আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাপানে আত্মহত্যার তরঙ্গোচ্ছ্বাস

যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে

আত্মহত্যার জন্য ব্যবহৃত উপকরণ ও নিয়ম এবং এর শিকার ব্যক্তিবর্গের বিস্তারিত বর্ণনাসহ বিগত কয়েক সপ্তাহ যাবত জাপানী মিডিয়া ব্যাপকভাবে হাউড্রজেন সালফাইড গ্যাস দ্বারা সংগঠিত আত্মহত্যার বিবরণ প্রচার করছে। সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলো এত বিস্তারিত ও রোমাঞ্চকর হয়েছে যে জাপান সুইসাইড প্রিভেনশন এসোসিয়েশন প্রতিবেদন প্রচারে আরো সতর্ক হবার জন্য প্রচার সংস্থাগুলোকে অনুরোধ করেছে। এই বিস্ময়কর ঘটনা জাপানী ব্লগারদের এ বিষয়ে আলাপ করতে আলোড়িত করেছে যেখানে তাদের বিভিন্নমুখী দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে উঠেছেঃ ব্লগার মিসুটো সাম্প্রতিক এই প্রবনতা বিষয়ে মন্তব্য করেছেনঃ প্রতিদিন ৯০ জন মানুষ আত্মহত্যা করছে। বছরে ৩০ হাজার! আপাতদৃষ্টিতে আত্মহত্যার প্রধান কারণ হতাশা। এটা ঠিক যে এই সংখ্যা শিল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে সর্বাধিক।

যাই হোক, এটা ব্যাপক, আমি বিষ্মিত। সম্প্রতি হাইড্রজেন সালফাইড গ্যাসের মাধ্যমে আত্মহত্যার বেশ কিছু খবর শোনা গেছে। আশা করবো আত্মহত্যার সংখ্যা ক্রমশ কমে যাবে। ব্লগার হাকোবি লিখেছেনঃ আত্মহত্যা প্রতিরোধ করার জন্য (যার অর্থ মানুষকে বাঁচতে চাইতে শেখানো) একজন মানুষের আসল অনুভূতি দরকার। এবং তার বেঁচে থাকা সমাজ ও মানুষের চাইতে হবে, আমি মনে করি।

শুনেছি হাইড্রজেন গ্যাসের মাধ্যমে সংগঠিত আত্মহত্যার পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। যদিও রাসায়নিক পদার্থসমূহ এবং সেই সাথে কিভাবে হাইড্রজেন সালফাইড গ্যাস তৈরী করা হয় সে সম্পর্কিত তথ্যাবলী তুলে নেয়া হচ্ছে, হয়তো “হাইড্রোজেন সালফাইডের” মাধ্যমে “এখন” সংগঠিত আত্মহত্যার পরিমাণ “কমানোর” ব্যর্থতা মোচনের এটাই একমাত্র অবলম্বন। কোন ব্যাপার না যতই প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয়া হোক না কেন, সমাজ যদি এখন যেমন আছে তেমনই থাকে সম্ভাব্য আত্মহত্যার ঘটনা বোধহয় কমবে না। টোকিওর একটা স্থানীয় পৌরসভার আত্মহত্যা বিরোধী গন-সংযোগ অভিযানের পোস্টার “আমরা বাঁচতে চাই”। প্রচার মাধ্যমে যেভাবে বিষয়টা পরিচালনা করা হচ্ছে তা নিয়ে অনেক ব্লগারই সমালোচনামুখর।

এই ব্লগার পরামর্শ দিয়েছেন যেন প্রচার মাধ্যম আত্মহত্যার সব খবর প্রদান বন্ধ করে দেয়ঃ এটা কি ঠিক নয় যে আমরা আত্মহত্যার ঘটনাচক্র বন্ধের জন্য কিছু করবো? কোন এক কারণে এমন প্রবণতা দেখা যায় যে মানুষ জনকে যা করতে বলা হয় সেগুলি তারা করে না এবং তারা তাই করে যা তাদের করতে নিষেধ করা হয়। সুতরাং যখন প্রচার মাধ্যমে বলা হয় যে “এটা করো না” তখন কেউ কেউ এমন থাকবে যারা তা করতে উৎসাহিত হবে, তাই নয় কি? অবশ্যই প্রচার মাধ্যম সত্যই তুলে ধরবে। কিন্তু হাইড্রজেন সালফাইড গ্যাসের মাধ্যমে আত্মহত্যার খবর প্রদান বন্ধ করা কি উচিত নয়? জাপানীরা তথ্যে বিশ্বাস করে। এবং আমার মনে হয় যখন তারা টেলিভিশনে কোন জিনিস আর দেখে না তখন দ্রুতই তাদের কাছে সেটা পুরাতন হয়ে যায়। এটা ঠিক, মানুষ জন খুব সহজেই কোন একটা জিনিসে ক্লান্ত হয়ে পড়ে।

