আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লিবিয়া জীবন: ৪

গাদ্দাফির গাড়িতে বোমা পুঁতে রেখেছে সিআইএ। কিন্তু প্রেসিডেন্টের বাসভবন বাব আল আজিজিয়া থেকে তিনি অন্য একটি গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছেন। টাইমবোমায় তার প্রাসাদসম গাড়িটি উড়ে গেলেও, তিনি বেঁচে গেলেন। এ ধরনের গল্প আরো অনেক আছে। সত্য-মিথ্যা জানি না, মিথের মতোই গিলতাম গল্পগুলো।

শুনেছিলাম, সির্তের কাছাকাছি সেবা মরুদ্যানে থাকতো গাদ্দাফা কওম। ওই গোষ্ঠীরই এক প্রভাবশালী নেতা ছিলেন গাদ্দাফির বাবা। ভীষণ অসুস্থ্ হওয়ার পর, তাকে নেয়া হলো সির্ত সেন্টাল হাসপাতালে। প্রেসিডেন্টর বাবার চিকিৎসা করাতে গিয়ে ঘাম ঝরছিল এক বাংলাদেশী ডাক্তারের। পাছে ভুল চিকিৎসার দায়ে তার আবার প্রাণ দিতে না হয়।

উপায় না দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফোন করল গাদ্দাফিকে। বলল, উন্নত চিকিৎসার জন্য আপনার বাবাকে ত্রিপলি নিয়ে যান। গাদ্দাফি তখন জিজ্ঞাসা করলেন, গত ৫ বছরে এই রোগের জন্য কয়জনকে ত্রিপলি আনা হয়েছে? হাসপাতালের পরিচালক বললেন, কাউকে নয়। গাদ্দাফি তখন বললেন, অন্য সবার ক্ষেত্রে যা হয়েছে, আমার বাবার ক্ষেত্রেও তা-ই হবে। সির্তেই মারা গেলেন গাদ্দাফির বাবা।

এ ধরনের আরো অনেক চমক, চটকদারি গল্প আছে গাদ্দাফিকে নিয়ে। সিকিউরিটিকে না জানিয়ে গোপনে দেশের পরিস্থিতি দেখতে বের হতেন গাদ্দাফি। আরব্য রজনীর সেই খলিফা হারুনার রশিদের ইমেজ। একবার গভীর রাতে ত্রিপোলির এক হাসপাতালে আচমকা পরিদর্শনে যান গাদ্দাফি। দেখলেন, ডিউটি ডাক্তারের রূমে টেবিলে মাথা রেখে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছেন এক ভারতীয় ডাক্তার।

তাকে বিরক্ত না করে প্রশাসনকে নির্দেশ দিলেন, কাল সকালেই তাকে ইন্ডিয়া পাঠানোর ব্যবস্থা কর, যাতে বাড়ি গিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারে। ১৯৭৮ সালে ইসরাইলের সঙ্গে মিশরের ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির কড়া বিরোধিতা করেছিলেন গাদ্দাফি। তার মদতেই আরব লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল মিশরকে। যে জামাল আবদেল নাসেরকে গুরু মানতেন গাদ্দাফি, তার সঙ্গে সব সম্পর্কও ছিন্ন করলেন তিনি। আশির দশকে আরো একবার মিশরের সঙ্গে ঝামেলা হয় লিবিয়ার।

মুসরাতায় সন্ধ্যার পরই নেমে গেল সেনাবাহিনী। সিনেমা হল, শপিং মল, হাসপাতাল থেকে শুরু করে অফিস আদালত-- যেখানেই মিশরীয়দের পেয়েছে, দলে দলে ট্রাকে ভরে পাঠিয়ে দিয়েছে দেশে। আমাদের বাসার নিচতলায় এক মিশরীয় মহিলা থাকতেন। দৈত্যের মতো লম্বা, ইউরোপীয়ানদের মতো ফর্সা-- নাম ছিল জামালাত। গোটা দশেক ছেলে-মেয়ে ছিল তার।

স্বামী ছিলেন ফিলিস্তিনি। আর এ কারণেই সেই দফা বহিষ্কারের মুখে পড়েননি তিনি। একদিন বাবার সাথে বাজার থেকে ফিরছি। আমার হাতে বকসাদা ফার্মের মুরগী, লোকাল আরবিতে বলতো দেজাজ। পথে এক লোক বাবাকে খুব গোপনে কি যেন বললেন।

আমি আরবি অতোটা ভাল বুঝি না। কিছুক্ষণ পর দেখলাম, বাবা তাকে এক দিনার দিলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, বাবা তুমি ওকে টাকা দিলে কেন? বাবা বলেন, ও ফিলিস্তিনি। বাড়ি হারিয়ে এখানে এসেছে। তাই ওকে সাহায্য করলাম।

এরপর বাবার কাছে ফিলিস্তিনের গল্প শুনতে শুনতে বাড়ি ফিরলাম। জীবনে ওই প্রথম দেখলাম, আদি পেশা ভিক্ষাবৃত্তি! তবে এই পেশাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল লিবিয়ায়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।