আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইসলামে বহু বিবাহ

বহু বিবাহ ইসলামের আরও একটি বিষয় নিয়ে কথা বলতে শোনা যায়,তা হলো এর বিয়ে সংক্রান্ত নিয়ম-কানুন। পাশ্চাত্যের অনেকে মুসলিমদের ব্যাপারে এভাবে বলে যে,মুসলিম মানেই তার চার বৌ। এটা নিয়ে একটু কথা বলতে চাই- বিয়ে সংক্রান্ত ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন,“তোমরা যদি ইয়াতিম মেয়েদের প্রতি অবিচার করাকে ভয় কর, তবে বিয়ে করবে নারীদের মধ্য থেকে যাকে তোমার পছন্দ,দুই,তিন অথবা চার পর্যন্ত,আর যদি আশঙ্কা কর যে-সুবিচার করতে পারবে না,তবে একজনকে অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীকে বিয়ে কর,এতে তোমাদের ক্ষেত্রে পক্ষ পাতিত্ব না করার সম্ভাবনা অধিক(বিধায় এটি গ্রহন করা উচিৎ) আর নারীদেরকে মাহ্র(বিয়ের সময় নারী কর্তৃক দাবীকৃত অর্থ)প্রদান করবে স্বতস্ফুর্তভাবে, সন্তষ্টচিত্তে। ”(আল-কুরআন,৪ঃ৩-৪) ইসলাম মুসলিমকে চারটি বিয়ে করতে বলেনি। বরং শর্ত সাপেক্ষে ইসলামে চারটি পর্যন্ত বিয়ের সুবিধা রয়েছে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এবং তাঁর রসূল(সাঃ) একটি স্ত্রী’ই যথেষ্ট বলেছেন বা একজনের জন্য এক নারীই যথেষ্ট। কিন্তু যদি কেউ মনে করে যে,সে সম আচরণ করতে পারবে,সমান অধিকার রক্ষা করতে পারবে এবং যদি তার যুক্তিসঙ্গত কারনে প্রয়োজন হয়, তাহলে সে একাধিক বিয়ের কথা ভাবতে পারে। এর সাথে বিশাল দায়িত্বশীলতা জড়িত এবং তা সঠিকভাবে পরিপালিত না হলে আল্লাহর কাছে জবাবদিহী করতে হবে অত্যন্ত কঠোরভাবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন-“তোমরা যতই ইচ্ছা কর না কেন তোমাদের স্ত্রীদের প্রতি কখনই সমান ব্যবহার করতে সক্ষম হবে না,তবে তোমরা কোন একজনের প্রতি সম্পুর্ণভাবে ঝুঁকে পড় না এবং অপরকে ঝুলানো অবস্থায়ও রেখ না,যদি তোমরা নিজেদেরকে সংশোধন কর এবং সাবধান হও তবে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল,পরম দয়ালু। ”(আল-কুরআন,৪ঃ১২৯) ইসলামীক রাষ্ট্রের বিশ্বব্যপী ইসলামকে ছড়িয়ে দেওয়ার একটি সু-শৃঙ্খল পদ্ধতির নাম হল-জিহাদ।

জিহাদ ইসলামিক রাষ্ট্রের একটি বৈদেশিক নীতি। এই জিহাদে অংশগ্রহন করা এবং শাহাদাত লাভ করা মুসলিমের একটি আজন্ম লালিত স্বপ্ন। জিহাদে অংশ গ্রহনরত মুসলিমরা শহীদ হলে তাদের স্ত্রীরা বিধবা হয়ে যাবে। আর যদি এসব বিধবাদের যথাযোগ্য মর্যাদায় পূণর্বাসিত না করা হয় তাহলে এ বিষয়টি বহুবিধ সামাজিক জটিলতার জন্ম দিবে,এর ফলে সমাজ দ্রুত কলুষিত হতে পারে। জীবন ও জীবিকার জন্য বিধবারা অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হতে পারে ফলে মুসলিমের চারিত্রিক দৃঢ়তা হুমকির সম্মুখিন হবে,আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে,এর সাথে সম্পৃক্ত অপরাধ মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।

