আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাপানে আসছে একখণ্ড বাংলাদেশ

সেতো অভ্যন্তরীণ সাগরের অবস্থান জাপানের ঠিক যেন মধ্যাঞ্চলজুড়ে। দেশের তিনটি প্রধান দ্বীপের উপকূল স্পর্শ করা এই সাগর বড় অংশজুড়ে ভূমি পরিবেষ্টিত হওয়ায় জল হ্রদের মতোই শান্ত ও স্নিগ্ধ। ফলে অতীতকাল থেকে জাপানের মানুষকে এই সাগর কাছে টেনে নিতে পেরেছিল।
তবে জাপানের দ্রুত শিল্পায়নের পথে যাত্রার মাশুল একসময় অবশ্যম্ভাবীভাবে সেতো-উচিকেও দিতে হয়েছিল। দূষণের মাত্রা বৃদ্ধির কারণে ওই সব দ্বীপের স্থানীয় অধিবাসীদের অনেকেই দ্বীপ ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছিল।


সেতো-উচির সে রকম এক দুঃসময়ে, এখন থেকে প্রায় বছর পঁচিশেক আগে, জাপানের নেতৃস্থানীয় খেলনা প্রস্তুতকারী কোম্পানি বেনেসেস করপোরেশনের চেয়ারম্যান সোইচিরো ফুকুতাকে একসময়ের দৃষ্টিনন্দন সেই সব দ্বীপের পুনরুদ্ধার এবং সেগুলোকে সামষ্টিকভাবে শিল্পকলার আকর্ষণীয় এক সংগ্রহশালায় রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেন।
কিছুদিনের মধ্যেই জাপানের এবং বর্তমান বিশ্বের নেতৃস্থানীয় স্থপতি তাদাও আন্দোর শরণাপন্ন হয়েছিলেন তিনি। গত ১৫ বছরে দুজনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সেতো-উচির গোটা দশেক দ্বীপজুড়ে গড়ে ওঠে আসধারণ এক শিল্প কমপ্লেক্স, যার কেন্দ্রে আছে নাওশিমা দ্বীপ। তাদাও আন্দোর নকশায় তৈরি বেনেসেস হাউস মিউজিয়াম, চিচু আর্ট মিউজিয়াম এবং লি উ-ফান মিউজিয়ামের মতো অপরূপ কিছু সংগ্রহশালা দ্বীপজুড়ে তৈরি হওয়ায় নাওশিমা হয়ে উঠেছে জাপানে শিল্পকলার এক তীর্থভূমি।
সোইচিরো ফুকুতাকে আর তাদাও আন্দো তাদের সেই শিল্পকলার যাত্রা সেখানেই থামিয়ে দেননি।

তিন বছর আগে তাঁরা চালু করেছেন শিল্পকলার ত্রিবার্ষিক প্রদর্শনী ‘সেতো-উচি ট্রিয়েনালে’। এ বছর সেতো-উচিজুড়ে চলছে এর দ্বিতীয় আয়োজন। সেতো অভ্যন্তরীণ সাগরের বারোটি দ্বীপ এবং কাগাওয়া জেলার দুটি বন্দর শহর তাকামৎসু আর ওনোতে এ বছরের মার্চ মাস থেকে তিন ধাপে শুরু হয়েছে এই প্রদর্শনী। ৩৩ দিন ধরে চলা উৎসবের বসন্তকালীন আয়োজন এগ্রিল মাসের ২১ তারিখে শেষ হওয়ার পর চলতি মাসের ২০ তারিখ থেকে শুরু হচ্ছে এর গ্রীষ্মকালীন পর্ব, যা চলবে সেপ্টেম্বরের ১ তারিখ পর্যন্ত।
সেতো-উচি ট্রিয়েনালের এ বছরের গ্রীষ্মকালীন আয়োজনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ হচ্ছে সবচেয়ে ব্যতিক্রমী।

