আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উড়ন্ত ফারহান

সফল পরিচালক থেকে আরও সফল অভিনেতা বনে যাওয়া ফারহান আসলেই উড়ছেন! শুরুটা সেই ২০০৮-এ ‘রক অন’ দিয়ে; এর পর ‘কার্তিক কলিং কার্তিক’, ‘জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা’-প্রতিবারই ভিন্নধর্মী সব চরিত্রে অভিনয়ে সফল ফারহান ‘ভাগ মিলখা ভাগ’-এর মাধ্যমে আরও একবার দেখালেন তার অভিনয় দক্ষতা।
রাকেশ ওম প্রকাশ মেহরার পরিচালনায় মিলখা সিং-এর চরিত্রে অভিনয়ের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন ফারহান; সিনেমা মুক্তির পর এখন সেই পরিশ্রমের প্রতিদান পাচ্ছেন হাতেনাতেই। দর্শক-সমালোচক এবং সহকর্মীদের প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন তিনি।
সিনেমাটি মুক্তির সঙ্গে সঙ্গেই শাহরুখ খানের টুইট, “ভাগ মিলখা ভাগ একটি চমৎকার সিনেমা। ধন্যবাদ রাকেশ আর আমার ফ্লাইং ফারহান! তুমি আমাকে সবসময়ই অনুপ্রেরণা দাও।


অভিনেত্রী বিদ্যা বালান বলেছেন, “এইমাত্র ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ দেখলাম! মিলখা সিংয়ের চরিত্রে ফারহান অসাধারণ। ”
কেবল শাহরুখ-বিদ্যাই নয়, গোটা বলিউডেই চলছে ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ নিয়ে মাতামাতি। ষাটের দশকের সেরা দৌড়বিদ মিলখা সিংয়ের জীবনের সাফল্য নিয়ে তৈরি ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ সিনেমাটি ফারহানের ক্যারিয়ারকে যেমন দিয়েছে এক নতুন মোড়, সেইসঙ্গে হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে ব্যতিক্রমধর্মী স্পোর্টস ফিল্ম হিসেবে ইতিমধ্যেই আলাদা স্থান করে নিয়েছে ‘ভাগ মিলখা ভাগ’।
দীর্ঘ ছয় বছর পর রাকেশ ওম প্রকাশ মেহরার পরিচালনা, প্রসূন জোশির চিত্রনাট্য এবং কেন্দ্রীয় চরিত্রে ফারহান খানের অভিনয়-- সবমিলিয়ে ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ সিনেমাকে ২০১৩ সালের বহুল প্রতীক্ষিত সিনেমাগুলোর একটি হিসেবে ধরা হয়েছিল অনেক আগেই। বছরের শুরুতে যখন সিনেমাটির ‘ফার্স্ট লুক’ প্রকাশ পেল, তখন থেকেই বলিউডজুড়ে শুরু হয়েছিল জল্পনা-কল্পনা।


একটি ব্যাপার প্রায় সবাই জানে, খেলাধুলার প্রশ্নে ভারতীয়দের প্রধান পছন্দ ক্রিকেট। আর বলিউডের সঙ্গে ভারতের ক্রিকেট তো প্রায় ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এমনই ক্রিকেটপাগল একটি দেশে ষাটের দশকের একজন দৌড়বিদের জীবনের গল্প বলেছে ‘ভাগ মিলখা ভাগ’। তার উপর সিনেমাটিতে নেই কোনো আইটেম গান কিংবা গ্ল্যামারাস নায়িকার উপস্থিতি। শুধুমাত্র কাহিনি, পরিচালনা এবং কয়েকজন কলাকুশলীর বাস্তবধর্মী অভিনয় সিনেমাটিকে এনে দিয়েছে কাক্সিক্ষত সাফল্য।

৩০ কোটি রুপি বাজেটের সিনেমা ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ মুক্তি পেয়েছে ১২ জুলাই, আর মুক্তির এক সপ্তাহের মধ্যেই আয় করেছে ৩২ কোটি ২৫ লাখ রূপি।    
সিনেমাটিতে মিলখা সিংয়ের চরিত্রের জন্য শুরু থেকেই ফারহান ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিলেন । সিনেমাটির শুটিং শুরু হওয়ার একমাস আগে থেকে দাড়িগোঁফ রাখতে শুরু করেন ফারহান, সেই সঙ্গে মিলখা সিংয়ের মতো পাগড়িও পরে থাকতেন তিনি। যদিও মেকআপের মাধ্যমে দাড়িগোঁফ কিংবা পাগড়ি সবই তৈরি করা সম্ভব ছিল। কিন্তু ফারহান চেয়েছিলেন যেন তাকে এই চরিত্রে যতটা সম্ভব বাস্তব মনে হয়।

এর জন্য তিনি সিনেমাটির শুটিংয়ের আগে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করেন মিলখা সিংয়ের সঙ্গে। পর্দায় একজন খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে টানা ছয় মাসের প্রশিক্ষণও নিতে হয়েছিল ফারহানকে।
এ বিষয়ে ফারহানের ভাষ্য ছিল এ রকম, “আমাকে দৌড়ানোর ধরন সম্পূর্ণ পাল্টাতে হয়েছিল। আমার প্রশিক্ষণটি পুরোপুরি অন্যরকম ছিল। আমাকে ব্যথা সহ্য করার ক্ষমতা এবং শক্তি-- দুটোই বাড়াতে হয়েছে।

