আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্ষতিকারক কিছু ভাইরাসের ইতিহাস !!!

বৃক্ষ তোমার নাম কি, ফলেই পরিচয়..... কম্পিউটার ভাইরাসের আবির্ভাব হওয়ার পর থেকেই একের পর এক ভাইরাস তৈরি করে যাচ্ছে প্রোগ্রামাররা। এসব ভাইরাসের অনেক গুলোই এতটাই ক্ষতিকর যে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃস্টি করেছে। ক্ষতিসাধন করেছে লাখ লাখ কম্পিউটারের, ধংস করেছে মুল্যবান অনেক তথ্য। এমনি কিছু ভাইরাসের ইতিহাস সম্পর্কে চলুন আজ জানা যাক। CIH বা চেরনোবিল ভাইরাস ৯৯ এর ২৬শে এপ্রিল বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে লক্ষ লক্ষ কম্পিউটার CIH বা চেননোবিল নামক ভাইরাসের আক্রমণে বিপর্যয়ের সম্মূখীন হয়।

টাইম বোমার মতো নির্দিষ্ট সময়ে এ ভাইরাসটি কম্পিউটারকে আক্রমণ করে। একই সময়ে সারাবিশ্বে ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার এটাই সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা। কম্পিউটার সিস্টেমে সময় ও তারিখের জন্য ঘড়ি সেট করা আছে। ঘড়ির কাটায় ২৬শে এপ্রিল, ১৯৯৯ হওয়ার সাথে সাথে কম্পিউটারে লুকায়িত সিআইএইচ ভাইরাস বিপর্যয়ের সৃষ্টি করে। বাংলাদেশসহ বিশ্বে লক্ষ লক্ষ কম্পিউটার অচল হয়ে পড়ে।

পশ্চিমাদেশগুলোর তুলনায় এশিয়ার বিপর্যয়ের মাত্রা অনেক ভয়াবহ। এই ভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে এন্টিভাইরাস কোম্পানীগুলো বারংবার সর্তক করার সত্ত্বেও এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর উদাসীনতার ফলে এই বিপর্যয় ঘটেছে। অন্যান্য দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র অনেক কম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ব্যাপক প্রচারনার ফলে যথাসময়ে এন্টিভাইরাস আপগ্রড কারায় কর্পোরেট হাউজগুলো এই বিপর্যয় এড়াতে পেরেছে। পিটার্স বুর্গের মেলোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার ইমারজেন্সি রেসপন্স টিমের মুখপাত্র বিল পোলক বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে কমপক্ষে ২৩৮২টি কম্পিউটার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে”।

সারা চীনে ১ লাখেরও বেশি কম্পিউটার CIH ভাইরাসের আক্রমণের শিকার হয। চীনের বৃহত্তম এন্টিভাইরাসের সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রুইজিন কোম্পানীর জিএম লিউ জু একে মহাবিপর্যয় বলে আখ্যায়িত করেন। দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ। দক্ষিন কোরিয়ার তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী আন বিউং-ইয়প ক্ষমা চেয়ে বলেন, “আমরা এই ভাইরাসটির ধ্বংশ ক্ষমতা সম্পর্কে অজ্ঞ ছিলাম এবং বিষয়টির প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব দেইনি”। তিনি বলেছেলেন, “কম্পিউটার ভাইরাস সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে ও সর্তকতা পদ্ধতিকে আরও শক্তিশালী করতে হবে”।

সরকারী সূত্রমতে, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৩ লক্ষ কম্পিউটার CIH ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল। তবে, এন্টিভাইরাস কোম্পানীগুলো দাবি করেছে, ৬ লাখেরও বেশি কম্পিউটার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। তুরষ্কের র‍্যাডিকেল পত্রিকা জানিয়েছে, বারংবার সর্তক করার সত্ত্বেও, কেউই বিষয়টি তেমন গুরুত্ব দেয়নি। ফলে যা ঘটার তাই ঘটেছে। প্রচুর কম্পিউটার ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে অচল হয়ে গেছে।

বিশ্বব্যাপি সবাই চেষ্টা করে এ বিপর্যায় কাটিযে উঠার জন্য। এই ভাইরাসটি ২৬শে এপ্রিল, ২৬শে জুন ও প্রতি মাসের ২৬ তারিখে আক্রমণ করতে দেখা যায়। এই ভাইরাসের আক্রামণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখনই সর্তক থাকুন। CIH ভাইরাসের লক্ষণঃ ১. কম্পিউটারের প্রোগ্রাম রান করে না। CIH ভাইরাসের একটি ভার্সন এর জন্য দায়ী।

