সুখের সংসার । তেমনি আমার সাথে আপনাদের পূণর্বার বিশ্বাঘাতকতা হ’য়ে গেলে হে জনতা ; মাঝে মাঝে আমাকেও গোত্রান্তরীত হ’তে হয় । মধ্যরাতের নীলাভ আলোয় আমার বিনীদ্র রজনী কাটে প্রেমিকার উষ্ণ শরীরে মুখ গুজে । অথচ আপনারা জানেন না – বারংবার আপনাদের নির্বুদ্ধিতায় পৃথিবীর সব সুখ আমাদের নাগালের বাইরেই চলে যায় ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।