আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাদীসের আলোকে কমপ্লিট হজ্জ্ব গাইড।

হ্যা আমি সেই সত্যবাদীকে সত্যবাদী মনে করি হজ্জ্বঃ হাদীস ও আছারের আলোকে ফাতাওয়া বিভাগ, মারকাযুদ্ দাওয়াহ আলইসলামিয়া - ঢাকা হজ্ব তিন প্রকার : তামাত্তু, কিরান ও ইফরাদ। মক্কার বাইরে অবস্থানকারী ব্যক্তিরা উপরোক্ত যেকোনো প্রকার হজ্ব করতে পারেন। এতে তাদের ফরয হজ্ব আদায় হবে। তবে উপরোক্ত তিন প্রকার হজ্বের মধ্যে সর্বোত্তম হল হজ্বে কিরান, এরপর হজ্বে তামাত্তু, এরপর হজ্বে ইফরাদ। নিচে প্রতিটির পরিচয় ও জরুরি মাসাইল উল্লেখ করা হল।

এক. কিরান মীকাত অতিক্রমের পূর্বে উমরা ও হজ্বের ইহরাম বেঁধে একই ইহরামে উমরাহ ও হজ্ব উভয়টি আদায় করা। প্রথমে মক্কা মুকাররামা পৌঁছে উমরা করা অতঃপর এই ইহরাম দ্বারা হজ্বের সময়ে হজ্ব করা এবং কুরবানী দেওয়া। দুই. তামাত্তু হজ্ব হজ্বের মাসসমূহে মীকাত থেকে শুধু উমরার নিয়তে ইহরাম বাঁধা এবং মক্কা মুকাররামায় পৌঁছে উমরার কাজ সম্পন্ন করার পর চুল কেটে বা চেঁছে ইহরামমুক্ত হয়ে যাওয়া। অতঃপর এই সফরেই হজ্বের ইহরাম বেঁধে হজ্বের নির্ধারিত কাজগুলো সম্পন্ন করা এবং কুরবানী দেওয়া। তিন. ইফরাদ মীকাত থেকে শুধু হজ্বের নিয়তে ইহরাম বাঁধা এবং মক্কা মুকাররামা পৌঁছে উমরা না করা বরং (সুন্নত তাওয়াফ) তাওয়াফে কুদূম করে ইহরাম অবস্থায় হজ্বের জন্য অপেক্ষা করতে থাকা।

অতঃপর নির্ধারিত সময়ে হজ্বের আমলগুলো সম্পন্ন করা। উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রা. বলেন, বিদায় হজ্বে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে রওনা হলাম। আমাদের মধ্যে কেউ (তামাত্তুর নিয়তে প্রথমে) উমরার জন্য তালবিয়া পাঠ করলেন, কেউ (কিরানের নিয়তে) হজ্ব ও উমরার জন্য তালবিয়া পাঠ করলেন এবং কেউ (ইফরাদের নিয়তে) শুধু হজ্বের ইহরাম গ্রহণ করলেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্বে ইফরাদের জন্য তালবিয়া পাঠ করলেন। যারা শুধু হজ্ব বা একত্রে হজ্ব-উমরার (কিরানের) ইহরাম গ্রহণ করেছিলেন তারা ১০ যিলহজ্বের পূর্ব পর্যন্ত- ইহরাম থেকে মুক্ত হননি।

-সহীহ বুখারী ১/২১২ ইহরামের নিয়ম ইহরামের মূল বিষয় হচ্ছে হজ্ব বা উমরার নিয়তে তালবিয়া পাঠ। এর দ্বারাই ইহরাম সম্পন্ন হয়ে যায়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মাথায় সিঁথি করা অবস্থায় ইহরামের তালবিয়া পাঠ করতে দেখেছি। তিনি বলেছেন, এই বাক্যগুলোর অতিরিক্ত কিছু বলেননি। -সহীহ মুসলিম ১/৩৭৬ তবে ইহরাম গ্রহণের সুন্নত তরীকা হল মোচ, নখ এবং শরীরের পরিষ্কারযোগ্য লোম চেঁছে বা কেটে পরিষ্কার করবে।

উত্তমরূপে গোসল করবে, গোসল সম্ভব না হলে ওযু করবে। পুরুষগণ দু’টি নতুন বা ধৌত সাদা চাদর নিবে। একটি লুঙ্গির মতো করে পরবে। অপরটি চাদর হিসাবে ব্যবহার করবে। পায়ের পাতার উপরের অংশ খোলা থাকে এমন চপ্পল বা স্যাণ্ডেল পরবে।

মহিলাগণ স্বাভাবিক কাপড় পরবে। তাদের জন্য ইহরাম অবস্থায় জুতা-মোজা পরার অবকাশ রয়েছে। ইহরাম বাঁধার আগে খালি শরীরে আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করা মুস্তাহাব। শরীরের আতর বা ঘ্রাণ ইহরাম গ্রহণের পর বাকি থাকলেও অসুবিধা নেই। তবে ইহরামের কাপড়ে আতর বা সুগন্ধি লাগাবে না।

