আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তুমি একবার বলেই দেখো

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে. ১। মানে না, মন মানে না একাকী প্রহর যেন কাটে না, জড়ালে তুমি এ কি মায়ায় ভাল লাগে না কিছু তুমি হীনা। তোমার ছোঁয়াতে হৃদয় আলোকিত তুমি যে আমারই এ জীবন, ভালবেসে যাবো সারাক্ষণ হৃদয়ের সবচেয়ে আপন বেঁচে থাকার এই যে কারণ। সকাল ১০ টা, এখনো নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে রফিক। গতরাতে সে একফোটাও ঘুমাতে পারে নি।

প্রায় রাতেই তার এমন প্রব্লেম হয়। ঘুম না আসলে সারারাত বসে বসে টিভি দেখা কিংবা ফেইসবুকে বসে থাকা এই দুটো কাজ সে করে থাকে। এভাবে সময় চলে যায়। কখন যে ভোর হয়ে যায় টের পায় না সে। সবার ঘুম যখন ভাঙ্গে তখন রফিকের ঘুমের সময় হয়।

বাবা মায়ের আদরের সন্তান হলে যা হয় আর কি। তার উপর আবার সে একমাত্র সন্তান। তাই আদরের সীমা নেই যেন! রফিকের বাবা (জামান সাহেব) ছেলেকে কিছু বলতে গেলেই হল। পিছন থেকে মা এসে ছেলের গুণগান গাইতে থাকেন। আর রফিক ও পার পেয়ে যায় এতে।

ফলে জামান সাহেবের হার মেনে নেয়া ছাড়া তখন আর কিছু করার থাকে না। আসলে মায়ের আস্কারা পেয়ে পেয়ে ছেলেটা উচ্ছনে গিয়েছে। ছেলেকে নিয়ে তাই জামান সাহেবের চিন্তার অন্ত নেই। রফিকের যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন ঘড়িতে দুপুর সাড়ে ১২ টা বাজে। মুখ হাত ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে টেবিলে যখন বসলো নাস্তা খাওয়ার জন্য তখন তার মনে হল আজকে ইউনিভার্সিটিতে সকাল ৯ টা থেকে ক্লাস ছিল।

মিস হয়েছে সব ক্লাস। বসে বসে মাথার চুল ছেড়া ছাড়া তার আর কিছু করার নেই। এর থেকেও বড় বেপার হল আজকে একটা কুইজও ছিল। কোনমতেই এই কুইজের মেকাপ স্যার নিবেন না। স্যার যে রাগী! কেউ উনার সামনে জেয়ে কথা বলার সাহস পায় না।

আর রফিক তো আউট অফ সিলেবাস। ২। ভাল লাগে কাশফুল ছোট ছোট কিছু ভুল, ভালবাসি তোমার খোপার ফুল। ভুলে যাওয়া কিছু মুখ ফিরে পাওয়া কিছু সুখ, ভালবাসি তোমার ওই মুখ পৃথিবী ঘুমিয়ে গেলে; যেয়ো না, একা ফেলে ভালবেসো নিরবে চিরদিন। দুপুর ৩ টা বেজে ৩৭ মিনিট, গান শুনতে শুনতে খুব মাঞ্জা মেরে আজ ক্যাম্পাসে এসেছে রফিক।

এই সময়ে সাধারণত খুব বেশি ছাত্র / ছাত্রী থাকে না। কারণ বেশিরভাগেরই ক্লাস শেষ হয়ে যায় দুপুর ৩ টার আগেই। তাতে কি! রফিক এসেছে ঘুড়তে। ক্যাম্পাসে এসে রফিক প্রথমেই যাবে ক্যান্টিনে। এটা তার রুটিন।

এমনকি পরীক্ষার সময়েও সেখানে যাওয়া মিস নাই তার। একটা খালি টেবিলে বসেই সে জোরে হাক দিল - রফিকঃ ওই মামা, কি খবর? মামাঃ আরে! মামা যে। তা আজকে এত দেরি? রফিকঃ এই তো, আসতে আসতে দেরি হইয়া গেল। মামাঃ হ ম ম। তা কি খাইবেন? রফিকঃ দাও, ১ টা চা, চিনি ২ টা।

সাথে বেনসন মারো। মামাঃ একটা খবর আছে, আপনার লাইগা। রফিকঃ (সামান্য উৎসাহিত হয়ে) কি খবর? যলদি কও। মামাঃ মিলি আর অহনা এসেছিল। আপনার খোঁজ়ে ।

রফিকঃ ধুর! যত্তসব। এইটা কোন খবর হইলো? মামাঃ কি যে কন, মামা। এইটাই তো খবর। তাদেরকে আজকে খুব খুশি খুশি মনে হল। রফিকঃ ও, আচ্ছা।