এক সময় মুসলিম হবে উপাদানহীন। এই একটি মাত্র কারনেই মুসলিম কর্তৃক ‘সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ’ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সত্য আর ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এটি একটি বড় হুমকি হতে পারে। কারণ, নারী সংক্রান্ত দূর্বলতা ঈমান ধ্বংস করবে এবং এই দূর্বলতা সমাজকে অপরাধ প্রবন করবে(প্রমানিত সত্য)। তাই রসূল(সাঃ) বিধবাদেরকে বিয়ে কারার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করেছেন।

কোন রকম করুনা নয় বরং সাবলিলভাবে,নিঃসঙ্কচিত্তে কুমারী নারীদের মতই তাদেরকে বিয়ে করার ব্যাপারে তিঁনি একটি সাং®কৃতি গড়ে তুলেছিলেন। ইসলাম এমন একটি পরিবেশ গড়ে তোলে যেখানে পুরুষ-নারী উভয়ে উভয়ের সাথে একটি বিশ্বস্থতার সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে। যেখানে নারী-পুরষের সম্পর্ক হয় চরম বিশ্বস্থতার,সেখানকার সমাজ হয় সুখী,সমৃদ্ধশালী। এখানথেকে যে সন্তান জন্ম লাভ করে সে হয় পরিপূর্ণ সুস্থ্য,আদর্শবান,দায়িত্ব সচেতন। তাই আমরা সাহাবাদেরকে বিধবাদের,তালাকপ্রাপ্তাদের সমস্ত রকমের দায়িত্ব নিয়ে বিবাহ করতে দেখেছি।

এ ক্ষেত্রে একাধিক সন্তানের জননীদেরকে প্রাধান্য দিয়ে বিয়ে করতে দেখেছি। এছাড়া ইহুদী,খ্রিষ্টাণ নারীদেরকেও মুসলিম পুরুষেরা বিয়ে করতে পারে(তবে তা না করা ভাল বলে আলিমরা মনে করেন)। রসূল(সাঃ)এর এক জন মাত্র কুমারী স্ত্রী ছিলেন- হযরত আয়েশা(রাঃ),বাকী স্ত্রীগণ ছিলেন একাধিক তালাকপ্রাপ্তা এবং অনেকের এক বা একাধিক সন্তান ছিল। তাঁর বয়স যখন ২৫বছর তখন তিঁনি ৪০ বছর বয়সী হযরত খাদিজা(রাঃ)কে তার প্রস্তাবে বিয়ে করেন। এ বিয়ের আগে হযরত খাদিজা(রাঃ) এর দুবার বিয়ে হয়েছিল(কারো কারো মতে ৩বার) এবং একাধীক সন্তান ছিল।

খাদিজা (রাঃ)এর মৃত্যুর আগে রসূল(সাঃ)দ্বিতীয় বিয়ে করেননি। রসূল(সাঃ)এর দ্বিতীয় বিয়ের সময় তাঁর বয়স ছিল ৫১ বছর। তাঁর বিয়েগুলো ছিল রাজতৈতিক কারণে। এক গোত্রের সাথে আরেক গোত্রের ভালবাসার বন্ধন সুদৃঢ় করতে,ইসলামের প্রসার ঘটাতে,অন্য গোত্রের মানুষকে ইসলামের পথে আনতে,ভবিষ্যতে ইসলামী রাষ্ট্রকে আরও শক্তিশালী করার জন্য এবং মুসলিমদের নিরাপত্তার জন্য তাঁর বিয়েগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম। আর তিঁনি যা কিছু করেছেন তাতে আল্লাহ তায়ালার সমর্থন ছিল এবং আল্লাহই তাকে দিয়ে সব কিছু করিয়েছেন মানব জাতির কল্যানের জন্য।

তিঁনি তাঁর স্ত্রীদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন এবং তাঁর স্ত্রীরা তাঁর উপর অত্যন্ত সন্তুষ্ট ছিলেন। উম্মুল মোমেনিনগনের পারষ্পরিক সম্পর্কও অত্যন্ত মধুর ও সৌহার্দপূর্ণ ছিল। তাদের প্রত্যেকের কাছে পরম আকাঙ্খিত ছিল রসুলের(সাঃ) সাথে সুবর্ণ সময় অতিবাহিত করা। অথচ কোনো কোনো স্ত্রী সে সময়টুকুও অন্য স্ত্রীর জন্য ছেড়ে দিতেন। রসূল(সাঃ)উম্মুল মোমেনিনগনের সাধ্যানুযায়ী সহযোগীতা করতেন।

তাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন,সফরে সঙ্গী বানানো ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিঁনি লটারির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতেন। কখনও কখনও কোন প্রভাবশালী গোত্রপতির মেয়ে এসে রসূল(সাঃ)কে বিয়ের প্রস্তাব করেছে , বিয়ে হয়েছে এবং উক্ত গোত্র ইসলাম গ্রহন করেছে অথবা তারা মুসলিমদের মিত্র গোত্রে পরিনত হয়েছে। কখনও কখনও গোত্র পতিরা তাদের কন্যার সাথে বিয়ে করার প্রস্তাব করেছে এবং এরুপ করলে তারা/তাদের গোত্র ইসলাম গ্রহন করবে,মুসলিমদেরকে সর্বপ্রকার নিরাপত্তা দিবে এমন ওয়াদা করে তারা তা রক্ষা করেছে। তিঁনি যা কিছু করেছেন তা আল্লাহর আদেশেই করেছেন। তবে তিঁনি ১২টি বিয়ে করলেও মুসলিমদের জন্য সর্বোচ্চ চারটি শর্তসাপেক্ষে বৈধ, শুধুমাত্র তাঁর ক্ষেত্রেই উক্ত সংখ্যক বিয়ের বিশেষ অনুমোদন আল্লাহ তায়ালা দিয়েছিলেন।

একজন নারীর স্বামী যেকোন সময়,যেকোনভাবে মৃত্যুবরণ করতে পারে। এই স্ত্রীর যদি এক বা একাধিক সন্তান থাকে আর যদি অধিক বিয়ের অনুমতি না থাকে, তাহলে এসমস্ত স্ত্রীদের জীবন,জীবিকা কতটুকু কঠিন হয়ে পড়বে, তা কি ভেবে দেখেছেন ? প্রচলিত সমাজে বিধবাদের মৌখিক সন্তনা দেওয়ার লোকের অভাব নেই। এছাড়াও আছে সুযোগ সন্ধানী ,নারী লোলুপ গোষ্ঠী। কিন্তু এই স্ত্রীর মনো-দৈহিক সমস্ত চাহিদা নিয়মতান্ত্রিকভাবে মিটিয়ে,তার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা এবং তার সন্তানকে নিজের সন্তানের মত লালন-পালন করার লোকের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। কারণ পুঁজিবাদী চিন্তা চেতনা মানুষকে স্বার্থবাদী ,ভোগবাদী করে আর একজন বিধবার দায়িত্ব এবং তার সন্তানের দায়িত্ব মানে নিশ্চিত খরচ-খরচার ব্যাপার।

আমাদের সমাজে বিধবা মানেই অবাঞ্চিত কিছু। কিন্তু ইসলাম এভাবে চিন্তা করতে শেখায়নি। তাকে তার যথার্থ অধিকারে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিধবা,তালাকপ্রাপ্তাদের সাথে বিবাহকে উৎসাহিত করেছে,এটাকে সাধারণ সাং®কৃতির অংশ করেছে। পাশ্চাত্য সমাজে দেখা যায় যখন-তখন,যেভাবে খুশি তারা বিয়ে করে এবং খুবই তুচ্ছ কারনে,স্বাভাবিক মনোমালিন্য হলেও তারা স্ত্রীকে তালাক দিতে দ্বিধা করে না।

বিয়ের কয়েকমাস পরেই তাদের কাছে ব্যাপারটি একঘেয়ে মনে হয় এবং তারা আলাদা হয়ে যায়। এখানে একজনের ইচ্ছা এবং অন্য জনের অনিচ্ছা থাকলেও, যার একসাথে থাকার ইচ্ছা সে তার ইচ্ছাকে বিসর্জন দিতে বাধ্য হয়। তালাকপ্রাপ্তা নারীর যদি সন্তান থাকে,তাহলে তাকে মানুষিক ও অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়তে হয়। এরুপ ক্ষেত্রে পাশ্চাত্য সমাজে অনেক সময় দেখা যায় উক্ত নারী কোন দিশা না পেয়ে তার সন্তানকে ফেলে পালিয়েছে। পাশ্চাত্য সমাজের অধিকাংশ নারীই তাদের স্বামীর সংসারে থেকে স্বামীর টাকায় চলতে পছন্দ করে এবং সংসার সামলাতে পছন্দ করে।

