আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্রিটিশ ভারতের চিত্রশিল্পীরা

বিভিন্ন ব্লগে এবং সাইটে আমরা বিভিন্ন সময় অনেক ছবি, স্কেচ, আলোকচিত্র দেখে থাকি। কিন্তু এর পিছনের মানুষগুলো সম্বন্ধে খুব একটা তথ্য পাওয়া যায় না। বেশ কয়েক বছর আগে ঢাকার শতবর্ষের পুরোনো কিছু ছবি দেখে আমি সত্যিই অভিভূত হয়েছিলাম। তখন থেকেই এই সংক্রান্ত ছবি, স্কেচ, আলোকচিত্র এবং অন্যান্য কিছুর খোঁজে রাতের পর রাত নেটে কাটিয়েছি এবং সেই সব শিল্পীদের সম্বন্ধে তথ্য পেতে চেষ্টা করেছি। এরই ফসল ‘ব্রিটিশ ভারতের চিত্রশিল্পীরা’।

তবে আমি মূলত তাদেরই এখানে অন্তর্ভূক্ত করেছি যারা বর্তমান বাংলাদেশের উপর তৎকালীন সময়ে কাজ করেছেন, সেটা যে মাধ্যমেই হোক না কেন। সবার ভালো লাগলেই এই প্রচেষ্টা সার্থক মনে করব। পরবর্তীতে সংগ্রীহিত সব ছবি, স্কেচ এবং আলোকচিত্র পর্যায়ক্রমে শেয়ার করার চেষ্টা করব। ১। চার্লস ডি’ওয়লি (Charles D'Oyly) চার্লস ডি’ওয়লি ভারতে আসেন ১৭৯৭ সালে।

প্রথম দিকে তিনি কলকাতার Court of Appeal-এ রেজিষ্ট্রারের সহকারী হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তীতে ঢাকার কালেক্টর হিসেবে ১৮০৮-১৮ সাল পর্যন্ত ছিলেন। ১৮২১ সালে তাকে পাটনার আফিম এজেন্ট নিয়োগ দেওয়া হয়। তার ঢাকার অবস্থানকালীন সময়ে তিনি জর্জ চিনারীর (George Chinnery) সাথে পরিচিত হন এবং তার কাছে ১৮০৮-১৮১২ পর্যন্ত চিত্রকলায় শিক্ষা লাভ করেন। তিনি একজন অপেশাদার চিত্রশিল্পী ছিলেন, কিন্তু তার অনেক কাজ তৎকালীন ইউরোপীয়ান সমাজে প্রসংসা লাভ করেছিল।

তিনি 'Behar Lithography' নামে একটি লিথগ্রাফিক প্রেস প্রতিষ্ঠা করেন; এছাড়াও তিনি 'United Patna and Gaya Society' or 'Behar School of Athens' নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন যার উদ্দেশ্য ছিল সকলের বিনোদনের জন্য কলা এবং বিজ্ঞানের প্রচার ও প্রসার ঘটানো। তিনি তার ‘Antiquities of Dacca’ এলবামের জন্য বিখ্যাত যেখানে ঢাকার উপর আঁকা অনেকগুলো স্কেচ স্থান পেয়েছে। [Sir Charles D'Oyly seated at a table, smoking a hookah, his clerks seated nearby, watching opium being weighed; by Sir Charles D'Oyly, 1820's] ২। ফ্রিয ক্যাপ (Fritz KAPP) ফ্রিয ক্যাপ ১৮৮০ সাল থেকে কমার্সিয়াল ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করেছেন। সেই সময় তার কলকাতার চোরঙ্গী রোড এবং হুমায়ুন প্লেসে স্টুডিও ছিল।

১৯০০ সালের প্রথম দিকে তিনি ঢাকার ওয়াইজঘাটে একটি স্টুডিও স্থাপন করেন। ভারতবর্ষের তদানীন্তন ভাইসরয় লর্ড কার্জন যখন ঢাকা আসেন তখন তিনি কার্জন কালেকশন (Curzon Collection) নামে একটি এলবামের কাজ করেন। তিনি জার্মান ছিলেন। একটি অন্যরকম তথ্যঃ আব্দুল কাদের খলিফা নামে এক দর্জি তার বিরুদ্ধে মজুরী আদায়ের জন্য মামলা করেছিলেন। দেখুনঃ http://www.indiankanoon.org/doc/16576/ ৩।

