সবুজের বুকে লাল, সেতো উড়বেই চিরকাল এই পোস্টটা ঢাকাইয়া কোটায় স্টিকি করার দাবি জানাই।
সমগ্র বাংলাদেশের মানুষই খাদ্য রসিক, তাতে কোন সন্দেহ নেই। আমাদের দেশের মত এত আইটেমের খাবার, আমার দেখা মতে অন্য কোন দেশে নেই। এক মিস্টি আর বেকারির যা আইটেম, তা বিশ্বের যেকোন দেশকে টাসকি লাগিয়ে দিতে পারে।
তবে তেলেভাজাপ্রেমি এবং মাংসাশি বলে চরম কুখ্যাত ঢাকাইয়াদের ইফতারির মেনুতে মাংশের সেই রকম উপস্থিতি নেই বললেই চলে।
চলুন এক নজরে আদি ঢাকাইয়া ইফতারের মেনু দেখে নেই। ফলে রোজাদারদের ঈমান আর দৃঢ় হবে, এবং কিঞ্চিত সোয়াব আমার পক্ষ্যেও আসবে।
মাখন ও মাঠা...
সারাদিন রোজা রাখার পর, পেটকে ঠান্ডা রাখার সর্বোত্তম পদ্ধতি।
পেপে ও শশা পেট ঠান্ডা এবং সাথে অনাহারি পাকস্থলিতে সলিড কিছু দেয়ার জন্য খুব ভালো।
বরফ দেয়া সরবত
দই, লেবু, তোকমা, ইসুবগুল, রুহ আফজা।
এখন জিজ্ঞেস করবেন না, তোকমা বা ইসুবগুল কি ! এর মাত্র একটি নামই জানি আমি।
ফলঃ পেপে আর শশা ফল হিসাবে তো খাওয়া হয় না। তাই আলাদা করে খেজুরের নাম বলছি। যত না এর পুস্টিগত কারণে, তার চেয়ে বেশি ধর্মিয় ঐতিহ্যকে প্রাধান্য দিয়ে খাওয়া হয়ে থাকে।
মিস্টিঃ শ্রেফ জিলাপি।
তেলেভাজা প্রেমি হিসাবে ঢাকাইয়া ইফতারে তেলেভাজা থাকবে না, সে কি হয়?
১) পুলি পিঠার আদলেই গড়া মচমচা স্বাদের সমুচা। ভেতরে কিমা বা পনির দেয়া থাকে।
২) সিঙ্গারাঃ চকবাজারের এই সিঙ্গারার ভেতরে আলুর পুর দেয়া থাকলেও, আদা এবং চীনা বাদাম যুক্ত করা থাকে।
৩) পিয়াজুঃ
তেলেভাজার রাজা এই জিনিস। বানানো অতি সহজ।
মুসুরি বা মটরের ডাল ভিজিয়ে নরম করে এর পর পিষে ফেলে, সাথে হাল্কা খাবার সোডা, লবন, বেশি করে পিয়াজ কাচা মরিচ মাখিয়ে হাতের তালুতে চ্যাপ্টা করে ডূবো তেলে মচমচে করে ভেজে ফেলুন। অনেকে স্বাদ বৃদ্ধির জন্য হাল্কা আদা বাটা এবং গরম মসলার গুড়া ডাল বাটার সাথে মিশিয়ে নেন।
৪) ফুলুরি। এটা সাধারণত দেয়া হয়, মুড়ির ভর্তার সাথে। উপকরণ কিছুই না।
বেসন লবন আর খাবার সোডা। ঘণ তরল করে ডূবো তেলে ভাজা।
৫) আলুর চপঃ যদি নিজেরা বানাতে পারেন, তাহলে সবচেয়ে সুস্বাদু বানাতে পারেন। বাইরের গুলি কমার্শিয়াল।
আলু সেদ্ধ করে লবন আর গোলমরিচের গুড়া দিয়ে ভালো করে চটকে নেবেন।
এর পর সেখান থেকে অল্প অল্প করে ভর্তা নিয়ে গোল করে মাঝখানে ছেদ করে সেখানে পিয়াজ কুচি, পুদিনা পাতা কুচি, মরিচ কুচি এবং রান্না করা কিমার পুর দিয়ে দেবেন। হাতের চেটোয় সাবধানে চ্যাপটা করে, বেসনে ডুবিয়ে ভেজে তুলুন
মনে রাখবেন, মচমচে করতে হলে বেসনে অবশ্যই পরিমান মত (বেশি কিন্তু না) খাবার সোডা মেশাবেন। নইলে মচমচে হবে না।
৬) বেগুনি ঃ সারা দেশের মানুষের মতই বেগুণি খাওয়া হয়।
৭) বুট/ছোলা ঃ ঘোড়ার খাবার হলেও, মনুষ্য প্রজাতির জন্যও এই বস্তটি একদিকে উপদেয় অন্যদিকে পুস্টিকর।
সাধারণত ছোলা ভিজিয়ে রেখে এর পর লবণ আদা কুচি দিয়ে খাওয়াই সবচেয়ে ভালো। তবে জিহবাকে স্বাদ দিতে অনেকে একে সেদ্ধ করে পিয়াজ লাল মরিচের বাগাড় দিয়ে খেতে পছন্দ করেন।
এবার আসুন আসল জিনিসে।
মুড়ির ভর্তা
এই জিনিস বছরের ওই এক মাসই মিলবে। নইলে এত হ্যাপা পোহাবে কে? মাথা কুটলেও পাওয়া যাবে না।
এই জিনিসের স্বাদ যে একবার পেয়েছে, সে বার বার খেতে চাইবে।
রেসিপি বলে দিচ্ছি।
পরিবারের সাইজ বুঝে একটা বোলের মধ্যে কাটা পেয়াজ, কাচা মরিচ কুচি, লেবুর রস, লবন , সরিসার তেল (আন্দাজ মত) নিয়ে হাল্কা কচলে নেবেন। এর পর সেখানে ডাবলি সেদ্ধ ( বুট না কিন্ত !) ভাজা ফুলুরি আর পিয়াজু কুচি কুচি করে ছিড়ে এক সাথে ভালো করে মাখাবেন। এর পর মুড়ি ( আনুপাতিক হাতে সেটা হবে সেই ভর্তার অর্ধেক) দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে খেয়ে দেখুন।
বার বার খেতে চাইবেন।
এই মুড়ির ভর্তার মধ্যে স্বাদের বৈচিত্র আনার জন্য অনেক সময় কাবাব, সিঙ্গারা, সেদ্ধ বুট, সমুচা, মায় কি জিলাপি পর্যন্ত মেশানো হয়।
আর যেহেতু বিরানিখোর বলে রোজার সময়েও বিরিয়ানি না হলে চলে না, তাই সেই ভর্তার মধ্যে অনেকে বিরিয়ানি মিশিয়েও খেয়ে থাকেন।
রোজা রাখুন, সংযম করুন, নিজেও ইফতারি করুন, আমাকেও ইফতারি খাওয়া। আল্লাহ আপনাদের সবার রোজা কবুল করুন।
সবাইকে মাহে রমজানের শুভেচ্ছা। রামাদানুল মোবারক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।