কেননা ইহরামের কাপড়ে এমন আতর বা সুগন্ধি লাগানো নিষেধ, যার ঘ্রাণ ইহরামের পরও বাকি থাকে। মাকরূহ ওয়াক্ত না হলে ইহরাম বাঁধার আগে দুই রাকাত নফল নামায পড়বে। অতঃপর যে হজ্ব আদায়ের ইচ্ছা সে অনুযায়ী নিয়ত করে তালবিয়া পাঠ করবে। নিচে ইহরামের প্রতিটি বিষয় দলীলসহ আলোচনা করা হল ১. মোচ, নখ এবং শরীরের পরিষ্কারযোগ্য লোম চেঁছে বা কেটে পরিষ্কার করা। যে ব্যক্তি হজ্বে যেতে চায় তার শরীরের ক্ষৌর কার্য সম্পর্কে বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত আতা রাহ.কে জিজ্ঞাসা করা হল।

তিনি বললেন, এর অনুমতি আছে, এতে কোনো অসুবিধা নেই। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৪৯৯৮ ২. ইহরামের উদ্দেশ্যে উত্তমরূপে গোসল করা। হযরত যায়েদ বিন ছাবেত রা. থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইহরামের জন্য পরিহিত পোশাক খুলতে এবং গোসল করতে দেখেছেন। -জামে তিরমিযী ১/১০২ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, কোনো ব্যক্তি যখন ইহরাম বাঁধার ইচ্ছা করবে তখন তার জন্য গোসল করা সুন্নত। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৫৮৪৭ গোসল সম্ভব না হলে ওযু করে নেওয়া।

আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি উমরার জন্য অযু করলেন, গোসল করলেন না। - মাসআলা : ঋতুমতী মহিলার জন্য ইহরামের আগে গোসল করা মুস্তাহাব। -গুনইয়াতুন নাসিক পৃ. ৬৯ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কোনো নারী হায়েয বা নেফাস অবস্থায় মীকাতে পৌঁছলে গোসল করবে এবং ইহরাম গ্রহণ করবে। অতঃপর হজ্বের যাবতীয় কাজ করতে থাকবে। শুধু বাইতুল্লাহর তাওয়াফ ব্যতীত।

-সুনানে আবু দাউদ ১/২৪৩ ৩. পুরুষদের দু’টি সাদা চাদর প্রয়োজন হবে, যা নতুনও হতে পারে কিংবা ধোয়াও হতে পারে। একটি লুঙ্গির মতো করে এবং অপরটি চাদর হিসাবে পরিধান করবে। কালো রংয়ের কিংবা পুরুষের জন্য অনুমোদিত এমন যেকোনো রংয়ের কাপড় পরিধান করাও জায়েয। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ চুল আঁচড়ালেন, তেল লাগালেন এবং লুঙ্গি ও চাদর পরিধান করে মদীনা থেকে হজ্বের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। তিনি জাফরানযুক্ত ব্যতীত অন্য কোনো চাদর ও লুঙ্গি পরতে নিষেধ করেননি।

-সহীহ বুখারী ১/২০৯ ৪. পায়ের পাতার উপরের উঁচু অংশ খোলা থাকে এমন চপ্পল বা স্যান্ডেল পরা যাবে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা লুঙ্গি, চাদর ও চপ্পল পরে ইহরাম গ্রহণ কর। যদি চপ্পল না থাকে তবে চামড়ার মোজা পায়ের গীরার নিচ পর্যন- কেটে তা ব্যবহার করতে পারবে। -মুসনাদে আহমদ হাদীস : ৪৮৮১ ৫. মহিলাগণ স্বাভাবিক পোষাক পরবে। উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রা. বলেন, মাসআলা : মহিলাগণ ইহরাম অবস্থায় নিজ অভিরুচি মাফিক পোষাক পরিধান করতে পারবে।

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৪৪৩ মাসআলা : মহিলাগণ ইহরাম অবস্থায় জুতা-মোজা ব্যবহার করতে পারবে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. মহিলাদেরকে ইহরাম অবস্থায় চামড়ার মোজা এবং পাজামা পরার অনুমতি দিতেন। তিনি বলেন, ছফিয়্যা রা. চামড়ার মোজা পরিধান করতেন, যা ছিল তাঁর হাটু পর্যন-। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৫৯৬৯ আরো দেখুন : হাদীস : ১৫৯৬৫ মহিলাগণ হাত মোজা ব্যবহার করতে পারবে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, মহিলাগণ ইহরাম অবস্থায় হাত মোজা এবং পাজামা পরিধান করতে পারবে।

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৪৪৪০ বিখ্যাত তাবেয়ী কাসিম ইবনে মুহাম্মাদ রাহ. বলেন, ইহরাম গ্রহণকারিনী হাত-মোজা ও পাজামা পরিধান করবে এবং পূর্ণ মুখমণ্ডল আবৃত রাখবে। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৫৯৬৮ তবে হাত মোজার বিষয়ে দুই ধরনের দলীল বিদ্যমান থাকায় কেউ কেউ তা পরিধান না করা উত্তম বলেছেন। ৬. ইহরাম গ্রহণের আগে খালি শরীরে আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করা মুস-াহাব। শরীরের আতর ও ঘ্রাণ যদি ইহরাম বাঁধার পর অবশিষ্ট থাকে তবুও কোনো অসুবিধা নেই। উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম গ্রহণের সময় তাঁর সর্বাধিক উত্তম সুগন্ধিটি ব্যবহার করতেন।