জর্জ চিনারী (George Chinnery, 1774-1852) জর্জ চিনারী ১৭৭৪ সালে লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। সেখানে তিনি তিনি রয়্যাল একাডেমি স্কুলে অধ্যয়ন করেন। তিনি ১৭৯৬ সালে আয়ারল্যান্ড যান; চিত্রশিল্পী হিসেবে সেখানে তিনি সামান্য সাফল্য পান। ১৭৯৯ সালের ১৯শে এপ্রিল তিনি ম্যারিয়ানের (Marianne née Vigne) সাথে ডাবলিনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৮০১ সালে তিনি স্ত্রী এবং দুই শিশু সন্তান ছাড়াই লন্ডনে চলে আসেন।

১৮০২ সালে তিনি গিলওয়েল (Gilwell) নামক জাহাজে মাদ্রাজ (বর্তমানে চেন্নাই) পাড়ি জমান। মাদ্রাজে তিনি একজন চিত্রশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন এবং পরবর্তীতে কলকাতায় তার সাফল্য অব্যাহত থাকে এবং তিনি ভারতীয় ইংরেজ সমাজে একজন মুখ্য চিত্রশিল্পী হিসেবে সমাদৃত হন। কিন্তু আর্থিক ভাবে তিনি দুরবস্থার ভিতরে পতিত হন; ১৮২৫ সালে দেনায় জর্জরিত চিনারী চায়নায় চলে আসেন। জর্জ চিনারী ‘গার্নে শর্টহ্যান্ড’ শিখেছিলেন তার পিতা এবং পিতামহের কাছে; এই শর্টহ্যান্ডের তারই একটি পরিবর্তিত রূপ তিনি তার আঁকা পেন্সিল স্কেচে ব্যবহার করতেন নোট নেবার জন্য। ১৮৪৬ সালে তিনি কিছু সময়ের জন্য হংকং গিয়েছিলেন, কিন্তু সেখানে তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে; এই অবস্থায়ও তিনি ইংরেজদের এই সদ্য স্থাপিত কলোনীর উপর আনুপুঙ্খিক কাজ করেন।

১৮৫২ সালের ৩০শে মে তিনি ম্যাকাওতে মৃত্যুবরণ করেন। ৪। থিওডর জুলিয়াস হ্ফম্যান (Theodore Julius Hoffman) এবং পি.এ. জন্সটন (P.A. Johnston) থিওডর জুলিয়াস হ্ফম্যান এবং পি.এ. জন্সটন কলকাতায় বিখ্যাত ‘জন্সটন এবং হ্ফম্যান’ স্টুডিও (Johnston and Hoffman) প্রতিষ্ঠা করেন ১৮৮২ সালে এবং বাণিজ্যিকভাবে ফটোগ্রাফী শুরু করেন। তারা দার্জিলিং-এ ১৮৯০ সালে আরও একটি স্টুডিও চালু করেন। ধারণা করা হয় তারা সেই সময় ভারতবর্ষের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ফটোগ্রাফার ছিলেন; তাদের কাছে ছিল উত্তর এবং উত্তর-পূর্ব ভারত, সিকিম এবং নেপালের ছবির বিপুল সংগ্রহ।

‘বর্ণ এন্ড শেফার্ড’কে (Bourne and Shepherd) তৎকালীন সময়ের বৃহত্তম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ‘জন্সটন এবং হ্ফম্যান’ আনুমানিক ১৮৮০ সালের দিকে তৈরী 'Architectural Views of Dacca, c1880' এলবামের জন্য বিখ্যাত। ৫। কুইন্টেন স্পিয়ার (Quentin Spier) কুইন্টেন স্পিয়ার সম্বন্ধে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায়নি। তিনি ঢাকায় রয়্যাল নরফোক রেজিমেন্টের (Royal Norfolk Regiment) সৈনিক ছিলেন।

