আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রেট্রো টু রামাদান – ৩

আমার পরিচয় আমার রোজনামচায়। ক) রমজান মাসের সাথে সাথে আমার বাসা বদলেছে অনেক। জীবন বদলেছে পাশাপাশি। কবে থেকে শুরু করবো বুঝতে পারছি না। অনেক বাসা বদলে আসা হয়েছে তো, এখনো স্থায়ী ঠিকানা গড়তে পারিনি।

তবে বাসাগুলোর কথা মনে হলে দেয়ালের সাথে মিশে যাওয়া মমতাগুলো মনে পড়ে। আমি বেশীরভাগ সময়ই বড় হয়েছি নানার বাসায়, চান্দগাও আবাসিক এ। নালাপাড়ায় একসময় ছিলাম। আমার মনে নেই। জ্ঞান বুদ্ধি হতে আমি বাসা বলতে পেয়েছি লালখান বাজার।

কেমন আছে সেই অফওয়াইট কালারের চার তলা বাসাটা? ডেফেলপারের কাছে অস্তিত্ব বিলীন হয়েছে কিনা খবর নেই নি। তবে সেই দারোয়ানটার কথা মনে আছে যে বলত - “নামায পারলো, সাহরী খালো। ভাইয়ো - নামায পারলো, সাহরী খালো। ” সাইরেন ইফতার এসব শিখেছি আমি চান্দগাও আবাসিক এ। লালখান বাজারে আমার প্রতিবেশী বন্ধুছিল বেশ।

আসিফ ভাই একজন ছিল আর ছিল ইসমাইল বিল রবার্টসন – এদের সাথে বেশী খাতির। ইসমাইল আমার নার্সারীর বন্ধুও। সে সময় প্রতিবেশীরা ইফতার পাঠাতো আর আমরাও ইফতার পাঠাতাম। হরেক-রকম ইফতার দেখে ভালই লাগতো। খ) এক বছর পর আমরা আস্কারদীঘিতে বাসা নিলাম।

খাজা ভিলা ছিল বাসাটার নাম। কটেজ টাইপ। আমাদের প্রতিবেশী ছিল – অপু, লাবু আর তানিয়া। সেই বাসাটায় আমাদের রমজান পালন হয়নি। কারণ এরপর আম্মু এক্সিডেন্ট করে পায়ে প্লাস্টার বেধে পড়ে থাকে চান্দগাও আবাসিক।

আমিও চলে যাই নানা বাড়ি। মনে আছে নানাবাড়িতেই ইফতারের সময় আম্মুকে ইফতারের প্লেট এনে দিতাম, পানি এনে দিতাম। খুব খুশী হত আম্মু আর আমার মজা লাগত। গ) এরপর আম্মুর পায়ের অবস্থা একটু ভাল হতেই চলে আসি আমরা মুরাদপুর। আমার স্কুলটাও ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট থেকে চলে আসে কাতালগঞ্জে।

আর মুরাদপুরে আমার নতুন করে রমজান মাস চেনা হয়। মুরাদপুরে আমরা থাকতাম তিন তলায় জলীল বিল্ডিং এ। সেখানে আযানের ধ্বনির প্রতি অনুরক্ত ছিলাম। একবার রমজানে দাওয়াত করেছিলাম আমার নানার আপন বোনকে – টুলু নানুকে। টুলু নানুরা বিশাল বড়লোক।

আমাদের বাসায় এসেছিলেন, তবে ইন্টারেস্টিং হল তিনি এসেছিলেন আরেকজনের বাসার বারান্দা দিয়ে অনেকটা মিশন ইম্পসিবলের টম ক্রুজের স্টাইলে – তিন তলা থেকে তিন তলা। এটা হবার কারণ তিনি অন্য একটা বাড়িতে চলে গেছেন। যেহেতু বাড়িটা লাগানো আর তিনি কষ্ট করে তিন তলা থেকে নেমে আবার তিন তলা উঠবেন না তাই এই বুদ্ধি করেছিলেন। আমার ওই সিন ভাবলেও কেমন জানি লাগে। বয়স্ক মহিলাও রোজা রেখে স্টান্ট করেন।

