আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনুগল্পঃ স্বপ্নভঙ্গ

১ খুব টেনশন হচ্ছে শাহেদের। শরীর বেয়ে টপটপ করে ঘাম ঝরছে। এতটা অস্থিরতা কখনো অনুভব করেনি সে। হাসপাতালের একমাথা থেকে আরেকমাথা অকারনেই পায়চারী করে বেড়াচ্ছে। আজ শাহেদের জীবনে ঘটতে যাচ্ছে এক অবিস্মরনীয় ঘটনা।

বাবা হতে যাচ্ছে সে। --“"কনগ্রেচুলেশন মিঃ শাহেদ। আপনার মেয়ে হয়েছে”"। নার্সের কথা শুনে একটু অবাক হল শাহেদ। কদিন আগে স্বপ্নে ঠিক এই কথাটাই কে যেন তাকে বলছিল।

স্বপ্নটা তাহলে সত্যিই হয়ে গেল? স্ত্রী মিতাকে অবশ্য সেদিন হাসতে হাসতে বলেছিল, “"দেইখো আমাদের মেয়ে হবে। আজকে স্বপ্নে এরকম একটা ইঙ্গিত পেলাম”। " মিতা রেগেমেগে বলেছিল, " “কুডাক ডাকবা নাতো! কুডাক ডাকাটা তোমার পুরান অভ্যাস। আমাদের ছেলে হবে। সেদিন দাদী গণনা করে বলছে।

আর তুমি নিশ্চয়ই জানো, দাদীর গণনা কখনো ভুল হয়না”। " --“"আরে বাবা এখানে কুডাক ডাকার কি দেখলা? স্বপ্নে যা দেখলাম তাইতো বললাম। ”" --“"তুমি জানো না, আমার ছেলে বাবুর কত শখ? তোমাকে এই স্বপ্ন কে দেখতে বলছে?”" --“"হাহাহাহা! তুমি এত ভয় পাইতেছো কেনো? তোমার জ্যোতিষ দাদীর উপর না তোমার এত আস্থা!!”" হাসপাতালে নিজ কন্যাকে কোলে নিয়ে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইল শাহেদ। বাবা হওয়ার যে এত সুখ তা হয়ত বাবা না হলে কেউ কোনোদিন বুঝতে পারে না। নিজেকে এই মুহুর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী ব্যক্তি মনে হচ্ছে শাহেদের।

--"“দেখছো মিতা, আমাদের বাবুটা কত সুন্দর হইছে! একদম তোমার মত”। " --“"হুম, ভাগ্যিস তোমার মত হয় নাই। তাইলে আর বিয়ে দিতে পারতা না”। " মিতার কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠল শাহেদ। আজকে কেনো যেন প্রানখুলে শুধু হাসতে ইচ্ছে করছে ওর।

জীবনের যত দুঃখ-কষ্ট আছে সবকিছুকে কবর দিতে ইচ্ছে করছে। ২ অফিসে এখন আর মন টিকে না শাহেদের। কখন বাসায় ফিরবে, কখন আদরের কন্যা অপ্সরাকে একটু দেখবে, ওর তুলতুলে গালগুলোতে একটু আদর করে দিবে শুধু সেই চিন্তাতেই অস্থির থাকে সারাক্ষন। কদিন আগেও অফিস শেষ করে ওর প্রধান কাজ ছিল আড্ডাবাজি। বন্ধু-বান্ধবের সাথে রাত ১০-১১টা পর্যন্ত আড্ডা না মেরে কখনো বাড়ি ফিরত না।

এই নিয়ে অবশ্য বউ-এর সাথে ঝগড়া-জাটি লেগেই থাকত প্রতিদিন। --"“আমার আম্মুটা কই?”" --“"একটু আগে ঘুমাইছে। এখন আর ডাইকো না”। " --“"মিতা, ঠিক করছি মেয়েকে এমআইটি’তে পড়াবো। পড়াশোনার খরচ ছাড়াও ওর সুন্দর একটা ফিউচারের জন্য অনেক টাকা দরকার।

তাই চিন্তা করতেছি চাকরি ছেড়ে ব্যবসা-বানিজ্য শুরু করব”। " --"“তুমি তো ভালো চাকরি করতেছো। ভালো বেতন পাও। দরকার কি ব্যবসা-বানিজ্যের?”" --“"ধুর্...কি যে বলোনা তুমি? চাকরি করে আর কত টাকা কামাবো? আমার মেয়েকে আমি মানুষ করব রাজকন্যার মত...বুঝছ? ওকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন...অনেক!”" ৩ প্রতিদিন অফিস থেকে ফিরেই ৫ বছর বয়সী অপ্সরার হাজারটা অভিযোগ শুনতে হয় শাহেদের। অপ্সরার বেশিরভাগ অভিযোগই ওর মাকে নিয়ে।

