আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রেট্রো টু রামাদান – ৪

আমার পরিচয় আমার রোজনামচায়। ক) রমজান ঘিরে অনেক কথা মনে পড়ছে। ইচ্ছেমত লিখি। আমার জীবনের ইচ্ছে ছিল সেহরী পার্টি দেবার। সেহরী পার্টি কিভাবে করা যায়? ক্লাস টেন এ এসব উদ্ভট চিন্তা এসেছিল।

বন্ধুরা সবাই রাজী। ফারুককে সহজে রাজী করানো যেত, কঠিন ছিল মুন্নাকে রাজী করানো। কিন্তু পরিশেষে কোন সেহেরী পার্টি হল না। অনেক অনেক পড়ে যখন টিউশানি করাতাম তখন আমার ছাত্ররাই ছিল বন্ধু। তাদের মধ্যে আমার এই তরুণ ইচ্ছা টার কথা (বলতে পারেন ১০ বছর পর) প্রকাশ করাতে তারা প্লান করে ফেলে।

প্রথম সেহেরী পার্টি হয় আমাদের রাঁধুনী রেস্টুর‍্যান্টে চিটাগং মেডিকেল এর সামনে। সেখানে আমি, গালিব, ফয়সাল, রাহী, রনি, আর ? ছিলাম। মনে পড়ে মেনু ছিল ভর্তা আর গরু ছিল একবাটি। ফারিণ ফোন করে আমাদের সাথে জয়েন করেছিল। খুব সুন্দর সেই সেহরী উৎসব।

এরপর মেডিকেল মসজিদে ফজরের নমায পড়ে যার যার বাসায়। খ) ঘরের বাইরে সেহরী করা হয়েছিল আত্মীয়দের বাসায় অনেক। সেগুলোকে নাই-ই বললাম। যখন মিউজিক ব্যান্ড করতাম তখনের কথা মনে আছে। ২০০২ কি ২০০৩ এর দিকে মাইনাস ওয়ান একটা ব্যান্ড এ ক্ষ্যাপ-কিবোর্ডিস্ট হিসেবে জয়েন করেছিলাম।

কালাম ভাই ছিলেন ব্যান্ড লিডার। তার কথা ছিল, যেহেতু রমজানে কোন শো নাই তাই যত মার্কেটের গান আছে সব তুলতে হবে। আমার কোন কীবোর্ড ছিল না। কালাম ভাই তার ছেলের খেলনা কী-বোর্ডটা আনতেন। আর তার সাথে সাথে আমাদের প্র্যাকটিশ হত।

কি হাস্যকর লাগত! প্রফেশনাল গীটারের সাথে খেলনা কী-বোর্ড জেমিং করত। রাত ভর গান তুলে এরপর সেহেরী। আমাদের সাথে থাকতেন ভোকালিস্ট জসীম ভাই। খুব ভাল মানুষ। আমি রাতে ওই সেহেরীটা খুব মজা পেতাম।

সকালে ভোরে চলে যেতাম চন্দনাইশ- সাতকানিয়া। সেখানে ছিল একটা কোচিং সেন্টার তার বিভিন্ন শাখা – গ্রীণ বাডস। রোযাতে কষ্ট করলেও মজা পেতাম। ক্লান্তিতে মজা খুজে নিতে হয়, আমার ধারণা সেখানে স্বয়ং স্রষ্টা তুষ্ট হন। গ) ঘরের বাইরে সেহেরী করেছিলাম জীবনে দ্বিতীয়বার যখন ঢাকা শহরে গিয়েছিলাম আমি আর আব্বু।

ক্লাস এইটে পড়তাম আমি, রমজানের ভ্যাকেশান ছিল ক্যাডেট কলেজ থেকে। নাইট জার্নিতে ঢাকা, ওটাই জীবনে প্রথম নাইট জার্নি। ঢাকায় যাবার পথে, কুমিল্লায় নেমে সেহেরী অর্ডার করেছিল আব্বু। একটা ডিম পোচ এর অর্ডার দিয়েছিলেন, সাথে পরটা গরু এইসব। ডিম পোচের অর্ডার এই রকম অভিজাত রেস্টুর‍্যান্টে অবাক লাগল।

আমিও অর্ডার করলাম। সত্যিই মজার ব্যাপার – তারা ডিম পোচ দিয়েছিল দুইটা ডিমের। আমিও কখনও দুই ডিমের ডিম পোচ দেখিনি। খুব মজা করে সেহেরী খেলাম। ঢাকায় আব্বু আর আমি ফকিরাপুলের একটা হোটেলে উঠেছিলাম।

সেই রমযান মাসে ঢাকা শহরটাকে চেনা জানা। দোয়েল–শাপলা-বক চত্বর, মীরপুর চিড়িয়াখানা, সংসদ ভবন আরো অনেক খানে। আব্বু আর আমি বেশী সময় কাটিয়েছি ঢাকা ভার্সিটিতে। আব্বু অনেক সুন্দর করে ইতিহাস বলে বলে জায়গাগুলো দেখিয়েছিলেন। অপরাজয় বাংলা, সোপার্জিত স্বাধীনতা (টিএসসি), শহীদ মিনার, চার নেতার মাজার, নজরুল ইসলামের কবর, এগুলো কি তা চেনা হয়েছিল।

বাংলা একাডেমী ঘুরে কবি আসাদ চৌধুরীর সাথে ফটো তুলেছিলাম। ফটোতে আমি ঘুমাচ্ছিলাম ছবি এসেছিল। বিজয় স্বরণীর কোন দিকে যেন ক্যাসিও মাস্টারের শো-রুম ছিল। আমি ওখানে কিবোর্ড দেখতে গিয়েছিলাম, কাছাকাছিতে নাকি নায়িকা শাবানার বাসা। ইফতার করেছিলাম পুরান ঢাকার কি এক হোটেলে; ওরা এত খাবার দেয়, প্রায় ১২ পদের - দাম ছিল বিশ টাকা, আবার সরবত ও ফ্রি।

খুব ভাল লেগেছিল। এখন এই কথাগুলো রূপকথাই। অন্য একদিন ঘুরেছিলাম লালবাগের কেল্লা, হাইকোর্ট, সুপ্রীম কোর্ট, সচিবালয়, প্রেসিডেন্টের কার্যালয় যেগুলো রাজধানীর অভিভাবক ভবন। রাজধানী আসলে বইয়ে পড়তে নেই। ঘুরে ঘুরে দেখে দেখে শেখা উচিত।

রমজান মাসে ঢাকা শহর চেনা আর বাংলার ঐতিহ্যের স্বাদ নেয়া যেন একাকার ছিল। মনে আছে পুর্ণিমার জিলাপী খুব বড় আর মজার। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।