আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন স্বনামধন্য আস্তিক এবং সংশ্লিষ্ট সিশটেম

একটা টাটকা ঘটনা শেয়ার করি। দিবস- এক। । প্রায় মাসখানেক আগে এক ব্লগার ফেলো মারফত জানতে পারি যে বাংলাদেশি সমকামীদের কিছু অনলাইন কমিউনিটি এবং ফোরাম রয়েছে, আর অবাস্তব হলেও সত্য যে এই সকল কমিউনিটি বা ফোরামে কিছু ধর্মপ্রান মুসলমানও আছে। রীতিমতোন একটা হোঁচট খাই এই কথা শুনে।

আমার শিক্ষাজীবনে বেশ কয়েকটা দেশে থাকার সূত্রে সেইসকল দেশস্থঃ বেশ কিছু বিচিত্র কমিউনিটি বা সোসাইটির ব্যাপারে সম্যক ধারনা লাভ করি। যেমনঃ ট্রান্স-সেক্সুয়াল, গে, লেসবিয়ান, টমবয় এবং আরও কিছু সমমনা সিক্রেট সোসাইটি। যাই হোক তাদের জীবনযাত্রা, ধর্মীয় ও সামাজিক মুল্যবোধ, সংস্কৃতি ইত্যাদি তখন খুব আগ্রহ নিয়ে খেয়াল করি এবং বুঝতে চেষ্টা করি (পাশাপাশি অসংখ্য ডকুমেন্টারি দেখি এবং প্রচুর পড়াশোনাও করি এই ব্যাপারে)। কিন্তু বাংলাদেশের মতোন একটা মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ-জনগোষ্ঠীর দেশে সমকামিতার মতোন স্পর্শকাতর বিষয়ে ধর্মপ্রান মুসলিমদের সংশ্লিষ্টতা তো একেবারেই অদ্ভূত লাগে। যাই হোক “শোনা-কথা”র বাস্তবতা পরখ করতে কয়েকটা সাইটে নিজেকে ছদ্মনামে তালিকাভুক্ত করি এবং তাদের বিভিন্ন রকম যোগাযোগ প্রক্রিয়া, রুচি, মুল্যবোধ, মানসিকতা ইতাদির সাথে পরিচিত হই।

পরিচয় ঘটে অদ্ভূত কিছু পাবলিকের সাথে। এদেরই একজনের নাম, খায়রুল কবির। রাজশাহী নিবাসী, পেশায় চিকিৎসক, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে ২০১১ শিক্ষাবর্ষে পাশ করেন। বেজায় ধার্মিক লোক, নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামায পরেন, গালভর্তি সুন্নতি কায়দায় দাড়ি রেখেছেন। বেজায় আস্তিক মানুষ কিন্তু সমকামী।

তিনি আমার মুঠোফোনে যোগাযোগ করে লাঞ্ছিত হবার ইচ্ছা ব্যাক্ত করেন এবং আমি তাকে আজ বিকেলে বেইলি রোড এর একটি ফাস্টফুড আউটলেটের সামনে আসতে বলি। তাকে দেখে আরেকবার ঝাক্কি খাই। বয়স পঁচিশের একটা যুবক। কথায় কথায় তার বিভিন্ন বৃত্তান্ত জেনে নেই। এরপর কথাবার্তার এক পর্যায়ে আমি হঠাৎ প্রসঙ্গ পাল্টে তাকে বর্তমান এবং চলমান রাজনীতির ব্যাপারে কিছু প্রশ্ন করি এবং তার ব্রেইন-ওয়াশড মানসিকতার একটা পরিস্কার ধারনা পাই।

আমি তাকে আরো জিজ্ঞাসা করি যে, রাজশাহীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মকান্ডের সাথে (যেমন, হাত-পায়ের রগ কাটা, কব্জি কেটে ফেলা, রিক্সার স্পোক কানে ঢুকিয়ে মগজ বের করে ফেলা ইত্যাদি) তার কোনও সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা ? বাইঞ্চোত এর কথা যতই শুনতে থাকি ততই আমার মাথায় শর্ট-সার্কিট হতে থাকে এবং এক পর্যায়ে তাকে আমি বলি যে আপনার দাঁড়ি কেটে ফেলা উচিত। মারাত্মক রিয়্যাক্ট করে ওঠে সে এবং আমাকে জানায় প্রয়োজনে সে শহীদ হতে রাজি আছে কিন্তু দাঁড়ি কাটবেনা। উপায়হীনভাবে আমি তার দাঁড়ি ধরে কানে একটা বোম চটকানা মারি এবং বিদ্যুৎগতিতে তার জিন্সের বেল্টে ধরে ফেলি। ইতিমধ্যে চিৎকার চেঁচামেচি এবং হাতাহাতি দেখে কয়েকজন উৎসুক পথচারি পাশে এসে দাঁড়ায় আর ঘটনা কি জানতে চায়। এইবার আরো একটা লাথি মারি তার বিচিতে এবং তাকে সবিনয় অনুরোধ জানাই উপস্থিত জনতাকে পরিস্থিতির কার্যকারণ ব্যাখ্যা করার জন্য।

