আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বান্ধবী- চ্যাপ্টার -৬

(কবিগুরু মৃত্যুর আগে আঁকা আঁকি শুরু করেন। হুমায়ূন আহমেদও। আমি ডিজিটাল কবি। আমিও আঁকছি তবে ডিজিটালি ) বি সি এস মডেল টেস্ট চলছে । যে যার মত লিখে চলছে।

মৌ মৌমাছির মতন প্রশ্নের উত্তর খুজতে বেঞ্চ ভ্রমনে ব্যস্ত। রাতুল মাঝখানে বসা। তার দুইপাশে সুমন আর জনি বসেছে। সামনে রুমকি। প্রশ্ন হয়েছে যা তা ধরণের।

করোরই কমন পড়েনি। এই ধরণের পরীক্ষায় রাতুল অপ্রতিদন্ডি। সমান তালে লিখে চলছে। তার সঙ্গে তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে জনি আর সুমন। পরীক্ষার মধ্যে ডিসকাশন ব্যাপারটাও চলছে ।

পারস্পরিক সমঝোতায় বেশ চলছে পরীক্ষা। প্রশ্ন কর্তার চৌদ্দগুষ্ঠী উদ্ধার করা হচ্ছে। জনির মত করে কেউ একাজ করতে পারছে না। এই পরীক্ষায় রাতুল আর মৌমাছি মৌ এর মধ্যে একজন প্রথম হবে। রসালো সমালোচনায় সন্দেহাতীত ভাবে নাম্বার ওয়ান জনি।

তার ক্ষোভ গুলো প্রশ্নকর্তার নানী ,মা , বোন,মেয়ে সবার উপর দিয়ে সুষম ভাবে যাচ্ছে। মুখের কোন ট্যাক্স নাই। রাতুল বেশ কয়েকবার তাকে থামালেও সে নতুন উদ্যমে শুরু করে আর সবাই তাকে সমর্থন করে প্রতিবাদের দায়িত্ব পালন করছে। রাতুলের লেখা শেষ। পরীক্ষার পনের মিনিট বাকী।

মৌ রাতুলের খাতা নিজের কাছে নিয়ে লেখতে শুরু করলো। কোনভাবেই তার কাছ থেকে সেটি সুমন জনি ছিনিয়ে নিতে পারেনি। তাই পরীক্ষা হল থেকে ওয়াক আউট করে জনি আর সুমন। বাইরে গিয়ে বেনসনে আগুন ধরায়। সুমন একাজটি খুব আর্টিস্টিক উপায়ে করতে সক্ষম।

সিগারেটটা মুখে নিয়ে দিয়শলাই ধরিয়েই নিমিষে সিগারেট ধরিয়ে ফেলে। ম্যাজিশিয়ানের মত। লোকজন বিস্ময়ে তার এই সৃজনশীল কর্মকান্ড প্রত্যক্ষ করতে থাকে। সুমনকে আর পায় কে। এ মহানকীর্তির পর নিজেকে মহানায়ক ভাবতে থাকে।

রুমকির মামা বাসা থেকে খাবার নিয়ে এসেছে। সেগুলো থেকে সুঘ্রাণ আসছে। খাবারের সুঘ্রাণ খাবারের চেয়ে বেশি আকর্ষণীয়। সুমন রুমকি,জনি আর রাতুল খাবার খাচ্ছে আর কথা বলছে। রাতুল বরাবরই বক্তা।

বাকীরা শ্রোতা। রুমকি পাবলিক লাইব্রেরীতে সবসময় একটা গ্রুপ পাবা। যারা চাকুরীর পরীক্ষার প্রস্তুতিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে । তাদের কখনো চাকরীর অভাব হয় না। তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলে দেখবা তারা সবাই একাধিক চাকুরীতে কোয়ালিফাই করেছে এবং বেটার যব করার জন্য পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ।

