আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আশাহত জলপরী (ছোটগল্প)

আমার পোস্ট আমার মতামতঃ যে কারো মতের সাথেই দ্বিমত হতে পারে। কার্তিক মাসের মাঝামাঝি সময়ের একটা রাত। ক্ষণে ক্ষণে বয়ে আসা হালকা ঠাণ্ডা বাতাস বুঝিয়ে দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। ঝিঁঝিঁ পোকার নিরবিচ্ছিন শব্দে কান ঝালাপালা হওয়ার যোগাড়, দূর বন থেকে একনাগাড়ে ভেসে আসছে একাকী হুতোম পেঁচার ডাক। রাত প্রায় বারোটা বাজতে চলল।

প্রকৃতির এত কোলাহল অবলীলায় অবহেলা করে পাহাড়ের উপর হোস্টেলের তিনতলার ব্যাল্কনিতে নির্ঘুম দুটি চোখ অপলকে অন্ধকারে খুঁজে ফিরছে তার হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন। আকাশের তারাগুলিও আজ অনেক নিষ্প্রভ যারা এতদিন স্বপ্নের দোসর হয়ে পাশে ছিল। গ্রিলে হেলান দিয়ে সেই সন্ধার পর থেকেই পুরনো চেয়ারটায় নিস্প্রান বস্তুর মত বসে আছে নীমা। দীর্ঘ তিন বছরের সুপ্ত বাসনা হারিয়ে কুলহারা নাবিকের মত আজ নিজেকে খুব অপরিচিত লাগছে নিজের কাছেই। হ্যাঁ, আজ লিখতে বসেছি চমেকের এক জলপরীর আশাভঙ্গের গল্প।

একটি ছোট্ট ঘটনা কিভাবে সারাটা জীবনকে পরিবর্তন করে দিতে পারে তা সাধারণের বোধগম্য নয়, আর এই দুর্বোধ্যতার কারনেই জীবনের পথ এতটা রক্তিম এবং পঙ্কিল। ছোটবেলা থেকেই পারিবারিক অনুশাসনে বেড়ে ওঠা নীমার স্কুল কলেজ লাইফের সকল গাম্ভীর্য আর কঠোরতা উধাও হয়ে যায় এক মুহূর্তের অপার্থিব একটা অনুভূতির ধাক্কায়। তিন বছর আগের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামের সেই দিনটার কথা স্পষ্ট মনে পড়ছে তার। স্বপ্নের রাজকুমারের অভিব্যক্তি নিয়ে যখন দুই ব্যাচ সিনিয়র আরিফ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নবীনদেরকে বরণ করতে শুভেচ্ছা বার্তা বয়ে এনেছিল, তার তারুণ্য দিপ্ত পদচারনা আর অসাধারণ ব্যক্তিত্ব হঠাত দুমড়ে মুচড়ে দিল নীমার মনের দেয়াল। এককথায় অবিশ্বাস্য একটা ফার্স্ট সাইট!!! সেই স্বপ্নে জড়ানো সুন্দর মুহূর্তটাই তাকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছিল কল্পনার রঙ্গে স্বপ্নের জাল বুনতে।

বারবার মনে হচ্ছিল এই বুঝি আমার স্বপ্নের রাজপুত্র। সেদিনের আর কিছুই মনে নেই নীমার। আরিফকে দেখার পর থেকে নিজেকে নিজেই চিনতে পারছিলনা সে। অসম্ভব একটা কাব্যিক পরিবর্তন এসে গেল নিজের মধ্যে। একাকী বসে বসে স্বপ্নের জাল বোনা, ক্যাম্পাসে গেলে নিভৃতে একটা মানুষকে খুঁজে বেড়ানো, দূর থেকে তাকে দেখা, হয়তো সুলক্ষণে সেই পাশ কাটিয়ে গেল, স্বপ্নের মত কাটছিল প্রথম বর্ষের দিনগুলি।

ধীরে ধীরে একটু একটু করে বাস্তবতার পথে নেমে আসে ও। নিজেকে নিজেই প্রশ্নের বাণে আবৃত করে, কিভাবে স্বপ্নের নাগালে যাওয়া যায়!! একটু একটু করে লক্ষ্য করে দেখে তার পছন্দ অপছন্দ, ভালো লাগা, ইচ্ছা, আগ্রহ, দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড। মনে মনে স্থির করে নিজেকে সাজিয়ে নেবে তার পছন্দের মানুষ হিসেবে। হয়তো এক সময় স্বপ্ন হাতে এসে ধরা দেবেই। বান্ধবীদের সাথে নানা কথায় জানা হয় টুকিটাকি তথ্য।