এই ভাইরাস প্রোগ্রামের .exe ফাইলের নাম পরিবর্তন করে ফেলে। ২. কম্পিউটার অন হচ্ছে কিন্তু সি ড্রাইভ পাওয়া যাচ্ছে না। ৩. কম্পিউটার অন করলে কিছুই দেখা যায় না। ক্ষতিঃ এটি মাদারবোর্ডের বায়োস নষ্ট করে দেয়। হার্ডডিস্কের পার্টিশন মুছে দেয়।

CIH ভাইরাসের ইতিহাসঃ ১৯৯৮ এর জুনের শুরুতে তাইওয়ানে প্রথম সিআইএইচ ভাইরাস দেখা যায়। ভাইরাসের নির্মাতা একে স্থানীয় ইন্টারনেট কনফারেন্সে পাঠায়। তারপর তা ইন্টারনেটে বিশ্বব্যাপি ছড়ায়। CIH ভাইরাস তৈরি করেন চেন ইং হাও –এর নামের অদ্যাক্ষর অনুযায়ী ভাইরাসটির নামকরণ করা হয়। এ ভাইরাসকে চেরনোবিল ভাইরাসও বলা হয়।

এটি ২৬শে এপ্রিল বিপর্যয় ঘটায়। ১৯৮৬ সালের ২৬শে এপ্রিল রাশিয়ার চেরনোবিলে মারাত্মক পারমাণবিক বিষ্ফরণ ঘটেছিল। চেরনোবিলের ২৬শে এপ্রিলের ঘটনাকের স্মরণ করে এ ভাইরাস ২৬শে এপ্রিল কার্যকর হয় বলে একে চেরনোবিল ভাইরাস বলা হয়। একে ‘স্পেস ফিলার’ও বলে। কারণ এটি ফাইলের ভিতরের খালি জায়গা দখল করে।

এর কারণে এন্টিভাইরাস ভাইরাসটি ধরতে পারেনা। সারা বিশ্বের হাজার হাজার কম্পিউটারে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী CIH ভাইরাসের সৃষ্টিকারী হলেন, তাইওয়ানের ‘তাতং ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’র কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক ছাত্র ‘চেন ইং হাও’। চেনের নাম অনুসারে এই ভাইরাসের নামকরণ করা হয়। ‘তাতং ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’র ছাত্র বিষয়ক ডিন ‘লি চে চেন’ জানান, গত বছর (১৯৯৮) এপ্রিলে ভাইরাসটি আন্তঃকলেজ ডেটা সিস্টেমের ক্ষতিসাধন করলে চেনকে লঘু শাস্তি দেয়া হয়। ঐ সময়ের সিনিয়র ছাত্র চেনকে কর্তৃপক্ষ বহিষ্কারের মতো কঠিন শাস্তি দেয় নি কারণ, সে অন্য ছাত্রদের ভাইরাসটির বিস্তার ঘটাতা নিষেধ করেছিল।

কিন্তু চেন ভাইরাসবিরোধী কোন প্রোগ্রাম তৈরির উদ্যোগ নেননি। লি বলেন, এক বছরের মাথায় ভাইরাসটি কেমন করে এমন বিপর্যয় ডেকে আনল সে বিষয়টি তিনি বুঝতে পারছেন না। কেন তিনি এ ভাইরাস সৃষ্টি করেন? আত্মম্ভরিতা থেকেই চেন ইং হাও এটি করেছেন। কিন্তু এই ভাইরাস যে বিশ্বব্যাপী এমন বিপর্যয় ডেকে আনবে তা চেন কখননোই ভাবেনি। এ ভাইরাসটি সৃষ্টির কারণ হিসেবে চেন বলেন, অযোগ্য এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার প্রোভাইডারদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য তিনি এ কাজ করেন।

কলেজে থাকার সময় ইন্টারনেট থেকে গেম ও সফটওয়্যার ডাউনলোড করতে গিয়ে চেন প্রায়ই প্রযুক্তিগত বিপত্তির মুখে পড়তেন। তখনই চেন সফটওয়্যার বিশেষজ্ঞদের বোকা বানানোর জন্য এই ভাইরাসটির জন্ম দেন। এই ভাইরাসটি এন্টিভাইরাস প্রোগ্রামকে ফাঁকি দিতে সক্ষম। ডেটা রিকভারী করাঃ CIH ভাইরাসের সবচেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে এটি হার্ডডিস্কের পার্টিশন তুলে দিয়ে ডেটা আনরিডেবেল করে দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানের ছাত্র মনিরুল ইসলাম শরীফ চেনরোবিল ভাইরাসে বিপর্যস্ত কম্পিউটার ঠিক করার জন্য একটি সফটওয়্যার তৈরি করেন।