মুরাদপুর বাসায় আমার হুজুরের সাথে পরিচয় হয়, হুজুরের সাথে ইফতারও করেছিলাম। আমার হুজুরকে খুব ভাল লাগত। তিনি খুব সুর করে তেলাওয়াত পারতেন না। কিন্তু তিনি আমাকে যা শিখিয়েছেন তা এখনও মনে রেখেছি, ধারণ করেছি। প্রতি সন্ধ্যায় আমি ও আব্বু দারূদ শারীফ পড়তাম জোরে জোরে –মিলাদের মত করে, “আল্লাহুম্মা – সাল্লি আলা সাঈয়ীদিনা মওলানা মুহাম্মাদ ওয়ালা আলীহি সাঈয়ীদিনা মওলানা মুহাম্মাদ।

” ধর্ম-অনুরক্ত হয়ে উঠেছিলাম ওই অতটুকুন বয়সে। এই বয়সে দারূদ শারীফ পড়লে আব্বুর কথা খুব মনে হয়। খুব কান্না পায়। আব্বুর উপদেশ ছিল – প্রত্যক নামাযের পরে ১১ বার দারূদ শারীফ পরবে। আমি কেন? কিজন্য? কি হবে পড়লে? তা জিজ্ঞেস করিনি।

আমার কাছে ওটা আদেশ আর ওটা আমি পালন করে চলেছি। ঘ) মুরাদপুর থেকে চলে এসেছিলাম চান্দগাও। আমার কৈশোর পুরোটাই কেটেছে নানাবাড়ীতে। এখানে রমজান মানেই উৎসব। মনে আছে আমি জীবনে প্রথম ইফতারের দাওয়াত দিয়েছিলাম আমার কিছু বন্ধুদের।

আলমগীর, পারভেজ, সাম্মা, তাসলীম (পড়ে যদিও সে তাসলীম ভাই হয়ে গেল) আর কে কে জানি ছিল। আমরা সাত চারা খেলে এসে ইফতার করেছিলাম। জীবনে টিনে রোজা রাখার অপমান থেকে এ বাসায় মুক্তি পেয়েছিলাম। নানা বাড়িতে প্রথম রোজা রাখি এক নাগারে তিনটা বা চারটা। আমার প্রথম পুর্নাংগ রোযা রাখা হয় ১১টা।

এরপরের বছর কমে যায় ৬টায়। তার পরের বছর কত রেখেছি জানি না। ৩০ শে ৩০ রেখেছিলাম ক্লাস টেন এ এসে। হাইস্কুলে উঠে যখন পাখা গজাল তখন অনেক বন্ধুব জুটেছিল। মুন্না, শিপু, ইসমাইল, সুমন, মাসুদ, আলমগীর, আরো অনেকের সাথে কৈশোরের ইফতার পার্টি করা হয়েছে।

এখন কত যে তাদের মিস করি বোঝাতে পারবো না। দু’চারজন ছাড়া বাদ বাকীরা কেন কোথায় যে আছে? ক্যাডেট কলেজে ভর্তির পর রমজানের ছুটিতে পাগল হয়ে যেতাম বাসার জন্য। মনে পড়ছে না আশরাফের সাথে ইফতার করা হয়েছিল কিনা। তবে বাসায় এত আগ্রহ নিয়ে বাবা মা খাওয়াতেন খুব ভাল লাগত। চান্দগাও আবাসিক ৩ নম্বর রোড এ ব্লকে সি-৯ ছিল আমার নানার বাড়ি।

নানা বাড়ি বিক্রির আগে আমার সেখানে প্রতিটি রোজাই ছিল সুন্দর। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।