খুঁজতে খুঁজতেই একদিন ফেসবুক আইডিটা খুঁজে পায় আরিফের। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতে গিয়ে বুকের মধ্যে ধক করে ওঠে খানিকটা। নানা দ্বিধা এসে ভর করে মাথায়। যদি ইগ্নোর করে তবে কি কষ্ট পাওয়া হবেনা!! কিন্তু এ ছাড়া তো আপাতত কাছে যাওয়ার সুযোগ ও নেই। দশ মিনিট চোখ বন্ধ রেখে সেন্ড করেই দেয় রিকোয়েস্ট।

৪-৫ দিন অনিশ্চয়তায় ভুগিয়ে নোটিফিকেশন আসে “আরিফ আদনান এক্সেপ্টেড ইউর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট” হোস্টেলের নতুন আবাসনের চাপ সামলে রাত দশটার দিকে ফেসবুকে লগ ইন করে যখন নোটিফিকেশনটা পেল যেন পরম আরাধ্য এক টুকরা মুক্তো হাতে পেল। মুহূর্তেই একটা অদ্ভুত সুখের অনুভূতি খেলে গেল মনের মধ্যে। অতি আনন্দে মানুষের চোখে অশ্রু নেমে আসে, সেদিন এই অশ্রু আড়াল করতে এই ব্যাল্কনিতেই এসে বসে ছিল অনেকক্ষণ। ফেসবুকে পরিচয়ের মাধ্যমেই মূলত আরিফের কাছাকাছি আসে নীমা। ধীরে ধীরে তাকে জানার চেষ্টা করে।

যতই দিন যায় আরিফের হার্ডকোর পারসোনালিটি ততই আকর্ষণ করে নীমাকে। এক সসময় মনে শঙ্কা জাগে তার এই স্বপ্নের পরিণতি হবে মৃত্যু। খুব কঠিন আর বন্ধুর এক স্বপ্নের আঁকিবুঁকি করে চলে দিনদিন। নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে ঠিক যেমনটি তার স্বপ্নপুরুষের পছন্দ। ফেসবুক ছেড়ে তার সাথে যোগাযোগ ইয়াহু, ফোনেও চলে যায়।

একসময় নীমা বুঝতে পারে আরিফ তাকে বোনের মত করে দেখতে চায়। তার মনের আকুতি আর স্পষ্ট করে বলা হয়না, সে জানেনা কিভাবে একটা মেয়ে তার মনের কথা পছন্দের মানুষকে বলে! এক ধরণের অদ্ভুত মায়ার বাঁধনে স্নেহের আড়ালে তার অন্তরের অস্ফুট আকাঙ্ক্ষা বারবার থেমে যেতে গিয়েও পারেনা। খুব ইচ্ছা করে মুখ ফুটে মনের কথাটি বলে ফেলে কিন্তু তা আর বলা হয়না যখন হার্ডকোর হবু ডাক্তারের হার্ডকোর চেহারা সামনে আসে। মানুষটি এক অদ্ভুত আচরণ করে বেড়ায়। সবসময় ব্যস্ত ব্যস্ত ভাব, সবকিছুতেই গাম্ভীর্য মুড়িয়ে চলে, পাশে কেউ এলে সে একটা প্রাণী বৈ আর কিছুই তার মনে হয়না, তাকে যে একজন অনুসরণ করছে প্রতিক্ষণ, পাশে দাঁড়াতে উদ্বিগ্ন হয়ে আছে, হাতে হাত রেখে কিছু বলতে চায়, চলতে চায় জীবনের অনিশ্চিত সময়ে, কিছুই তার নজরে পড়েনা!!! মানুষ কি করে এত উদাসীন হয় পাশের মানুষের মনের প্রতি!! তবু নীমা হাল ছাড়ে না, তার মন বলে এক সময় সে বুঝবেই তার মনের কথাটি।

