আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমরণ অনশন স্পট (ইহা এক ধরনের পিকনিক স্পট!)

কয়বার লিখবো কিছু লিখার নাই। কিছুদিন আগে ঢাবির INFS ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। আড্ডার এক পর্যায়ে আমরা বাংলাদেশের আতুর ঘর 'মধুর ক্যান্টিন' না 'পল্টন' না 'রেসকোর্স ময়দান' এই নিয়ে যে যার মত করে যুক্তি দিয়ে যাচ্ছিলাম। তবে একটা ব্যাপারে সবাই মোটামুটি একমত বর্তমানে সকল আন্দোলন এবং দাবি আদায়ের প্রথম পছন্দের স্থান কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার! ঐতিহাসিক ভাবে এই শহীদ মিনারের গুরুত্ব নতুন করে বলার কিছু নেই। নতুন করে বলার বিষয় হলো বর্তমানে এর ব্যাবহার নিয়ে।

প্রতিদিন সকালে কার্জন হলে ক্লাশ করতে যাই এই শহীদ মিনারের সামনে দিয়ে,মাঝে মাঝে অনেক রাত পর্যন্ত এখানে বসে আড্ডা দেই। বছরের ৩৬৩ দিন এটা থাকে টোকাই,রিক্সাওয়ালা, নেশাখোর ইত্যাদি মানুষদের আড্ডাখানা। বাকী দু'দিন হলো ২১শে ফেব্রুয়ারী এবং তার আগের দিন। এখন যে কোন দাবি আদায়কারীদের পছন্দের পন্থা হলো 'আমরণ অনশন'। যদিও আমি এখন পর্যন্ত কাউকে আমরন অনশনে মারা যেতে দেখি নাই!!!নিশ্চিত ভাবেই অনশনের জায়গা হবে শহীদ মিনার।

প্রতিদিন কোন না কোন গ্রুপ অনশন করবেই। আমরা বন্ধুরা যখন ক্লাশে যাই তখন কোন গ্রুপ না দেখলে শহীদ মিনার কেমন ফাঁকা ফাঁকা মনে হয়!কিছুদিন আগে ইউনিপে to U অনশন করলো। এই অতি চালাক মানুষেরা অতি দ্রুত কোন পরিশ্রম এবং কোন কষ্ট না করেই কোটিপতি হতে চেয়েছিলো। এই অতি চালাক মানুষেরা আবার একা বড়লোক হতে পছন্দ করে না। আশেপাশের সবাইকে নিয়ে বড়লোক হতে চায়।

এদের কথায় খাঁটি মধু ঝড়ে পড়ে। চিনির এত দাম,এই লোকদের মুখের কাছে কিছু পাত্র রেখে মধু সংগ্রহ করলে এই সমস্যা একটু সমধান করা যেত। Destiny-2000 নামে আরো একটা প্রতিষ্ঠান আছে। এদের লোকজন আবার কোনদিন ঘটি-বাটি নিয়ে শহীদ মিনারে বসে পড়ে কে জানে! আমার পরিচিত একজনকে এই কথা বলতে সে বলে তাদের কোম্পানি এই রকম না। যাই হোক ইউনিপে to U এর লোকেরা এখন সরকারে কাছে দাবি জানায় তাদের টাকা যেন ফেরত দেয়া হয়।

তারা যখন শর্টকার্ট পথে বড়লোক হতে চেয়েছিলো তখন কি সরকার কে বলে করেছিলো? তাদের অতি সেন্টিমেন্টাল কথাবার্তা শুনে আমার অত্যন্ত হাসি পেতো তখন। এই গ্রুপটি অনেকদিন শহীদমিনারে ছিলো। শেষ পর্যন্ত তাদের টাকা দেয়ার 'আস্বাশ' দেয়া হয়েছিলো। শহীদ মিনারে পথনাট্য হয়, বিশেষ কেউ মারা গেলে তাকে এখানে এনে শ্রদ্ধা জানানো হয় আরো ছোট খাটো অনুষ্ঠান প্রায়ই হয় এখানে। মানুষ অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করবে এটা তার গণতান্ত্রিক অধিকার।

কিন্তু এই আন্দোলনকারী এটা মাথায় রাখা উচিৎ শহীদ মিনার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভীতরে কাজী মোতাহার হোসেন ভবনের সামনে। এখানে পরিসংখ্যান গণিত, আইন ,ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ আছে। তারা তাদের মাইক গুলো ঠিক এই বিভাগ গুলোর দিকে 'তাক' করে লাগায়! এখানে ক্লাশ হয় এটা তাদের মাথাব্যাথার বিষয় না। তার বিশাল বিশাল মাইক লাগিয়ে পাগলের মত চিৎকার করতে থাকে। যার অধিকাংশই শোনার মত না।