একজন বয়স্ক মুরুব্বি মতোন লোক খুব উৎসাহীভাবে মধ্যস্থতা করতে এগিয়ে আসেন। কিন্তু ডাক্তার সাহেবের সমকামি এবং মৌলবাদী কথাবার্তা শুনে উনি বেশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান। এরপর সবাই মিলে আমার মতামত জানতে উৎসাহী হয়। আমি বেশ মুডে বিড়ি টানতে টানতে বলি, “অর দাঁড়ি ফালাইতে হইব, নাইলে আর কোনও কথা নাই”। ডাক্তার সাহেব প্রবল আপত্তি ও অসম্মতি জানাতে থাকে।

আমি সরল সমাধান দেই, চলেন সবাই বাইঞ্চতরে ধইরা সামনের রমনা মডেল থানায় লইয়া যাই। তারপর কয়েকটা টহল পুলিশের সহায়তায় ডাক্তার সাহেবকে নিয়ে যাই থানায়। ডিউটি অফিসার সকল বৃত্তান্ত শুনে এটার সমাধান কি প্রক্রিয়ায় করবে সে ব্যাপারে মোটামুটি কনফিউজড হয়ে যায়। পর্যায়ক্রমে দারোগা সাহেব আসেন এবং উনি আরও কনফিউজড হয়ে যান। আবার সবাই মিলে আমাকে ধরে বসে।

আর আমার সেই একই কথা দাঁড়ি ফালাইতে হইব, নাইলে আর কোনও কথা নাই”। সর্বসম্মত পরামর্শ আসে ও.সি সাহেবের সাথে কথা বলার। আমি রাজি। এরপর ঢুকি ও.সি সাহেবের কামরায়। ততক্ষনে আমার কিছু সাঙ্গপাঙ্গও চলে আসে এবং সাইডলাইন থেকে ফাপড় দিতে থাকে যে “এই শালার মতন নর্থ-সাউথের কয়েকটা মিল্লাই কয়দিন আগে একজনরে জবাই করল”, “শালায় তো মনে হয় রাজশাহী মেডিকেলের শিবির ক্যাডার”, “সুমুন্দির পুতে তো সাকা চৌধুরির জাতভাই”......আরও কত্ত কি !! রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পরও কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারেন না ও.সি সাহেব।

কারন সব কথার শেষে আমার একটাই কথা “অর দাঁড়ি ফালাইতে হইব, নাইলে আর কোনও কথা নাই”। উপায়হীন ও.সি সাহেব এরপর আমাকে পাঠায় সহকারী কমিশনার শিবলী নোমানের কাছে। গেলাম। সব শুনে সহকারী কমিশনার শিবলী নোমান আমার মতামত জানতে চায় আর আমি সেই একই কথা বলি “অর দাঁড়ি ফালাইতে হইব, নাইলে আর কোনও কথা নাই”। অগত্যা নির্ধারিত হয়, ডাক্তার সাহেব আমার প্রস্তাবনায় রাজি না হইলে প্রথমে ফিফটি ফোরে চালান এরপর অবস্থা বিবেচনা মোতাবেক কিছু পেন্ডিং মামলায় বিশেষ বিবেচনা।

আমি দোকানে গিয়ে একটা ওয়ান-টাইম রেজর কিনে আনি। ডাক্তার সাহেব আবার হইচই শুরু করেন। পুনশ্চঃ ডাক্তার সাহেবকে আজকের রাতের জন্য রমনা মডেল থানার গারদে রেখে আসি ভাবনা চিন্তা করার জন্য। আগামীকাল কাল গিয়ে দেখব ওনার কি রকম পরমাত্মিক উন্নতি সাধিত হইলো । দিবস- দুই ।