নরফোক রেজিমেন্টের প্রাপ্ত ছবিগুলো তিনি এবং তার বন্ধুরা তুলেছিলেন এমন সম্ভবনাই বেশী। এই ছবিগুলো তার ছেলে ব্রায়ান হেরিংটন স্পিয়ার (Brian Harrington Spier) Flicker -এ আপলোড করেছেন। ৬। ডঃ যোসেফ ডেভিড বেগলার (Dr. Joseph David Beglar) ডঃ যোসেফ ডেভিড বেগলার আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়াতে স্যার আলেকজান্ডার কানিংহ্যামের সাথে কাজ করেছেন। তিনি উনিশ শতকে ভারতের একজন সক্রিয় আলোকচিত্র শিল্পী ছিলেন।

দিল্লীর উপর করা তার কাজগুলো ‘Archaeological Survey of India: Report for the year 1871-1872’-তে স্থান পেয়েছে। ৭। ডঃ জেমস অ্যাটকিনসন (Dr. James Atkinson, 17 March 1780 – 7 August 1852) ডঃ জেমস অ্যাটকিনসন ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী – সার্জন, প্রাচ্যবিদ্যাবিদ, সৈনিক, চিত্রকর এবং সর্বপরি একজন নবজাগরণের মানুষ। তিনি সর্বপ্রথম ভারতে আসেন ১৮০২ সালে Honourable East India Company (HEIC) –এর একটি জাহাজে সার্জনের মেট হিসেবে। তিনি যখন দ্বিতীয়বার আগমন করেন তখন তাকে HEIC-এর বেঙ্গল সার্ভিসে সহকারী সার্জন হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং বাকেরগঞ্জের (বর্তমান বরিশাল) দায়িত্ব প্রদান করা হয়।

ভাষাজ্ঞানের উপর অ্যাটকিনসনের অসাধারণ দখল ছিল যা লর্ড মিন্টোকে আকৃষ্ট করে; তিনি অ্যাটকিনসনকে কলকাতায় নিয়ে যান ১৮১২ সালে এবং কলকাতা টাকশালে Assay Master-এর সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেন। বাকেরগঞ্জে অবস্থানকালে তিনি ফার্সী এবং অন্যান্য প্রাচ্যদেশীয় ভাষা নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা করেন। ক্রমে তিনি ফার্সী সাহিত্যে পান্ডিত্য অর্জন করেন এবং ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে উক্ত ভাষার সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন। তিনি ফেরদৌসি লিখিত ‘শাহনামা’ সর্বপ্রথম ইংরেজীতে অনুবাদ করেন যা ১৮৩২ সালে প্রকাশিত হয়; এই অনুবাদকর্ম তাকে Oriental Translation Fund কর্তৃক প্রদত্ত স্বর্ণপদক এনে দেয়। ঢাকার তৎকালীন কালেক্টর চার্লস ডি’ওয়লি (Charles D'Oyly) –এর সাথে তার বন্ধুত্ব হয়।

এই সময়ে জর্জ চিনারী (George Chinnery) ডি’ওয়লির সাথে ছিলেন; অ্যাটকিনসন ও ডি’ওয়লি উভয়েই চিনারীর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন এবং তার নিকট হতে চিত্রকলার উপর শিক্ষা নেন; তারা উভয়েই ভারতীয় ল্যান্ডস্কেপ এবং গ্রাম্য জীবনের প্রতি চিনারীর আবেগ দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হন। অ্যাটকিনসন কলকাতা গেজেটের সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন (পরবর্তীতে গভর্ণমেণ্ট গেজেট ১৮১৫ সাল থেকে) যেটি ভারতের প্রথমদিকের ইংরেজীভাষী পত্রিকা ছিল। তিনি কিছু সময়ের (১৮২৫-১৮২৮) জন্য প্রেসটি লিজ নিয়ে নিজ ব্যবসা হিসেবে চালান। অ্যাটকিনসন Army of the Indus (সিন্ধু সেনাবাহিনী)-এর সুপারিন্টেন্ডিং সার্জন হিসেবে ১৮৩৮ সালে ফিরোজপুর, আফগানিস্তান অভিযানে অংশগ্রহণ নেন। তিনি ১৮৪১ সালে পুনরায় বাংলায় চলে আসেন।

