আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একহালি ক্ল্যাসিক মুভির ফাঁকিবাজী রিভিউ

© এই ব্লগের কোন লেখা আংশিক বা সম্পূর্ণ আকারে লেখকের অনুমতি ব্যতীত অন্য কোথাও প্রকাশ করা যাবে না। গত মাসে ব্লগ থেকে বিদায় নিয়াছিলাম কারন সামনে ছিলো জিআরই আর টোফেল এক্সাম। এবং যা হইবার তাহাই হইলো, জিআরইতে বিশাল ডলা খাইয়া পরবর্তীতে টোফেলটায় কোনোমতে উৎরে গেলাম। অনুগ্রহপূর্বক স্কোর জিজ্ঞাসা করিয়া এই অধমকে লজ্জাকূপে নিক্ষেপ করিবেন না। কারণ এরই মধ্যে দূর্বিষহ ছোবলে আমার গোটা শরীরখান বেশ দুব্বল হইয়া পড়িয়াছে।

আর মনের কথাতো বাদই দিলাম। সে যাই হোক, নিজের বিবেক এবং বুদ্ধির কাছে শরণাপন্ন হইয়া ডিসিশান নিলাম কি করে এর হইতে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। আমি ভাই মুভিখোর মানুষ,মুভিই আমার সর্বোৎকৃষ্ট এ্যান্টিবায়োটিক। নিজেকে নিজেই তাই সাজেস্ট করলাম, প্রতিদিন একখান করিয়া সাদাকালো এবং দুইখান করিয়া রঙিন মুভি দেখিতে হইবেক। টানা চারদিন এই থেরাপি কন্টিনিউ করিয়া দেহের শক্তি আস্তে আস্তে যেনো ফিরিয়া পাইতেছি।

তাইতো আজ ভালোবাসার টানে এখানে পোস্টাইতে আসিয়াছি। রঙিন মুভিগুলোর বয়ান নাহয় আরেকদিন দিমু। আজকে আপনাগো চারখান ক্ল্যাসিক মুভির রিভিউ দিমু। একটি ছোট্ট প্যাকেজে সবকয়টার বয়ান। কারণ আগেই কহিয়াছি, দেহের পরিপূর্ণ এনার্জি আজো ফিরিয়া পাইনি।

তাই শরীরে পর্যাপ্ত তেলের অভাবের কারণে একখান টোটাল ফাঁকবাজী পোস্ট নিয়া আমার ব্লগীয় পুনুরুথ্থানের বিসমিল্লাহ শুরু করিলাম। ১। প্রথমে যে মুভিটার কথা বলবো তার নাম হইলো Rope। ডিরেক্টর আর কেউ নন আমার ওস্তাদ আলফ্রেড হিচকক। মুভিটি হইলো হিচককের প্রথম রঙীন সিনেমা।

জিনিসটা চিন্তা করেই তো শিহরণ জাগে। আহা !!!!! যাই হোক,মুভিটি ১৯৪৮ সালের। জেনারটাও টিপিক্যাল হিচককীয়। যাকে বলে Crime প্লাস Mystery। মুভিটির লেংথ মাত্র ১ ঘন্টা ১৫ মিনিট।

কিন্তু এই স্বল্প সময়েই কি টানটান উত্তেজনা। হিচককের মুভিগুলো সর্বদাই দ্যা পারফেক্ট ক্রাইম, দ্যা পারফেক্ট মার্ডার ---এই টাইপো হয়ে থাকে। এই মুভিটিতেও তার কোনোঅংশেই ব্যাতিক্রম ঘটে নি। যাকে বলে পিউরিফাইড হিচকক ড্রামা। মুভিটির প্লট হলো-- দুই বন্ধু মিলে তাদের আরেক বন্ধুকে খুন করে এবং সেই বন্ধুর লাশ তাদের অ্যাপার্টম্যান্টের ডাইনিং টেবিলের ভিতর লুকিয়ে রাখে এবং ঐ একই দিন তারা বেশ কয়েকজন বন্ধু এবং আত্মীয়কে ডিনারে দাওয়াত করে,উদ্দেশ্য একটাই--- তারা পুরো ব্যাপারটাকে একটা চ্যালেন্জ হিসেবে নেয় যে তারা আদৌ "দ্যা পারফেক্ট ক্রাইম" রচনা করতে পারে কিনা !!!!! সবশেষে কি হয় তা নাহয় আপনারা মুভিটা দেখেই জেনে নিয়েন।