কিছুদিন আগের কোরিয়া বুম এবং হাঙ্কাচি ওজি (রুমাল রাজকুমার) এর কথা মনে আছে? আমার মনে হয় এমন অনেক জিনিস আছে যা প্রচারিত না হলে মানুষজন ভুলে যাবে। * একমাত্র সেইসব মানুষ ছাড়া যারা এগুলোকে সত্যিই ভীষণ পছন্দ করে। বিষের পিঠার কথা মনে আছে! দেখুন, সে সব ভুলে গেছেন নিশ্চয়ই, ঠিক? সমস্যা এখনও সমাধান হয়নি অথচ মনে হচ্ছে এ অবস্থায় বিষয়টা ফেলে রাখা হবে। জাপানি মানুষদের এটা একধরণের বৈশিষ্ট্য, আমিও এমন। কিন্তু এটাকে একটা বাজে অভ্যাস মনে করি।

এবং তাই, যদি প্রচার মাধ্যম হাইড্রজেন সালফাইড দিয়ে সংগঠিত আত্মহত্যার কথা প্রচার না করে সম্ভবত আত্মহত্যার এই বৃত্তকে ভাঙা যাবে। সেটাই ঠিক! প্রচার মাধ্যমকে বন্ধ করতে হবে! …. ছি ছি ব্লগার তাইশিব্রিয়ান আলোচনা করেছেন কিভাবে ইন্টারনেট নিন্দার লক্ষ্য হয়ে উঠেছে এবং চিহ্নিত করেছে যে জাপানী প্রচার মাধ্যম আত্মহত্যার ঘটনা প্রচার বিষয়ক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কতৃক আরোপিত বিধিমালা মানছে নাঃ উদাহরণসরূপ, ইন্টারনেটের উন্মুক্ত ও সমতল বিশ্বে হাইড্রজেন সালফাইড সাদা করার ঝুঁকির বর্ণনা সম্বলিত সাইট যেমন আছে তেমন আছে হাইড্রজেন সালফাইডের চেয়েও অনেক বেশী প্রাণঘাতী জৈব রাসায়নিক পদার্থের বিবরণ। যার জন্য, এই তথ্য সাধারণ মানুষজনের জন্য উন্মুক্ত রাখা ঠিক নয় যতক্ষণ না সেগুলো বিশেষ কোন উদ্দেশ্যে তালাশ করা হয় এবং এর ঝুঁকি অবশ্যই বিবেচনা করে গণমাধ্যম কেবল একটা ইংগিত দিতে পারে কিভাবে এগুলো খুঁজে পাওয়া সম্ভব। তবে এসব মুছে ফেলার প্রচেষ্টাকে পর্যবেক্ষণ করা আসলে ইদুর-বিড়ালের দৌড় মাত্র যা কেবল একটা জঘন্য আবর্তন তৈরী করেঃ [প্রথমত আপনার ছিল] কয়লার গুলি, এরপরে হাইড্রজেন সালফার এবং এর পরে …. বিধিমালা অনুযায়ী, স্বাস্থ্য সংস্থা নিদৃষ্ট করে দিয়েছে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করার জন্য কিভাবে প্রচার মাধ্যম সংবাদ পরিবেশন করবেঃ • ছবি অথবা আত্মহত্যার চিরকুট প্রকাশ করবেন না • অনুসৃত পদ্ধতি বিস্তারিত জানাবেন না • একেবারে মামুলী কোন কারণ দেখাবেন না • আত্মহত্যাকে মহান বা রোমাঞ্চকর করবেন না • ধর্মীয় বা সংস্কৃতিক গৎবাঁধা বিষয় হিসাবে উপস্থাপন করবেন না • আত্মহত্যার নিন্দাকে বাদ দেবেন না বর্তমানে এই বিষয়গুলো কদাচিত গণমাধ্যম অনুসরণ করে থাকে। গ্লোবালভয়েসে হানাকো তোকিতার লেখা মূল পোস্ট।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।