আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

“কন্যা সন্তান জন্মানোতে নারী অপরাধী আর পুত্র সন্তান জন্মানোতে পুরুষ গৌরবের অধিকারী”

সমাজকর্মী “কন্যা সন্তান জন্মানোতে নারী অপরাধী আর পুত্র সন্তান জন্মানোতে পুরুষ গৌরবের অধিকারী” অথচ এই হাস্যকর কথাটির সময় ভেবে দেখিনা যে, উভয়-ই পৃথিবীর আলো দেখে একজন নারীর গর্ভধারনে এবং পুত্র-কন্যা জন্মানোতে নারী-পুরুষ সমান অধিকারী কিন্তু আমরা এসব সাধারণ বিষয় মনে না রেখে ক্ষমতার উপর ভর করে কথা বলি, মারামারি-কাটাকাটি করি! আর এই ক্ষমতা থেকেই চিরন্তন সত্য বিষয়টি ভূলে গিয়ে এ সমাজে, “পুত্র সন্তানের আকাংক্ষা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। শুধু পুরুষ নয় একজন নারী সে মা অথবা শাশুড়ী প্রত্যেকে আশা করেন একজন পুত্র সন্তানের। কারন পুত্র বড় হয়ে খাওয়া-পড়ার নিরাপত্তা দিবে, মাথার ওপর ছাতা হয়ে থাকবে। অবশ্য সমাজের চলমান/বর্তমান পরিস্থিতিতে আরও কারন হচ্ছে, তাকে বড় করতে কোন প্রকার ভয় ও হুমকির মুখে থাকতে হবে না যে, পুত্র আমার কখন ধর্ষন-নির্যাতন-এসিড-গুন্ডা বদমাইশের উৎপাতের মধ্যে পড়ে! বিয়ের জন্য যৌতুকেরও চিন্তা করতে হবে না! আন্যদিকে একজন কন্যাকে বড় করতে শিশুকাল থেকেই ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়, কন্যা আমার কখন ধর্ষন-নির্যাতন-এসিড-গুন্ডা বদমাইশের উৎপাতের মধ্যে পড়ে! আবার এত কিছুর পরেও তাকে ধৈর্য্য ও সাহসের সাথে বড় করে কি হবে? সেতো অন্যের বাড়িতে চলে যাবে, সেবা করবে সেই বাড়ির মানুষকে এবং তাকে লালন-পালন করতে যেমন খরচ তেমনি বিয়ে দিতেও যৌতুকসহ এক গাঁদা খরচ করতে হবে! তাই এসব চিন্তা করে কন্যা জন্মানোর থেকে না জন্মানোই ভালো। ” এমনই একটি হীন মনোবৃত্তি বাসা বেঁধে আছে আমাদের দরীদ্র-নিম্নবিত্ত এমন কি মধ্যবিত্তের কিছু অংশের মানুষের মধ্যেও।

এ জন্য দায়ী কি শুধু ঐ বাবা-মা-ই, নাকি নামে আধুনিক কিন্তু সংস্কারের ক্ষেত্রে আপরির্বতনশীল এই সমাজ কাঠামো ! কেনোনা আমরা যাকে আধুনিক সমাজ বলছি সেই সমাজেই বহাল তবিয়তে ধর্ষন-নির্যাতন-এসিড-গুন্ডা বদমাইশের উৎপাত-যৌতুক -এর মতো ঘৃণ্য বিষয় গুলো বহু আইন, সংস্কার, প্রগতিশীল প্রতিবাদী সংগঠনের প্রতিবাদের বেড়াজাল ভেদ করে বীরদর্পে বিদ্দমান। তাই সহজে বলা যায়, নারীর জন্য এই সমাজ নিরাপদ নয়! আবার নিজের মনুষত্ব সম্পর্কে সচেতন হবার সুযোগটুকু থেকে বঞ্চিত নারীরা নিজেকে দুর্বল মনে করে পুরুষের হাতে নিজের নিরাপত্তার দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ায়, পুরুষসমাজ এই সুযোগে নারীকে আরোও দুর্বল প্রমাণিত করে রাখার জন্য ইচ্ছেমতো ক্ষমতা প্রয়োগ করে পশুশ্রেনীর মনোবৃত্তি কাজে লাগিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে যাচ্ছে। যার ফলে জন্মানোতে কোন প্রকার হাত না থাকলেও কন্যা শিশু জন্মানোর অপরাধে একজন নারীকেই কখনও তালাক আবার কখনও বা প্রান দিতে হচ্ছে নর পশুর হাতে! ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০১০ দৈনিক ‘প্রথম আলো’র এমনি একটি খবরে চোখ যায়, ‘বিয়ের পর গত এক যুগে একে একে তিন কন্যা সন্তানের জন্ম দেয় সাহেরা। কিন্তু স্বামী জয়নাল চাচ্ছিলেন ছেলে। আর তাই প্রতিবারেই কন্যার জন্মের পর সাহেরাকে অসহ্য নির্যাতন সহ্য করতে হয়।