দুপুরের খাওয়া ওই লাইব্রেরীতেই । কষ্টে কেষ্ট মিলে বুঝলা। তাদের সঙ্গে স্টাডি করতা তাহলে বুঝতা পড়ালেখা কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি?চাকরী ওদের হবে নাতো কাদের হবে?কিছু পাবলিক আছে সামান্য দুই এক ঘন্টা পড়ালেখা করে পরীক্ষায় এটেইন করে ভাবে চাকুরি তার হবেই। আসলে চাকুরী হয়না। এ ভাবে একের পর এক চাকুরী দিয়ে চাকুরী না পেয়ে হতাশ হয় আর মনে মনে মন কলা খায়।

চাকুরী পেতে মামা বা ভাই লাগে আর লাগে টাকা। এসব বলে মনের দুঃখ মেটায়। চাকুরী আর জোটে না। হতাশ হয় নিজে। আর হতাশা ছড়ায় অন্যের মাঝে।

আর যে পড়া লেখা করে পরিশ্রম করে নিজে ও গেইনার হয় অন্যের জন্য উৎসাহের কারণ হয়। জনি তার কথায় বেঘাত ঘটায়। রাতুল এত লেকচার মেরোনা। আজকের পরীক্ষায় ও প্রথম হবে জনৈক মেজর সাহেবের হবু বউ ওরফে মৌ। তোর খাতাটা ওকে দিলি কেন?মেয়ে মানুষ পেলে আর না বলতে পার না শালা।

নির্ঘাত ফেল করব। সুমন ও রাতুলকে চেপে ধরে। রুমকি কে দিলেও তো পারতি। রুমকি মুচকি হাসে। রাতুল কৌতুক ছলে একবার সুমনের পা ধরে আরেকবার জনির পা ধরে।

জনি সুমন দুজনেই তাকে শেষ বারের মত ক্ষমা করে। এরপর এমন হলে কোন ক্ষমা নাই। আজকের ক্ষমার শর্ত হলো ড্রিংকসের টাকা দিতে হবে রাতুলের । কথা এগুতে থাকে। ভাল পরীক্ষা দিলেই চাকরী হবে এটির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে রুমকি।

সে যুক্তি দিয়ে বলে রাতুল ৫০০ পোস্টে ৪৪% মেধায় কোয়ালীফাই করে। মানে যার কোটা নাই সে ২২০ জনের মধ্যে থাকতে না পারলে তার কপালে চাকরী নাই। অথচ ৭ হাজারতম পজিশন নিয়ে কোটার একজন পুলিশ ক্যাডার পাবে। ২২১ তম ব্যক্তি কতটা ভাগ্য বঞ্চিত? সুমন রুমকির কথার সঙ্গে এ্ড করে। ৪২ বছর হলো দেশ স্বাধীন হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছিল ১০% সেটা সামপ্রতিক সময়ে হলো ৩০%। কোন যুক্তিতে। ওটাতো সময়ের সঙ্গে কমা উচিৎ। মুক্তিযোদ্ধার নাতি নাতনিরাও কোটা সুবিধা পাবে এটা কেমন?সুষ্পষ্ট বৈষম্য। দেশের সাধারণ মানুষের ভূমিকা কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে কম নয়।

তারাও কম নির্যাতনের শিকার হয়নি। দেশের মানুষ সহযোগিতা না করলে দেশ স্বাধিীন এত সহজে হত না। এখন সেই দেশের মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে। রাতুল আরও যোগ করে বিসিএস লেভেলে কোন কোটা যৌক্তিক মনে করিনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শতকার ৯৫ জন ছাত্র ই এটাকে অভিশাপ মনে করে।

তাদের হতাশার কারণ বলে মনে করে। অনেকে দুঃখে নিজেদের রাজাকার বলে থাকে। সর্বোচ্চ ১০% কোট থাকা উচিৎ। নারী কোটাও কমানো উচিৎ। জনি নারী বিষয় আসার সঙ্গে সঙ্গে অতি আগ্রহী আলাপ জুড়ে দেয়্ ।

