বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখ দ্বিতীয় বিদ্যায়। প্রথম পর্ব : ফুল তোলা, প্রেমলিপি ও পত্র দেওয়া
(৪) বংশীর শিবপূজা, কন্যার জন্য বরকামনা
পুষ্পপাত বান্ধি কন্যা আপন অঞ্চলে।
দেবের মন্দির কন্যা ধোয় গঙ্গার জলে। ।
সম্মুখে রাখিল কন্যা পূজার আসন।
ঘসিয়া লইল কন্যা সুগন্ধি চন্দন। ।
পুষ্পপাতে রাখে কন্যা শিবপূজার ফুল।
আসিয়া বসিল ঠাকুর আসন উপর। ।
পূজা করে বংশীবদন শঙ্করে ভাবিয়া। *
চিন্তা করে মনে মনে নিজ কন্যার বিয়া। ।
“এত বড় হইল কন্যা না আসিল বর।
কন্যার মঙ্গল কর অনাদি শঙ্কর।
।
বনফুলে মনফুলে পূজিব তোমায়।
বর দিয়া পশুপতি ঘুচাও কন্যাদায়। ।
সম্মুখে সুন্দরী কন্যা আমি যে কাঙ্গাল।
সহায়-সঙ্গতি নাই দরিদ্রের হাল। । ”
এক পুষ্প দিল বাপে শিবের চরণে।
ঘটক আইবে শীঘ্র বিয়ার কারণে। ।
আর পুষ্প দিল বাপ বড়ঘরের বর।
“আমার কন্যার স্বামী হউক দেব পুরন্দর। । ”
আর ফুল দিল বাল কুলশীল পাইতে।
বংশ বড় ভট্টাচার্য্য খ্যাতি রাখিতে।
।
বর মাগে বংশীদার ভূমিতে পড়িয়া।
“ভাল ঘরে ভাল বরে কন্যার হউক বিয়া। । ”
* বংশীবদন : সম্ভবত বংশীদাসের সম্পূর্ণ নাম ছিল বংশীবদন।
(৫) চন্দ্রার নির্জ্জনে পত্রপাঠ
পূজার যোগার দিয়া কন্যা নিরালায় বসিল।
জয়ানন্দের পুষ্পপাত যতনে খুলিল। ।
পত্র পইড়ে চন্দ্রাবতীর চক্ষে বয়ে পানি।
কিবা উত্তর দিব কন্যা কিছুই না জানি।
।
আর বর পড়ে পত্র চক্ষে বয় ধারা।
“এমন কেন হইল মন শুকের পিঞ্জরা। ।
দেখি শুনি সেই ডাল ফুল তুল্যা আনি।
বয়স হইছে এখন হইলাম অরক্ষীনি। ।
জৈবন আইল দেহে জোয়ারের পানি।
কেমনে লিখিব পত্র প্রাণের কাহিনী। ।
কিমতে লিখিব পত্র বাপ আছে ঘরে।
ফুল তুলে জয়ানন্দ ভালবাসি তারে। ।
ছোট হইতে দেখি তারে প্রাণের দোসর। ”
সেই ভাবে লেখে কন্যা পত্রের উত্তর।
।
“ঘরে মোর আছে বাপ আমি কিবা জানি।
আমি কেমনে দেই উত্তর অবলা কামিনী। । ”
যত না মনের কথা রাখিল গোপনে।
পত্রখানি লেখে কন্যা অতি সাবধানে। ।
চন্দ্রসূর্য্য সাক্ষী করি মনের দিকে চাইয়া।
জয়ানন্দ মাগে বর ধর্ম্ম সাক্ষী দিয়া। ।
*
শিবের চরণে কন্যা উদ্দেশে করে নতি।
পত্র পাঠাইয়া দিল কন্যা চন্দ্রাবতী। ।
পুষ্প তুলিতে কন্যা আর নাহি যায়।
এই মতে সুখে দুঃখে দিন বইয়া যায়।
।
* জয়ানন্দ মাগে বর : জয়ানন্দকে বরস্বরুপ পেতে প্রার্থনা করল।
(৬) নীরবে হৃদয় দান
বাড়ীর আগে ফুট্যা রইছে চম্পা-নাগেশ্বর।
পুষ্প তুলিতে কন্যা আইল একেশ্বর। ।
“তোমারে দেখিব আমি নয়ন ভরিয়া।
তোমারে লইব আমি হৃদয়ে তুলিয়া। ।
বাড়ীর আগে ফুট্যা আছে মালতী-বকুল।
আঞ্চল ভরিয়া তুলব তোমার মালার ফুল।
।
বাড়ীর আগে ফুট্যা রইছে রক্তজবা-সারি।
তোমারে করিব পূজা প্রাণে আশা করি। ।
বাড়ীর আগে ফুট্যা রইছে মল্লিকা-মালতী।
জন্মে জন্মে পাই যেন তোমার মতন পতি। ।
বাড়ীর আগে ফুট্যা রইছে কেতকী-দুস্তর।
কি জানি লেখ্যাছে বিধি কপালে আমার। ।
”
এইরূপে কান্দে কন্যা নিরালা বসিয়া।
মন দিয়া শুন কথা চন্দ্রাবতীর বিয়া। ।
(৭) বিবাহের প্রস্তাব ও সম্মতি
একদিন ত না ঘটক আইল ভট্টাচার্য্যের বাড়ী।
“তোমার ফহরে আছে কন্যা পরমা সুন্দরী।
।
কুলে শীলে তুমি ঠাকুর চন্দ্রের সমান।
না দেখি এমন বংশ এথায় বিদ্যমান। ।
বয়স হইল কন্যা রূপে বিদ্যাধরী।
ভাল বরে দেও বিয়া ঘটকালি করি। । ”
“কেবা বর কিবা ঘর কহ বিবরণ।
পছন্দ হইলে দিব মনের মতন। ।
”
ঘটক কহিল “সুন্ধ্যা” গ্রামে ঘর। *
চক্রবর্ত্তী বংশে খ্যাতি কুলিনের ঘর। ।
জয়ানন্দ নাম তাঁর কাত্তিক কুমার।
সুন্দর তোমার কন্যা যোগ্য বর তার।
।
দেখিতে সুন্দর কুমার পড়ুয়া পণ্ডিত।
নানা শাস্ত্র জানে বর অতি সুপণ্ডিত। ।
সূর্য্যের সমান রূপ বংশের দুলাল।
সুখেতে থাকিব কন্যা জানি চিরকাল। ।
পশ্চিমাল বাতাসে দেখ শীতে লাগে কাটা।
এখন ধইরাছে দেখ মধ্যি গাঙ্গে ভাটা। ।
আম আগছে নয়া পাতা ধরিয়াছে বউল।
এই মাসে বিয়া দিতে নাহি গণ্ডগোল। ।
করকুষ্টি বিচারিয়া সম্বন্ধ মিলায়।
ভালা বরে কন্যা বিয়া দেওয়া বড় দায়।
।
কুষ্টি বিচারি কৈল “সর্ব্ব সুলক্ষণ।
বরকন্যার এমন মিল ঘটে কদাচন। । **
কুষ্টিতে মিলিছে ভাল যখন এই বরে।
এই বরে কন্যাদান করিব সুস্থরে। । ” ***
* সুন্ধ্যা : সুন্ধা নদীর তীরের গ্রাম
** কদাচন : কদাচিৎ
*** সুস্থরে : নিশ্চয়
(চলবে) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।