আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ট্রানজিটে বাংলাদেশের ক্ষতিই বেশী আর লাভ তো কিছুই দেখি না।

পৃথিবীর বেশীরভাগ দেশের আশপাশেই কয়েকটি দেশ থাকে। তার ভেতর অনেক দেশ আছে যার কোনো সমুদ্র সীমা নেই। ইংরেজীতে তাদের বলে Landlocked country। ফলে সমুদ্রপথে বাণিজ্যের সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে তাদের পার্শ্ববর্তী দেশ যার সমুদ্র সীমা আছে তাদের সাথে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করতে হয়।

আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধিই এই ধরনের কাজের মূল উদ্দেশ্য। ট্রানজিট তাদের মধ্যে একটি সহযোগিতার মাধ্যম। তবে সমুদ্রসীমাই খালি ট্রানজিটকে নিয়ন্ত্রণ করে তা না। আরো অনেক বিষয়ের উপর এটি নির্ভর করে। কিন্তু কোনো দেশই সে সহযোগিতা গ্রহণকারী হোক আর প্রদানকারীই হোক নিজের দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই আপোশ করবে না।

ইদানীং ট্রানজিট নিয়ে খুব আলোচনা হচ্ছে। ভারত যে ট্রানজিট সুবিধা পাবে তা মোটামুটি নিশ্চিত। কিন্তু ট্রানজিটে তাদের কী সুবিধা দেয়া হবে, বিনিময়ে বাংলাদেশ কী পাবে, এতে কার লাভ কতটুকু এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সরকার একদম চুপ। রাষ্ট্র তার ভূমি অন্য একটি রাষ্ট্রকে ব্যবহার করতে দেবে আর রাষ্ট্রের নাগরিকরা সে বিষয়টি নিয়ে নামকাওয়াস্তে জানে এমন হলে তো বলতে হয় গণতন্ত্রের নামে এটা স্বৈরতন্ত্র। নাগরিকদেরকে অন্ধকারে রেখে ভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে চুক্তি করলে তা গণতন্ত্র হয় না।

পত্রিকায় শুধু ট্রানজিটের কথাই শুনি। কিন্তু এতে কী কী সুবিধা দেয়া হচ্ছে তার কোনো উল্লেখ কোথাও পাচ্ছি না। একটু খোলাসা করে বলি। ধরলাম চুক্তিতে লেখা হয়েছে 'ট্রানজিট দেয়া হবে'। তাহলে ভারতে চাইলেই অস্ত্রশস্ত্র থেকে শুরু করে যা খুশি তাই পরিবহন করতে পারবে।

আর আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলার অবস্থা এত ভাল না যে এই অস্ত্রের অপব্যবহার সহজে রোধ করতে পারব। তাছাড়া যদি পার্বত্য অঞ্চলের যারা শান্তিচুক্তি মানতে চায় না তারা যদি এই অস্ত্রের ভাগ পায় তবে গৃহযুদ্ধ বাধতে পারে। সবচেয়ে বেশী দুর্ভোগ পোহাতে হবে সড়কগুলোকে । এমনিতেই দেশের সড়কগুলো বার মাস ভাঙাচোরা থাকে। তার উপর যদি এতে উপরি আরো চাপ প্রয়োগ করা হয় তবে কী অবস্থা হবে আল্লাহ ভাল জানে।

শুনলাম তারা চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করবে। তাহলে বন্দরের উপর চাপ আরো বাড়বে। বন্দরগুলো কী এই চাপ সহ্য করার ক্ষমতা রাখে? তার চেয়ে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর আরো উন্নত করার চেষ্টা করা কী উচিত না? এখন ধরলাম মংলা বন্দরে তাদের জাহাজ আসল। এখন বাকি রাস্তায় এই জাহাজের পণ্য কে পরিবহন করবে? বাংলাদেশ নাকি ভারত। যেই করুক তাকে ফেরী ব্যবহার করতেই হবে।

কারণ খুলনা বরিশাল অঞ্চল থেকে দেশের অন্য অঞ্চলে যেতে হলে ফেরী ছাড়া গতি নেই। তার মানে দাড়াল ফেরীর উপরও চাপ বাড়বে। দেশে কী এত ফেরী আছে যে এই বাড়তি পরিবহনকে সামাল দেবে? সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল ভারতের কী আদৌ ট্রানজিটের প্রয়োজন আছে? এই সুবিধা না পেলে তাদের ক্ষতি কী খুবই বেশী নাকি সুবিধা দিলে আমাদের ক্ষতি বেশী? খবরে দেখলাম বাংলাদেশের সাথে ভারতের বাংলাদেশের সাথে ভারতে বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ৫০০ কোটি ডলারের। বাংলাদেশ ভারতে প্রায় ৫০ কোটি ডলারের মত রপ্তানী করে। আর ভারত থেকে আমদানী করে ৫০০ কোটি ডলারের চেয়েও অনেক বেশী।

তারা আমাদের পণ্য ঢুকতে দেয়না কিন্তু আমাদের জমি ব্যবহার করতে চায়। এটা কোন যুক্তিতে। অনেকেই বলতে পারেন সব কিছুতেই সমস্যা থাকে। তাই আমি খালি সমস্যাগুলো নিয়ে চিন্তা না করে কেন সুবিধাগুলো নিয়ে চিন্তা করছি না? কারণ হল আমাদের তেমন একটা সুবিধা আমি দেখি না। কেউ যদি মনে করেন বাংলাদেশ বেশী সুবিধা পাবে তাহলে দেখিয়ে দিতে পারেন।

মন্তব্যের দরজা খোলা আছে। এসব ট্রানজিট নিয়ে মাথা ঘামিয়ে আমাদের অন্য বিষয় নিয়ে এগিয়ে যাওয়া উচিত। আমার প্রশ্ন উত্তাল পদ্মা মরুভূমি কেন? কেন একটা স্বাধীন দেশের নাগরিকদেরকে বিনা বিচার সীমান্তে মরতে হয়? আমি বুঝি দেশের স্বার্থ। এর বেশী কিছু না। ভারত এমনিতেই বঙ্গোপসাগরের অনেক অংশ নিজের বলে দাবি করছে কিন্তু সেটা নিয়ে এখন পর্যন্ত কিছুই করা যায়নি।

এখন যদি তাদের এত বড় সুবিধা দেয়া হয় তবে কাল যে তারা ঐ অংশের উপর কব্জা করবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? এসব আলোচনা অনেকটা দোকানে গিয়ে কিছু কেনার মত। দোকানী একটা দাম বলে আমি বলি আরেকটা। দুই পক্ষই নিজের স্বার্থ চায়। এখানেও তেমন। ভারত নিজের স্বার্থ দেখবেই।

তাই বলে আমরা যেন নিজেদের স্বার্থ না ভুলি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.