তিনি এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল এবং মেডিক্যাল এন্ড ফিজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালকাটার সদস্য ছিলেন। আফগানিস্তানের উপর আঁকা তাঁর স্কেচ নিয়ে লিথগ্রাফিক ড্রইং-এর একটি সিরিজ প্রকাশিত হয় যা ছিল তখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ একটি অজানা দেশকে জানার পরিপূর্ণ মাধ্যম। তার আঁকা পঁচিশটি ছবি ১৮৩৯ এবং ১৮৪০ সালে সিন্ধু সেনাবাহিনীর কাবুল থেকে কোয়েটা এবং কান্দাহার মধ্য দিয়ে আফগানিস্তান অভিযানের সচিত্র কাহিনী। তিনি প্রতিকৃতি অঙ্কনে ছিলেন একজন প্রতিভা এবং একটি আত্ম-প্রতিকৃতি সহ তার বিভিন্ন কাজ ন্যাশনাল পোর্ট্রেট গ্যালারিতে সংরক্ষিত আছে। অ্যাটকিনসন ৪২ বছর চাকুরীর পর ১৮৪৭ সালে ইংল্যান্ডে ফিরে যান।

তিনি ১৮৫২ সালের ৭ই আগষ্ট মৃত্যুবরণ করেন। তাকে লন্ডনের ব্রম্পটন সমাধিক্ষেত্রে সমাহিত করা হয়। তিনি ডারলিংটন, ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ৮। চার্লস শেফার্ড (Charles Shepherd) চার্লস শেফার্ড উনিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে শেষ ভাগ পর্যন্ত ভারতে একজন সক্রিয় আলোকচিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছেন।

তিনি ১৮৭৯ সালে ভারত ত্যাগের পূর্ব পর্যন্ত অনেকগুলো স্টুডিওর সাথে অংশীদার হিসেবে ছিলেন, ‘Shepherd & Robertson’, ‘Howard, Bourne & Shepherd’ এবং ‘Bourne & Shepherd’ । ১৮৬৫ সালে শেফার্ড, স্যামুয়েল বর্ণের (Samuel Bourne) সাথে সিমলায় একটি স্টুডিও স্থাপন করেন; এটা পরবর্তীতে খুবই বিখ্যাত ফটোগ্রাফিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে খ্যাতি লাভ করে এবং ‘বর্ণ এন্ড শেফার্ড’ নামে পরিচিত হয়। এই সাফল্যের সূত্রে কলকাতায় ১৮৬৭ সালে এবং বোম্বেতে ১৮৭০-এ তারা স্টুডিও স্থাপন করেন। ‘বর্ণ এন্ড শেফার্ড’-কে পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন ব্যবসায়ীক স্টুডিও হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কলকাতায় এটা এখনও চালু আছে।

৯। কর্ণেল জর্জ ফ্রান্সিস হোয়াইট (Col. George Francis White, 1808-1898) কর্ণেল জর্জ ফ্রান্সিস হোয়াইট ১৮০৮ সালে ইংল্যান্ড জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৮৯৮ সালে মারা যান। তিনি ৩১তম রেজিমেন্টে একজন অফিসার ছিলেন এবং ভারতে ১৮৪৬ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। জলরং-এ তার বিশেষ আগ্রহ ছিল। হোয়াইট-এর আঁকা হিমালয়ের স্কেচ পরবর্তীতে টার্ণার এবং প্রাউট (Turner and Prout) তাদের ‘Views of India’ বইতে ব্যবহার করেন, সেটি ১৮৬০ সালে প্রকাশিত হয়।

