আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্রিটিশ রাজমহলে প্রেম



বলা হয়, রাজমহলে প্রেম হারাম। ভারত-উপমহাদেশের ইতিহাসের দিকে তাকালেই দেখা যাবে যুগে যুগে রাজমহলে প্রেম প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। জয় যে হয়নি তাও কিন্তু নয়। প্রেমের জয় সর্বত্র। হতেই হবে।

তাজমহল তো সেজন্যই প্রেমের সাক্ষী নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাজমহলে প্রেমের জয় রাজারাই হতে দেন না। তার আগে বলে নেওয়া ভালো, প্রেমের জয় মানে কি? প্রেমের জয়কে আমরা আপাতত বিয়ে বলেই ধরে নিচ্ছি। যদিও প্রেম করলে বিয়ে করতে হবে, এমন শর্ত জীবনের সাথে যায় না। ভালোবাসা বিয়ের চেয়েও বেশি কিছু।

বর্তমান সময়ে ব্রিটিশ রাজকুমার উইলিয়াম এবং তার প্রেমিকা ক্যাটের বিয়ে নিয়ে সারা বিশ্বে আগ্রহের কমতি নেই। বরং আগ্রহ বেড়েই চলছে। বলা হচ্ছে, ২৯ এপ্রিল বিশ্ব নবদম্পতিকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত। লক্ষ করুন ‘বিশ্ব’ প্রস্তুত। কোনো দেশ কিংবা জাতি নয়।

সারা বিশ্ব প্রস্তুত হয়ে আছে। কী হবে বিয়েতে? কেমন হবে? যদিও এই বিয়েটি চার্লস এবং ডায়ানার জনপ্রিয়তাকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে কিনা সেটা বলা মুশকিল। চার্লস-ডায়ানার বিয়ে টেকেনি। জুটি ভেঙে গেছে। কিন্তু সত্যি কথাটা হলো, ইতিহাস এবং মানুষের মন থেকে এই দম্পতির পাশাপাশি নাম দুটোকে কেউ-ই আলাদা করে নিতে পারেননি।

চার্লস-ডায়ানা একসূত্রে গেঁথে আছেন। এখনও বিয়ের দিন ডায়ানার ঠোঁটে চার্লসের ভালোবাসামাখা চুমুর ছবিটি ভালোবাসার সেরা ছবি হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। দুজনের বন্ধ চোখ, আবেগ, চার্লসের ঠোঁটে মিষ্টি হাসি সব মিলিয়ে পৃথিবীর সেরা বিয়ের সেরা ছবি এটি। ডায়ানাকে রানি এলিজাবেথ শুরুতে মেনে নেননি। রাজপরিবারের ছেলে বিয়ে করবে সাধারণ এক মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েকে! কী ভয়াবহ ব্যাপার।

এমন ভয়াবহ ব্যাপারটাকেই একদম সাধারণ করে দিয়েছিলেন প্রেমিক চার্লস। কিন্তু ভয়াবহ ব্যাপারটা ঘটলো তাদের বিচ্ছেদের ঘটনাটি নিয়ে। কিন্তু ডায়ানা শুধু রাজপরিবারের বউ হিসেবেই মানুষের মনে জায়গা করে নেননি, তিনি শান্তির দূত হিসেবে সারা বিশ্বে কাজ করে ভালোবাসার অন্য দিগন্তে চলে গিয়েছিলেন। কথা হচ্ছিল রাজ পরিবারের প্রেম নিয়ে। ব্রিটেনের রাজপরিবারে ‘প্রেম’ নতুন কিছু নয়।

প্রেম শুরু হয়েছিল সেই ১০৫৩ সালে। রাজপরিবারের ছেলে উইলিয়াম যিনি বিয়ে করে প্রেমে পড়েন। প্রেমে পড়েন নিজের বউয়ের। ফ্ল্যান্ডারকে তিনি বিয়ে করেন ১০৫৩ সালে। বিয়ে করেই প্রেমের সাগরে ডুব দেন উইলিয়াম।