একবার তালাকও দেয়া হয় সাহেরাকে। অবশেষে তৃতীয় সন্তান তাহমিনার জন্মের নয় মাস পরে শুধুমাত্র কন্যা শিশু জন্ম দেয়ার অপরাধে- নরসিংদীর মনোহরদী ঊপজেলার লেবুতলা ইউনিয়নে নোয়াকান্দি গ্রামে স্বামীর বাড়ির শোবার ঘরে সাহেরার মৃত্যদেহ পাওয়া যায়। ’ এ রকম অনেক ঘটনাই ঘটে সেখান থেকে আমরা এক-আধটা ঘটনা খবরের পাতায় দেখে আঁতকে উঠি। বাকি গুলো আড়ালেই থেকে যায়। যে স্বামী বা যে বাবা একজন নারীর জন্মকে বৃথা মনে করছে, সে কি কখনো চিন্তা করে না যে, একজন নারীর গর্ভধারনের ফলেই সে এই পৃথিবীর মুখ দেখতে পেরেছে! আর যে বাবা ‘পুরুষ সমাজের ভয়ে কন্যার জন্মকে ভয় করছে, সেই সমাজের সে নিজেও তো একজন; তাহলে সে কি নিজের অপকর্মের জন্য ভয়ে ভীত হয়ে কন্যার জন্মে বাধাঁ হয়ে দাড়াচ্ছে? আর যেখানে প্রত্যেকে সরলভাবে হলেও জানেন, একজন নারী একা একা সন্তানের জন্ম দিতে পারেন না! দশ মাস দশদিন না হয় একা একা ধারন করেন কিন্তু সৃষ্টিতো দুজনের অংশগ্রহন ছাড়া সম্ভব নয়! তারপরেও সন্তান কন্যা না পুত্র হবে তার দায়ীত্ব কেন শুধু একজন নারীর উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে? নারীর প্রতি সমাজের এই দৃষ্টিভঙ্গী যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এবং নারীও আবার সব কিছু মুখ বুঝে মেনে নিয়ে এটাকে নিজের সমস্যা মনে করে পরবর্তী সন্তান যেন পুত্র হয় সেজন্য পীর-দড়বেশের স্বরনাপন্যও হচ্ছেন কেউ কেউ।

ফলে সমস্যা থেকেই যাচ্ছে! আর তা হচ্ছে প্রয়োজনীয় শিক্ষা এবং সচেতনতার সুযোগের অভাবের কারনে। একদিকে অসচেতন নারী নিজেকে দুর্বল মনে করে প্রতিবাদ না করে বরং নিজেকেই দায়ী মনে করে দুঃখ করছে! অন্যদিকে অসচেতন পুরুষ নারীর এই দুর্বল মনের সুযোগের স্বদব্যবহার করে পক্ষান্তরে নিজেকেই ঠকাচ্ছে। কারন নারী ছাড়া পুরুষ অপূর্ণ। তাই এক্ষেত্রে বলা যায়, প্রয়োজনীয় যথার্থ শিক্ষা ও সচেতনতার অভাবেই পুরুষ শাসিত সমাজও তার সাময়িক শান্তির জন্য কেবল ক্ষমতার অপব্যবহার করছে আর নারী তার ক্ষমতা সম্পর্কে অবগত না হওয়ার কারনে নিজেকে বলি দিচ্ছে। আর তা চলছে যুগ যুগ ধরে।

সমাজ সংস্কার হচ্ছে, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি ঘটছে, নারী শিক্ষা বৃদ্ধি, কর্মজীবী নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি, সচেতনতা মূলক প্রশিক্ষণ, ক্যাম্পেইন/প্রচারনা, দেশের ক্ষমতাধর পদে নারীর অবস্থান বৃদ্ধি প্রভৃতি সবেই হচ্ছে কিন্তু কোথায় যেন গলায় মাছের কাঁটা আটকে থাকার মতো এ সমাজে নারীর অবস্থান দীর্ঘ যুগ পূর্বের ন্যায় আজও একই জায়গায় রয়ে গেছে। তাই তো দেখা যায়- সমাজের কিছু নারী যখন সন্তান গর্ভধারন থেকে শুরু করে সন্তান লালন-পালন করছে, সন্তানের সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, সর্বপরি একটি পরিবার পরিচালনার পুরো দায়ীত্ব কাধে নিয়ে ঘরে-বাইরে প্রতিনিয়ত পরিশ্রম করে চলছে, লড়াই করছে সমাজে নিজের ভীত মজবুত করতে, নিজের অবস্থান প্রকাশের জন্য পুরুষের সাথে সমান তালে কাজ করছে এবং পুরুষের সাথে সমান তালে পা ফেলে হাটছে রাজপথে! তখনো তাকে তাঁর সম্মান রক্ষার জন্য যুদ্ধ করতে হচ্ছে কখনো অফিসের বস, কখনো সহকর্মী আর ঘরে ফিরে স্বামীর আধিপত্তের অহমিকার সাথে। তাই এ অবস্থা থেকে উওরণের জন্য সর্বাগ্রে যেটা জরুরী তা হলো নারীর প্রতি পুরুষের মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরির্বতন এবং প্রয়োজনে তাদের সচেতনতার জন্য ব্যাপক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থ্যা গ্রহন। নারীর সম্মান ও মর্যাদা অর্জনে নারীর শিক্ষা-স্বাস্থ্য ও সচেতনতার সুযোগ বৃদ্ধির পাশা-পাশি দ্রুত প্রয়োজন পরিবার থেকে সমাজের সর্বস্তরে নারীর ক্ষমতায়ন। সমাজে কোন কাজেই কঠিন নয় যদি তা যৌথ প্রচেষ্টায় করার উদ্যোগ নেয়া হয়।

মনে রাখতে হবে নারী-পুরুষ একে অপরের পরিপূরক। কেবলমাত্র তাদের যৌথ প্রচেষ্টাতেই জন্ম দেয়া সম্ভব একটি সুন্দর সমাজের। বিঃদ্রঃ লেখাটি সংগ্রহ করা। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।