আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফেলনা জিনিসও হতে পারে মহামূল্যবান

বলতে পারিস বিশ্বপিতা ভগবানের কোন সে জাত! কোন ছেলের তার লাগলে ছোঁয়া অসুচি হন জগন্নাথ! কোন খনিতে পাওয়া নয়, নয় বিদেশ থেকে অত্যন্ত চড়াদামে আমদানি করা, এ হচ্ছে অতি সাধারণ, তুচ্ছাতি-তুচ্ছ জিনিস, গ্রামাঞ্চলে বউ-ঝিরা যে দ্রব্য জ্বালানি কাঠের সঙ্গে ছিটিয়ে ছিটিয়ে রান্না করে, নয়ত গোবরের সঙ্গে মিশিয়ে ঘুটে তৈরি করে, নয়ত হাঁস-মুরগিকে খেতে দেয় অথবা অযত্নে ঝাড়ু দিয়ে দূরে ঠেলে দেয় আবর্জনার মতো। এ হচ্ছে ধানের কুঁড়া বা তুষ। এর মূল্য বুঝতে পারেনি এ দেশের মানুষ, তাই অল্প দামে এ যাবত রফতানি করেছে ভারতে। আর ভারত এই অবহেলিত জিনিস দিয়ে তৈরি করল এমন এক জিনিস, বাঙালীর রসনার সঙ্গে যেটি জড়িয়ে আছে, সেটি হল ভোজ্যতেল। তেল মসলা দিয়ে মজিয়ে রান্না না করলে বাঙালীর খেয়ে আশই মেটে না, আর সেই সুযোগে ব্যবসায়ীরা ক্রমেই ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়েই চলেছে আর নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে সে দাম।

এ রকম সঙ্গীন মুহূর্তে এক ঝলক দখিনা হাওয়ায় যেন জানান দিল সেই খুশির বাতর্টি, যা ফলপ্রসূ করতে পারলে মূল্যগত, স্বাস্থ্যগত অনেক সমস্যাই সুরাহা হয়ে যাবে। ঈশ্বরদীর বহরপুর ঢুলটি এলাকায় স্থাপিত হয়েছে তুষ বা কুঁড়া ব্যবহার করে বাংলাদেশের প্রথম ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী মিল_রশিদ অয়েল মিল। এই মহতী উদ্যোগটি নিয়েছেন কুষ্টিয়ার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবদুর রশিদ। ইতোমধ্যেই মিলটি অপরিশোধিত তেল বাজারজাত করছে। বর্তমানে পরীক্ষামূলকভাবে পরিশোধিত ভোজ্যতেল উৎপাদন করা হচ্ছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর চাহিদার ৮০% ভোজ্যতেল আমদানি করা হয়। এতে প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়। তাছাড়া উক্ত তেল কোলেস্টেরল মুক্ত কিনা সেটিও দেখার বিষয়। তুষ থেকে উৎপাদিত তেল সেদিক দিয়ে সবচেয়ে নিরাপদ, কারণ এটি সম্পূর্ণরূপে কোলেস্টেরল মুক্ত। ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্ভাবনামুক্ত এটি।

আর দেশের চাহিদা পূরণে প্রাথমিক অবস্থায় শতভাগ সমর্থ না হলেও আংশিক চাহিদা তো মিটাতে পারবে। আরও জানা গেছে, এই তেলে এমন কিছু বিশেষত্ব আছে, যা মানবদেহের জন্য অত্যনত্ম উপকারী। ২০০৯ সালে এই রশিদ অয়েল মিল স্থাপনের কাজ শুরম্ন হয়, প্রায় ২৫০ জন শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকতর্া এখানে কর্মরত, এদের মধ্যে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ১৫ ভারতীয় নাগরিকও রয়েছেন। ভারতে অনেক আগে থেকেই কুঁড়া থেকে ভোজ্যতেল উৎপাদিত হচ্ছে। তাই বাংলাদেশে যখন আবদুর রশিদ অয়েল মিল স্থাপন করার সিদ্ধানত্ম নিলেন, তখন তিনি ভারতীয় অয়েল কোম্পানির বিশেষজ্ঞদের আমন্ত্রণ জানিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শের আলোকে মিল স্থাপন করেছেন।

শুধু তাই নয়, মিলটি যাতে সঠিকভাবে চালিয়ে নেয়া যায় সে জন্য এ বিষয়ে ১৫ জন অভিজ্ঞ ভারতীয় নাগরিককে অদ্যাবধি মিলটিতে রেখে দিয়েছেন। ঈশ্বরদীর এই মিলের যাবতীয় প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতিও তিনি ভারত থেকে আমদানি করেছেন। আমাদের দেশে কোলেস্টেরলমুক্ত ভোজ্যতেলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সে তেল সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। তাই সাধারণ মানুষ যেন সুলভমূল্যে এই তেল পেতে পারে, এই মিল কোম্পানি সেই দিকটা বিবেচনায় রেখে কাজ করে যাচ্ছে।

এই মিলে কর্মরত ভারতীয় নাগরিক রিফাইনারি ইনচার্জ রবীন্দ্রনাথ বললেন, এ মিলে ভারতের চেয়েও উৎকৃষ্ট মানের ভোজ্যতেল উৎপাদিত হচ্ছে। তেল তৈরির পাশাপাশি এখানে কয়েকটি লাভজনক উপজাত দ্রব্যও বাড়তি প্রয়োজন মিটাচ্ছে, যেমন_ ডি-ওয়েল্ড রাইস ব্রান্ড_এটি পশু ও মাছের খাদ্য তৈরিতে ব্যাপকহারে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য উপজাত দ্রব্য, যেমন ক্রুড-অয়েল, গামও ফ্যাটি এ্যাসিড সাবান তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে এছাড়া এগুলো দিয়ে মোমও তৈরি করা হচ্ছে অন্য উপজাত দ্রব্য স্পেন আর্থ দিয়ে আগরবাতি ও মশার কয়েল তৈরি করা হচ্ছে। ভাবা যায়, সামান্য তুষ-কুঁড়ার এত গুণ! আর এদেশে কিনা এতদিন এগুলো অবহেলিত ছিল, তবে এতে এখনই উলস্নাসিত হলে চলবে না, কারণ বাঙালী যেভাবে শুরম্নটা করে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা ধরে রাখতে পারে না, ফলে পদে পদে হোঁচট খায়। তাই এক্ষেত্রেও ভেবেচিনত্মে এগোতে হবে, সাফল্যের ধরাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে ।

এই যে এরই মধ্যে মিল মালিক ভাবছে, এ তেল রফতানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের কথা, এই প্রবণতা বন্ধ করতে হবে । দেশজ উৎপাদনে সর্বাগ্রে চিনত্মা করতে হবে দেশের মানুষের কথা, তাদের চাহিদা পূরণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, তাহলেই দেশজ উৎপাদনে দেশের মানুষ সম্পৃক্ত হবে । আর সার্থক হবে এ ধরনের কল্যাণকর প্রচেষ্টা। আর সরকারকেও আর দেরি না করে প্রতিজেলায় এই অয়েল মিল স্থাপন করতে জনগণকে সহায়তা করতে হবে। সত্মরভিত্তিক জনশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে।

তাদের আন্তরিক প্রয়াস অবশ্যই দেশের উন্নয়ন ও বেকার সমস্যা নিরসনে অনবদ্য ভূমিকা রাখবে সন্দেহাতীতভাবে। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.