তিনি বলেন, ইহরাম বাঁধার পর তাঁর শ্মশ্রু ও শির মোবারকে তেলের ঔজ্জ্বল্য দেখতে পেতাম। -সহীহ মুসলিম ১/৩৭৮ মাসআলা : ইহরামের কাপড়ে আতর বা সুগন্ধি লাগাবে না। কেননা ইহরামের কাপড়ে এমনভাবে আতর বা সুগন্ধি লাগানো নিষেধ যা ইহরামের পরও অবশিষ্ট থাকে। -রদ্দুল মুহতার ২/৪৮৯; গুনইয়াতুন নাসিক পৃ. ৭০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২২; মানাসিক মোল্লা আলী কারী পৃ. ৯৮ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা (ইহরাম অবস'ায়) এমন কোনো কাপড় পরিধান করবে না যা জাফরান বা ওয়ারসযুক্ত। -সহীহ মুসলিম ১/৩৭২ ৭. মাকরূহ ওয়াক্ত না হলে ইহরাম গ্রহণের পূর্বে দুই রাকাত নফল নামায পড়া।

-গুনইয়াতুন নাসিক ৭৩; মানাসিক মোল্লা আলী কারী পৃ. ৯৯; রদ্দুল মুহতার ২/৪৮২ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্বের উদ্দেশ্যে মদীনা থেকে রওনা হয়ে যুলহুলাইফাতে পৌঁছলেন এবং দুই রাকাত নামায পড়লেন। অতঃপর যুলহুলাইফার নিকট যখন উটনী তাঁকে নিয়ে উঠে দাঁড়াল তখন তিনি তালবিয়া পাঠ করলেন ...। -সহীহ মুসলিম ১/৩৭৬ ৮. নিয়ত : (পুরুষ হলে টুপি বা মাথার কাপড় খুলে ফেলতে হবে) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, মুখমণ্ডল ও তার উপরের অংশ মাথার অন-র্ভুক্ত। অতএব ইহরাম গ্রহণকারী থুতনী থেকে উপরের কোনো অংশ আবৃত করবে না। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৪৪৫২ মাসআলা : তামাত্তুকারী শুধু উমরার নিয়ত করবে, ইফরাদকারী শুধু হজ্বের নিয়ত এবং কিরানকারী হজ্ব ও উমরার নিয়ত করে তালবিয়া পাঠ করবে।

উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রা. বলেন, আমরা বিদায় হজ্বে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বের হলাম। আমাদের মধ্যে কেউ শুধু উমরার উদ্দেশ্যে তালবিয়া পাঠ করলেন, কেউ হজ্ব-উমরা দু’টোর উদ্দেশ্যে এবং কেউ শুধু হজ্বের উদ্দেশ্যে তালবিয়া পাঠ করলেন। -সহীহ মুসলিম ১/২১২ মাসআলা : পুরুষ উচ্চ স্বরে তালবিয়া পাঠ করবে এবং মহিলাগণ নিম্নস্বরে। -মানাসিক পৃ. ১০০, গুনইয়াতুন নাসিক পৃ. ৭৪, আদ্দুররুল মুখতার পৃ. ৪৮৪ সাইব ইবনে ইয়াযিদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার নিকটে জিবরাইল আ. এলেন এবং বললেন, আমি যেন আমার সাহাবীদেরকে উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠের নির্দেশ দেই। -জামে তিরমিযী ১/১৭১ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, মহিলাগণ উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ করবে না।

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৪৮৮২ তালবিয়া আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তালবিয়া এই-লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক লাব্বাইক লা শারীকা লাকা লাব্বাইক ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক লা শারীকা লাক। -সহীহ মুসলিম ১/১৭৫ মাসআলা : পূর্ণ তালবিয়া পাঠ করতে হবে। এর কিছু অংশ ছেড়ে দেওয়াও মাকরূহ। -মানাসিক পৃ. ১০২, আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৮৪, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৩ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, তালবিয়া শেষ পর্যন- পাঠ কর। কেননা এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তালবিয়া।

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৩৬৩৮ মাসআলা : তালবিয়ার উক্ত দুআর স'লে সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, কালিমা তাইয়্যিবা বা কোনো জিকির পাঠ করলেও ইহরাম সম্পন্ন হবে। কিন' তালবিয়া ছাড়া অন্য কিছু পাঠ করা মাকরূহ। তাই তালবিয়া পাঠ একান- অসম্ভব হলে আল্লাহ তাআলার কোনো জিকিরের মাধ্যমে ইহরাম গ্রহণ করবে। -মানাসিক ১০২, গুনয়াতুন নাসিক ৭৬, আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৮৩ বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত তাউস রাহ.কে জিজ্ঞাসা করা হল যে, এক ব্যক্তি ‘তালবিয়া’র স'লে ‘আল্লাহু আকবার’ বলেছে। তিনি বললেন, তার ইহরাম সম্পন্ন হয়েছে।

