আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শুরুতে মুচকি হাসি দিয়ে বেলাশেষে ভাগ্যের এ-কী রসিকতা

ঙ আজ সকালে প্রথমে রিকশাযোগে ধোলাইরপাড় থেকে নীলক্ষেত গিয়ে তারপর রিকশা বদলিয়ে আরো খানিক পথ অতিক্রম করে দিনব্যাপী এক সেমিনারে যোগ দেব এমনটাই ভেবেছিলাম । এলার্ম মোতাবেক সকালে উঠে দেখি মেঘলা রাস্তাঘাট কর্দমাক্ত আকাশ থুক্কু মেঘলা আকাশ কাদাময় রাস্তাঘাট । আমার সাড়ে আটটায় পৌঁছানোর কথা, রিকশায় যাব দেখে ঘন্টা দেড়েক আগে সাতটায় বেরোব ভেবেছিলাম । কিন্তু গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে রিকশায় মাথা খানিক নুইয়ে পলিথিন ঢেকে যাওয়া যে কথা আর সিএনজি তে যাওয়া আমার কাছে একই কথা – কারণ এইভাবে রিকশাতে গেলে আমি রিকশা চড়ার মজা পাইনা । সকালে ঘুম একবার ভেঙ্গে গেলে আর ঘুম হয় না, আবার শখ করে রিকশায় চড়া হল না ।

যাইহোক, শেষমেষ সিএনজি অটোরিকশা সই । সিএনজিতে শুক্র শনিবারে সকালে আমার নির্ধারিত গন্তব্যে যেতে ফাঁকা রাস্তায় আধঘন্টার মতন লাগে আর বিশ মিনিট গ্রেস পিরিয়ড এই ভেবে সাড়ে আটটার পঞ্চাশ মিনিট আগে বেরুলাম । এ কী ! স্ট্যান্ডে যেখানে একটু পর পর সিএনজি অটোরিকশা আসে, আজকে কোথায় ? গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে চালকেরা বউয়ের সাথে খুনসুটি খেলছে নাকি হে । রিকশায় গিয়ে দেরিতে পৌঁছানো ঠিক হবে না, তাছাড়া রিকশাও দেখছিনা । তথাকথিত সিটিং (আসলে লোকাল) বাসে ভেঙ্গে ভেঙ্গে একটা ফর্মাল প্রোগ্রামে যাব ? মন সায় দিল না ।

মিনিট পাঁচেক পর দুটি সিএনজি এল, কিন্তু না তারা যাবে না । ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে তারা সটকে পড়ল । ভাবতেছিলাম যদিও কোনমতে একটা পাই, উলটাপালটা ভাড়া গুনতে হবে মাফ নাই । এর মধ্যে হালকা ভারিক্কি কিন্তু সুশ্রী চেহারার একজন মহিলা দৃষ্টিসীমায় ধরা পড়লেন । আমি আড়চোখে চাইলাম কিন্তু আড়াআড়ি হল না , চোখাচোখি হয়ে গেল ।

একটু পরে আরেক সিএনজি অটোরিকশার টিকিটির দেখা মিলল । ব্যাটা টাইমিং ঠিক করতে পারল না । আমার আরেকটু সামনে থামল । আরেকজন মোটামতন ভদ্রলোক দামাদামি শুরু করলেন । ঢাকা কলেজ যাবেন ।

সিএনজিওলা দুইশ টাকা চাইল । আমি গেল সপ্তাহে বৃষ্টিহীন দিনে প্রায় একইরকম সময়ে একশ বিশ টাকায় গিয়েছিলাম । শেষমেষ দফারফা হল একশ পঞ্চাশে । চট করে লোকটিকে বল্লাম, ভাই শেয়ারে যাবেন ? “ নাহ ভাই আমার লোক আছে “ । আমি বল্লাম - ও (গলার ভেতরে কিন্তু অনেকক্ষণ দীর্ঘটান ছিল)।

তাকিয়ে দেখি সেই মহিলাটি উঠছেন । এরপর লোকটি উঠলেন । আমি উদাসভাবে পথের দিকে তাকালাম । হঠাত শুনি পেছন থেকে সেই ভদ্রলোক ডাকছেন – উঠুন । অত্যন্ত স্বল্প সময়ে ফ্রি রাস্তায় আমরা ঢাকা কলেজ ।