। সকালে ঘুম ভাঙতেই ফোন পেলাম রমনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ-আলম সাহেবের। আমাকে বেশ আন্তরিক সুরে অনুরোধ করলেন ডাক্তার সাহেবের ব্যাপারটা মিটিয়ে ফেলতে। বেচারা সারারাত গারদে অনেক কষ্টে ছিলো, জানাজানি হলে তার মেডিক্যাল ক্যারিয়ারটা বরবাদ হয়ে যাবে, দোষ তো আপনারও কিছুটা আছে (আপনার সাথে কথোপকথনের ভিত্তিতেই তো ডাক্তার সাহেব এসেছেন, যদিও আমাকে প্রথম ফোনটা ডাক্তার সাহেবই করে), অযথা ঝামেলা করে আর কি লাভ, ব্লাহ ব্লাহ ব্লাহ...। প্রায় দুপুর-নাগাদ গেলাম থানায়, সঙ্গী হলো এক সুহৃদ।

ডিউটি অফিসারের সাথে দেখা করলাম প্রথমে। কথাবার্তায় ওনাকে ডাক্তারের ব্যাপারে বেশ সমব্যাথি মনে হলো। আমাকে নিয়ে গেলেন গারদের সামনে, ডাক্তারকে দেখানোর জন্য। দেখলাম বাইঞ্চত বেশ আরামে ঘুমাচ্ছে আর গরাদে আরো দশবারো জন আসামি। অন্যান্য আসামিদের জিজ্ঞাসা করলাম গতরাতে ডাক্তারের খেয়াল-খবর রেখেছে কিনা ? প্রত্যুত্তরে দেখি সবাই মুখটেপা হাসি দিচ্ছে।

ইতিমধ্যে একজন পুলিশের ডাকে ডাক্তার সাহেব উইঠা আসলো। আমার চোখে চোখ পড়তেই আমার প্রথম জিজ্ঞাসা, “কিও মিয়া, দাঁড়ি ফালাইবেন এখন ?” পরিস্কার অসম্মতি জানায় ডাক্তার। পরবর্তী প্রস্তাবনা দেই, “বাসায় ফোন করেন, কথা বলি”। এটাতেও অসম্মতি। কই যাই রে মমিন ? আবার ফিরে আসি ডিউটি অফিসারের রূমে।

আবারো সেই এক জিজ্ঞাসা, আমি কি চাই ? আমার জবাবও সেই এক- “অর দাঁড়ি ফালাইতে হইব, নাইলে আর কোনও কথা নাই”। আবারো শুরু হয় কনফিউশন। একজন মহিলা দারোগা পেয়ে একটা ভিন্ন মতামতের আশায় তাকে জিজ্ঞাসা করি এই ব্যাপারে তার মতামত কি ? দেখি উনিতো শুধু কনফিউজড’ই না, সেই সাথে বেশ বিব্রত। উপস্থিত সবার মাঝে একমাত্র আমিই বেশ আমোদিত। যাই হোক, একটু সময় নেয়ার কথা বলে বাইরে আসি চা-বিড়ি খাওয়ার জন্য।

আমার সুহৃদ সঙ্গী প্রস্তাব দেয় “চলেন ভাই মান্দার নাতিকে ধইরা কাকরাইল মসজিদ লইয়া যাই”। আমি উদাস বিড়ি ফুঁকি আর বিষয়টা নিয়ে ভাবি। সিদ্ধান্ত নেই থাকুক শালার ভাই গারদে, আমরা যাইয়াই ঘুইরা আসি কাকরাইল থেইকা। জগতে নগদ চইলা গেলাম কাকরাইল মসজিদ। এক খাদেমকে বললাম একটা আইনগত এবং সামাজিক সমস্যার ব্যাপারে কথা বলতে এবং পরামর্শ পেতে চাই।

উনি আমাকে দেখিয়ে দিলেন এক জামাত জটলা’র মাঝের একজনকে। সেই একজন সব শুনে বিব্রত এবং দ্বিধাগ্রস্ত। এবার আমাকে নিয়ে গেলেন মুফতি লেভেলের একজনের কাছে তিনতলার একটা কার্যালয় মতন ঘরে। মুফতি সাহেব সব শুনে বললেন এর সমাধান দেয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়, যেতে হবে আরো দুই ফ্লোর উপরের “আহলে শূরা” কমিটিতে। মাওলানা জুবায়ের, মাওলানা রবিউল হোক, মাওলানা মোশাররফ সহ আরো কিছু শূরা সদস্যের সাথে কথা বললাম।