হাজারো স্বপ্নের আঁকিবুঁকি চলে মনের ক্যানভাসে, বাস্তবে চলে নিজেকে পরিবর্তনের একটা আপ্রাণ প্রচেষ্টা যাতে স্বকীয়রূপে হাজার প্রাণের ভিড়ে সে তার স্বপ্নপুরুষের নজরে আলাদাভাবে ধরা পড়তে পারে। আক্ষেপঃ চিরন্তন বাঙ্গালী নারীর বৈশিষ্ট্য ডিঙিয়ে বলা হয়ে ওঠেনা ‘তুমি কি জানো, আমি তোমাকে ভালোবাসতে চাই!! একটিবারও কি নজরে পড়েনা আমার হাপিত্যেশ আর বিরামহীন প্রতীক্ষা!!” শৈশব থেকেই অনেকটা অন্তর্মুখী স্বভাবের মেয়ে নীমা। চুপচাপ ভদ্র মেয়ে হিসেবে বাবা-মার কাছে তার সুনাম অফুরন্ত। তিন ভাইয়ের মধ্যে সে একটাই মেয়ে, তাই আদর সোহাগে থেকেই তার বেড়ে ওঠা। চট্টগ্রামের সেরা বালিকা বিদ্যালয় থেকেই তার পড়াশোনা, চট্টগ্রাম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক দিয়ে এখন মেডিক্যালের স্টুডেন্ট।

স্কুল জীবন থেকেই খুব মেধাবী হওয়ায় কখনোই তাকে দমতে হয়নি। রক্ষনশীল পরিবারের মানসিকতায় বেড়ে ওঠা নীমা কখনোই কল্পনা করেনি কারো সাথে বিয়েপূর্ব এফেয়ারে যাবে, কাউকে দেবতা করে মনের ঘরে বাতি জ্বালাবে সকাল সাঁজে। হয়তো ‘চর্যাপদ’এর পঙক্তি ‘আপনা মাংসে হরিনা বৈরি’ কথাটির বাস্তবতা হিসেবেই স্কুল কলেজ লাইফে তিলোত্তমা নীমাকে অনেক আবেদন নিবেদন পাশ কাটিয়ে উঠতে হয়েছে। বরাবরের মতই ও এসব ব্যাপারে চরম একরোখা ছিল তাই কলেজে তার একটা বদ(!)নামও তৈরি হয়ে গিয়েছিল। সে জানে বাবা-মা তাকে কতটুকু ভালোবাসে, পরিবারের দাবীকেই সে সবসময় বড় করে দেখেছিল।

কিন্তু এর মধ্যে কি যে হয়ে গেল!! নিজেই নিজের কাছে সম্পূর্ণ অপরিচিত। মাঝেমাঝে অতীতের কথা মনে পড়লে ঐ মানুষগুলোর জন্য মায়াই হয়। আমরা যাহা পাই তাহা চাইনা আর যাহা চাই তাহা পাইনা। একরকম লুকোচুরি খেলতে খেলতে প্রায় তিনটা বছর কেটে গেল অনায়াসে। স্বপ্ন আর দায়িত্ব, ভালোবাসা আর পড়াশুনা সবকিছু সামলে খুব ভালোভাবেই সময়গুলো কাটছিল।

মনে মনে একটা ধারণা ছিল একদিন সে মনের কথাটি বলার সুযোগ পাবেই অথবা আরিফ তার অবস্থান ধরতে পারবে। কিন্তু সেই দিনটি আর আসেনি... অকালে ঝরে পড়েছে তার স্বপ্ন... বিকেলে বান্ধবীরা সবাই কি নিয়ে যেন ক্যাফেটেরিয়ায় হট্টগোল করছিল, নীমা ক্লাস সেরে ওদিকে না গিয়ে সরাসরি হোস্টেলে চলে আসে। ফ্রেশ হয়ে বসে ফেসবুকে লগ ইন করেই যেন ভূত দেখার মত চমকে ওঠে নীমা। “আরিফ আদনান ইজ নাউ ইন অ্যান ওপেন রিলেশনশিপ উইদ অনামিকা ♥” !!!!!!!!!!!! প্রোফাইল ঘেঁটে দেখে মেয়েটা ওরই ব্যাচমেট অনামিকা, যাকে দেখে কখনোই মনে হয়নি এমন কিছু আছে কারো সাথে। বিস্ময়ের ঘোর কাটতেই নিজেকে আবিস্কার করে এক অসীম শূন্যতার মাঝে।

অশ্রু বাঁধ ভেঙ্গে ভাসিয়ে দেয় রক্তিম কপোল। মনের গহীনে হুহু করে বেজে উঠে এক করুণ সুর। অকুল সমুদ্রে পাল ছেড়া তরীর হতাশ নাবিকের মনের অবস্থা কেমন হয় তা জানা নেই। ধীর পায়ে ব্যাল্কনিতে গিয়ে দাঁড়ায় নীমা। দূর দিগন্তে নীলিমায় দেখা মেলে নীড়ে ফেরার সংগ্রামে সহস্র লড়াকু চাতকীর ঝাঁক, হারিয়ে যায় জীবনের গোধূলিতে।