আমার আগে নেমেই লোকটি ভাড়া দিয়ে দিলেন । আমি উনাকে টাকা সাধতে গেলেই উনি আমার মানিব্যাগ চেপে ধরে রাখলেন, দিতে দিবেন না । বল্লেন – আমরা তো এম্নিতেই আসতাম । আমি বল্লাম তাতে কি, আমিও তো সিএনজিতে আসতাম । আমি দ্বিতীয়বার টাকা দেবার ট্রাই করেও ব্যর্থ হলাম, উনি আমার হাত ধরে রেখেছেন ।

তৃতীয়বার তাদের আন্তরিকতাকে আর অনুরোধের মুখোমুখি করলাম না । এরপর ভাবলাম হাতে সময় যখন আছে আর আসতে টাকাও যখন খরচ হল না, আর বাকি রাস্তা রিকশা নিয়ে লাভ কি । হাটতে হাটতে যাই, টাকা না খরচ করে এতদূর আসার নতুন রেকর্ড গড়ি । খানিক ঘেমে খানিক নেয়ে পৌঁছালাম । অনুষ্ঠান শুরু হল ।

বক্তা প্রচুর । বিকেলে আরেক পার্টির অনুষ্ঠান থাকায় রক্ষা । আরো দুইজনের বক্তৃতা ছাড়াই অনুষ্ঠান শেষ করে দিতে হল । নাইলে আরো একঘন্টার মামলা ছিল । আমার ডিভিশনের এক পিয়ন এসে বল্ল স্যার যামুগা ? “ যাবা না মানে ? এইখানে থাকলে কখন কোন্ বস কাজ ধরায় দিব ? তাত্তাড়ি যাও “ ।

আমি ভাবলাম একটু পরে নামি কারণ এর ওর সাথে দেখা হচ্ছিল । মজাও করছিলাম । বিকেলে আরেকটি অনুষ্ঠানের ব্যানার ইতিমধ্যে টাঙ্গিয়ে ফেলেছিল । যার সাথেই দেখা হচ্ছিল বল্লাম, ঐ ব্যানারটিকে ধন্যবাদ দিন । কেন ? এই জিজ্ঞাসায় বলছিলাম “কারণ এটার কারণেই তো ঘন্টাখানিক আগে মুক্তি পেলাম ।

“ বেশি মজা কপালে সইল না । দেরি করে নামার খেসারত দিতে হল । রিজিওনাল এক বস আমাকে পেয়ে ধরলেন আর বল্লেন যে কিছু জরুরী ডকুমেন্ট এক্ষুণি চেয়ারম্যানের বাসায় পৌঁছাতে হবে যার বাসা আমার অধীনের দুজন পিয়ন চিনে । যেই পিয়নকে চলে যেতে বলেছিলাম তাকে ফোন দিতে গিয়ে দেখি মোবাইলের চার্জ শেষ । অথচ সকালে আলসেমি করে মনে পড়া সত্ত্বেও চার্জ দেই নাই ।

তাড়াতাড়ি আরেক পিয়নের ফোন দিয়ে তাকে আসতে বল্লাম । মাথা ধরা কারণ সারাদিন প্রত্যেক বক্তার পর্যবেক্ষণ আর সাজেশন নোট করতে হয়েছে । গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে ভিজা অবস্থায় নীলক্ষেতে রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলাম ঃ ধোলাইরপাড় যাবেন ? সে বলল যাব আর যে ভাড়া চাইল তা মূল ভাড়া থেকে দশ টাকা বেশি । দামাদামি না করে উঠে পড়লাম । বাসায় গিয়েই মাথা ধরার অসুধ খাব ।

রিকশা চলছে আমি আধো ঘুম আধো জাগরণে । এই ফাঁকে টিকাটুলি পুলিশ বক্সের বাঁ দিকের গলিতে ঢুকে জ্যামে আটকাতে সম্বিত ফিরল । আমি বল্লাম মেইন রোড ধরে গেলা না কেন ? রিকশাওলা বল্ল সর্টকাট আছে, আমিও জানি আছে এরকম একটা তবে ভাল চিনি না । কিছুক্ষণ পর তার সর্টকাট ভেজাইল্যা মনে হল । আমি জিজ্ঞেস করলাম, ঠিক কইরা কওতো তোমার আসলে কোথায় ভাড়া ঠিক করসিলাম ? সে বল্ল - ক্যান, ধলপুর ।

আমার চিতকার দিতে ইচ্ছা করল । ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.