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৪৯৩৫ মাসআলা : মহিলাগণ ইহরাম অবস্থায় হাত-মোজা ও পা-মোজা ব্যবহার করতে পারবে। তবে হাত-মোজার বিষয়ে দু’ধরনের দলীল বিদ্যমান থাকায় কেউ কেউ হাত মোজা পরিধান না করাকে উত্তম বলেছেন। -আল ইসতিযকার ১১/৩০; সুনানে আবু দাউদ ২/২৫৪; আত্তারগীব ওয়াত তারহীব ৪/৪৭৭; ইলাউস সুনান ১০/৪৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২২৩; বাদায়ে ২/৪১০; ফাতহুল মুলহিম ৩/২০৪; মানাসিক ১১৬; গুনইয়াতুন নাসিক -৭৪; ফাতাওয়া খানিয়া -১/২৮৪; আহকামে হজ্ব ৩৫ মাসআলা : মহিলাগণ ওযর অবস্থায় অর্থাৎ মাসিক ঋতুস্রাব, সন্তান প্রসবোত্তর স্রাব ইত্যাদি থাকলেও তালবিয়া পাঠ ও ইহরাম গ্রহণ করতে পারবে। হজ্বের অন্যান্য কাজও করা যাবে। তবে এ অবস্থায় তাওয়াফ করা ও নামায পড়া জায়েয নয়।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মহিলাগণ হায়েয বা নেফাস অবস্থায় মীকাতে এলে গোসল করবে এবং ইহরাম গ্রহণ করবে। অতঃপর হজ্বের আমলসমূহ সম্পন্ন করবে শুধু তওয়াফ ব্যতীত। -সুনানে আবু দাউদ ১/২৪৩ মাসআলা : ইহরামের হালতেও মহিলাদের জন্য পরপুরুষের সামনে চেহারা খোলা নিষেধ। তাই এ অবস্থায় এমনভাবে চেহারা আবৃত রাখা জরুরি যাতে মুখমণ্ডলের সঙ্গে কাপড় লেগে না থাকে। এখন এক ধরনের ক্যাপ পাওয়া যায়, যা পরিধান করে সহজেই চেহারার পর্দা করা যায়।

উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রা. বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে হজ্বের ইহরাম অবস্থায় ছিলাম। হাজ্বীদের কাফেলা যখন আমাদের নিকট দিয়ে অতিক্রম করত তখন আমরা মাথা থেকে চেহারার উপর চাদর ঝুলিয়ে দিতাম। যখন তারা আমাদেরকে অতিক্রম করে যেত তখন চাদর সরিয়ে ফেলতাম। -সুনানে আবু দাউদ ১/২৫৪; হযরত আলী রা. মহিলাদেরকে নিষেধ করতেন তারা যেন ইহরাম অবস'ায় নেকাব ব্যবহার না করে। তবে চেহারার উপর দিয়ে কাপড় ঝুলিয়ে দিবে।

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৪৫৩৯; আদিল্লাতুল হিজাব ৩২৯-৩৩৪; নাইলুল আওতার ৫/৭১ মানাসিক ১১৫, ফাতহুল বারী ৩/৪৭৫; ইলামুল মুআককিয়ীন ১/১২২-১২৩, তাবেয়ী তাউস রাহ. থেকেও উপরোক্ত সিদ্ধান- বর্ণিত হয়েছে। দেখুন : মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৪৫৪০ মাসআলা : হজ্বের মাস শুরু হওয়ার আগে অর্থাৎ শাওয়াল মাসের আগে হজ্বের ইহরাম গ্রহণ করা মাকরূহ। -শরহু লুবাবিল মানাসিক ৯৮; গুনইয়াতুন নাসিক পৃ. ৬৭ হযরত জাবির রা. বলেন, শুধু ‘আশহুরে হজ্ব’ বা হজ্বে মাসসমূহেই হজ্বের ইহরাম গ্রহণ করা যায়। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৪৮৩৮ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, সুন্নাহ্ এই যে, ‘আশহুরে হজ্বে’ই হজ্বের ইহরাম গ্রহণ করা হবে। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৪৮৩৭ মাসআলা : ইহরাম অবস্থায় ইহরামের পোশাক পরিবর্তন করা যাবে।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় ‘তানয়ীম’ নামক স্থানে কাপড় পরিবর্তন করেছিলেন। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৫০১০ বিখ্যাত তাবেয়ী ইবরাহীম নাখাঈ রাহ. বলেন, ইহরাম গ্রহণকারী ইহরামের কাপড় পরিধান করার পর যখন ইচ্ছা তা পরিবর্তন করতে পারবে। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৫০১১ মাসআলা : ইহরাম অবস্থায় কেউ মারা গেলে তাকে অন্যান্য মৃতের মতোই গোসল দেওয়া হবে এবং যথানিয়মে অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করা হবে। হযরত আয়েশা রা.কে ইহরাম অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি উত্তরে বললেন, সাধারণ মৃতের বেলায় যা করে থাক তার বেলায়ও তা-ই করবে।

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৪৬৪৯ ইহরাম অবস'ায় নিষিদ্ধ বিষয় ১। পুরুষের জন্য শরীর বা শরীরের কোনো অঙ্গের আকার অনুযায়ী তৈরিকৃত বা সেলাইকৃত কাপড় পরিধান করা নিষিদ্ধ। যেমন : পাঞ্জাবি, জুব্বা, শার্ট, সেলোয়ার, প্যান্ট, গেঞ্জি, কোট, সোয়েটার, জাঙ্গিয়া ইত্যাদি। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করল, মুহরিম কী কী কাপড় পরতে পারবে? তখন তিনি ইরশাদ করলেন, জামা, পাগড়ি, পাজামা, টুপি ও মোজা পরবে না। তবে চপ্পল না থাকলে চামড়ার মোজা গিরার নিচ পর্যন- কেটে পরতে পারবে।

