আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লাথি মারি তোর কোটায় ! লাগবে না... :-

ব্লগিং হোক আগামীর... আমার বাবা ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছিল। অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই বিষয়টা নিয়ে আমার মধ্যে যথেষ্ঠ অহংকার আছে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে স্বাধীনতা নিয়ে আমার যে বিশেষ অহংকার সেটা অন্যদের নেই। একই কথা প্রযোজ্য যারা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ, আহত, নির্যাতিত হয়েছেন, তাদের সন্তানদের বেলায়ও। বরং তাদের অহংকার আরো বেশি।

আমার বাবা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিল দেখেই আজকে আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। এটা অবশ্যই আমার অহংকার। এই অহংকার অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কোটায় প্রাপ্ত !! আমি চাই না আর্থ-সামাজিক সুযোগ সুবিধা দিয়ে আমার অহংকারকে ছোট করা হোক। আমি চাই দেশের মানুষ সারাজীবন আমার বাবার কাছে ঋণী হয়ে থাকুক। সামান্য সুবিধার বিনিময়ে আমার অহংকার আমি বিক্রি করতে চাচ্ছি না।

এই অহংকার আমি বংশ পরস্পরায় ধরে রাখতে চাই। এই অমূল্য বস্তু বিক্রয়যোগ্য নহে ! সরকারের কাছে আমারও দাবী মুক্তিযোদ্ধাদের বা তার পরিবারের সদস্যদের সকল বৈষয়িক সুবিধা প্রত্যাহার করা হোক। এতদিন এই সুবিধাকেও আমরা অহংকার ভেবে আসছিলাম, যেহেতু এটা আজ পর্যন্ত আইনসম্মত এবং সরকারঘোষিত। কিন্তু স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, এটা এখন আর অহংকারের বিষয় নয়, অপমানের বিষয়, লজ্জার বিষয়। আমরা বোকার স্বর্গে বাস করি।

এটা গনতান্ত্রিক দেশ। এখানে জনগনের প্রতি সরকারের জবাবদিহিতা আছে। জনগন না চাইলে সরকারের সেটা করা উচিৎ না। পৃথিবীর অনেক দেশেই যোদ্ধাদের বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধাদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার রেওয়াজ আছে। বাংলাদেশ অনেক দিক থেকেই আলাদা! যাদের বাবা/মা মুক্তিযুদ্ধ করেনি তারা বিষয়টা বুঝবে না সেটাই স্বাভাবিক।

কারন ‘মেধাবী’রা কখনও স্বাধীনতা নিয়ে মাথা ঘামায় না। ‘মেধাবী’দের পেটে অথবা নাভির নিচে লাথি মারার কোনো অধিকার সরকারের নেই। মজার ব্যপার হচ্ছে আমরা জাতিগতভাবে যে বিষয়টা নিয়ে সবচেয়ে বেশি অহংকার করি সেটা হলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। আমার এখন কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছে, আমি ছাড়া আর সবাই বুঝি বিষয়টা নিয়ে ভান করে ! পৃথিবীর মানুষ আমাদের এইভাবেই চেনে যে আমরা মুক্তিকামী। অর্থাৎ পৃথিবীর জনগোষ্ঠীর কাছে আমরা প্রবেশাধিকার পাচ্ছি মুক্তিকামী কোটায় ! সবাই জানে আমরা মুক্তির কামনাকে শ্রদ্ধা করি ! মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হওয়ার কল্যানে/অপরাধে কিছু সুবিধা যেমন পেয়েছি তেমন অনেক অসুবিধাও পোহাতে হয়েছে।

কেউ হয়তো কল্পনাও করতে পারবে না, শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার কারনে একটা মানুষের জীবন কতটা পাল্টে যেতে পারে। ভালো এবং খারাপ দুইভাবেই। সেইসব কথা আর না বলি। কিন্তু এটা সত্য, মুক্তিযোদ্ধারা অনেক বিপদে আছেন এখনো। শুধু অর্থ-বিত্ত না, জীবন হারানোর বিপদ।

তবে এটা সত্য, দেশে এখন ‘মেধাবী’দের দরকার। মুক্তিকামী মানুষের দরকার নেই। মুক্তিযোদ্ধারা এবং তাদের পরিবার এখন সংখ্যালঘু। আবার এটাও সত্য মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মানেই মুক্তিকামী হবে তা সবসময় সঠিক না। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়।

কফিনে রাখা হয় জাতীয় পতাকা। আমার জানামতে সেই অনুষ্ঠান শেষে ঐ জাতীয় পতাকা তার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পুরো অনুষ্ঠানের খরচ বহন করে সরকার। সেই পতাকা পরিবারের লোকজন পায় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ! সরকারের কাছে অনুরোধ করবো, জনগনের টাকা খরচ করে সেই পতাকা কিনবেন না আর। প্লিজ স্টপ দিস ননসেন্স।

এই সমস্যার এখনই সমাধান করুন। মুক্তিযোদ্ধাদের বা তাদের পরিবারের সদস্যদের বিশেষ সুযোগ-সুবিধা প্রত্যাহার করুন। এই অপমান সহ্য হচ্ছে না। আমার সেই পতাকা দরকার নেই। একটা পতাকা কেনার সামর্থ্য আমার আছে।

(এই প্রসঙ্গে আমি ইতিবাচক/নেতিবাচক কোনো ধরনের কমেন্ট আশা করছি না। কমেন্ট পাওয়া মাত্রই ডিলিট করে দেওয়া হবে। এই উগ্র আচরন ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখলে বাধিত হই। ) ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.