কিন্তু এতকিছুর পরেও আমরা যা যা করছিলাম তার চাইতে সিনেমাটির উদ্দেশ্য ছিল অনেক বড়। এর ফলে আমাদের বড়াই করার মতো কিছুই ছিল না। আমাদের যাকিছু আছে সবটুকু দিয়ে কাজ করতে হয়েছে। ”
এমন একজন প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের ভূমিকায় অভিনয় করতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন ফারহান। তিনি বিশ্বাস করেন, মিলখা সিংয়ের জীবনকাহিনি যে কোনো মানুষের জন্য অনুপ্রেরণামূলক।


‘রং দে বাসান্তি’ এবং ‘দিল্লি সিক্স’-এর মতো সিনেমা নির্মাণের পর প্রসূন এবং রাকেশ এবার সিনেমাপ্রেমীদের নতুন ধরনের কিছু উপহার দিতেই তৈরি করেছেন ‘ভাগ মিলখা ভাগ’। তারুণ্যের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর ‘রং দে বাসান্তি’ কিংবা সম্পূর্ণ অফবিট ধাঁচের সিনেমা ‘দিল্লি সিক্স’ দিয়ে রাকেশ ওম প্রকাশ মেহরা তার সিনেমায় সবসময়ই সমাজের একটি বিশেষ রূপ উন্মোচনের চেষ্টা করেছেন। ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ সিনেমাতেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
তবে ‘ভাগ মিলখা ভাগ’কে একটি স্পোর্টস ফিল্ম বলতে চান না রাকেশ। তার মতে এটি কোনো খেলাধুলাবিষয়ক সিনেমা নয়; বরং একজন মানুষের মনের ভেতর লুকিয়ে থাকা সাহসের প্রতিফলন।

তার মতে, “এটি এমন একজন মানুষের কাহিনি, যিনি মাত্র ১২ বছর বয়সে নিজের পিতামাতাকে হারিয়েছেন। যে মানুষটি দেখেছেন সাফল্য অর্জন করা যতটা কঠিন, হারিয়ে ফেলা ততটাই সহজ। ”
তবে যাকে নিয়ে এই সিনেমার মূলকাহিনি, ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ দেখার পর সেই মিলখা সিংয়ের অনুভূতি কেমন ছিল? এ বিষয়ে মিলখা সিং বলেন, “সিনেমাটি অর্ধেক দেখার পর আমি কেঁদে ফেলেছিলাম। আর তখন ফারহান আমাকে তার রুমালটি  দিয়েছিলেন চোখ মোছার জন্য। ”
১২ জুলাই ভারতে মুক্তি পাওয়ার আগে লন্ডনে সিনেমাটি দেখেন মিলখা সিং।

ভারতীয় এই দৌড়বিদ আরও জানান, তার পুত্র জীব মিলখা সিং ‘রং দে বাসান্তি’ সিনেমাটি দেখার পর রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরার কাছে তার বাবার জীবনের গল্প বলেন। ভারতের এই কিংবদন্তি খেলোয়াড়ের প্রতি রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরার এই শ্রদ্ধাজ্ঞাপনে সামিল হয়েছিলেন ফারহান আখতার, সোনম কাপুর, পাকিস্তানি অভিনেত্রী মীশা শফি এবং বাকি কলাকুশলীরা।
‘ভাগ মিলখা ভাগ’ সিনেমাটি মুক্তির পর ৪ দিনেই আয় করেছে এর বাজেটের চাইতে বেশি। ৩০ কোটি রুপি বাজেটের এই সিনেমাটি মুক্তির প্রথম দিনে আয় করেছে ৮ কোটি ৫০ লাখ রুপি, দ্বিতীয় দিনে সিনেমাটির আয় ছিল ১০ কোটি ৫০ লাখ রুপি। আর প্রথম সপ্তাহে সিনেমাটির মোট আয় হয়েছে ৩০ কোটি ৮০ লাখ রুপি।

বক্স অফিস বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন যদি ১৫ তারিখ পর্যন্ত এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকে, তবে ১০০ কোটির ক্লাবে যোগ দিতে পারে ‘ভাগ মিলখা ভাগ’।
দর্শকদের মতো বেশিরভাগ সমালোচকের মন জয় করতেও সক্ষম হয়েছে ‘ভাগ মিলখা ভাগ’। ‘ইন্দো-এশিয়ান নিউজ সার্ভিস’-এর সমালোচক সুভাষ ঝা সিনেমাটিকে পাঁচের মধ্যে দিয়েছেন পাঁচ তারকা। এদিকে ‘বলিউড হাঙ্গামা’-র বিশ্লেষক তরুণ আদর্শ সিনেমাটিকে পাঁচের মধ্যে সাড়ে চার তারকা দিয়ে বলেছেন, “সর্বোপরি ভাগ মিলখা ভাগ নিশ্চিতভাবে সবার ভালোবাসা, প্রশংসা, সম্মান ও শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। ” 
‘দিল্লি সিক্স’-এর পরে টানা চার বছর বিরতি দিয়ে ভিন্নধর্মী বিনোদন নিয়ে ফিরেছেন রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরা।

ফারহান আখতারও প্রথমবারের মতো নিজের প্রোডাকশনের বাইরে কারও সঙ্গে কাজ করেছেন। আর তাদের এই একাত্মতা বক্সঅফিসে যেমন সফলভাবে কাজ করেছে, এ বছর বলিউডের পুরস্কারের মৌসুমে তেমনি দাপটের সঙ্গে নিজের উপস্থিতি জানান দেবে, এমনটাই ভাবছেন সবাই।

সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।