তোমরা এমন কোনো কাপড় পরিধান করো না যাতে ‘জাফরান’ বা ‘ওয়ারছ’ লেগেছে। -সহীহ মুসলিম ১/৩৭২ মাসআলা : ইহরামের কাপড় ছিঁড়ে গেলে তা সেলাই করে কিংবা জোড়া দিয়ে পরিধান করা যাবে। তবে ইহরামের কাপড় এ ধরনের সেলাইমুক্ত হওয়াই ভালো। -রদ্দুল মুহতার ২/৪৮১, শরহু লুবাবিল মানাসিক ৯৮ মাসআলা : ইহরাম অবস'ায় সেলাইযুক্ত ব্যাগ ব্যবহার করা ও বেল্ট বাঁধা নিষিদ্ধ নয়। তাবেয়ী উরওয়া রাহ. মুহরিমের জন্য টাকা-পয়সা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র হেফাযতের উদ্দেশ্যে ব্যাগ ব্যবহার করা বৈধ মনে করতেন।

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৫৬৯৯ তাউস রাহ. বলেন, মুহরিম কোমরবন্দ (বেল্ট) ব্যবহার করতে পারবে। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৫৬৮৯ ২। পুরুষের জন্য মাথা ও মুখমণ্ডল আবৃত করা নিষেধ। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, মুখমণ্ডল ও তার উপরের অংশ মাথার অন-র্ভুক্ত। অতএব ইহরাম গ্রহণকারী থুতনী থেকে উপরের দিকে আবৃত করবে না।

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৪৪৫২ এ প্রসঙ্গে মহিলাদের বিধান ইতিপূর্বে উল্লেখিত হয়েছে। তাদের জন্য মুখমণ্ডল আবৃত করা নিষেধ নয়। তবে মুখমণ্ডলে কাপড় লাগানো নিষেধ। তাই তারা পর পুরুষের সামনে এমনভাবে মুখমণ্ডল আবৃত করবেন যেন তাতে কাপড়ের স্পর্শ না লাগে। ৩।

পুরুষের জন্য পায়ের পাতার উপরের উঁচু হাড় ঢেকে যায় এমন জুতা পরিধান করা নিষেধ। তাই এমন জুতা বা স্যান্ডেল পরতে হবে যা পরলে ওই উচু অংশ খোলা থাকে। -রদ্দুল মুহতার ২/৪৯০ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা চাদর, লুঙ্গি ও চপ্পল পরে ইহরাম বাঁধবে। যদি চপ্পল না থাকে তবে চামড়ার মোজা গীরার নিচ পর্যন- কেটে পরিধান করবে। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ৪৮৮১ ৪।

ইহরামের কাপড়ে বা শরীরে ইহরাম গ্রহণের পর আতর বা সুগন্ধি লাগানো নিষেধ। হযরত ইয়া’লা ইবনে উমাইয়্যা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জিঈররানা নামক স্থানে অবতরণ করলেন, তখন এক ব্যক্তি তার কাছে এলেন, যার পরনে ছিল জাফরান মিশ্রিত এক ধরনের সুগন্ধিযুক্ত জুব্বা। ... রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, সুগন্ধির চিহ্ন দূর কর এবং জুব্বা খুলে ফেল। ’-সহীহ মুসলিম ১/৩৭৩ মাসআলা : সুগন্ধিযুক্ত তেল, যয়তূন ও তিলের তেলও লাগানো যাবে না। সুগন্ধি সাবান, পাউডার, স্নো, ক্রীম ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে না।

বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত আতা রাহ. বলেন, ‘ইহরাম গ্রহণকারী তার শরীরে কিংবা কাপড়ে সুগন্ধিযুক্ত তেল লাগালে তার উপর কাফফারা ওয়াজিব হবে। ’-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৪৮৩৩ মাসআলা : পৃথকভাবে সুগন্ধি জর্দা খাওয়াও নিষেধ। আর পানের সাথে খাওয়া মাকরূহ। -মানাসিক ১২১; আহকামে হজ্ব ৩৪ বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত কাসেম রাহ. মুহরিমের জন্য খাবারের সাথে সুগন্ধি জাফরান খাওয়া অপছন্দ করতেন। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৩২৭৮ মাসআলা : ইচ্ছাকৃতভাবে ফল-ফুলের ঘ্রাণ নেওয়া মাকরূহ।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. মুহরিমের জন্য ফুলের ঘ্রাণ নেওয়া অপছন্দ করতেন। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৪৮২৭ আবুয যুবাইর রাহ. বলেন, আমি জাবির রা.কে জিজ্ঞাসা করলাম, ইহরাম গ্রহণকারী কি ফুল বা সুগন্ধি শুঁকতে পারে? তিনি বললেন, না। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৪৮২৮ ৫। নখ কাটা কিংবা শরীরের কোনো স্থানের চুল, পশম কাটা বা উপড়ানো নিষেধ। হযরত আতা, তাউস ও মুজাহিদ রাহ. প্রমুখ বিখ্যাত তাবেয়ীগণ বলেন, ‘মুহরিম তার বগলের নিচের পশম উপড়ালে বা নখ কাটলে তার উপর ফিদয়া দেওয়া ওয়াজিব হবে।

’-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৩৬০৪ ৬। ইহরাম অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর বিশেষ সম্পর্ক স্থাপন করা বা স্ত্রীর সামনে এ সংক্রান- কোনো কথা বা কাজ করা নিষেধ। কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘হজ্বের মাসগুলি সুবিদিত। অতএব যে ব্যক্তি এ মাসগুলিতে হজ্ব করা সি'র করে অতঃপর হজ্বে না অশ্লীলতা আছে এবং না অসৎ কাজ এবং না ঝগড়া-বিবাদ। ’-সূরা বাকারা : ১৯৭ এক ব্যক্তি তাওয়াফে যিয়ারতের পূর্বে স্ত্রীর সাথে সহবাসে লিপ্ত হয়ে গেল।

