আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন লোকমান সাহেব এবং দেশের রাজনীতি

দেশ ও দেশের মানুষ এক অদ্ভুত সময়ের মুখোমুখি আজ। এর মধ্যে আমি রাজনৈতিক নেতা, চামচা ইত্যাদি শ্রেণী বাদ দিতে চাই। এরা তো আর আপনার আমার মত মানুষ না। এরা তো অতিমানব। এরা না খেয়ে অথবা দিনের পর দিন শুধু হাওয়া খেয়েই থাকতে পারেন।

আপনি, আমি, আমাদের মত দেশের ভুখা-নাঙ্গা খেটে খাওয়া মানুষগুলো তো আর সেটা পারে না। আমরা না পারি কোটি টাকার চাঁদাবাজি করতে, না পারি কোন কাজে পারসেন্টেজ দাবী করতে। বাঁচতে হলে কাজ করা ছাড়া আমাদের কোন উপায় নেই। অথচ সেই পথগুলোও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। লোকমান সাহেব একটা এনজিওতে চাকরি করতেন।

সেই সুবাদে ঢাকা আসা। ঢাকা এসে ছোটখাটো একটা ব্যাবসাও পেয়ে যান তিনি। ঢাকা থেকে লোকমান সাহেব তার এলাকার এলাকার দোকানগুলোতে কাগজ সাপ্লাই দেয়া শুরু করেন। বছরখানেক চলার পড়ে ব্যাবসাও মোটামুটি জমে উঠে। গ্রামের বাড়ির তার সামান্য জমিটাও বিক্রি করে ব্যাবসাতে লাগান তিনি।

পরিশ্রম, সততা, নিষ্ঠা- সবকিছু মিলিয়ে ব্যাবসাটা খারাপ যাচ্ছিল না। স্ত্রী ও তিন সন্তানকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। চোখে মুখে অনেক স্বপ্ন। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া শেখাবেন। অনেক বড় হবে ওরা।

বড় ছেলেটা অনেক ব্রিলিয়ানট। ট্যালেন্টপুল এ বৃত্তি পেয়েছে। ছোটটারও মাথাটা অনেক ভাল। মেয়েটার বয়স এখন মাত্র দুই। এদের নিয়েই লোকমান সাহেবের নিপাট সংসার।

গত কয়েক মাস ধরে লোকমান সাহেবের সব কিছু তছনছ হয়ে গেছে। হরতাল, অবরোধ, রাজনৈতিক ডামাডোল-এ ব্যাবসা নেই বললেই চলে। মরার উপরে খাঁড়ার ঘা এর মত মালবাহী পিকাপ ভ্যানটা জ্বালিয়ে দেয় পিকেটাররা। পুঁজি, ধন- সবকিছু হারিয়ে এখন সে সর্বস্বান্ত। গ্রামে ফিরে যাবে তারও উপায় নেই।

গ্রামের শেষ সম্বলটুকুও বিক্রি করে দিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন। ছেলের স্কুলের ফী, বাড়ি ভাড়া, সংসারের খরচ এতো সব কোথা থেকে আসবে সেটা জানা নেই লোকমান সাহেবের। প্রচণ্ড রৌদ্রের মধ্যে লোকমান সাহেব হাঁটছেন। তৃষ্ণায় বুকটা ফেটে যাচ্ছে। কোথায় যাবে, কার কাছে যাবে জানা নেই।

গন্তব্যহীন তার হেঁটে চলা। একটা মিছিল এগিয়ে আসতে থাকে কড়া শ্লোগান দিতে দিতে। মিছিলকারীদের চোখে মুখে তীব্র জিঘাংসা। হরতাল হরতাল... আগামীকাল হরতাল... শুন্য চোখে তাকিয়ে থাকে লোকমান সাহেব... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.