সি ল্যাংগুয়েজে করা এ সফটওয়্যারটির নাম MRecover1.7। এই সফটওয়্যার দিয়ে মুছে যাওয়া ডেটা পুনরুদ্ধার করা যায়। ব্রেইন ভাইরাস ১৯৮৭ সালের ১৩ই অক্টোবর আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব ডেলোয়ারে পৃথিবীর সর্বপ্রথম ভাইরাস ধরা পড়ে। এটি যে ডিস্কে আক্রমণ করে সে ডিস্কের FAT নষ্ট করে ফেলে এবং ডিস্ক লেভেল হিসেব ব্রেইন শব্দ লিখে। পাকিস্তানের লাহোরের ব্রেইন কম্পিউটার সার্ভিসেস নামক এক প্রতিষ্ঠানের মালিক দুই ভাই বাসিত আলভি ও আমজাদ আলভী এই ভাইরাস তৈরী করেন।

অবৈধ সফটওয়্যার নকলকারদের সায়েস্তা করার জন্যই ফ্লপি ডিস্কে ভাল প্রোগ্রামের পাশাপাশি এই সফটওয়্যার সরবারাহ করে তারা। বেড বয় ভাইরাস এটি একটি মেমোরি রেসিডেন্ট ভাইরাস। এটি .com ফাইলকে আক্রান্ত করে। এর ফাইল Growth 1001 bytes. এ ভাইরাসটি Encrypted এ ভাইরাসে আক্রান্ত পিসিতে নিন্মের বার্তা দেখায়ঃ The bad boy halt jour system… and The Bad Boy virus. Copyright © 1991. ব্যাটম্যান এটি একটি ফাইল ভাইরাস। এটিও .com ফাইলসমূহকে আক্রান্ত করে।

এ ভাইরাসে আক্রান্ত হার্ডডিস্ক কোন ব্যাচ ফাইল পরিচল করিয়ে দেয়। যেমন: INF.BAT তেঃ @each off rem INF del.INF.COM ব্যচ ফাইলটি যখন রান করে তখন এ ভাইরাস .com ফাইলকে রিনেম করে। বিগ জোক ভাইরাস এটি একটি ফাইল ভাইরাস যা command.com ছাড়া অন্য সব .com ফাইলকে আক্রমণ করে। এটি Growth 1068 bytes সিস্টেমের ক্লক সেকেন্ড কাউন্টার 0 এবং 4 সেকেন্ডের মধ্যে অবস্থান করলে এ ভাইরাস রান করলে পর্দায় প্রদর্শন করেঃ At last…ALIVE!!!!! I guess your PC is infected by The Big Joke Virus Release 4/4-91 Lucky you, this is the kind version Be more careful while duplicating in the future The Big Joke Virus, Killer Version, will strike harder The Big Joke rules forever, ক্রেজি ভাইরাস এটি একটি ট্রোজন ভাইরাস। এ ভাইরাসে আক্রান্ত ফাইল রান করলে একটি জীবন্ত চেহারা পর্দার উপরে বাম কোণায় প্রর্দশিত হয়।

তখন কোন কী চাপলে প্রদর্শিত হয়ঃ Hi, I’m Crazy Daizy! I’m format your harddisk! Say goodbye to Your files!Formating…. এ অবস্থায় হার্ডডিস্কের লাইট প্রদীপ্ত হয়। এ ট্রোজন ভাইরাস ২০০-৪০০ কেবির বৃহৎ বৃহৎ ফাইল ইচ্ছামতো নামে বিভিন্ন লেখাসহ তৈরি করে। অতঃপর প্রদর্শিত হয়ঃ ERROR: No SYSTEM found! No files on drive C: Insert SYSTM disk in drive A: and push any key! নির্দেশ মতো কাজ করলে ভাইরাস সব .exe ফাইলকে Patches করে। Patched প্রোগ্রাম রান করে। কোন কী চাপা হলে দেখায়ঃ Pretty day today – isn’t it? Don’t worry – sing a song! Life isn’t easy! Don’t hate your PC! Lets be friend! - ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.