তাদের সম্পর্কে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. কে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি একটি উট জবাই করার নির্দেশ দিলেন। -মুয়াত্তা মুহাম্মাদ পৃ. ২৩৮ হযরত ইবনে আব্বাস রা.কে এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল যে, আমি ইহরামের হালতে কামভাবের সাথে নিজ স্ত্রীকে চুম্বন করেছি। এখন আমার করণীয় কী? তিনি উত্তরে বললেন, তুমি একটি কুরবানী কর। -কিতাবুল আছার, ইমাম মুহাম্মাদ পৃ. ৫৩ ৭।

কোনো বন্য পশু শিকার করা বা শিকারীকে সহযোগিতা করা নিষিদ্ধ। কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, তোমাদের উপর স'লের প্রাণী শিকার করা হারাম করা হয়েছে যে পর্যন- ইহরাম অবস্থায় থাক। -সূরা মায়িদাহ : ৯৬ হযরত জাবির রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ইহরাম অবস্থায় স্থলভাগের শিকারকৃত প্রাণী তোমাদের জন্য হালাল যদি তা তোমরা নিজেরা শিকার না কর কিংবা তোমাদের উদ্দেশ্যে শিকার করা না হয়। -জামে তিরমিযী ১/১৭৩ হযরত আবু কাতাদাহ রা. বিদায় হজ্বে হজ্ব কাফেলার সাথে হজ্বের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। কাফেলার সবাই ইহরাম অবস'ায় ছিলেন, কিন' তিনি তখনো ইহরাম গ্রহণ করেননি।

এ অবস্থায় একটি শিকারী প্রাণী দেখে তিনি তা শিকার করে ফেললেন। অতঃপর তা নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপসি'ত হলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাফেলার লোকদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের কেউ কি আবু কাতাদাহকে এই প্রাণীটি ইঙ্গিত করে দেখিয়েছ বা অন্য কোনোভাবে শিকার করতে সহযোগিতা করেছ? সবাই বলল, না, ইয়া রাসূলুল্লাহ! তখন তিনি বললেন, তাহলে তোমরা তা খেতে পার। -সহীহ মুসলিম ১/৩৮১ ৮। ঝগড়া-বিবাদ সাধারণ সময়েও নিষিদ্ধ। ইহরাম অবস্থায় তা আরো ভয়াবহ।

কুরআন মজীদে আছে, ‘হজ্বের মাসগুলি সুবিদিত। অতএব যে ব্যক্তি এ মাসগুলিতে হজ্ব করা সি'র করে অতঃপর হজ্বে না অশ্লীলতা আছে এবং না অসৎ কাজ এবং না ঝগড়া-বিবাদ। ’-সূরা বাকারা : ১৯৭ হযরত জাবির ইবনে যায়েদ রাহ. আল্লাহ তাআলার বাণী ‘এবং না ঝগড়া-বিবাদ’ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘তোমার জন্য এই অবকাশ নেই যে, সঙ্গীর সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হবে এবং তাকে রাগান্বিত করবে। ’-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৩৩৯৪ ৯। কাপড় বা শরীরের উকূন মারা নিষিদ্ধ।

-আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৮৬-৪৯০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৪; মানাসিক ১১৭-১২০; গুনইয়াতুন নাসিক ৮৫ বিখ্যাত তাবেয়ী ইকরামা রাহ. কে জিজ্ঞাসা করা হল, ইহরাম গ্রহণকারী তার কাপড়ে উকূন দেখতে পেলে কী করবে? উত্তরে তিনি বললেন, আলতোভাবে ধরে যমীনে রেখে দিবে, মেরে ফেলবে না। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৩২৯৭ মাসআলা : ইহরাম অবস্থায় যেসব কাজ নিষিদ্ধ তাতে লিপ্ত হওয়া গুনাহ। এর কারণে হজ্ব অসম্পূর্ণ হয়ে যায়। উপরন' কিছু বিষয় এমন রয়েছে যাতে লিপ্ত হলে ‘দম’ ওয়াজিব হয়। ইবরাহীম নাখাঈ রাহ. বলেন, বলা হত যে, যে ব্যক্তি হজ্বে নিষিদ্ধ কোনো কাজ করল সে এর জন্য একটি পশু জবাই করবে।

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৫১৯১ মাসআলা : আরাফায় অবস্থানের পূর্বে স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হলে হজ্ব নষ্ট হয়ে যায়। এক্ষেত্রে গরু বা উট যবেহ করা ছাড়াও পরবর্তী বছর তা কাযা করা জরুরি। -আদ্দুররুল মুখতার ২/৫৫৮-৫৫৯, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৪৪, মানাসিক ১১৭ এক ব্যক্তি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-এর নিকট এসে বলল, আমি ইহরাম অবস্থায় স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছি। এখন আমার কী করণীয়? তিনি বললেন, তোমরা উভয়ে হজ্বের অবশিষ্ট আমলগুলো সম্পন্ন করবে। অতঃপর আগামী বছর এ হজ্ব কাযা করবে।

