আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাহান্নামের শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ

খোদাদ্রোহীদের বিষয়ে কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহর চূড়ান্ত ফায়সালা ঘোষণার পর তাদের দল বেঁধে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। ইরশাদ হয়েছে, কাফেরদের দল বেঁধে হাঁকিয়ে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা জাহান্নামের কাছাকাছি পেঁৗছে যাবে, তখন এর দ্বারগুলো খুলে দেওয়া হবে, আর জাহান্নামের রক্ষীরা তাদের উদ্দেশ করে বলবে, 'তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্য থেকে কোনো রাসুলের আগমন হয়নি, যাঁরা তোমাদের তোমাদের রবের আয়াত তিলাওয়াত করে শোনাতেন এবং আজকের দিনের সাক্ষাতের বিষয়ে সতর্ক করতেন? তারা বলবে অবশ্যই এসেছিলেন। বস্তুত কাফেরদের শাস্তির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়েছে। তাদের বলা হবে, জাহান্নামে প্রবেশ করো।

তোমরা সেখানে চিরকাল থাকবে। অহংকারীদের আবাসস্থল কতই না নিকৃষ্ট। ' (সুরা জুমার, আয়াত ৭১-৭২)। 'সেদিন আমি পাপীদের পিপাসার্ত অবস্থায় জাহান্নামের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাব। ' (সুরা মারইয়াম, আয়াত ৮৭) কিয়ামতের দিন জাহান্নামিদের আমলনামা বাঁ হাতে দেওয়া হবে।

তাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ ফেরেশতাদের উদ্দেশ করে বলবেন, 'তাকে ধর, তার গলায় বেড়ি পরাও। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করো। আবার তাকে ৭০ গজ দীর্ঘ শিকলে বেঁধে ফেল। ' (সুরা হাক্কা, আয়াত ৩০, ৩১, ৩২)। ইবনে কাসির (রহ.) আলোচ্য আয়াতের তাফসিরে ইবনে আবি হাতিমের একটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করেছেন, যখন আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দেবেন, 'তাকে ধর', তখন সঙ্গে সঙ্গে তার ওপর ৭০ হাজার ফেরেশতা ঝাঁপিয়ে পড়বেন।

যাঁদের একেকজন ৭০ হাজার মানুষকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করতে সক্ষম। জাহান্নামের শাস্তি হবে অত্যন্ত কঠোর, সুকঠিন, সুতীব্র যন্ত্রণাদায়ক, অত্যন্ত ভয়াবহ। যার বিবরণ পবিত্র কোরআনের বহু আয়াত ও রাসুলের হাদিসে দেওয়া হয়েছে। একবার হজরত কা'ব ইবনে আহবার (রা.) উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর অনুরোধে মসজিদে নববীতে এক মজলিসে জাহান্নাম প্র্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, 'কিয়ামতের দিন জাহান্নামকে নিকটবর্তী করা হবে। তখন সে এমন বিকট স্বরে চিৎকার করতে থাকবে যে নবী, শহীদ, সিদ্দিক_সবাই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে হাঁটু গেড়ে বসে পড়বেন।

সবাই বলতে থাকবেন, 'হে আমার রব, আমি শুধু আমারই মুক্তি চাই। হে খাত্তাবপুত্র, তোমার যদি সেদিন ৭০ জন নবীর আমলও থাকে, তবুও মনে হবে তুমি নাজাত পাবে না। ' তাঁর আলোচনা শুনে উপস্থিত সবাই বিলাপ করতে লাগল। জাহান্নামে শাস্তির মূল উৎস হবে আগুন। জাহান্নামের আগুনের ভয়াবহতা সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন_রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'জাহান্নামের আগুনকে এক হাজার বছর ধরে প্রজ্বলিত করার পর তার রং লাল হয়।