মুভি সম্পর্কে একটা মজার ইনফো দিয়ে নিই, গোটা মুভিটি শ্যুট করতে হিচকক মাত্র ১০ টি টেক ইউজ করেন। এইবার হিসাব করুন, এক একটি সিংগেল শট কতো মিনিটব্যাপী ছিলো!!!!! সিম্পলি অসাধারণ !!!!! মুভিটির আইএমডিবি রেটিং ৮.১ এবং টপ ২৫০ তালিকায় এর অবস্থান ২৩৪। আমার পার্সোনাল রেটিং ৮/১০। ২। এই মুভিটি আমার আরেকজন ওস্তাদের।

মুভিটির নাম The Killing। ডিরেক্টর প্লাস রাইটার উভয়েই হইলেন স্ট্যানলি কুবরিক। আর মুভিটির রিলিজটাইম ১৯৫৬ সাল আর রানিংটাইম ৮৫ মিনিট। মুভিটির আইএমডিবি রেটিং ৮.২ আর টপ ২৫০ তালিকায় এর অবস্থান ১৯৬। মুভিটি এককথায় ফাটাফাটি।

জেনারটাও ফাটাফাটি। Crime এবং একইসাথে Film-Noir, আমার সবচেয়ে পছন্দের জেনার। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, ফাটাফাটির মা্ত্রাটাও আমার কাছে অনেক বেশি। যাইহোক, কাহিনীর দিকে একটু চোখ ফেরানো যাক। মুভিটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে আছেন জনি ক্লে যে একজন জেলখাটা আসামী, সে জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর একটা পারফেক্ট ক্রাইমের প্ল্যান করে।

আর তা হলো ঘোড়দৌ্ড় প্রতিযোগীতা থেকে ২ মিলিয়ন ডলার ডাকাতি করবার। এজন্য সে একটা চৌকষ টিম দাঁড় করায়। কিন্তু সেই পারফেক্ট প্ল্যান কি সফল হয়??? দেখতে চাইলে দেখে ফেলুন অনবদ্য এই ক্রাইম-থ্রিলার মুভিটি। BAFTA Awards এ বেস্ট মুভির ক্যাটাগরীতে নমিনেশন পাওয়া এই মুভিটি এককথায় ব্লাডি ব্রিলিয়ান্ট বিশেষকরে এন্ডিংটা। আমার পার্সোনাল রেটিং ৯/১০।

৩। তিন নাম্বারে যেই মুভির কথা বলবো সেটি বেশ কালজয়ী একটা সিনেমা। নাম The Third Man। এটি ১৯৪৯ সালের সিনেমা। Film-Noir এর মধ্যে এইটাকে ওয়ান অফ দ্যা বেস্ট হিসেবে অনেকেই গণ্য করে থাকেন।

তবে পার্সোনালি আমি মুভিটি তেমন একটা এনজয় করিনি। কেনো জানি বেশ শ্লো আর বোরিং লেগেছে। তবে আমার তেমন ভালো না লাগলেও এটির আইএমডিবি রেটিং কিন্তু বেশ ভালো। ৮.৫ রেটিং নিয়ে এটি টপ ২৫০ তালিকায় ৬৭তম স্থানে রয়েছে। এই মুভিটির ডিরেক্টর অলিভার খ্যাত ক্যারল রিড।