আমাদের সমাজে প্রায় সকল নারীই অর্থনৈতিক,সামাজিক,মানুষিক সকল নিরাপত্তার জন্য একজন অর্থশালী(স্বচ্ছল) এবং আদর্শবান স্বামী পছন্দ করে। একটু ভাবুন- এমতাবস্থায় যদি ঐ স্ত্রী স্বামী কর্তৃক তালাকপ্রাপ্তা হয়,অথবা স্বামী মৃত্যুবরণ করে তাহলে তার অবস্থা কি দাড়ায় ? সকল স্ত্রীর অবস্থা এক রকম নয় কিন্তু বিধবা এবং তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীদের যদি যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পূণর্বাসিত করা না হয়, তাহলে সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট হতে বাধ্য। বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে, জীবিকা কঠিন হয়ে পড়ে,সে অবিভাবকহীন হয়ে পড়ে,খারাপ মানুষের কু দৃষ্টি থেকে সর্বদা হেফাজতের চিন্তায় অধীর থাকে এবং মানুষ হিসেবে তার মনো-দৈহিক চাহিদা মেটানোর তাড়না সৃষ্টি হওয়াও স্বাভাবিক। এমতাবস্থায় নিয়মতান্ত্রিকভাবে তাদের ব্যাপারে সমাজ কোন পদক্ষেপ না নিলে,তারা একটি প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বিপথগামী হয় বা হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এমতাবস্থায় তারা পুরুষের মনোরঞ্জনকে পেশা হিসেবে গ্রহন করতে পারে।

স্বামীহীন অবস্থায় তারা বিভিন্ন রকম নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত হয়। নারী এবং পুরুষ একে অপরের পরিপূরক কিন্তু বিধবা ও তালাক প্রাপ্তাদের যদি কুমারীদের মত স্বাভাবিক বিয়ের সাং®কৃতি না থাকে,তবে সমাজে নারী-পুরুষের ভারসাম্য নষ্ট হয় । এছাড়া যুদ্ধের সময় এমন নারীর পরিমান বাড়তে পারে। তাই ইসলাম নারীকে সাবলম্বী করার জন্য,তার সকল ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিধবা ও তালাকপ্রাপ্তা নারীদেরকে স্বভাবিকভাবে বিয়ে করার সাং®কৃতি প্রতিষ্ঠা করেছে। আর নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করে,সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করে,সমান নিরাপত্তা দিয়ে প্রয়োজনে একাধিক বিয়ে, যেকোন সমাজের জন্য অত্যন্ত কল্যানকর।

একাধিক বিয়ে শর্ত এবং প্রয়োজনের উপর নির্ভরশীল। এছাড়া পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করতে ইসলাম তালাকের বিধান করেছে খুবই কষ্টকর ও প্যাচের,যাতে মানুষ কথায় কথায় তালাক দিতে না পারে। স্ত্রী দুঃচরিত্রা হলেও সে তাৎক্ষনিকভাবে তালাক দিতে পারবে না। সর্বপ্রথম ইসলাম তাকে সংশোধনের বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতে বলে(পন্থাগুলো বর্ণনা করলাম না,লেখা বড় আকার ধারণ করার ভয়ে)। এতে যদি কাজ না হয় তাহলে উভয়ের অবিভাবকগণ আলোচনার মাধ্যমে সংশোধনের চেষ্টা করবে।

এতে যদি কাজ না হয়,তবে সে এক তালাক দিবে এবং একমাস অপেক্ষা করবে। এই একমাসে তার সাথে স্বাভাবিক আচরণ করবে এবং স্ত্রীর মন জয় করে তাকে সঠিক পথে আনার আপ্রাণ চেষ্টা করবে। এতেও যদি কাজ না হয়, তবে প্রথম তালাকের একমাস পর দ্বিতীয় তালাক দিবে এবং স্বাভাবিক আচরণের মাধ্যমে,বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে তাকে সঠিক পথে আনার চেষ্টা করবে। যদি সে সঠিক পথে আসে এবং পাপ পথ পরিহার করে তাহলে পূর্বের তালাকগুলো বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু যদি সে ফেরৎ না আসে তবে স্বামী তৃতীয় মাসে তৃতীয় ও শেষ তালাক দিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাবে,একই সাথে স্ত্রীর দেনমোহরের টাকা বা সম্পদ বাকী থাকলে তা পরিশোধ করবে।