‘Hindostan’, ‘The Shores of the Red Sea’ এবং ‘The Himalaya Mountains’ হোয়াইট-এর উল্লেখযোগ্য কাজ। রবার্ট বারফোর্ড (Robert Burford) -এর ‘Panorama of the Himalayas’ যার প্রদর্শনী হয়েছিল ১৮৪৭ সালে লিচেষ্টার স্কয়ারে, সেখানে হোয়াইট-এর অনেক ড্রইং ব্যবহৃত হয়েছিল। ১০। জন হেনরি ব্যাভেনশ (John Henry Ravenshaw, ?-1874) জন হেনরি ব্যাভেনশ বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসের কর্মচারী ছিলেন। তিনি গৌরে অবস্থাকালীন সময়ে (১৮৬৫-১৮৬৭) 'Gaur: Its Ruins and Inscriptions' নামক বিখ্যাত এলবামের কাজ করেন।

তিনি ১৮৭৪ সালে লন্ডনে ফিরে যান এবং মৃত্যুবরণ করেন; ফলে এটা অনেকদিন অপ্রকাশিত অবস্থায় ছিল। তার বিধবা স্ত্রী ক্যারোলিনের (Caroline) আন্তরিক প্রচেষ্টায় এটা প্রকাশিত হয়। কান্তজীর মন্দিরের আদিরূপ আমরা শ-এর কল্যানেই দেখতে পাই। তিনি ১৮৭১ সালে কান্তজীর মন্দিরকে ক্যামেরা বন্দী করেন, যেখানে মন্দিরের আদি স্থাপনা শৈলী চিত্রিত হয়েছে। ১৮৯৭ সালে এক ভূমকম্পে মন্দিরের নয়টি চূড়াই ভেঙ্গে পড়ে।

১১। জেমস জর্জ (James George, 1782-1828) জেমস জর্জ ১৭৯৯ সালে ৭ম বেঙ্গল নেটিভ ইনফ্যান্ট্রিতে (7th Bengal Native Infantry) লেফটেন্যান্ট পদে যোগ দেন। ১৮০৪ সালে তিনি ২৫তম নেটিভ ইনফ্যান্ট্রিতে বদলি হন; ১৮০৬ সালে তিনি গোহার অভিযানে অংশগ্রহণ করেন এবং ১৮১১ সালে লর্ড মিন্টোর ড্রাফটসম্যান হিসেবে জাভা অভিযানে অংশ নেন। জর্জ চট্টগ্রাম প্রভিন্সিয়াল ব্যাটালিয়নের কমান্ড্যান্ট (Commandant of Chittagong Provincial Battalion) ছিলেন ১৮১২-১৮২৩ সাল অবধি। ১৮২৪ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট কর্ণেল পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত হন।

তিনি শাহজাহানপুরে থাকাকালীন মৃত্যুবরণ করেন; তখন তিনি কর্ণেল ছিলেন। তিনি জলরঙ ব্যবহার করে অনেক স্থানের ছবি এঁকছেন, মালাক্কা, বাটাভিয়া, এবং প্রিন্স অব ওয়েলস আইল্যান্ড উল্লেখযোগ্য। এগুলো মূলত তিনি ১৮১১ সালে লর্ড মিন্টোর জন্য এঁকেছিলেন। তার ‘Indian Scenery Sketchbook’ যেটি Victoria and Albert Museum, London-এ সংরক্ষিত আছে, সেখানে অনেক স্থানের পাশাপাশি বাংলার স্কেচও আছে। চট্টগ্রাম অবস্থানের সুবাদে তিনি এখানকার কিছু ছবি এঁকেছেন।

১২। জেন ব্লাগ্রেভ (Jane Blagrave, fl. 1809-1840) জেন ব্লাগ্রেভ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বেঙ্গল সার্ভিসে কর্মরত চার্লস জর্জ ব্লাগ্রেভের (Charles George Blagrave, মৃত্যু ১৮৩৬) সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ১৮০৯ সালের ২৬শে জানুয়ারী। তিনি ১৮২০ থেকে ১৮৩৭ সালে পর্যন্ত একটি এলবামের জন্য কাজ করেন; এই এলবামটি প্রথমে তিনি মূলত ফুলের ছবির জন্য ভেবেছিলেন। ছবিগুলোয় তার 'JMAB' স্বাক্ষর আছে। এলবামের টাইটেল পেজে 'Mrs. C.G. Blagrave, 1837' এবং বিপরীত দিকে 'C. Blagrave 1876' উৎকীর্ণ ছিল।