মেয়ের অভিযোগগুলো খুব ইন্টারেস্ট নিয়ে শোনে শাহেদ। মাঝে মাঝে স্ত্রী মিতাকে বকা দেয়ার ভান করে। বাবা, মাকে বকা দিচ্ছে এই দৃশ্য দেখে খুব মজা পায় অপ্সরা। মুখ চেপে খিলখিল করে হাসে। --“"মেয়েকে আহ্লাদ দিয়ে দিয়ে যা বানাইতেছো না...ফল কিন্তু ভালো হবে না বুঝছো?”" --“"আমার মেয়েকে নিয়ে এত চিন্তা করতে হবে না তোমার।

আমার অপ্সরা মামনী অনেক লক্ষী একটা মেয়ে”!!" --“"হুম, লক্ষী না ছাই! একটা কথাও শোনে না তোমার মেয়ে। লায় দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলে ফেলতেছো”। " --“"তুমি এরকম ব্যাকডেটেড মা’'দের মত কথা বইলো না তো! বাচ্চা একটা মেয়ে...কি বুঝে ও? ক’দিন পর এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে। ”" ৪ --“"তোমার মেয়ে কিন্তু এখন আর সেই ছোট্টটি নেই। অনেক বড় হইছে।

মেয়ে যখন যা চায় তা দিয়ে দিয়ে যে অভ্যাস করতেছো...একদিন পস্তাতে হবে বলে দিলাম”। " --“"তুমি আসলে সবসময় একটু বেশি চিন্তা করো। “" --“"মোটেও বেশি চিন্তা করিনা। আমি তোমার মত এতটা বেখেয়ালী হতে পারিনা এটাই আমার সমস্যা। মেয়েদেরকে এতটা স্বাধীনতা দেয়া ঠিক না, বুঝছো? তুমি তোমার মেয়েকে যত আধুনিক করেই গড়ে তুলতে চাওনা কেন...আমাদের সমাজ কিন্তু অত আধুনিক না।

এখনো এখানে মেয়েকে মেয়ে হিসেবেই দেখা হয়...কথাটা মাথায় রাইখো”। " --"“আমি ওসব সমাজ টমাজ মানি না। আমার মেয়েকে আমি মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। মেয়ে হিসেবে না। তাছাড়া আমার মেয়ে অন্যায়টা কি করে? বন্ধু-বান্ধবের সাথে লং-ড্রাইভে যায়...গসিপিং করে...এই তো! এখানে নেগেটিভ খোজার কি আছে? তাছাড়া ও'লেভেল পরীক্ষায় কত ভালো একটা রেজাল্ট করছে ও! তুমি অযথা টেনশন করো নাতো! আমার মেয়ের উপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে।

ও একদিন আমাদের সব স্বপ্ন পূরন করবে...তুমি দেখে নিও”। " ৫ অফিসের মিটিং শেষে মিতাকে কমপক্ষে আধাঘন্টা যাবৎ কল দিচ্ছে শাহেদ। ফোন বন্ধ পাচ্ছে। এদিকে অপ্সরাও ফোন ধরছে না। কি হলো কিছুই বুঝতে পারছেনা সে।

তড়িঘড়ি করে বাসার দিকে রওনা দিল। --“"ব্যাপার কি! কি হইছে তোমার? এভাবে কাঁদতেছো কেনো?...কথা বলতেছো না কেন...আজব তো!!”" --"“তোমাকে কতবার বলছিলাম মেয়েকে এত স্বাধীনতা দিও না......এবার মানুষকে মুখ দেখাবা কিভাবে? সবাই তো তোমার মুখে থুতু ফেলবে!”" --“"কেন কি হইছে? কি করছে আমার মেয়ে?” --“"তোমার মেয়ের সেক্স ক্লিপ বের হইছে ইন্টারনেটে...”" --“"কি আবল-তাবল বকতেছো এসব? এটা হতে পারে না! মিথ্যা কথা”!" --“"এটাই সত্যি!! আর এর জন্য তুমিই দায়ী...শুধু তুমি!”" শাহেদের সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছে। বুকে প্রচন্ড ব্যাথা শুরু হয়েছে। মনে হচ্ছে এখনই মারা যাবে...মৃত্যুর আগে শেষবারের মত মেয়েকে দেখে যেতে পারবে তো!! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।