পরবর্তীকালে ১০৬৬ সালে রাজা হন। কিন্তু রাজার কাজে যেমন কঠিন ছিলেন, ঠিক তার উল্টো ছিলেন তার বউয়ের সামনে। তাদের সংসার ছিল অত্যন্ত আনন্দের। ইতিহাসবিদেরা বলেন, রাজা উইলিয়াম তার স্ত্রীর মৃত্যুর পর স্বৈরশাসক হয়ে উঠেন। ব্রিটেনের রাজপরিবারের বিয়ে মানেই ধরে নেওয়া হয় রাজনৈতিক চাল।

আসলে সেটা চাল নয়। সেটা একটা জাল। এই জালে একবার আটকালে বের হওয়া মুশকিল। ইতিহাসবিদরা বলেন, ডায়ানার বিয়েটা যদি রাজনৈতিক চাল হতো তবে ডায়ানা কোনোভাবেই রাজপরিবার থেকে এভাবে বের হয়ে আসতে পারতেন না। এলেও মুক্তভাবে শান্তির দূত হিসেবে সারা বিশ্বে কাজ করা সম্ভব হতো না।

আরেকটা রাজনৈতিক বিয়ে ছিল অষ্টম হেনরির সাথে ক্যাথরিনার বিয়ে। অষ্টম হেনরি ছিলেন সপ্তম হেনরির ছোট ছেলে। আবার ওদিকে ক্যাথরিনা ছিলেন স্পেনের দ্বিতীয় ফার্ডিনান্ডের কনিষ্ঠ কন্যা। স্পেনের সাথে রাজনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করার জন্য সপ্তম হেনরি সিদ্ধান্ত নেন তার বড় ছেলে আর্থারের সাথে ক্যাথরিনার বিয়ে দেওয়ার। এই বিয়েতেই তৈরি হয় রাজকীয় উৎসব।

সপ্তম হেনরি তার পুত্রের বিয়েতে যেসব আনুষ্ঠানিকতা চালু করেন সেটাই এখন পর্যন্ত রীতি হয়ে আছে। ব্রিটেনজুড়ে উৎসবের আয়োজন হয়। এবং মানুষের আগ্রহ বাড়ানোরও চেষ্টা করা হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বিয়ের ২০ সপ্তাহ না যেতেই মারা যান অষ্টম হেনরি। রাজা ভেঙে পড়েন।

স্পেনের প্রতি সমস্ত আগ্রহও তিনি হারিয়ে ফেলেন। যদিও ১৫০৯ সালে সপ্তম হেনরি মারা যাওয়ার পর একই আনুষ্ঠানিকতা করে ক্যাথরিনাকে বিয়ে করেন ১০ বছর বয়সী অষ্টম হেনরি। তাই পৃথিবীর ইতিহাসে এই বিয়েকে বলা হয়, রাজনীতির পরে হলেও জয় হয়েছে ভালোবাসার। এরপরের ঘটনা ১৭৮৩ সালে। তৃতীয় জর্জের পুত্র চতুর্থ জর্জের ঘটনা।

জর্জ তখন একদম তরুণ। কোনো কিছুতেই বাধা মানেন না। সর্বক্ষণ বন্ধুদের নিয়ে সময় কাটান। একটা সময় রাজা তৃতীয় জর্জ জানতে পারেন তার ছেলে এক বিবাহিত মহিলাকে গোপনে বিয়ে করেছেন। রাজপরিবারের সন্তান হিসেবে এমন দুঃসাহস করা অপরাধ।

ঘরে আটকে ফেলা হলো চতুর্থ জর্জকে। জর্জ কিছুদিন পর পিতার কাছে আবেদন জানালেন, যাতে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। রাজাও কম যান না। তিনি জর্জের দিকে শর্ত ছুড়ে দিলেন। বললেন, যদি মুক্তি চাও তবে তোমাকে আমার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করতে হবে।

