আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইসলামে নারীর মর্জাদা।লিখেছেন মক্তব তাও‘ইয়াতুল জালিয়াত, আল-জুলফী

ইসলামে নারীদের অধিকার সম্পর্কে উপস্থাপনের পূর্বে অন্যান্য জাতির নিকট তাদের মর্যাদা এবং তাদের সাথে কি ধরনের আচরণ করা হত, সে সম্পর্কে কিছু আলোচনা অতি আবশ্যক মনে করছি। ইউনানদের নিকট মেয়েরা ছিল বেচা-কেনার সামগ্রী। তাদের কোন প্রকার অধিকার ছিল না। সমস্ত অধিকার পুরুষের জন্যই বরাদ্দ ছিল। মীরাস থেকে তারা ছিল বঞ্চিত।

ধনসম্পদে তাদেরকে কোন হস্তক্ষেপ করতে দেয়া হত না। প্রসিদ্ধ দার্শনিক সুক্বরাতেরের বক্তব্য হলো- ‘পৃথিবীর অধঃপতনের বড় ও প্রধান কারণই হলো নারীদের অস্তিত্ব। নারীরা হলো এমন একটি বিষাক্ত বৃক্ষের মত, যার বাহ্যিক অতি সুন্দর কিন্তু চড়ই পাখি যখনই সে বৃক্ষের ফল ভক্ষণ করে, সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুবরণ করে। ’ রোমকরা নারীদেরকে একটি আত্মাহীন বস্তু বলে গণ্য করতো। নারীদের কোন অধিকার এবং মূল্য তাদের নিকট ছিল না।

তাদের কথা হলো- ‘নারীদের রূহ্‌ বা আত্মা নেই’। তাই তাদেরকে খুঁটির সাথে বেঁধে দ্রুতগতিতে ছুটিয়ে তাদের প্রাণ নাশ করা হতো। হিন্দু ধর্মে নারীর অবস্থা আরো জঘন্য ও নিকৃষ্ট ছিল। তারা নারীকে তার স্বামীর মৃত্যুর সাথে সাথে স্বামীর চিতায় পুড়িয়ে ধ্বংস করে দিত (যাকে সতীদাহ প্রথা বলা হয়)। চীনারা বলে- নারীরা এমন যাতনাদায়ক পানি সদৃশ, যা সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও সমৃদ্ধিকে ধুয়ে-মুছে বিনাশ করে দেয়।

প্রত্যেক চীনার তার স্ত্রীকে বিক্রয় করার এবং জীবদ্দশায় তাকে সমাধিস্থ করার অধিকার ছিল। ইয়াহূদীরা নারীদের মনে করে এক অভিশপ্ত প্রাণী। কারণ, এই নারীই নাকি আদমকে পথভ্রষ্ট করেছে এবং তাকে নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল ভক্ষণ করতে বাধ্য করেছে। অনুরূপভাবে তারা নারীকে অপবিত্রা মনে করে; তাই তারা ধরে নেয়- যখন তার মাসিক হয়, তখন সমস্ত ঘর ও তার স্পর্শীয় সমস্ত বস্তু অপবিত্র হয়ে যায়। অনুরূপ ভাইয়ের উপস্থিতিতে পিতার সম্পদ থেকে সে মীরাসও পেত না।

খৃষ্টানদের নিকট নারী হলো- মানব জাতির সাথে নারীর কোন সম্পর্ক নেই। সাধু বুনাফান্তুর বলেন- ‘যখন কোন নারীকে দেখবে, তখন এটা মনে করবে না যে, তোমরা কোন মানব মূর্তি দেখছ, এমনকি কোন চতুষ্পদ পশুও না; বরং যা দেখেছ তা নিছক শয়তান। আর তা হতে যা শুন, তা হলো আজদাহার বাঁশী’। বৃটিশ আইনানুসারে বিগত শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময় পর্যন্ত নারীরা দেশের নাগরিক হিসাবে গণ্য হত না। সব রকমের মালিকত্ব থেকে তারা হত বঞ্চিতা।