২৩টি দেশ ও ভূখণ্ডের দুই শতাধিক শিল্পীর শিল্পকর্ম এবারের প্রদর্শনীতে স্থান পেলেও বাংলাদেশের অংশগ্রহণ হচ্ছে ভিন্ন এক অর্থে সামগ্রিক। বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় শিল্পীদের আঁকা ছবির প্রদর্শনী তাকামাৎসু আর্ট মিউজিয়ামে গ্রীষ্মকালীন আয়োজনের পুরো সময় ধরে চলবে। পাশাপাশি শহরের বন্দর এলাকায় বসবে বাংলাদেশ ফ্যাক্টরি নামের ভিন্ন এক আয়োজন। দেশের হস্তশিল্প ও কারুপণ্যের নেতৃস্থানীয় কারিগরেরা সেখানে তাঁদের সৃষ্টি প্রদর্শনের পাশাপাশি অপরূপ সেসব পণ্য তৈরির দক্ষতাও দর্শকদের দেখাবেন। ফলে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ কেবল শিল্পকর্মের নিদর্শনেই সীমিত থাকছে না, বরং কারু, মৃৎ আর দারুশিল্পীদের উপস্থিতির মধ্য দিয়ে তা সার্বিক অর্থে হয়ে উঠছে বিস্তৃত।

একে আরও পরিপূর্ণ করতে ত্রিবার্ষিক প্রদর্শনীর গ্রীষ্মকালীন পর্বে যোগ দিচ্ছেন বাংলাদেশের লোকজ নৃত্য ও সংগীত জগতের নেতৃস্থানীয় শিল্পীরা। এই দলে চারটি ভাগে ভাগ হয়ে যে শিল্পীরা জাপানে তাঁদের সংগীত আর নৃত্যের পারদর্শিতা দেখাবেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন নৃত্যশিল্পী তামান্না রহমান, শামীম আরা নীপা, শিবলী মহম্মদ, চাকমা নৃত্যশিল্পী তোরা দেওয়ান ও সাগরিকা চাকমা, সেতারবাদক ওস্তাদ শাহাদাৎ হোসেন খান, লালনগীতি শিল্পী ফরিদা পারভীন, বাউলসংগীত শিল্পী শামির হোসেন, নজরুলসংগীত শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল, রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী অদিতি মহসিন এবং পল্লিগীতি শিল্পী চন্দনা রায়।
বাংলাদেশের যেসব বিশিষ্ট চারু ও কারুপণ্যের কারিগর তাঁদের দক্ষতা জাপানি দর্শকদের সামনে তুলে ধরবেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন কুমার সুবল চন্দ্র পাল, শিকার হাঁড়ির শিল্পী সুশান্ত কুমার পাল, টেরাকোটার শিল্পী সুবোধ কুমার পাল, তাঁতি আমিনুল হক ও জামাল, তবলা তৈরির কারিগর শিবনাথ শিবু, নকশিকাঁথার শিল্পী রুনা বেগম ও কোহিনূর বেগম, বেতের আসবাবপত্র তৈরির কারিগর জয়নাল, শাঁখারী অনুপ নাগ এবং রিকশা পেইন্টার রফিকুল ইসলাম ও সৈয়দ আহমদ হোসেন।
আর যেসব শিল্পীর আঁকা ছবির প্রদর্শনী পুরো সময় ধরে তাকামাৎসু আর্ট মিউজিয়ামে চলবে, সেই দলে কাইয়ুম চৌধুরী, রফিকুন নবী ও হাশেম খানের মতো নেতৃস্থানীয় প্রবীণ শিল্পীদের পাশাপাশি উঠতি তরুণেরাও রয়েছেন। তাঁদের আঁকা সেই সব ছবির প্রদর্শনী আবার সেপ্টেম্বর মাসে টোকিওতেও অনুষ্ঠিত হবে।


সেতো-উচি ট্রিয়েনালে বাংলাদেশের মোট অংশগ্রহণকারী হচ্ছেন ৩৯ জন কারুশিল্পী, ১২ জন চিত্রশিল্পী এবং ৪৮ জন নৃত্য ও সংগীতশিল্পী। এ ছাড়া ১৫ জন সরকারি কর্মকর্তা দলে অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। চলতি মাসের ২০ তারিখে সেতো-উচি ট্রিয়েনালের গ্রীষ্মকালীন আয়োজনের উদ্বোধনীতে যোগ দিতে জাপান সফরে আসছেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিত, সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ এবং প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।