জর্জ রাজি হলেন এবং মুক্তির সাথে সাথে বিয়ে করলেন ক্যারোলিনকে। ইতিহাসবিদেরা বলেন, বিয়ের দিন চতুর্থ জর্জ মাতাল অবস্থায় ছিলেন। তিনি কোনোভাবেই তার প্রেমের মানুষটিকে ভুলতে পারছিলেন না। পরবর্তীকালে এই মাতাল অবস্থা থেকে তিনি আর বের হতে পারেননি। ১৭৯৬ সালে ক্যারোলিন মা হন।

তারপর অবহেলিত ক্যারোলিন কিছুটা সঙ্গ খুঁজে পান তার সন্তানের মধ্যে। চতুর্থ জর্জ রাজা হন ১৮২১ সালে। এরপর ক্যারোলিনের প্রতি তার অবহেলার মাত্রা আরও বেড়ে যায়। কিছুদিন পর ক্যারোলিন মারা যান। কিন্তু সারা দেশের মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হন ক্যারোলিন।

এখনও ব্রিটেনের মানুষের মনে জায়গা করে আছেন ক্যারোলিন। তার একমাত্র কারণ রাজার প্রকাশ্যে অবহেলা জনগণ দেখেছিলেন। এখানেও ভালোবাসা আছে। তবে সেই ভালোবাসা দুর্গের দেয়ালে আটকে বন্দি হয়ে গেছে। মুক্তির স্বার্থে জর্জ মুক্তি নিলেও অন্য একটি মেয়ের জীবনকে নষ্ট করে দিলেন।

ভালোবাসার জয়-পরাজয় নিয়ে ব্রিটেনের রাজমহলে খেলা হয়। যুগে যুগে চলছে। কিন্তু সবগুলো নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব নয়। তাহলে এতো বিশাল লেখা পড়ার আগ্রহ আপনারা হারিয়ে ফেলবেন। মোদ্দাকথা, রাজমহলে যেভাবেই হোক প্রেম ঢুকছে।

আলোচিত হচ্ছে। আমরা জন্মের পর থেকে যেমন চার্লস-ডায়ানার কথা শুনে এসেছি, ঠিক তেমনি আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম জানবে উইলিয়াম-ক্যাটের কথা। হারিয়ে যেতে থাকবেন চার্লস-ডায়ানা। যত কিছুই হোক, রাজপরিবারের রাজনৈতিক চাল আর ষড়যন্ত্র ছাপিয়ে উইলিয়াম প্রেম করেছেন ক্যাটের সঙ্গে। একটি এপার্টমেন্টে তাদের প্রেম চলতে থাকে।

হঠাৎ প্রকাশ পেয়ে যায় প্রেমের কাহিনী। মিডিয়া জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। ভাবা হয়েছিল উইলিয়াম বংশের মান রক্ষার্থে ব্যাপারটিকে অস্বীকার করবেন। কিন্তু না। তিনি স্বীকার করলেন।

বললেন, আমি ক্যাটকে ভালোবাসি এবং খুব শীঘ্রই বিয়ে করতে যাচ্ছি। নেগেটিভ নিউজগুলো হয়ে পড়ে পজিটিভ। ভালোবাসায় দোষ নেই। প্রেমে মানুষ পড়বেই। তাই উইলিয়াম কোনো দোষ করেননি।

প্রেম করে বিয়ে করতে যাচ্ছেন উইলিয়াম। ডায়ানার ছেলে উইলিয়াম। এই পরিচয়টাই অনেক বড়। তারপর তিনি রাজপরিবারের সদস্য। তারপর তিনি একজন প্রেমিক।

দুর্গের বাধা ডিঙিয়ে তিনি বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন ২৯ এপ্রিল। শুরুতেই বলেছি, বিশ্ব চেয়ে আছে এই আলোচিত বিয়ের দিকে। ইতোমধ্যে টুইটারে রয়েল পরিবারের পক্ষ থেকে একাউন্ট খোলা হয়েছে। সেখান থেকে টুইট করে বিয়ের যাবতীয় সংবাদ দেওয়া হচ্ছে। ইউটিউব লাইভ স্ট্রিমিং দেখাবে।

ইউটিউবের মুখপাত্র বলেছেন, এমন অভিজ্ঞতা তাদের জন্য একদমই নতুন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.