স্ত্রীর সন্তান ছোট থাকলে তাকে একটি নির্দষ্ট সময় পর্যন্ত ভরণ-পোষণ দিতে হবে(এ সংক্রান্ত অনেক বিধান আছে,তা উল্লেখ করা আমার এ মুহুর্তের উদ্দেশ্য নয়)। কেউ একসাথে তিন তালাক দিতে পারবে না। যদি কেউ দেয় বা রাগের বশে একসাথে তিন তালাক দেয়,তাহলে তা গ্রহনীয় হবে না,অথবা হলেও এক তালাক হিসেবে গণ্য হবে(অনেক আলেম বলেছেন এভাবে তালাক দিলে তালাক হয়ে যাবে,তবে এভাবে তালাক দেওয়া নিয়ম নয়) এবং হযরত ওমর(রাঃ)এমন ব্যক্তিদের শাস্তি দিয়েছেন(যারা একসাথে তিন তালাক উচ্চারণ করত এবং রাগের বশে তালাক দিত,কারণ এটি সাধারণ প্রক্রিয়া নয়)। রসূল(সাঃ)বলেন-“বৈধ দুটি বিষয় রয়েছে যা আমি সর্বাপেক্ষা ঘৃণা করি। এর একটি হল ভিক্ষাবৃত্তি অন্যটি হল তালাক।

” পাশ্চাত্য সমাজ মুসলিমদের একাধিক বিয়ে নিয়ে কটাক্ষ করে। অথচ প্রয়োজনে একাধিক বিয়ের বিধান সমাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যে অবদান রাখে, তা দেখেনা। অন্ন,বস্ত্র,বাসস্থান,শিক্ষা,চিকিৎসা,মনো-দৈহিক বিভিন্ন চাহিদা,অধিকার প্রতিষ্ঠিত করে বৈধভাবে একাধিক স্ত্রী থাকা দোষের,আর এ সমস্ত চাহিদা পূরণ ও অধিকার প্রতিষ্ঠার ধারের কাছে না থেকে শুধু ভোগ করার জন্য হাজার ঘরে গমন করা,হাজার সংসারে অবিশ্বাসের আগুন জ্বালানো- খুবই পূণ্যের(!),এটাই পাশ্চাত্যের বক্তব্য । বহু বিবাহ ব্যাপারটি স্থানীয় সাং®কৃতির উপরও নির্ভরশীল। যেমন আরব বিশ্বে এটি প্রচলিত।

আরব সমাজে সামাজিকভাবে ইসলাম পালিত হয় বা সেই পরিবেশ রয়েছে । আরব বিশ্বের নারীরা একাধিক বিয়েকে অধিকার,কল্যানকর মনে করে। এটাকে তারা অত্যাচার,অনাচার,অবিচার মনে করে না। সেখানে আমরা নারীদের উঁচু মর্যাদাও লক্ষ্য করি। সেখানে নারীদের কদরও খুব বেশী।

নারী সংক্রান্ত ইসলামিক আইন কড়া হবার কারনে নারী বিভিন্ন রকম নিরাপত্তা লাভ করে এবং পুরুষরা নিজেদেরকে সংযত রাখে। সেখানে একজন নারীকে পাবার জন্য তার পেছনে পুরুষের লাইন পড়ে যায়। নারীর দাবি না মিটিয়ে তাকে বিয়ে করা যায় না। ইমলামী সমাজে নারী অত্যন্ত মর্যাদার অধিকারী এবং তা পুরুষ কর্তৃক রক্ষিত হয় আল্লাহর ভয়ে। ইউরোপ-আমেরিকার নারীদের মত মুসলিম নারীরা সস্তা নয় যে, তাকে যেমন খুশি তেমন ভাবে ভোগ করা যায় এবং ছুড়ে ফেলা যায়।

যাচ্ছেতাইভাবে নারীকে ভোগ করার জন্য আল্লাহ নারীকে সৃষ্টি করেননি। পুরুষের মনোরঞ্জনের জন্য তাকে সৃষ্টিকরা হয়নি। সে পুরুষের করুনার পাত্র নয়। আল্লাহর কাছে উভয়ের মর্যাদা সমান এবং সে মর্যাদা নির্ণিত হয় তাক্ওয়ার ভিত্তিতে। কাজেই নারী-পুরুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে পাশ্চাত্যের বা কুফর ব্যবস্থাপনা দ্বারা পরিচালিত,দায়ীত্ব এড়ানো,ভোগ সর্বস্ব মানুষের বক্তব্য গ্রহনযোগ্য নয়।

