আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অকারন কৌতুহল।

শেষ বারের মতো সতর্ক করছি... শিক্ষা মানুষকে কৌতুহলী করে তুলে। আমাদের দেশে শিক্ষার হার কম কিন্তু কৌতুহলী মানুষের সংখ্যা বেশি। অন্তত পক্ষে অপরের গোপন খবর জানার জন্য। জীবন পর্যন্ত দিতে পারে। কি পরিমান কৌতুহলি এবার ভাবুন? এক দুই বছর আগে, অফিসের সাথে আমার খুব ঝামেলা যাচ্ছে।

মোটামোটি বড় সব বস টাইপের লোকজনের সাথে মোবাইলে প্রায় হাতাহাতির চলছে। একেবার চাকরি যায় যায় অবস্থা। খুব চাপের মধ্যে দিন গুলো যাচ্ছে। চাকুরি করে আমার এক টাকাও সঞ্চয় নাই। এমনকি এখনো পর্যন্ত কোন সঞ্চয় করতে পারি নাই।

তো চাকরি চলে গেলে একটা নিশ্চিত বিপদে পড়বো তাতে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু চাকরি চলে যাওয়ার যে লজ্জা তা ঢাকবো কি দিয়ে? চেনা মানুষের সাথে মুখ দেখাব কি করে? নতুন চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গেলে তারা যদি আগের চাকুরির ব্যপারে প্রশ্ন করে কি বলবো? মিথ্যা বললে তারা যদি যাচাই করে তবে কি হবে? মানে দাঁড়ায় আমি মহা টেনশানে দিন কাটিচ্ছি। আমার নিয়মিত চিঠি পত্তর আসে একটি কম্পিউটার দোকানের ঠিকানায়। তিনি আমার বন্ধু মানুষ। যদিও নোয়াখাইল্লা।

আমি তখন নোয়াখালিতেই থাকি। চিঠি খুলে দেখি "কারণ দর্শানো নোটিশ" মেজাজ টা কেমন লাগে? এমনিতেই ঝামেলায় আছি তার উপর আবার কারণ দর্শানো চিঠি দিসে। কেন আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে না তা সাত কর্মদিবসের মধ্যে জানাতে। চিঠিটা পড়ে শেষ করতে দেখি আর একজন এটা টানছে। যিনি টানছেন তার সাথে আমার কোন পরিচয় নাই।

এমন কি আগে ও কখনো দেখেছি কিনা মনে করতে পারছিনা। সে এটা দেখতে চায়। মেজাজটা কেমন হয় বলেন? আমি মহা ক্ষেপা কি হলো আপনি এটা ধরে টানছেন কেন? সে বলে দেখি না কি লিখছে? আশ্চার্য আমার চিঠি আপনি দেখবেন কেন? আরে দেখিনা। না এটা দেখানো যাবেনা। কেন আমি তো আগে এই সংস্থার সাথে কাজ করেছি।

তো কিলিখেছে দেখতে পারি না? বেয়াদবের মতো কথা বলবেন না। আপনি আমার চিঠি কেন দেখবেন? দেখতো মনে হয় ভদ্রলোক। আবার কোট টাই পরেছেন। এবার দোকানের মালিক সুমন এগিয়ে আসলো কি হয়েছে? আমি বল্লাম, কি পাগল ছাগলের মতো কথা বলে আমার চিঠি ওনি দেখতে চাচ্ছে। যতই না করি তিনি উৎসাহি ।

দেখবেনই। পরে জানতে পারি তিনি এই ভবনের উপরেই জনতা ব্যাংকে চাকরি করেন। আমাদের কিছু স্বেচ্ছা সেবক সংগঠনের সাথে কাজ করতেন। তাই আমাদের সংস্থার লগো দেখে টানাটানি শুরো করেছে। তার ধারনা ছিল আমিও তার মতোই একজ স্বেচ্ছা সেবক।

অতএব এটা এমন সিক্রেট কিছু হতে পারে তার চিন্তাতে ছিলনা। আমিও হয়তো তাকে বুঝিয়ে বলতে পারতাম। কিন্তু সব পরিস্থিতি মিলিয়ে আমি এতই বিরক্ত ছিলাম যে সুস্থ চিন্তা মাথায় আসেনি। আমি তখন সুস্থ ছিলামও না। কিছু দিন আগে আমি এবং আমার এক বন্ধু সিলেট থেকে মৌলভীবাজার আসছি।