তারপর এক হাজার বছর ধরে প্রজ্বলিত করার পর তা সাদা রং ধারণ করে। আবার এক হাজার বছর ধরে প্রজ্বলিত করার পর তা সম্পূর্ণ কালো হয়ে যায়। জাহান্নাম অন্ধকার রাতের মতো কালো। (তিরমিজি, ইবনে মাজা)। জাহান্নামিদের শাস্তির জন্য আরো থাকবে মারাত্মক বিষধর সাপ-বিচ্ছু।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'নিশ্চয়ই জাহান্নামে উটের ঘাড়ের মতো সাপ আর খচ্চরের মতো বিচ্ছু রয়েছে। একবার তা কাউকে দংশন করলে ৪০ বছর পর্যন্ত এর যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে। ' (মুসনাদে আহমাদ)। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিস থেকে জানা যায়, জাহান্নামের আগুনের উত্তাপ পৃথিবীর আগুন থেকে ৭০ গুণ বেশি। ' পৃথিবীর আগুনের উত্তাপ যদি ২০০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড ধরে নেওয়া হয়, তাহলে জাহান্নামের আগুনের উত্তাপ হবে এক লাখ ৩৮ হাজার সেন্টিগ্রেড।

আর এ আগুন দিয়েই জাহান্নামিদের পোশাক, বিছানা ও তাঁবু তৈরি করা হবে। সাধারণত বাংলাদেশের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি অতিক্রম করলেই আবহাওয়া অসহ্য হয়ে ওঠে। হিটস্ট্রোকে মানুষ মরতে শুরু করে। তাহলে এক লাখ ৩৮ হাজার সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় জাহান্নামিদের যন্ত্রণা কত কঠিন হবে ভাবা যায়! কিন্তু সেখানে মৃত্যু থাকবে না। তাই যন্ত্রণা দীর্ঘায়িত হয়ে শুধু বাড়তেই থাকবে।

ইরশাদ হয়েছে, 'যখন এক শিকলে কয়েকজনকে বেঁধে জাহান্নামের কোনো সংকীর্ণ স্থানে নিক্ষেপ করা হবে, তখন তারা মৃত্যুকে ডাকতে থাকবে। তখন তাদের বলা হবে, আজ তোমরা এক মৃত্যুকে ডেকো না; বরং অনেক মৃত্যুকে ডাকো। ' (সুরা ফুরকান, আয়াত ১৩, ১৪)। 'তারপর সে সেখানে মরবেও না, আর বাঁচবেও না। ' (সুরা আলা, আয়াত ১৩)।

জাহান্নামিরা যখন পিপাসায় কাতর হয়ে পানির জন্য আর্তনাদ করতে থাকবে, তখন তাদের গরম পানি, উত্তপ্ত দুর্গন্ধময় পুঁজ, রক্ত ও বমি পান করতে দেওয়া হবে। সেগুলো এতই উত্তপ্ত হবে যে তা পান করতে গেলে মুখের সব গোশত গলে পড়ে যাবে। আর যতটুকুই পেটের মধ্যে যাবে, তার উত্তাপে তাদের সব নাড়িভুঁড়ি গলে বেরিয়ে আসবে। (মুসতাদরাকে হাকেম)। জাহান্নামিদের খেতে দেওয়া হবে কাঁটাবিশিষ্ট জাককুম ফল ও কাঁটাবিশিষ্ট ঘাস।

তারা নিরুপায় হয়ে জান্নাতিদের কাছে নিবেদন করবে, 'একটু পানি বা অন্য যা কিছু আল্লাহ খাওয়ার জন্য তোমাদের দিয়েছেন, তা থেকে আমাদের একটু দাও। তখন জান্নাতিরা বলবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ সেগুলো কাফেরদের জন্য হারাম করে দিয়েছেন। (সুরা আ'রাফ, আয়াত ৫০)। ফেরেশতাদের নির্দেশ দেওয়া হবে, 'তাকে ধরে জাহান্নামের মাঝখানে টেনে নিয়ে যাও। সেখানে তার মাথার ওপর গরম পানি ঢেলে তাকে শাস্তি দাও।

' (সুরা দুখান, আয়াত ৪৭-৪৮)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'জাহান্নামির মাথার ওপর যখন গরম পানি ঢেলে দেওয়া হবে, তখন ওই পানি তার মাথা থেকে গড়িয়ে শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গলিয়ে মলদ্বার দিয়ে বের করে দেবে। (মুসনাদে আহমাদ)। জাহান্নামিদের মুখমণ্ডলে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হবে। ইরশাদ হয়েছে, 'সেদিন তুমি দেখবে পাপীদের শৃঙ্খলিত অবস্থায়।