যে ব্যবসায়ী পরবর্তীতে এলবামটি অধিগ্রহণ করেন তিনি জানিয়েছিলেন জেন ব্লাগ্রেভ ১৮৪০ সালে ভারতবর্ষ ত্যাগ করেন এবং আয়ারল্যান্ড পাড়ি জমান। ১৩। ক্যাপ্টেন থমাস প্রিন্সেপ (Captain Thomas Prinsep, fl. 1800–30) ক্যাপ্টেন থমাস প্রিন্সেপ ছিলেন একজন ইঞ্জিনিয়ার এবং সৌখিন শিল্পী। থমাস প্রিন্সেপ-এর তিন পুরুষ ভারতে কাজ করেছেন; তার অন্য পাঁচ ভাইও এখানে কাজ করেছেন। তিনি সুন্দরবন সার্ভের দায়িত্বে ছিলেন; তিনি সার্ভে এরিয়ার আনুপুঙ্খিক কাজ করেন।

তার প্রণয়িত ২৪ পরগণার মানচিত্র, হজ (Hodge) প্রণয়িত সুন্দরবনের মানচিত্রের অংশ হিসেবে গৃহীত হয় এবং সুন্দরবনের মানচিত্র ১৮৩১ সালে প্রকাশিত হয়। সুন্দরবনের সীমারেখা ক্যাপ্টেন থমাস প্রিন্সেপ-এর নামানুসারে 'The Princeps Line' নামে পরিচিত। ১৮২৬ সালে প্রথম বার্মিজ যুদ্ধের প্রাক্কালে তাকে চট্টগ্রামে বদলি করা হয়। এখানে তিনি তার ভাই উইলিয়ামের সাথে 'Chittagong Looking Inland' নামক এলবামের কাজ করেন। ১৪।

রবার্ট হোম (Robert Home, 1752 – 1834) রবার্ট হোম তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারের প্রায় পুরো সময়টাই ভারতবর্ষে অতিবাহিত করেন। তিনি মূলত ইংরেজ এবং ভারতীয় রাজনৈতিক উচ্চ পদস্থ ব্যক্তিদের পোর্ট্রেট পেইন্টার ছিলেন। তার আঁকা কিছু ঐতিহাসিক মূহুর্তের ছবিও তাকে বিখ্যাত করে রেখেছে; এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য লর্ড কর্ণওয়ালিস কতৃক টিপু সুলতানের ছেলেকে বন্দী হিসেবে গ্রহণ (National Army Museum, London) এবং তার দৃষ্টিতে মহীশুর যুদ্ধক্ষেত্রের ছবি। ‘View of the Gate of the Lal Bagh, Dacca, ১৭৯৯)’ তার আঁকা এই অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি সংক্রান্ত একমাত্র তৈলচিত্র মনে করা হয়। হোম হালে (Hull) ১৭৫২ সালে জন্ম গ্রহণ করেন; তার বাবা সেনাবাহিনীর সার্জন ছিলেন।

তিনি ১৭৯১ সালের প্রথম দিকে মাদ্রাজে আসেন। তার আঁকা ভারতের দক্ষিণের অঙ্কিত ছবিগুলোর মধ্যে টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে ইংরেজদের যুদ্ধ প্রাধান্য পেয়েছে লর্ড কর্ণওয়ালিসের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে। এই কাজগুলোর মধ্যে ‘Select Views in Mysore (1794)’ এবং ‘ Views of Seringapatam (1796)’ উল্লেখযোগ্য। তিনি ১৭৯৫ সালে কলকাতায় চলে আসেন; এখানে তিনি পোর্ট্রেট পেইন্টার হিসেবে দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর খ্যাতির সাথে কাজ করেন। ১৮১৪ সালের মূলত বর্ধিত প্রতিযোগীতার কারণে লক্ষ্ণৌ চলে যান এবং লক্ষ্ণৌ-এর নবাবের পোর্ট্রেট পেইন্টার দীর্ঘ আরও ১৩ বছর কাজ করেন।