তবে সর্বশেষ যেটায় আমি বিরিক্ত হলাম সেটা নিয়ে বলি। অবাক হইনাই কারন এসব বিষয়ে অবাক হওয়ার ক্ষমতা কমে গেছে। এখন আমাদের যোগাযোগ মন্ত্রী আবুল হোসেন এবং নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান খুব বড় তারকা মন্ত্রী হয়ে গেছেন। Hot topic হলো সড়কের দুরাবস্থা। দু পক্ষ দাঁড়িয়ে গেছে।

শুশীল সমাজ এবং আমাদের মন্ত্রী দু'জন। এরা একে অপরকে ক্রমাগত 'ঝেড়ে' যাচ্ছে। কাজের কাজ কতদূর কি হয় তা সময়ই বলে দেবে। তবে কিছু পেতে হলে এমনি এমনি পেয়ে যাবো তা হবে না। আন্দোলন করতেই হবে।

কিন্তু এই আন্দোলনের স্থানটা খুব খারাপ হয়ে গেছে, 'শহীদ মিনার'। ২২ তারিখ 'নিসচা' আন্দোলন করলো দু দিন পর সড়ক ফেডারেশন চলে এলো। তারা যা খুশি করুক আন্দোলন তারা করতেই পারে। কিন্তু তারা খুব ভালো ভাবে এই কাজটা করে না। এমনিতে তাদের কথাবার্তার কোন ঠিক-ঠিকানা নেই।

এর অনেক উদাহরন সাবাই কম বেশী জানেন। যেমন গত ঈদে সড়কের বেহাল অবস্থার পর অনেক রসালো কথাবার্তা হয়েছে। তার মধ্যে যোগাযোগ মন্ত্রীর একটা কথা সেভাবে কেউ ধরে নাই। ঈদের সময় সব ট্রেন মোটামুটি ৩/৪ ঘন্টা বা তার চেয়েও বেশী দেরীতে চলে। তো আমাদের মন্ত্রী একদিন কমলাপুর স্টেশনে টিভি ক্যামেরা সহ তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে চলে এলেন।

তার পর হাসি মুখে বলে দিলেন সম ট্রেন সঠিক সময়ে চলছে। তিনি মনে হয় না কখনো ট্রেনে যাতায়াত করেন। তাহলে এ কথা বলতে পারতেন না। কারন এমনিতেই বাংলাদেশের ট্রেন কখনো সঠিক সময়ে চলে না। এর অনেক কারন আছে।

সেসব নিয়ে লিখলে অনেক কিছু লিখতে হয়। পরে হবে না হয় আর এক দিন। সুতরাং ঈদের সময় চলা আরো সম্ভব না। কারন এই সময় ট্রেনে পা দেয়ার জায়গা থাকে না। ট্রেনের ছাদে মনে হয় ট্রেনের ভীতরের চেয়ে বেশি মানুষ থাকে।

এ জন্য ট্রেন অনেক ধীর গতিতে চলে। স্টেশনে যাত্রীদের নামা উঠাতে অনেক বেশী সময় দরকার হয়। তাই ট্রেন লেট হওটাই স্বাভাবিক। অথচ মন্ত্রী বলে গেলেন কি?তাদের কখনোই সত্য কথা বলার সাহস হয় না। তাই বলে গেলেন "সব দোষ বিরোধী দলের" টাইপ একটা কথা।

ফিরে আসি শহীদ মিনারের সড়ক ফেডারেশনের আন্দোলনে। এই আন্দোলনের দিন তার শহীদ মিনার থেকে দোয়েল চত্বর, জগন্নাথ হল, আর টিএসসি পর্যন্ত মাইক লাগিয়ে দিয়েছিলো। একসাথে দুটো করে। শহীদ মিনারের অবস্থানটা তারা একটুও ভাবেনি। এট বুয়েট, ঢাবি আর মেডিক্যাল কলেজের ঠিক মাঝখানে।

সকাল থেকে তারা চিৎকার শুরু করে দিয়েছিলো সেদিন। সেদিন মোতাহার হোসেন ভবন, মোকাররম ভবন, কার্জন হল কোথাও ঠিক ভাবে ক্লাশ ল্যাব কোনটাই হয় নাই। আমি নিজে তার ভুক্তভোগী। আমার মনে হয়ে বুয়েটের ও একই অবস্থা। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো মেডিক্যালে আসা রোগীদের।