৩। মিলির আর অহনার সাথে রফিকের সম্পর্ক ছিল ৪/৫ বছরের। তারা দুই খালাতো বোন। দুই জনই রফিককে পছন্দ করতো। কিন্তু কেউ জানতো না এই কথা।

রফিক যেদিন মিলির সাথে দেখা করতে যেত সেদিন অহনাকে বলতো কাজ আছে। আবার যেদিন অহনার সাথে দেখা করতে যেত সেদিন মিলিকেও একই কথা বলতো। রফিকের সিম ছিল ৩ টা। ফলে দুই জনের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে রফিকের কোন প্রব্লেম হত না। তবে সে যে দুজনের সাথেই প্রতারণা করছে তা ঠিকই বুঝতে পারতো।

তখন যে করার আর কিছু ছিল না তার। তবে মনের মাঝে রফিকের একটা সংশয় কাজ করতো সবসময়। এই সংশয় থেকেই একদিন ধরা পরে গিয়েছিল মিলির কাছে। তাও আবার যাচ্ছেতাই ভাবে। ঘটনার দিন অহনাকে নিয়ে রফিক চারুকলায় ঘুরতে গিয়েছিল।

সেদিন চারুকলায় বেশ শান্ত পরিবেশ বিরাজ করছিল। ভাল একটা জায়গা দেখে তারা বসে গল্প করছিল। কথা বলতে বলতে দুজন বেশ রোমান্টিকতায় ডুবে গিয়েছিল। আশেপাশে কেউ আছে কি না তার তোয়াক্কা দুজনের কেউ করছিল না। এমন সময় সেই পথ ধরেই যাচ্ছিল মিলি।

পথ বলতে চলতে মিলির একটা গাছের দিকে চোখ আটকে গেল। থমকে দাঁড়ালো সে। নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে কষ্ট হচ্ছিল। কোনরকম নিজেকে সামলে নিয়ে সরাসরি হাজির হল রফিকের সামনে। কিন্তু এ কি!! এ যে অহনা! তার মানে এতদিন তারা একজনকেই ভালবেসে এসেছে।

অথচ কেউ বুঝতেই পারে নি! রফিকঃ এ ...... কি! তু......মি? মিলিঃ হ্যা, আমি। অহনাঃ মিলি, তুই এইখানে? মিলিঃ হ্যা আপু, তোমাদের দেখতে এলাম অহনাঃ মানে? মিলিঃ মানে আর কি? অহনাঃ তোর সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। ও হচ্ছে............। মিলিঃ থাক, আপু। আর লাগবে না।

অহনাঃ তুই ওকে চিনিস নাকি? মিলিঃ চিনবো না আবার! ও একটা ফ্রড। অহনাঃ তার মানে, তোকেও সে.........। মিলিঃ হ্যা, ঠিক ধরেছো। রফিকঃ আসলে, আমি......। ।

মিলি, অহনাঃ চুপ! একদন চুপ। ফ্রড একটা। লজ্জা করে না তোমার? এই কথা বলে মিলি জোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল রফিকের গালে। অহনা সাথে সাথেই তার সাথে সম্পর্ক ছেদ করার ঘোষনা দিল। এরপর দুজন একসাথে বিদায় নিল।

তাদের দুজনের পথের দিকে উদাস হয়ে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কোন কিছু করার ছিল না। ৪। ক্যান্টিন থেকে বের হতে যাবে এমন সময় মিলি সামনে পরে গেল রফিকের। থমকে দাড়ালো রফিক। পালানোর বা সরে পরারও কোন চান্স নেই এখন।

মিলিঃ কি ব্যপার? আজকে এত সাজগোছ করে আসলা? কাউকে পটাইতে আসছো নাকি? রফিকঃ নাহ! এমনি (উদাস ভঙ্গিতে) মিলিঃ তোমার তো আবার কোন ঠিক ঠিকানা নাই কোন কিছুর রফিকঃ তুমি নাকি আমাকে খোঁজ করেছিলা? মিলিঃ এটাই তো আমার দুর্ভাগ্য! তোমাকে আমার খোঁজ হয় এখন ও। রফিকঃ বল, কি কারণ? মিলিঃ এই নাও বিয়ের কার্ড। রফিকঃ (হাতে নিয়ে দেখে) দুইটা কেন? কার বিয়ে? মিলিঃ একটা অহনার, আগামী মাসের ১৪ তারিখ। আর একটা আমার ২৫ তারিখ। তোমাকে দিয়েই কার্ড বিলি করা শুরু করলাম।

এই বলে বিদায় নিল মিলি। রফিকের মনে হল বুকে ব্যাথা করছে চিন চিন করে। কিন্তু সেটা মিলিকে বুঝতে দিল না। যথাসম্ভব হাসিমুখে রাজি হল বিয়েতে উপস্থিত থাকবে বলে। রফিকের মনে হতে লাগলো এর থেকে মরে যাওয়াতেও হয়ত অনেক সুখ হত।

