আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইসলামে বৃক্ষরোপন।



আল্লাহ্‌তায়ালার অপরূপ কুদরতের বিচিত্র নিদর্শনস্বরূপ পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় গাছপালার উল্লেখ রয়েছে। এরশাদ হচ্ছে- তিনি (আল্লাহ) তোমাদের বৃক্ষ থেকে আগুন উৎপাদন করে দিয়েছেন তা থেকে তোমরা আগুন জ্বালিয়ে থাক, সে সম্বন্ধে তোমরা ভেবে দেখেছ কি? গাছপালা, উদ্ভিদরাজি যে মহান আল্লাহ্‌তায়ালার একটি বড় নেয়ামত সে সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে-মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুক। আমি প্রচুর বারি বর্ষণ করি। অতঃপর আমি ভূমিকে ভালভাবে বিদীর্ণ করে তাতে উৎপন্ন করি শস্য, আঙ্গুর, শাক-সবজি, জায়তুন (তেল), খেজুর, বহু বৃক্ষবিশিস্ট উদ্যান, ফলমূল এবং গবাদিপশুর খাদ্য। এটা (আমি করি) তোমাদের ও গবাদিপশুর ভোগের জন্য।

(সূরা আবাসাঃ ২৪-৩২)। আরও এরশাদ হচ্ছে তাদের জন্য একটি নিদর্শন হচ্ছে মৃত ধরিত্রী, যাকে আমি জীবিত করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য যা তারা ভক্ষণ করে। তাতে আমি উৎপন্ন করি খেজুর ও আঙ্গুরের উদ্যান এবং এতে আমি উৎসারিত করি প্রসবণ যাতে তারা এর ফলমূল ভক্ষণ করতে পারে। এগুলো তো তাদের হাতে সৃষ্টি নয়। তবুও কি তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে না? (সূরা ইয়াসিনঃ ৩৩-৩৫)।

বনের গাছপালা থেকে আমরা কেবল কাঠ, রাবার, ওষুধ ও ফলমূলই পাই না এগুলো থেকে বিভিন্ন রকমের সুগন্ধি দ্রব্য ও তেলও পাওয়া যায়। গাছের পরিশুদ্ধ তেল দ্বারা প্রজ্জ্বলিত প্রদীপের সঙ্গে আল্লাহ্‌পাক তার নূরের ইঙ্গিত দিয়েছে। মানুষ চেষ্টা-গবেষণা করলে গাছ থেকেও যে উৎকৃষ্ট ধরনের তেল আহরণ করতে পারে এটা নিঃসন্দেহে সে তথ্যের-ই উপমা বহন করে। আল্লাহ্‌ বলেন, এবং আমি সৃষ্টি করি এক বৃক্ষ যা জন্মায় সিনাই পর্বতে, এতে উৎপন্ন হয় আহারকারীদের জন্য তেল ও ব্যঞ্জন। (সূরা মমিনূনঃ ২০)।

আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে গাছের নামে শপথ করেছেন এবং তদানুসারে সুরাটির নামকরণও করা হয়েছে। যেমন, আল্লাহ বলেন, ত্বিন (এক জাতীয় বৃক্ষ) ও জায়তুন (জলপাই জাতীয় এক প্রকার ফল)-এর শপথ! (সূরা আত ত্বিনঃ১)। অতএব গাছপালা, বৃক্ষলতা আল্লাহ্‌ সুমহান কুদরতের অপরূপ নিদর্শন। এর মাঝেই তিনি মানুষ ও অন্যান্য জীবজন্তুর খাবার প্রস্তুত করে রেখেছেন এবং মানুষকে পরিশ্রম করে সেগুলো সংগ্রহ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এরশাদ হয়েছে; অতঃপর সালাত আদায় শেষ হলে তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড় এবং তাতে আল্লাহ্‌র অনুগ্রহের সন্ধান কর।

(সূরা আল জুমআঃ ১০) আমাদের জীবিকার প্রধান উৎস এই গাছপালা ও বনভূমিকে আমরা কারণে-অকারণে অপরিকল্পিতভাবে প্রতিদিন কেটে ফেলে দিচ্ছি। বাংলাদেশে এভাবে প্রতি বছর প্রায় ৮ হাজার হেক্টর বনভূমি এলাকা বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য একটি দেশে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ এলাকা বনভূমি থাকা দরকার। অথচ বাংলাদেশে বনভুমির পরিমাণ মাত্র ১৭ শতাংশ। এর মধ্যে বৃক্ষাচ্ছাদিত মাত্র ১০ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞের মতে আরও কম মাত্র ৬ শতাংশ। অথচ বাংলাদেশে একসময় প্রায় ৪০ শতাংশ এলাকাজুড়ে বনভূমি ছিল। দিন দিন অপরিকল্পিতভাবে বনভূমি উজাড় হওয়ায় বর্তমানে দেশে জ্বালানি কাঠের ঘাটতি দেখা দিয়েছে ৫০ লাখ টনে। দেশে উৎপাদিত খাদ্যের পুষ্টিমানেও দেখা দিয়েছে ব্যাপক ঘাটতি। তাই আমাদের এখন প্রয়োজন পরিকল্পিত বনায়ন।

প্রয়োজন বৃক্ষরোপণ। বনায়নকে একটি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করা। গাছপালা ও বৃক্ষলতা যেহেতু মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত তাই রাসূল করীম (সাঃ) বৃক্ষরোপণের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছেন। বৃক্ষরোপণকে তিনি সদকায়ে জারিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন। হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, যখনই কোন মুসলমান গাছ লাগায় বা শস্য বপন করে এবং এ থেকে মানুষ পাখি বা পশু তাদের আহার গ্রহণ করে, তখন এটা তার পক্ষে একটি সদকা হিসাবে পরিণত হয়।

(মুসলিম শরীফ)। হযরত জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসুল (সাঃ) বলেন, এবং তা থেকে যা চুরি যায়, তাও তোমার পক্ষে একটি সদকাহ্‌ হিসাবে পরিগণিত হয়। (মুসলিম শরীফ)। এ প্রসঙ্গে হযরত আবু দারদা (রাঃ)-এর একটি ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। একদা হযরত আবু দারদা (রাঃ) দামেস্কে একটি বৃক্ষরোপণ করেছিলেন।

এমন একটি লোক তার নিকট দিয়ে যাচ্ছিল। সে হযরত আবু দারদা (রাঃ)-কে অত্যন্ত মনোনিবেশ সহকারে বৃক্ষরোপণ করতে দেখে একটু অবাক হয়ে প্রশ্ন করলঃ আপনি রাসুলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর একজন প্রিয় সাহাবী হওয়া সত্ত্বেও এ কাজটি করছেন? হযরত আবু দারদা (রাঃ) উত্তরে বললেন, আপনি এমনটি বলবেন না। আমি রাসুল (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ কোন ব্যক্তি যদি একটি বৃক্ষ চারা লাগায়, অতঃপর তা থেকে কোন ফল মানুষ ও পাখি খাদ্য গ্রহণ করে তখন তার জন্য একটি সদকা হিসাবে লেখা হয়। মুসলিম সেনাবাহিনী যুদ্ধে রওনা হওয়ার সময় রাসুলে করীম (সাঃ) সহ পরবর্তী সব খলিফা কঠোরভাবে সৈন্যদের নির্দেশ দিতেন তারা যেন বিজিতদের কোন গাছপালা বা শস্যক্ষেত্র ধ্বংস না করে। বৃক্ষরোপণ ও এর সংরক্ষণের প্রতি সব খলিফা সজাগ ও অত্যন্ত সচেতন ছিলেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।