আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনুগল্পঃ বিভ্রাটবিলাশ

আমার ট্রেনে সিট ভাগ্য বরাবরই খুবই করুন। প্রতিবারই ভাবি, পাশের সিটটা এমন কারো দখলে থাকবে যার জন্য দীর্ঘ যাত্রাটা বড়ই সংক্ষিপ্ত মনে হবে! দুরু দুরু বুকে আলাপ শুরু করতে চাইবো... পরিচয় হবে,কথা হবে, যাত্রাটা স্মরণীয় হয়ে যাবে। কিন্তু হতাশ হতে হয়। বেছে বেছে মাঝ বয়সী রস কষ হীন লোক গুলোই আমার পাশে সিট পায়।

আজ খুঁজে খুঁজে সিট বের করে কাছে গিয়ে বুকটা ধ্বক করে উঠলো।

আমার সীটে মেয়েটা বসে আছে খুব আয়েশী ভঙ্গিতে। চুল ছেড়ে দেয়া, হালকা নীল রঙের সেলোয়ার-কামিজ, সাদা ওড়নাটা খুব আলগোছে পড়ে আছে। চেহারায় একটা কোমল ভাব আছে, ট্রেনের জানালার কাঁচের বাইরে দিয়ে এমন সুখী সুখী ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে যেনো এক্ষুনী মজার কিছু একটা ঘটবে।

আমি হালকা করে কাশি দিলাম।

-"এক্সকিউজ মি, এই সিটটা আমার।

" টিকিট বাড়িয়ে দিলাম।
-"আমি জানালার পাশে বসতে চাচ্ছিলাম। সমস্যা হবে?"

কন্ঠ শুনে অবস্থা আরেক দফা করুন হলো। আমি মাথা ঝাঁকিয়ে ব্যাগ গুলো উপরে রেখে সাবধানে বসে পড়লাম। হালকা একটা সুবাস ভেসে আসছে, ,মেয়েটার চকচকে খোলা চুল দেখে মনে হয় যেন এইমাত্র শাওয়ার সেরে বের হলো।

সে এখনো বাইরে তাকিয়ে আছে। আমি একটা পেপার-ব্যাক বই বের করে পড়তে লাগলাম।

-কমলাপুর নামবেন?
-হ্যা, আমার বাসা সেখানেই। আপনি?

মেয়েটা জবাব না দিয়ে মুচকি হাসলো। আমি বিভ্রান্ত।

হাসির কি আছে?

ঘন্টা খানেক পার হয়ে গেছে। আমার কানে হেডফোন। মেয়েটা চোখ বন্ধ করে আছে। আমি তার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকাচ্ছি না। অস্বস্তি লাগে।

আশে পাশের মানুষ ভাবছে আমরা বুঝি কাপল! ভাবুক। খারাপ কি?

হঠাৎ সে চোখ খুলে উঠে বসে বললো,"আমরা কোথায়?"
আমি নিস্পৃহ গলায় বললাম, "জানি না তো"
"ও আচ্ছা"

মেয়েটা কিছুক্ষণ পর তার হাতের ব্যাগ থেকে ছোট একটা বিস্কুটের প্যাকেট বের করলো। নিজে এক পিস নিয়ে আমাকে সাধলো এক পিস। আমি বিনীত ভাবে না বললাম। আম্মু বলেছেন, ট্রেইনে অপরিচিতো কারো দেয়া কিছু না খেতে!

"নাও বলছি" মেয়েটার মুখে তুমি ডাক শুনে আর কন্ঠে এমন কিছু ছিলো আমি বাধ্য ছেলের মত বিস্কিট নিয়ে চিবুতে লাগলাম।



আমি আবার আবেগী ছেলে! কয়েক পিস বিস্কিটের আবেগে মেয়েটাকে ট্রেনের গলাকাটা দামের নাস্তা খাইয়ে ফেললাম। মেয়েটার ভঙ্গি দেখে মনে হলো, সে জানতোই আমি খাওয়াবো!

ট্রেন যত ঢাকার কাছাকাছি আসছে আমার অস্থিরতা বাড়ছে। আলাপ আলোচনা হচ্ছে না, এখনও পরিচিতি টাও হয়নি।

-তুমি রাজশাহীতে পড়?
-নাহ। ঢাকায়।

বাসা রাজশাহী।
-ওহ। আমার আবার বাসা ঢাকায়। আমি রুয়েটে।
-বাহ।

আমি বুয়েটে। এইচ এস সি কোন ইয়ার?
-১১।
- আমিও তো! আমি সিভিলে, তুমি?
-আমি মেকানিকাল।

বুয়েট শুনে মাথা ঝিমঝিম করতেসে। ভয়ানক অবস্থা! সাহস করে জিজ্ঞেসই করে বসলাম।


" আচ্ছা, তোমার নামটা জানা হলো না..."

মেয়েটা মিষ্টি করে হেসে বললো,"পূর্ণা। অন্নপূর্ণা দাশ"
আমি স্থির চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে মেয়েটার মত বললাম,"আমি আসিফ। আসিফ উর রহমান"

ট্রেনের সাদা পোষাকের ওয়েটার এসে বলল,"স্যার,বিল আসছে দুশো ষাট টাকা"
মানিব্যাগ বের করে পাঁচশোটাকার নোট টা দেয়ার সময় যে চিনচিনে ব্যাথা বুকে হয়েছিলো, সেটা এখনো মাঝে মাঝে টের পাই

যাই হোক, পূর্ণা বন্ধু হিসেবে চমৎকার। তার সৌজন্যে বুয়েট সার্কেলে বেশ একটা পরিচিত পেয়েছিলাম। দুশো ষাট টাকা উশুল করেই ছাড়সি।

হুহ
Like · · Share ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।