তাদের পোশাক হবে আলকাতরার। আর আগুন তাদের মুখমণ্ডলকে আচ্ছন্ন করে নেবে। ' (সুরা ইবরাহিম, ৪৯-৫০ আয়াত)। জাহান্নামের একটি স্তরের নাম জামহারির। সেখানে জাহান্নামিদের ঠাণ্ডার শাস্তি দেওয়া হবে।

অতিরিক্ত গরম যেমন মানুষের জন্য কষ্টের কারণ, তেমনি অতিরিক্ত ঠাণ্ডাও। অতিরিক্ত ঠাণ্ডার কারণে মানুষের শরীরে পচন ধরে যেতে পারে, পক্ষাঘাতগ্রস্ত হতে পারে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'পৃথিবী ঠাণ্ডা জাহান্নামের (জামহারির) শ্বাস ত্যাগের কারণে হয়ে থাকে। ' (বুখারি)। জাহান্নামের ঠাণ্ডা হবে পৃথিবীর ঠাণ্ডার বহু গুণ বেশি।

যেমন_জাহান্নামের আগুন পৃথিবীর আগুনের ৭০ গুণ বেশি। পবিত্র কোরআনে আরো বলা হয়েছে, 'সেদিন তাদের মুখমণ্ডল আগুনে ওলটপালট করা হবে, সেদিন তারা বলবে, হায়! আমরা যদি আল্লাহর আনুগত্য করতাম, আমরা যদি রাসুলকে মান্য করতাম। ' (সুরা আহজাব, আয়াত ৬৬)। কিয়ামতের দিন কাফেরদের উপুড় করে টেনে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হবে। ইরশাদ হয়েছে, 'কিয়ামতের দিন আমি তাদেরকে তাদের মুখের ওপর ভর দিয়ে চলা অবস্থায় অন্ধ, বধির ও মূক করে সমবেত করব।

তাদের আবাসস্থল হবে জাহান্নাম। যখনই তা স্তিমিত হয়ে আসবে, আমি তাদের জন্য আগুনকে বৃদ্ধি করে দেব। ' (সুরা ক্বামার, আয়াত ৯৭)। হজরত আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রাসুল! কিয়ামতের দিন কাফেরদের কিভাবে উপুড় করে চালানো হবে? রাসুল (সা.) উত্তরে বললেন, যে সত্তা দুনিয়ায় তাকে দুই পায়ের ওপর ভর করে চালাতে পারেন, তিনি কি তাকে উপুড় করে, মুখের ওপর ভর করে চালাতে সক্ষম নন? হজরত কাতাদা (রা.) বললেন, 'হ্যাঁ, আমাদের রবের নামে শপথ, অবশ্যই তিনি সক্ষম (মুসলিম)। জাহান্নামের শাস্তি বড় কঠিন, সাংঘাতিক ভয়াবহ।

কিন্তু এর পথ বড়ই মোহনীয়। আকর্ষণ খুবই তীব্র। প্রবৃত্তির চাহিদা যখন কোনো মানুষের জীবনে প্রাধান্য পায়, তখন ভোগ-বিলাসিতা হয়ে ওঠে তার জীবনের লক্ষ্য। খোদায়ি বিধানের বিপরীত ধারায় মরীচিকাসদৃশ পার্থিব নিষিদ্ধ জৌলুসের মোহনীয় পথ ধরে সে জাহান্নামের দিকে এগিয়ে যায়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'দুর্ভাগা ব্যক্তি ছাড়া কেউ জাহান্নামে যাবে না।

সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, দুর্ভাগা ব্যক্তি কে? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, যে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য তাঁর আনুগত্য করে না এবং তাঁর নাফরমানি পরিত্যাগ করে না। ' (ইবনে মাজা)। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর অসন্তুষ্টি ও দুর্ভাগ্য থেকে রক্ষা করুন। লেখক :মোহাম্মদ মাকছুদ উল্লাহ পেশ ইমাম ও খতিব, রাজশাহী কলেজ কেন্দ্রীয় মসজিদ সূত্র-কালের কন্ঠ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.