রুমকি তোর চেয়ে কম যোগ্য কোন ছেলেকে বিয়ে করবি?রুমকি উত্তর দেয় না। জনি নিজেই বলে অবশ্যই করবি না। তোরা অদ্ভুত তোরা নারী কোটায় বড় চাকরী পেলে তোদের বিয়ে করবে কে রে? ওই মুক্তিযোদ্ধা কোটার ৭০০০ তম সিরিয়ালের গর্দভ। তোরা সমান অধিকার চাস তাহলে কোটার বিরুদ্ধে বল। রাতুল নারী কোটার পক্ষে কথা বলে।

নারীরা অনেকক্ষেত্রে অনগ্রসর সংবিধানে ওদের উন্নয়ন কল্পে কোটা রাখার ব্যাপার উল্লেখ করেছে। আর মা সুশিক্ষিত না হলে জাতি শিক্ষিত হতে পারে না। সে ক্ষেত্রে এখনো নারী কোটা রাখা যায়। ১ম শ্রেণীর ক্যাডার পোস্টগুলোকে কোটার খপ্পর থেকে রেহাই দেয়া উচিৎ। এর মধ্যে উত্তম প্রসাধ পাঠক উপস্থিত ।

দূর থেকে আলোচনা শুনে এক প্রকার তেরে এসেছে। আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধ করেছিল বলে দেশ স্বাধীন হয়েছে। তোরা সব রাজাকার। তোদের এদেশে থাকার অধিকার নেই। রাতুল তাকে থামায়।

মুক্তিযোদ্ধার দেশ স্বাধীন করেছে নাকি দেশটা কিনে নিয়েছে। দেশটা ভাগে যোগে ভোগ করার ঘৃণ্য অভিলাষ থাকলে তারা কতটা সৎ দেশপ্রেমিক আর মহান। ঘটনা ঝগড়ার দিকে মোর নেয়ায় জনি নতুন ইস্যু পারে। জনি মৌ আর রাতুলকে নিয়ে রসালো আলাপ জুড়ে দেয়। বানোয়াট কাহিনি।

দুজনকে কোন হোটেলে জনি আর সুমন ধরে ফেলেছে। কিভাবে তাদের ছাড়িয়ে এনেছে। সুমন রবোটিক স্টাইলে সম্মতি জানায়। রুমকি অবাক হয়ে রাতুলকে দেখে। রাতুল লজ্জায় লাল।

রাতুল প্রসঙ্গ পাল্টায়। রুমকি একটি গান শুনা প্লিজ। সুমন ও নড়েচড়ে বসে। রুমকি গান ধরে......একটুকু ছোয়া লাগে একটুকু কথা শুনি তাই দিয়ে মনে মনে রচি মম ফালগুনী.............গান শেষে সুমনের ওয়ান মোর চিৎকার নতুন গান শুরু। আকাশ যখন মেঘলা যেয়ো নাকো একলা এখনই নামবে অন্ধকার………………… আকাশে প্রচন্ড মেঘ।

সেই সঙ্গে অন্ধকার। ঝড়ো হাওয়া সহ। প্রবল বৃষ্টি পড়তে থাকে। বৃষ্টির থান্ডা আবেশে আর রিমঝিম শব্দে দারুন উপভোগ্য পরিবেশের সৃষ্টি হয়। রাতুল হাত দিয়ে বৃষ্টির ফোটা ধরার চেষ্টা করে।

বৃষ্টির পানি দুহাতে নিয়ে মুখে দেয়। টিনাকে ফোন দেয়। টিনা কল কেটে দেয়। বৃষ্টির সঙ্গে তার অনেক স্মৃতি। সব গুলোই টিনাকে নিয়ে।

আজ এমন বাদলদিনে টিনার কথা বারবার মনে পড়ে। স্মৃতি তুমি বেদনা হোক না সে সুখস্মৃতি স্মৃতির পাতায় লেখা কত কথা আসে না ফিরে সে সকল বারতা। হৃদয় পানে ভেসে ওঠে থাকে সে যে কল্পনাতে আসে না ফিরে যায় সে দূরে মনের গহীনে নিঠুর যাতনা স্মৃতি তুমি বেদনা। --------------------------------------------------->>>>>চলবে এই অধ্যায় উৎসর্গ করলাম সুপ্রিয় ব্লগার শায়মা আর অপসরাকে ।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।