রানিংটাইম ১০৪ মিনিট। মুভিটির কাহিনী ভালোই, তবে তেমন সাসপেন্স নেই। বিশেষকরে ওরসন ওয়েলসের অ্যাপিয়ারেন্সের আগ পর্যন্ত খুবই বোরিং লেগেছে। মুভিটির কাহিনী হলো, একজন মাঝারি মানের লেখক Holly Martins ভিয়েনা শহরে আসেন তার এক বন্ধুর কাছে একটি কাজের জন্য। এসেই দেখেন তার বন্ধুটি তার আগেরদিন রহস্যজনকভাবে মারা গেছেন।

শুরু হয়ে যায় ইনভেস্টিগেশান। আর কালক্রমে ঘটতে থাকে অদ্ভূত সব ঘটনা। মুভিটি বেস্ট ডিরেক্টরসহ তিনটি ক্যাটাগরীতে অস্কারের জন্য নমিনেশন পায় এবং Best Cinematography তে অস্কার জিতে নেয়। মুভিটি আমার কাছে মোটামুটি লেগেছে। কারণ বোধহয় একটাই, কাহিনীতে পর্যাপ্ত ক্লাইম্যাক্সের অভাব।

Film-Noir মুভিগুলোতে যদি টানটান ব্যাপার স্যাপার নাই থাকে তাহলে তো পানশে লাগবেই। যাই হোক, আমার পার্সোনাল রেটিং হলো ৭/১০। ৪। সবশেষে যে মুভিটির নাম বলবো এটি ক্ল্যাসিক মুভিগুলোর মধ্যে বেশ বিখ্যাত। মুভিটির নাম The Maltese Falcon।

রিলিজটাইম ১৯৪১। ডিরেক্টরের নামটাও কিন্ত বেশ বিখ্যাত, John Huston। মুভিটির আইএমডিবি রেটিং ৮.৪, এবং টপ ২৫০ তালিকায় এর অবস্থান ১০৪ নাম্বারে। মুভিটির জেনার হলো Crime প্লাস Mystery, একটু Film-Noir ও বলা চলে। কাহিনীটা বেশ জটিল,এতে বেশ ভালোই প্যাঁচ আছে।

একবার দেখে শতভাগ বোঝাটা বেশ দুষ্কর। একটি দামি মুর্তির সন্ধানে তিনজন ক্রিমিনালের সাথে একজন প্রাইভেট ডিটেকটিভের টক্কর নিয়েই মুভিটির কাহিনী আবর্তিত। কেন্দ্রীয় চরিত্রে হামফ্রে বোগার্টের অনবদ্য অভিনয় মুগ্ধ করার মতো। তবে মুভিটা এক্সপেক্ট্যাশানের চেয়ে একটু ডাউন লেগেছে। তবে খারাপ লেগেছে একথা বলবো না।

ভালোই লেগেছে কিন্তু কোথায় কেন জানি মনে হচ্ছিলো মুভিটি আরো বোধহয় ইন্টারেস্টিং হতে পারতো। মুভিটি বেস্ট মুভিসহ তিনটি ক্যাটাগরীতে অস্কারের জন্য নমিনেশন পায়। আমার পার্সোনাল রেটিং ৭.৫/১০। আমার ফাঁকিবাজি পোস্ট এইখানেই শেষ করিলাম----এই অধম বান্দার জন্য দোয়া করিবেন যাতে আমি অতি শীঘ্রই আপনাদের নিকট মানসিক এবং শারীরিকভাবে ১০০% হই্য়া ফেরত আসিতে পারি। বিঃ দ্রঃ ---আমি কোনো মুভির ডাউনলোড লিংক এইখানে দিতে পারিতেছি না বলে দুঃখিত।

কারণ এগুলোর একটাও আমি নিজে ডাউনলোড করি নাই--বড়ো ভাইদের নিকট হইতে কালেক্ট করা। তবু আপনারা যদি ডাউনলোড করতে চান তাহলে http://www.warez-bb.org/ এইখানে একাউন্ট খুলে মুভির নাম দিয়ে সার্চ করে লিংক খুঁজে নিতে পারেন।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।