সর্বসম্মতভাবে আমাকে ওনারা মালিবাগস্থঃ জামিয়াহ শারিয়্যাহঃ ফতোয়া বিভাগে যেতে বললেন। সভা এখানেই সমাপ্ত হল, আর আমরা এরপর মোহাব্বাতের সাথে দুপুরের খানায় ওনাদের মেহমান হলাম। আসলাম মালিবাগে, জামিয়াহ শারিয়্যাহঃ ফতোয়া বিভাগে। অফিস রুমে ঢুকতেই এক বান্ডিল মাওলানার সাথে সাক্ষাত ও পরিচয় ঘটলো। আমাকে বলা হল প্রধান মুফতি সাহেবের সাথে দেখা করতে।

আবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সন্ধানে চললাম উপরের দিকে। প্রধান মুফতি সাহেব সব শুনে বললেন, সমস্যার লিখিত বিবরন সাপেক্ষে সাধারনত ওনারা লিখিত ফতোয়া দিয়ে থাকেন। কিন্তু এই ব্যাপারে আসলে ওনার কিছু বলার নাই, বরং আমারই নাকি উচিৎ ডাক্তারকে ধরে হেদায়াত করা। নগদের উপর আবার শর্ট-সার্কিট খায়া গেলাম। খাড়ার উপরেই বললাম, “মুরুব্বি মানুষ দেইখা বহুত আদব লইয়া শুনলাম আপনের প্যাচাল, হালায় আমার উচিৎ অনুচিত কোন শালায় বুঝানোর রাইট দিসে আপনারে ? এইসব রাজাকারি বয়ান বন কইরা জেনুইন কাহিনী কন”।

উপায়হীনভাবে এবার ফেরত গেলাম জামিয়াহ শারিয়্যাহঃ ফতোয়া বিভাগের অফিস রুমে। অনুরোধ করলাম আরেকজন মুফতির সাথে আলোচনার। আসলেন বেশ কয়েকজন। সবাই মিলে বসলাম গোল হয়ে। বৃত্তান্ত বললাম।

আবার সবাই মিউট হইয়া গেলো। অবশেষে বহু আলাপ আলোচনার পর আমাকে জানানো হলো যে, শরিয়াহ আইন মোতাবেক এর শাস্তি হচ্ছে জ্যান্ত অবস্থায় আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলা, কিন্তু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ যেহেতু ইসলামিক আইনে চলছেনা তাই এর প্রয়োগ অসম্ভব। তাহলে উপায় ? আপনি একটা সামাজিক আন্দোলন শুরু করেন। পারলে আল্লাহর ওয়াস্তে ছাইড়া দেন। নিজেই যা করার কইরা ফেলেন, থানা পুলিশের কাম নাই।

ব্লাহ ব্লাহ ব্লাহ ব্লাহ ব্লাহ...। । মাগার আমার কথা সেই একটাই, “অর দাঁড়ি ফালাইতে হইব, নাইলে আর কোনও কথা নাই”। মজার কথা হইলো আমাকে বেশ কয়েকবার জিজ্ঞাসা করা হলো যে “সে আপনার কেমন আত্মীয় ?” এর মানে কি ? এর মানে একদম সরল। কোনও বাদী পক্ষ যে কোনও রকম সম্পর্ক ছাড়া কারো কোনও ব্যাপারে এতোটা ভাবতে পারে সেইটাই তেনাদের কনসেপ্টে ছিলোনা।

আর আমার কনসেপ্টে এইটা ছিলোনা যে, বাংলাদেশে দাঁড়ি এত্ত...ওওওওওও বড় একটা সাইনবোর্ড হইতে পারে !?!?!? পুনশ্চঃ থানায় জানাইয়া দিলাম যে এই মহান দাঁড়ি এবং দাঁড়িওয়ালা কোনওটার ব্যাপারে আমার আর ইন্টারেশ নাই, ডাক্তার সাহেব রে লইয়া ওনারা (ইন্টার রমনা মডেল থানা) আপন মর্জি মোতাবেক আনন্দ-ফুর্তি করতে পারেন। আমার তরফ থেকে নো অবজেকশন । । সর্বস্বত্ত সংরক্ষনঃ সেরিব্রাল ক্যাকটাস। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.