৫। অহনার বিয়ের দিন রফিক ঠিক করলো যাবে না সেখানে। তার ইচ্ছে করছিল না বার বার অপমানিত হতে। আর কত! এই চিন্তা থেকেই মোবাইল অফ করে দিল সেদিন সে বিকেল থেকেই। রাতে ঘুম আসছিল না তার।

এপাশ ওপাশ করতে করতেই কেটে যাচ্ছিল সময়। বার বার তার কানে একটা গানই ভেসে আসছিল “আজকে রাতে তুমি অন্যের হবে, ভাবতেই জলে চোখ ভিজে যায়”। এভাবে করেই কাটিয়ে দিল সে সারারাত। ভোরে যখন মোবাইল অন করলো সাথে সাথেই মিলির একটা মেসেজ পেলো। “তুমি বিয়েতে আসো নি কেন? তোমাকে খুব মিস করেছি।

আমার বিয়েতে না এলে তোমাকে আমি কখন ও ক্ষমা করবো না”। রফিক অনেকক্ষণ এই মেসেজটার দিকে তাকিয়ে থাকলো। আর ভাবতে লাগলো আমাকেই কেন সে মিস করবে? আর আমাকেই বা কেন সে তাদের পাশে চাচ্ছে? সবকিছু রফিকের কাছে কেমন যেন ঘোলাটে লাগছে। ৬। ২৫ তারিখ, সন্ধ্যা ৭ টা যথারীতি ফিটফাট হয়ে রফিক হাজির হল বিয়েবাড়িতে।

কিন্তু ওখানে পৌছেই বেশ অবাক হল সে। কোথাও কোন সাজানোর নামগন্ধ নেই। মেহমান ও নেই কোন। বিয়ের সানাই বাজছে না। কিন্তু কেন? নানারকম চিন্তা করতে করতে বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়লো কলিং বেল ছাড়াই।

বাড়ির ভেতর ঢুকেই সে স্তম্ভিত হয়ে গেল। কারণ মিলি তাকে দেখে হাসছে। তার পাশে বসা অহনা। মিলি হাত ধরে টেনে সোফায় বসালো রফিককে। রফিকঃ কি ব্যপার? তোমার না আজকে বিয়ে! তাহলে সবাই কই? কাউকেই তো দেখছি না।

তুমি বা রেডি হচ্ছো না কেন? মিলিঃ (মুচকি মুচকি হেসে) এত প্রশ্নের উত্তর দেয়া যাবে না। রফিকঃ তাহলে? মিলিঃ তাহলে কিছু না। আজ কারো বিয়ে নেই। অহনাঃ খুব অবাক হচ্ছো রফিক? আজকে মিলির বিয়ে না। সে ইচ্ছে করেই একটা প্লান করেছিল তোমাকে পরীক্ষা করবার জন্য।

রফিকঃ (অবাক হয়ে) কী! এসবের মানে কি? অহনাঃ আসলে ১৪ তারিখ আমার বিয়ে ছিল। তুমি আসো নি। মিলিঃ আর ইনি হচ্ছেন অহনার হাসবেন্ড। এতক্ষণ ভদ্রলোককে খেয়াল করে নি রফিক। এখন খেয়াল হল তার।

কুশলাদি বিনিময় করে যখন স্থির হল তখন সে জানতে পারলো এটা অহনার হাসবেন্ডের বাড়ি। আর অহনার হাসবেন্ড রফিক সম্পর্ক এ সব কথা মিলি আর অহনার কাছ থেকেই শুনেছেন। রফিকঃ আমাকে এখানে তাহলে ডাকা হল কেন? মিলিঃ একটা সত্য জানাতে। তোমার সাথে সম্পর্ক ছেদ করার পর আমার নজর তোমার উপর ছিল। তুমি কই যাও কি কর সব কিছু।

খোঁজ নিয়ে জানতেও পেরেছিলাম তুমি কারো সাথে প্রেমেও জরাও নি। রফিকঃ হ ম ম মিলিঃ (চোখে চোখ রেখে) আমি তোমাকে আগের মতই ভালবাসি। তুমি কি আমাকে ভালবাসো? অহনাঃ (হাল্কা কাশি দিয়ে) মেনে নাও,......। মেনে নাও রফিক। এমন সুযোগ আর আসবে না।

রফিক কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। জ্ঞানীরা বলেছেন – “তুমি কাউকে ভালবাসো কি না সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে তোমাকে যে ভালবাসে কিংবা মিস করে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই ভালবাসাই প্রকৃত ভালবাসা”। অধম রফিক আর কি করবে? মিলির হাত ধরে বললো – ভালবাসি।

ভালবাসি। ভালবাসি - ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.