শেষ বিকেলের পাখির কলকাকলি পাহাড়ের নির্জনতাকে ভেঙ্গে তার পাশে এসে দাঁড়াতে চায় কিন্তু সবকিছুই আজ অনর্থক। সেগুন গাছের মলিন পাতাগুলি আজ খুব করে নজর কাড়ে। তরুণ পত্রপল্লবের মাঝে ওরাই যেন আজ সঙ্গী। ঝরে পড়ার অপেক্ষায় অলস কালক্ষেপণ, অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঝুলে থাকা অনধিকার শাখে। ধীর লয়ে সন্ধ্যা নামে পৃথিবীতে, প্রকৃতি মুখ লুকায় অন্ধকারের আঁচলে, আর নীমা খুঁজে বেড়ায় একটি আশ্রয়, কোথায় লুকাবে! যার পথ চেয়ে এতগুলি প্রহর কেটে গেল আজ তার অধিকার অন্যের কাছে।

দরজার আওয়াজ শুনে টের পায় জয়া রুমে এসেছে। জয়া আর নীমা দুইজন হোস্টেলের এই রুমে থাকছে গত আড়াই বছর ধরে। দীর্ঘ মেডিক্যাল কলেজ লাইফে তারা দুইজন একান্ত আপন হয়ে আছে। পড়াশোনা, ফ্যামিলি, হাসি-কান্না সবকিছুতেই একসাথে থাকে দুজন। কিন্তু অন্তর্মুখী নীমা কখনোই নিজের একান্ত মনের কথা জয়ার সাথে পুরোপুরি শেয়ার করেনি যদিও ওর মনের এই কথাটা কিছু জানতো জয়া, তাই রুমে ঢুকেই পাশে এসে দাঁড়ায়।

ওর কাঁধের উপর হাত রেখে ডাকে, ‘নীমা’ -‘হু’ -‘মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছিস কেন এখানে!’ -‘কিছুনা... এমনিতেই ভালো লাগছেনা...’ বলে একটু স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে নীমা। -‘আর লুকিয়ে লাভ কি!’ নীমাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে হালকা গলায় বলে জয়া। নীমার একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে তখন। আসলেইত... জয়া কি তাহলে আগেই জেনেছে!!! জানতেই পারে... এতক্ষন ক্যাম্পাসে ছিল। তবু প্রশ্ন করে, ‘তুই কি জানিস?’ -‘হু, তুই কষ্ট পাবি ভেবে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তোকে বলতে পারিনিরে, স্যরি’ -‘তুই আগে জানতি?’ -‘জানতাম মানে অতটা না, অনামিকার সাথে হালকা যোগাযোগ ছিল তা তো তোর সাথেও ছিল, কিন্তু এই মানুষটাকে ও যে কনভিন্স করেছে এটাই আশ্চর্য লাগছে!’ -‘কখন থেকে?’ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে জয়ার দিকে তাকায় নীমা।

-‘বিকেলে শুনলাম অনামিকা নাকি কিছুদিন ধরেই আরিফ ভাইকে কনভিন্স করার চেষ্টা করছিল, সরাসরি প্রপোজও করেছে। কালই নাকি তাদের বোঝাপড়া হয়েছে। ’ -‘ওঃ’ -‘তুই আর কি করবি! এমন নিরামিষ মানুষেরও কোন ভরসা নাই, যদি ফিরিয়ে দিত তাহলে আরও বেশি কষ্ট পেতি। তার চেয়ে বাদ দে এসব চিন্তা, আঙ্কেল আন্টের সাথে কথা বল ভালো লাগবে আর তাদের কথাও মাথায় রাখ, সব ঠিক হয়ে যাবে। ’ -‘হুম...’ বলে অন্ধকারের দিকে কিছু একটা খোঁজার ভান করে মুখ ফিরিয়ে নেয়।

-‘আল্লাহ্‌ যা করেন ভালোর জন্যই করেন, হয়তো এর মধ্যেই তোর মঙ্গল আছে। নিজের উপর আস্থা রাখ। ’ বলে নীমার গায়ে একটা ঝাঁকুনি দেয় জয়া। বাচ্চা মেয়ের মত জয়াকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে নীমা। এই মানুষটির প্রেরণা যেন অনেক আশা যোগায়।

‘আমি পারিনি জয়া, আমি পারলাম না, আমি তার নজরের মধ্যে যেতে পারলাম না। ‘ -‘ধুর, পাগলামি রাখ... ফ্রেশ হয়ে আয়, কাল সাড়ে দশটায় এক্সাম। ’ -‘আমার আর কিছু হবেনা... তুই যা... আমি একটু একাকী থাকি। ’ -‘নীমা!!’ -‘প্লীজ’ বলে গ্রিলে হেলান দিয়ে ভাঙ্গা চেয়ারটায় বসে পড়ে নীমা। জয়া আর কথা না বাড়িয়ে ভিতরে চলে যায়।

