আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লিবিয়া জীবন: ৫ ...

শৈশবে পুলিশ আর কুকুর খুবই ভয় পেতাম। একটি আদর্শ পুলিশ স্টেটে বড় হচ্ছি, পুলিশ ভয় না পেয়ে কি কোনও উপায় আছে? প্রায়ই দেখতাম, কোনো বাড়িতে কান্নার রোল। বুঝতাম, পুলিশ এসেছে। ধরে নিয়ে যাচ্ছে কাউকে। অপরাধগুলো খুবই হালকা ধাঁচের।

হয়তো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে এক বন্ধু অপর বন্ধুকে বলল, গাদ্দাফি আইতাসে তোরে ধরতে। আর অমনি, সিভিল ড্রেসে কেউ এসে বলল, আপনাকে এ্যারেস্ট করা হলো। আমাদের পাশের বিল্ডিংয়ে একটা লিবীয় পরিবার থাকতো। ভদ্রলোককে আমি কখনোই দেখিনি। শুনেছি, তাকে গুম করেছে সরকারি বাহিনী।

ভদ্রলোকের স্ত্রী ইতালিয়ান বংশোদ্ভুত হলেও তুখোড় আরবি বলতে পারতেন। তিনিই আমার মাকে আরবি শিখিয়েছিলেন। রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় ৫ বছর ধরে কারাগারে তার এক ছেলে। অপর এক ছেলে মোহাম্মদ ছিলেন পুলিশের বড় কর্তা। চাকরি আর জীবন বাঁচাতে পরিবারের বাইরে আলাদা থাকতেন তিনি।

মেয়ে মরিয়ম থাকতেন মায়ের সঙ্গে। সারাদিন গাদ্দাফিকে অভিশাপ দিতেন মা-মেয়ে। গভীর রাতে লুকিয়ে মাকে একবার দেখতে আসার অপরাধে তাকে দক্ষিণের প্রত্যন্ত এক মরুভূমিতে বদলি করা হয়েছিল। আমি নিশ্চিত, মোহাম্মদ যদি এখনও বেঁচে থাকেন-- তাহলে সে এখন মুসরাতায় বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। পুলিশ বলেই মোহাম্মদকে খুব ভয় পেতাম আমি।

একবার বাবা বললেন, সেকি, ওতো তোমার আংকেল। আমি বললাম, পুলিশ আবার আংকেল হয় ক্যামনে। পুলিশ আর সেনাবাহিনীর পার্থক্য আসলে তখনো বুঝিনি। সেনাবাহিনীর চেয়ে পুলিশকেই বেশি হিরো মনে হতো। ওই হিরোইজমে বুদ হয়ে আমিও বলতাম, বড় হয়ে পুলিশ হবো।

শুধু আমি না, আমার স্কুলের সব শিক্ষার্থীদেরই স্বপ্ন ছিল পুলিশ হওয়ার। সুপারমলগুলোতে পুতুল পাওয়া যেতো না। মেয়েরাও বন্দুক-পিস্তল নিয়েই খেলতো। যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা। যা আজও চলছে লিবিয়ায়।

পুলিশের পরই সবচেয়ে বেশি ভয় ছিল কুকুরে। লিবিয়ার কুকুরগুলো না বোঝে আরবি, না বোঝে বাংলা-ইংরেজি। কোনও ভাবেই থামানো যেতো না ওদের। তবে পুলিশ আরো বেশি হিংস্র। প্রকাশ্যেই গুলি করে মারতো কুকুরগুলোকে।

রক্ত ছড়িয়ে পড়তো রাস্তায়। জান খতম হওয়ার পর আসতো সিটি করপোরেশনের ক্লিনাররা। আমাদের দেশে যেমন ক্রসফায়ারের পর মিডিয়া আসে। ১৯৮৬ সালে মার্কিন হামলার পর আরো মজার একটা দৃশ্য দেখতাম। আমাদের বারান্দা থেকেই দেখা যেতো, ইনিফর্ম পড়ে সশস্ত্র অবস্থায় গাদ্দাফির পক্ষে মিছিল করছে সেনাবাহিনী।

সেনাবাহিনীও যে স্লোগান দিতে পারে, এটা দেখেছি তখন। সন্ধ্যার পর শুরু হতো ব্ল্যাকআউট পর্ব। ঘরের সব বাতি নিভিয়ে রাখার কঠোর নির্দেশ। রাজপথে সেনাবাহিনী। ট্যাংক পাহাড়া দিচ্ছে পাড়া-মহল্লা।

মাথার ওপর দিয়ে সাই সাই করে উড়ে যেতো জঙ্গিবিমান! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।