নবাব গাজী উদ্দীন হায়দার ১৮২৭ সালে মৃত্যুবরণ করলে তিনি কানপুরে অবসর যাপন শুরু করেন; এখানেই হোম মারা যান ১৮৩৪ সালে। ১৫। ডাব্লিঊ ব্রেনান্ড (W. Brennand) ডাব্লিঊ ব্রেনান্ড আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়াতে কাজ করেছেন খুব সম্ভবত ১৮৭১-১৮৭২ সালে। এই কারণে ধারণা করা যায় তিনি স্যার আলেকজান্ডার কানিংহ্যাম অধীনে এবং যোসেফ ডেভিড বেগলারের সাথে একই প্রজেক্টে কাজ করেছেন। ১৬।

জন চীপ (John Cheape) জন চীপ বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ার্সে কাজ করতেন। ১৭। অ্যালেন ব্লাকিস্টোন কিউবিট (Alan Blakiston Cubitt) অ্যালেন ব্লাকিস্টোন কিউবিট নরফোক রেজিমেন্টের (Norfolk Regiment) ১ম ব্যাটালিয়নের অফিসার ছিলেন। ১৮। ফ্রেডেরিক উইলিয়াম আলেকজান্ডার দ্য ফ্যাবেক (Frederick William Alexander de Fabeck, 1830-1912) এবং উইলিয়াম ফ্রেডেরিক দ্য ফ্যাবেক (William Frederick de Fabeck,1834-1906) দ্য ফ্যাবেক ভাতৃদ্বয় ভারতীয় মেডিকেল সার্ভিসে কর্মরত ছিলেন।

ফ্রেডেরিক উইলিয়াম ১৮৩০ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্যারিসে অধ্যয়ন করেন এবং পরবর্তীতে ১৮৫৮ সালে রয়্যাল কলেজ অব সারজন্স, এডিনবার্গ থেকে শল্যচিকিৎসায় অধ্যয়ন সমাপ্ত করেন। ওই বছরই তাকে বেঙ্গল সার্ভিসে সহকারী সার্জন পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি আলাসিও, ইটালিতে ৫ই মে, ১৯১২ সালে মৃত্যুবরণ করেন। উইলিয়াম ফ্রেডেরিক মাদ্রাজ সার্ভিসে সহকারী সার্জন পদে যোগ দেন ১৮৫৭ সালে, ১৮৬৯ সালে তিনি সার্জন পদে উন্নীত হন, ১৮৭৩ সালে তিনি সার্জন মেজর পদে পদোন্নতি লাভ করেন এবং ১৮৮২ সালে তিনি ব্রিগেড সার্জন পদে আসীন হন।

তার বেশীর ভাগ স্কেচই মূলত স্থাপত্য সংক্রান্ত পুঙ্খানুপুঙ্খ কাজ; ধারণা করা হয় তাকে যখন জয়পুরে স্কুল অব আর্টে (১৮৬৯-৭?) শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় তখন তিনি এই কাজগুলো করেছেন। তিনি পরে স্কুল অব আর্টের পরিচালক হন। তিনি ১৮৮৩ সালে জয়পুর প্রদর্শনীর উপরও কাজ করেন। তিনি ক্রিমিয়াতেও (Crimea, 1954-5) কাজ করেছেন এবং সেবাস্তপোল (Sebastopol) অবরোধ এবং জয়ে অংশগ্রহণ করেছেন। ১৯০৬ সালের ১৮ই জানুয়ারী তিনি লন্ডনে মৃত্যুবরণ করেন।

১৯। Henry Gordon Creighton (c.1767 - 1807) কোন তথ্য পাওয়া যায় নি। ২০। Thomas Fraser Peppé কোন তথ্য পাওয়া যায় নি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.