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৩২৪৫ হযরত আলী রা. বলেন, স্বামী-স্ত্রী প্রত্যেকের উপর একটি করে ‘বাদানা’ তথা গরু বা উট জবাই করা ওয়াজিব। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৩২৫৯ এক ব্যক্তি আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.কে জিজ্ঞাসা করলেন যে, আমি ও আমার স্ত্রী মুহরিম ছিলাম। এ অবস'ায় আমি স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হয়েছি (এখন আমাদের করণীয় কী?) ইবনে উমর রা. বললেন, তুমি হজ্ব নষ্ট করে ফেলেছ। তুমি ও তোমার স্ত্রী অন্যান্যদের সঙ্গে থাকবে এবং তাদের মতো হজ্বের (অবশিষ্ট) কাজ করতে থাকবে এবং তারা যখন ইহরাম থেকে মুক্ত হয় তখন তোমরাও মুক্ত হবে। অতঃপর আগামী বছর তুমি ও তোমার স্ত্রী হজ্ব করবে এবং ‘হাদি’ (জবাই করার পশু) নিয়ে আসবে।

যদি তোমাদের হাদির সামর্থ্য না থাকে তাহলে হজ্বের মধ্যে তিনটি রোযা রাখবে এবং প্রত্যাবর্তনের পর সাতটি। -সুনানে কুবরা বায়হাকী ৫/১৬৭ মাসআলা : ইহরাম অবস্থায় মাথা ও মুখ ব্যতীত পূর্ণ শরীর চাদর ইত্যাদি দিয়ে আবৃত করা যাবে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, এক ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় সওয়ারীর পিঠ থেকে পড়ে মৃত্যু বরণ করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তাকে বড়ই পাতা মেশানো পানি দিয়ে গোসল দাও এবং তার পরনের কাপড় দু’টি দ্বারা কাফন পরাও। তার চেহারা ও মাথা আবৃত করো না।

কেননা সে কিয়ামতের দিন উত্থিত হবে তালবিয়া পড়তে পড়তে। -সহীহ মুসলিম ১/৩৮৪ মাসআলা : কান, ঘাড়, পা ঢাকা যাবে। মাথা ও গাল বালিশে রেখে শোয়া যাবে। তবে পুরো মুখ বালিশের উপর রেখে ঢেকে শোয়া যাবে না। -মানাসিক ১২৩-১২৪, গুনইয়াতুন নাসিক ৯৩ মাসআলা : ইহরাম অবস্থায় পান খাওয়া নিষিদ্ধ নয়।

তবে পানে সুগন্ধিযুক্ত মসলা বা জর্দা খাওয়া নিষিদ্ধ। বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত কাসেম রাহ. ‘মুহরিম’ ব্যক্তির জন্য খাবারের সঙ্গে সুগন্ধি জাফরানের মিশ্রণকে অপছন্দ করতেন। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৩২৭৮ মাসআলা : ইহরাম অবস্থায় পানিতে ডুব দেওয়া যাবে। -গুনইয়াতুন নাসিক ৯১ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা ‘জুহফা’ নামক স্থানে উপসাগরের পাশে ছিলাম। তাতে আমরা ডুব দিয়েছি।

হযরত উমর তখন আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিলেন, কিন' তিনি আমাদেরকে এজন্য দোষারোপ করেননি। আমরা ছিলাম ইহরাম অবস্থায়। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৩০১৩ উমরার পদ্ধতি উমরার ফরয দুটি ১। উমরার ইহরাম গ্রহণ। অর্থাৎ উমরার নিয়তে তালবিয়া পাঠ করা।

২। বাইতুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করা । উমরার ওয়াজিব দুটি ১। সাফা-মারওয়ার মাঝে সায়ী করা। ২।

মাথার চুল মুণ্ডানো বা ছাঁটা। হযরত আবদুর রহমান ইবনে আমর বলেন, আমরা হযরত উসমান রা.-এর সঙ্গে মক্কায় এসেছি। তাঁকে দেখেছি, তিনি মক্কা থেকে বের হওয়ার আগে ইহরাম খুলতেন না। তিনি শুধু বাইতুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করতেন এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে সায়ী করতেন। এরপর মাথা মুণ্ডিয়ে ফেলতেন।

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৩৭৮৬ তাবেয়ী হযরত ইবরাহীম রাহ. বলেন, যখন কেউ শুধু উমরা করবে তখন সে চাইলে মাথার চুল ছাঁটতেও পারে আবার মুণ্ডাতেও পারে। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৩৭৮৮ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, জিঈররানা নামক স্থান থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ উমরা করেছেন। তাঁরা তাওয়াফকালে ‘রমল’ করেছেন এবং পরিধেয় চাদর (ডান কাঁধ খালি রেখে) বগলের নিচ দিয়ে বের করে বাম কাঁধের উপর রেখেছেন। -সুনানে আবু দাউদ ১/২৫৭ মাসআলা : উমরার তাওয়াফ ও যে তাওয়াফের পর সায়ী আছে সেই তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে রমল করা অর্থাৎ বীরদর্পে কাঁধ দুলিয়ে কিছুটা দ্রুত বেগে চলা সুন্নত। তদ্রূপ পুরো তাওয়াফে ইজতিবা করা (পরিধেয় চাদর ডান বগলের নিচে দিয়ে বের করে বাম কাঁধের উপর রাখা) সুন্নত।

তবে এ দু’টি বিষয়-রমল ও ইজতিবা শুধু পুরুষের জন্য সুন্নত। -মানাসিক ১২৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৯৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৫ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, হজ্ব ও উমরায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাওয়াফ করতেন তখন প্রথম তিন চক্করে রমল করতেন। বাকি চার চক্করে স্বাভাবিকভাবে হাঁটতেন। এরপর দু’ রাকাত নামায পড়তেন। এরপর সাফা-মারওয়া মাঝে সায়ী করতেন।