এই ধরনের উচ্চ শব্দ রোগীদের কি রকম সমস্যা হয়েহে তা নিয়ে তো আর তাদের মাথা ব্যাথা নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন মাথা ব্যাথা নেই। অবশ্য আমাদের দেশের প্ররেক্ষাপটে বললে বলতে হয়ে " এহ একদিন ঠিক মত ক্লাশ হয় নাই ত কি হয়েছে?'” আসলেই তাই। যেখানে মাসের পর মাস ক্লাসা হয় না সেখানে একদিনে আর কি আসে যায়!! আমাদের সব সহ্য হয়ে গেছে। এখন আন্দোলন হচ্ছে ভবিষ্যতে আরো হবে একসময় দেখা যাবে সব সভা সমাসবেশ এখানে হচ্ছে।

কারন ঢাকায় চিৎকার করার জয়গা ক্রমশই কমে আসছে। তখন বলা হবে দেশ চলছে না পড়েলেখা করে কি হবে? আসলেই কথা মিথ্যা না। আমাদের দেশ এখন থেমে গেছে। নিরাপদ সড়ক নিয়ে অনেক আন্দোলন হচ্ছে। দু পক্ষের কথা শুনছি।

কিছু যৌক্তিক কিছু অযৌক্তিক কথা বলা হচ্ছে। যেমন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একজন শিক্ষিত ড্রাইভার আশা করা বাস্তব সম্মত না। এটা আমাদের বোঝা উচিৎ। ড্রাইভিং একটা ব্যাবহারিক জিনিস। ছোট বেলায় একটা গল্প পড়েছিলাম।

দু বন্ধু সাইকেল চালানো শিখবে। একজন সাইকেল চালানো শেখার জন্য বই কিনে আনলো আর একজন সাইকেল কিনে নিয়ে এলো। ১ম জন বই পড়ে সাইকেল কিভাবে কাজ করে কিভাবে চালানো যায় ইত্যাদি সব পড়লো আর এজন সরাসরি চালানো শুরু করে দিলো। ২য় জন কয়েকবার হোচোঁট খেলো বটে কিন্তু চালানো শিখে গেলো। ১ম জন বই পড়ে এসে চালাতে যেয়ে আর পারে না।

গাড়ি চালানো ব্যপারটাও এরকম। পুরোটাই অভ্যসের ব্যাপার। আমাদের দেশের অধিকাংশ ড্রাইভার ছোটবেলা থেকে 'ওস্তাদের' সাগরেদ হিসেবে কাজ করে। তখন এদের জীবনের লক্ষ্যই থাকে একদিন বড় হয়ে সে ওস্তাদ হবে। সুতরাং তাদের অভিজ্ঞতা নেহাতই কম থাকে না।

ড্রাইভারদের ্যেটা শেখাতে হবে তা হলো বিভিন্ন চিহ্ন/সাইন ইত্যাদি চেনানো। আর ইদানিংকালের বড় সমস্যা চালানোর সময় তার যেন মোবাইল ফোনে কথা না বলে। আর আমার মনে হয় না কোন ড্রাইভার ইচ্ছে করে দুর্ঘটনা ঘটায়। কারন জীবনের মায়া সবার আছে। কেউই মরতে চায় না।

তাই এদের ঘাতক বা রাজাকার বা খুনী বলাটা মনে হয় মানায় না। তাই বলে প্রশিক্ষন ছাড়াই লাইসেন্স দেয়া এটাও কোন কাজের কথা না। তাদের অবশ্যই ব্যাবহারিক পরিক্ষা নিয়ে তার ঠিকভাবে চালাতে পারে কিনা এটা অবশ্যই দেখতে হবে। পুরো ব্যাপারটা একট সমস্যা। এটা সবাই মানছে।

কিন্তু এটা নিয়ে এভাবে অসভ্য মানুষের মত চিৎকার চেচাঁমেচির কি আছে? তারা আলোচনা করে ঠিক করতে পারে। এটা আমাদের দেশের বড় দু'দলের কোন বিষয় নয় যে এটা একসাথে বসে আলোচনা করা যাবে না! নাকি আমাদের দেশের কোন কিছুই 'রক্ত' দিয়ে না কিনলে হয় না? নাকি আন্দোলন না করলে পেটের ভাত হজম হয় না? হতে পারে। শহীদ মিনারে আমরন অনশনের কোন ব্যানার না দেখলে এখন শহীদ মিনার কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা মনে হয়। ঠিক তেমন আন্দোলন না করলে ভালো লাগে না। এজন্য কোন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি ব্যাবসা শুরু করতে পারে "আন্দোলনের জন্য মানুষ ভাড়া দেয়া হয়" হলে খারাপ হয় না দেশের কিছু মানুষ বেকারত্বের হাত থেকে রেহাই পাবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.