এমনকি পরিহিত পোশাকটারও তারা মালিক হত না। ১৫৬৭ খৃষ্টাব্দে স্কটল্যাণ্ড পার্লামেন্টে এ আইন প্রণয়ন করা হয় যে, নারীদেরকে কোন কিছুর উপর আধিপত্য দেয়া বৈধ নয়। অনুরূপ বৃটিশ পার্লামেন্ট সপ্তম হেনরীর যুগে নারীদের জন্য ইঞ্জীল পাঠ নিষিদ্ধ করে দেয়। কারণ, তারা অপবিত্রা। নারীরা মানুষ কিনা এ ব্যাপারে পর্যকেক্ষণের জন্য ১৫৮৬ খৃষ্টাব্দে ফ্রান্সে একটি কন্‌ফারেন্স অনুষ্ঠিত হয় এবং তাতে এটাই স্বীকৃতি পায় যে, নারীরা মানুষ, তবে তাদেরকে পুরুষের সেবার জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে।

বৃটিশ আইনানুযায়ী ১৮০৫ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত স্বামীর জন্য তার স্ত্রীকে বিক্রয় করা বৈধ ছিল। ছয়পেনি (বৃটিশ মুদ্রা) পর্যন্ত তার মূল্য নির্দিষ্ট ছিল। ইসলাম অবির্ভাবের পূর্বে আরবে নারীরা খুবই তুচ্ছ, ত্যাজ্য ও হেয় প্রতিপন্না ছিল। না তারা মীরাস পেত আর না কোন অধিকার। এমনকি তাদেরকে কোন কিছু গণ্যই করা হত না।

আবার অনেকে তদের মেয়েদেরকে জীবন্ত সমাধিস্থ করতো। অতঃপর নারীদেরকে নির্যাতন ও নিপীড়ন থেকে মুক্তি দিতে এবং নারী-পুরুষ সকলে সমান, পুরুষের ন্যায় তাদেরও অধিকার আছে-এর উদাত্ত ঘোষণা দিতে অবির্ভাব হয় ইসলাম। মহান আল্লাহ্‌ বলেনঃ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوباً وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ -سورة الحجرات: 13 অর্থাৎ, ((হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন স্ত্রী হতে সৃষ্টি করেছি। তারপর তোমাদেরকে জাতি ও ভ্রাতৃগোষ্ঠী বানিয়ে দিয়েছি, যেন তোমরা পরস্পরকে চিনতে পার। বস্তুতঃ আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক সম্মানী সে, যে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে আল্লাহ্‌ভীরু।

)) [সূরা আল-হুজরাতঃ ১৩] তিনি অরো বলেনঃ وَمَن يَعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتَ مِن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُوْلَـئِكَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ وَلاَ يُظْلَمُونَ نَقِيراً - سورة النساء: 124 অর্থাৎ, ((আর যে নেক কাজ করবে-সে পুরুষ হোক বা মহিলা হোক-সে যদি ঈমানদার হয়, তবে এই ধরনের লোকই জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের বিন্দু পরিমাণ হকও নষ্ট হতে পারবে না। )) [সূরা আন্‌-নিসাঃ ১২৪] তিনি আরো বলেনঃ وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ حُسْناً - سورة العنكبوت: 8 অর্থাৎ, ((আমি মানুষকে নিজের পিতা-মাতার সাথে ভাল ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছি। )) [সূরা আল-আনকাবূতঃ ৮] রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ أكملُ المؤمنينَ إيماناً أحسنهُم خُلقاً. وخياركُم خياركُم لنسائِهِم - الترمذي: 1172 অর্থাৎ, ((পরিপূর্ণ ঈমানদার তো সে-ই, যার চরিত্র সুন্দর। আর তোমাদের মধ্যে সেই সর্বোত্তম, যে তার স্ত্রীদের প্রতি উত্তম। )) [তীরমিজীঃ ১১৭২] এক ব্যক্তি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলোঃ من أحق الناس بحسن صحابتي؟ قال: (أمك). قال: ثم من؟ قال: (ثم أمك). قال: ثم من؟ قال: (ثم أمك). قال: ثم من؟ قال: (ثم أبوك). - صحيح البخاري: 5626, مسلم: 2546 অর্থাৎ, ((মানুষের মধ্যে আমার উত্তম ব্যবহারের সর্বাধিক অধিকারী কে? উত্তরে তিনি বললেনঃ তোমার মা।

অতঃপর সে বললঃ তারপর কে? তিনি জবাব দিলেনঃ তোমার মা। অতঃপর সে আবার বললঃ তারপর কে? তিনি বললেনঃ তোমার মা। তারপর কে? বললেনঃ তোমার বাবা। )) [বুখারীঃ ৫৬২৬, মুসলিমঃ ২৫৪৬] এই হলো নারীদের সম্পর্কে সংক্ষিপ্তাকারে ইসলামের ধ্যান-ধারণা। ( মন্তব্যের জবাব দিয়া হবেনা।

) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।