-সহীহ মুসলিম ১/৪১০ হযরত সফওয়ান তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাওয়াফকালে ‘ইজতিবা’ করতেন। -মুসনাদে দারেমী হাদীস : ১৯৭৪; জামে তিরমিযী ১/১৭৪ মাসআলা : মহিলাদের জন্য রমল নেই। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, মহিলাদের জন্য ‘রমল’ করার বিধান নেই। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৩১১১ তাবেয়ী হযরত ইবরাহীম বলেন, মহিলারা মাথার চুল খাটো করবে। তাদের জন্য মাথা মুণ্ডানো ও রমলের বিধান নেই।

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৩১১৪ মাসআলা : তাওয়াফকালে সীনা বাইতুল্লাহর দিকে করে তাওয়াফ করা যাবে না। এমনকি রুকনে ইয়ামানী স্পর্শ করার সময় কিংবা হাজরে আসওয়াদ চুমু দেওয়ার সময় সীনা বাইতুল্লাহর দিকে ঘুরে গেলে যেখান থেকে ঘুরেছে সেখান থেকেই সীনা ঠিক করে আবার তাওয়াফ শুরু করা জরুরি। -মানাসিক ১৫৩, গুনইয়াতুন নাসিক ১১৩, রদ্দুল মুহতার ২/৪৯৪ হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কায় এলেন তখন হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করলেন এবং ডান দিকে চলতে আরম্ভ করলেন। প্রথম তিন চক্করে ‘রমল’ করলেন। অবশিষ্ট চার চক্কর স্বাভাবিকভাবে হাঁটলেন।

-সহীহ মুসলিম ১/৪০০ মাসআলা : সকল তাওয়াফের পর দুই রাকাত নফল নামায পড়া ওয়াজিব। তাওয়াফ নফল হোক বা ফরয। আর এই দুই রাকাত নামায মাকামে ইব্রাহীমীর পিছনে পড়া ভালো। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কায় এলেন তখন বাইতুল্লাহর চারপাশে সাত বার তাওয়াফ করলেন। তাওয়াফ শেষে মাকামে ইবরাহীমের পেছনে দু’ রাকাত নামায পড়লেন।

এরপর সাফা-মারওয়ার দিকে গেলেন। ... -সহীহ বুখারী ১/২২০ মাসআলা : মাকামে ইবরাহীমীর পিছনে পড়া সম্ভব না হলে মসজিদে হারামের যে কোনো স্থানে এই দুই রাকাত নামায পড়া যাবে। ইবনে আবী আম্মার বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের রা.কে তাওয়াফ করতে দেখেছি। তিনি তাওয়াফ শেষে দু’ রাকাত নামায পড়লেন। তখন তাঁর ও কিবলার মাঝে তাওয়াফকারীরা তাওয়াফরত ছিল।

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৫২৬৮ মাসআলা : দু’ রাকাত নামায হেরেমের সীমানার ভিতরে পড়লেও ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। হযরত উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে প্রত্যাবর্তনের সময় তাকে বলেছেন, যখন ফজরের নামায শুরু হবে এবং লোকেরা নামাযরত অবস্থায় থাকবে তখন তুমি উটে আরোহণ করে তাওয়াফ করে নিবে। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তাই করলেন এবং (দু’ রাকাত) নামায না পড়ে বের হয়ে এলেন। -সহীহ বুখারী ১/২২০ মাসআলা : দু’ রাকাত নামায হরমের বাইরে পড়া মাকরূহ। তবে পড়লে আদায় হয়ে যাবে।

দম ওয়াজিব হবে না। -মানাসিক ১৫৫, আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৯৯, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৬, গুনইয়াতুন নাসিক ১১৬ বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত আতা রাহ. বলেছেন, তাওয়াফের দু’ রাকাত নামায, ইচ্ছে হলে নিজ ঘরেও আদায় করতে পার। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৫২৬৭ মাসআলা : তাওয়াফ পরবর্তী দুই রাকাত নামায তাওয়াফের পর অবিলম্বে আদায় করা উত্তম। বিনা ওজরে বিলম্বে পড়া মাকরূহ। তবে মাকরূহ ওয়াক্ত হলে পরে পড়বে।

-রদ্দুল মুহতার ২/৪৯৯, মানাসিক ১৫৫, গুনইয়াতুন নাসিক ১১৬ মাসআলা : একাধিক তাওয়াফ করে পরবর্তী দুই রাকাত নামাযকে একত্রে পড়া মাকরূহ। নাফে’ রাহ. থেকে বর্ণিত, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. একত্রে একাধিক তাওয়াফ করা অপছন্দ করতেন। তিনি বলেন, প্রত্যেক সাত চক্করে (অর্থাৎ এক তাওয়াফের পর) দুই রাকাত নামায পড়া জরুরি। তিনি একত্রে দুই তাওয়াফ করতেন না। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ৯০১২ বিখ্যাত তাবেয়ী মুহাম্মাদ, ছালিম ও উবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ রাহ. থেকে বর্ণিত, তাঁরা প্রত্যেক তাওয়াফের পর দুই রাকাত নামায আদায় করতেন এবং একাধিক তাওয়াফ একত্রে করতেন না।

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৫০২৯ মাসআলা : তাওয়াফের পরের সময় যদি মাকরূহ ওয়াক্ত হয়ে থাকে তবে মাকরূহ ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পর একাধিক তাওয়াফের নামায ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.