তা কল্যানকরও নয়। তাদের কথা যারা মেনেছে, তাদের সমাজই কলুষিত হয়েছে-হচ্ছে, যার প্রমান হল-তাদের এবং তাদের তাবেদারদের অসুস্থ্য চিন্তা-চেতনা,কর্ম (= সামাজিক ধ্বংসযজ্ঞ)। ইসলামী সমাজে অপরাধ কোনঠাসা হয়ে পড়ে এবং জনগনের সতর্কতা,সচেতনতা অপরাধকে থামিয়ে রাখে। এটাই উৎকৃষ্ট এবং আদর্শ সমাজ যদিও পাশ্চাত্য এর বিপক্ষে অবস্থান নেয় একতরফাভাবে ব্যবসায়িক(বা সর্বাধিক ভোগ) উদ্দেশ্য সফল করার জন্যে। ইসলাম যা বলেছে তার বিপরীতমুখী কাজ করে ইসলামের ঘাড়ে দোষ চাপানোর কারনে অনেকে ইসলামী আইন সম্পর্কে অনিহা প্রকাশ করে।

তাদের ইসলাম সম্পর্কে জানার ব্যাপারে পরামর্শ দেয়া হলো। মূলতঃ আল্লাহ কারো প্রতি যুলুম করেন না এবং কারো উপর তার সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা অর্পন করেন না,একথা তিঁনি আল-কুরআনের অনেক আয়াতে বর্ণনা করেছেন। যারা স্রষ্টার বিধান মানে না তারাই নিজেদের প্রতি ও অন্যের প্রতি যুলুম করে। আমরা আল্লাহর দ্বীন বা ইসলামকে বাস্তবায়িত না করে নিজেদের উপর যুলুম করছি। “যালিমদেরকে বলা হবে,তোমরা যা অর্জন করেছ,তার শাস্তি আস্বাদন কর।

”(আল-কুরআন,৩৯ঃ২৪) পাশ্চাত্যের ক্রমবর্ধমান অপপ্রচারে বিভ্রান্ত মানুষ ইসলাম সম্পর্কে না জেনে একে মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ ইত্যাদি নামে অবহিত করে। তারা ইসলাম সম্পর্কে জানে না, শুধু তাই নয়, যে বিশ্বাসে বিশ্বাসী হয়ে বা যাদের খুশি করার জন্য এজাতীয় মন্তব্য করে তাদের সম্পর্কেই এদের ধারণা সীমিত। বুদ্ধির দাপটে এদের মাথার চুলগুলো পালিয়েছে কিন্তু মানুষের মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে এরা কখনও ভাবেনি অথবা ভাবলেও এজাতীয় ভাবনার মধ্যে অর্থের সংযোগ না থাকাতে এরা তা এড়িয়ে গেছে। ( আল্লাহ তাদের হেদায়েত করুন ! ) মুলতঃ তারা এসব প্রচার করে মুসলিম তরুন-যুবকদেরকে জড় পদার্থ বানাতে চায়, কারণ- পূর্বের ইতিহাস তাদের ভাল জানা আছে। মুসলিম অন্যায়ের বিরুদ্বে সব সময় প্রতিবাদী এবং সত্য প্রতিষ্ঠায় সে জীবন বাজি রাখে।

আর এটা ঘটলে লুটে পুটে খাওয়ার পদ্ধতি বন্ধ হয়ে যাবে। মুসলিমরা ইসলামকে জীবনাদর্শ হিসেবে বুঝলে তাদের ঘাড়ে সিন্দাবাদের ভূতের মত চড়াও হয়া যাবে না, এটা তারা জানে আর এজন্য মুসলিমকে তার চিন্তার উপাদানগুলো নতুন ভাবে সরবরাহ করতে হবে। অর্থ্যাৎ মানুষের দেহে শয়তানের আত্মা ঢুকাতে হবে। তাহলে এই ভোগবাদী মুসলিমরা হবে নির্বিষ। তখন এদেরকে দিয়ে যা খুশি তা’ই করানো সম্ভব হবে।

আল্লাহ আমাদেরকে কুফর জীবনাদর্শের প্রভাব থেমে মুক্ত করুক !!!  ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।