গাড়িতে একপাশে তিনটি কর সিট। আমরা দুটি দখল করার পরেও একটি যাত্রির জন্য মুক্তই ছিল। সেই সিটে যনি বসলেন তিনিও একজন কৌতুহলি মানুষ। বলা চলে অসীম কৌতুহলি। আমরা দুজন একটু গুরুত্বপূর্ন কাগজ গাড়িতে বসেই দেখছি।

কিন্তু আমাদের পাশের যাত্রিটি একে বারে ঝুকে পরে আমাদের এটা দেখতে থাকে। আমি বিনিত ভাব বললাম,ভাই এটা আপনার দেখার কি দরকার, আপনার কি এমন কোন কাগজ পত্র হারিয়েছে? সে বলল না। তার পর আবারও সে ঝুকে এসে দেখতে থাকে। এবং এক ঘন্টার ভ্রমনে আমরা যত সময় সেই কাগজটা দেখেছি। তিনি ততক্ষনই আমাদের বন্ধুর মতো ঝুকে এটা দেখার চেষ্টা করেছেন।

আমরা কমপক্ষে দশবার তাকে সতর্ক করেছি। কিন্তু যেই লাউ সেই কদু। ধরুন রাস্তার পাশে আপনার জুতার ফিতা খুলে গেল। আপনি ফিতা বাঁধছেন। দেখবেন কম করে চার পাঁচজন উৎসাহি তা দেখছে।

কারো সাথে একটু কথা কাটাকাটি হলেই লোকজন এসে বলবে " কি হয়েছে , কি হয়েছে?" উৎসাহি লোকের অভাব হবেনা। একটি বেজি নিয়ে হাঁটেন,বানর নিয়ে হাঁটেন, পঙ্গু কোন ছেলে কে সাথে নিয়ে হাঁটেন। মানুষের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে আপনি কাহিল। কেন এত প্রশ্ন? এতই তাদের জানার কৌতুহল। এত আগ্রহ নতুন কিছু জানার প্রতি? না তা কিন্তু নয়।

বেশির ভাগই দেখবেন বিনোদন খুঁজে। তারা আপনাকে প্রশ্ন করবে কেবল বিনোদন পাবার জন্য? এবং বিনোদন মূলক উত্তরও আশা করবে। আপনি ভাবছেন রাস্তায় বেশির ভাগ ঘটনাই তো দুর্ঘটনা তাতে বিনোদন কোথায়? আছে। যারা নিতে জানে তারা ঠিকই বিনোদন নেয়। আমাদের সাথে আড্ডায় এমন একজন আছে যদি খুব খবর দেখতে পছন্দ করেন।

যেদিন খবরে কোন বড় ধরনের দুর্ঘটনা না থাকে তিনি খুব নিরাশ হন। এবং যেদিন দেখেন রেব একজন কে গুলি করে মারে, তিনি এসে হাসতে হাসতে বলেন আজ রেব একজনকে খেয়েছে। হরতালের দিন পুলিশ অথবা বড় কোন নেতা যেই পিটানি খেয়ে হাসপাতালে থাকুক। তিনি সেই বেদনা দায়ক খবরটাও হাসতে হাসতে পরিবেশন করেন। আমি জানতে চাই।

এটা কি হাসির খবর? তখন ঠোট দিয়ে দাঁত ঢাকেন বটে কিন্তু হাসি থামাতে পারেন না। রাস্তায় কোন এক্সিডেন্ট হলে কৌতুহলী মানুষের ঢল নামে। কিন্তু খুব অল্প কয়েক জনই সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। ( যাদের বাস্তাব অভিজ্ঞতা আছে তারা নিশ্চয় একমত হবেন। ) ইউটিউবে অনেক ফান ভিডিও দেখা যায়।

তাদের অনেক গুলোই কোন না কোন দুর্গঠনা। এগুলো ফান হলো কি করে? কি ভাবে সম্ভব আর একজনের বিপদগ্রস্থ অবস্থা দেখে হেসে ফেলা? শেষাংশ লেখা শেষ হয়নাই। চলবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.