বুঝতে পারে ওর মধ্যে কি চলছে। আরিফ ভাইয়ের প্রতি ওর আগ্রহের কথা জানলেও ও যে এতটা উইক হয়ে আছে বুঝতে পারেনি। জানলে এমন সর্বনাশ কখনোই হতে দিতনা, আরও আগেই এর একটা এস্ফার ওস্ফার হয়ে যেত। রাত প্রায় ভোর হতে চলল। নির্ঘুম রাত কাটিয়ে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে মেঝেতে বসে আছে নীমা।

নিজের উপর সম্পূর্ণ হতাশ হয়ে পড়েছে ও। বেঁচে থাকার কোন আগ্রহই আর পাচ্ছেনা। সব আশা ভেসে গেল দমকা হাওয়ায়। দূর থেকে আজানের শব্দ ভেসে আসছে। হাঁটু টেনে মুড়িয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে একটু ভাবার চেষ্টা করে কি করবে এখন! ধীরে ধীরে দিনের আলো ফুটতে শুরু করেছে।

পাহাড়ের গায়ে হাজারো বুনোফুল উঁকি দিয়ে অবস্থান জানিয়ে দিচ্ছে। জয়া বিছানা ছেড়ে ব্যাল্কনিতে এসে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল তার দিকে। তারপর পাশে বসে বলল, ‘এই যখন অবস্থা, আমাকে আগে বলিসনি কেন?’ বলে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকিয়ে থাকে নীমার দিকে। নীমা কিছুই বলতে পারেনা, মুখ নামিয়ে বসে থাকে। ‘চল, গোসল করে একটা ঘুম দে, ভালো লাগবে।

‘ বলে আবার ওকে তাড়া দেয় জয়া, তখনই ডোরবেলটা বেজে ওঠে। বাহির থেকে যেন একটা আওয়াজ ভেসে আসে, ‘নীমু’ দুজনেই বুঝতে পারে কে এসেছে। নীমা নিজেকে একটু গুছিয়ে ঊঠে গিয়ে দরজা খুলতে যায়। দরজার কপাট টেনে হঠাত বিস্ময়ে আবিভুত হয়ে যায় ও। বাবা দাঁড়িয়ে আছে এক ঝুড়ি শিউলি ফুল নিয়ে।

বুঝতে দেরি হয়না জয়া বাড়িতে ফোন করে কিছু একটা বলেছে নিশ্চয়ই। ঘটনার আকস্মিকতায় একটু হতবিহবল হয়ে চেয়ে থেকে তখুনি ঝাপটে ধরে বাবাকে। একজন বাবা বিস্ময়ের ঘোরে থেকেও বুকে জড়িয়ে ধরেন তার আদরের ছোট্ট জলকন্যাকে। কন্যাটির একনাগাড়ে ফুফিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করেন মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে। সন্তান বাবা-মার কাছে সারাজীবন সন্তানই থাকে, কখনোই বড় হয়না।

ভালোবাসা শুধু কাউকে জীবনসঙ্গী করে পাওয়ার জন্যই নয়, ভালোবাসা হোক পরিবার আর সমাজ সবার জন্য। সমাজের প্রতিটি রন্ধ্রে পৌঁছে যাক ভালোবাসার জয়ধ্বনি। মুছে যাক সকল গ্লানি, হতাশা আর না পাওয়ার বেদনা। সবার জন্য শুভ কামনা রইল। অটঃ কারো অনুরোধে গল্প লেখা খুব কঠিন, বিশেষ করে আমার মত অ্যামেচার ব্লগারের... কখনও লিখিওনি।

প্রথমবারের মত আমার একজন ফ্যানের জন্য লিখলাম গল্পটা। হয়তো এটাই শেষ। ৪ঠা নভেম্বর, ঐ ফ্যানের জন্মদিন ছিল, তার জন্মদিনে আমার পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা আর আমার এই উপহার। সুখ আর আনন্দে ভরে উঠুক ভবিষ্যৎ দিনগুলি। সবার জন্য শুভকামনা।

(ঘটনা, চরিত্র আর অবস্থান সম্পূর্ণ কাল্পনিক, কারো জীবনের সাথে মিলে গেলে লেখক তো বটেই পৃথিবীর কেউই দায়ী নয়। ) ধন্যবাদান্তে ডিউরডান্ট ডি শিমুল  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।