আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনুগল্পঃ মেহেরবানী

আমিই সেই জন, যাকে খুঁজিয়াছ অকারন...

শীতের সকাল। হিমালয়ের বিষাক্ত নিঃশ্বাসে ভারী বাতাস। বাইরে ঘন কুয়াশা জমাট বেঁধে আছে। ঘড়ির কাঁটার মাথায় চেপে বেলা কম না হলেও কাপুরুষ সূর্যটা ফরেন খেয়ে মাতাল হওয়া বালকের মত চুপটি করে পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছে হয়ত।
ছেলেটাও ঘুমাচ্ছিল।

ভুরু কুঁচকে একচোখ খুলে গালিটা দেয়ার আগপর্যন্ত ঘুমাচ্ছিল সে। এবং গালিটা দিয়ে আবারো ঘুমানোর চেষ্টা করল। এই শীতের ভেজা ভেজা সকালে লেপের নিচের উমটার আবেদন সর্বজনীন। এ মায়ার কাছে প্রেয়সীর কোমল হাতের মায়াও নস্যি। জগতটা এখানে খুব বেশি আবেদনময়।



'শালার ফকির। খোদা, একটু ঘুমাতেও পারব না? এ কি অবিচার!'
ছেলেটা খোদার উদ্দেশ্যে আরো কিছু বিড়বিড় করে হয়ত, ঠিকভাবে বোঝা যায় না। অতঃপর সে তার ভেঙ্গে যাওয়া ঘুম জোড়া লাগানোর আশায় মাথাটাও লেপের গর্ভে বিলীন করে দেয়। তবে তার উশখুশ দেখে বোঝা যায় যে ব্যাপারটায় খুব একটা সুবিধা করা যাচ্ছে না। ভেঙ্গে যাওয়া ঘুম অনেকটা ভেঙ্গে যাওয়া সম্পর্কের মত।

সহজে জোড়া লাগে না।

ঈশ্বরের করা অবিচারের কথা জানতে হলে আপনাকে তার রুমের লাগোয়া বারান্দাটা থেকে নিচের রাস্তাটার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। মোটামুটি ব্যস্ত একটা রাস্তা। রাস্তার বুকে শীতগ্রস্ত মানুষের যাতায়াত। পথচারীরা দ্রুত পা চালায়।

হয়ত তাদের তাড়া থাকে, অথবা হয়ত শরীর থেকে শীতের প্রলেপ মুছে ফেলার চেষ্টা। মাথাটা একটু কাত করে রাস্তার ডানদিকে তাকালেই দেখা যাবে বৃদ্ধটাকে। আর যদি কান বন্ধ করে না থাকেন তাহলে এতক্ষনে তার উচ্চকন্ঠের গানও আপনার কানে আসার কথা। অন্ধবৃদ্ধ এক হাত লাঠিতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এককোনে। সামনে বাঁড়ানো তার আরেকটাহাত এবং সেই হাতে একটা দুইটাকা ও কয়েকটা চকচকে পয়সা দেখে সহজেই বোঝা যায় পেশায় সে একজন ভিক্ষুক।

গান গেয়ে ভিক্ষা করছে। পাতলা আর ছেঁড়া চাদরের নিচে ইতিউতি কাঁপছে শরীর। শুধু গলাটা কাঁপছে না। সটান ভরাট কন্ঠটা গেয়ে যায়। সুরের হেরফের হচ্ছে না।

ভিক্ষুকদের গানের কথাগুলো সাধারনত কিছুটা বিকৃত থাকে। এর গানের কথাগুলোও স্পষ্ট, জড়ানো না।
'এই সুন্দর ফুল, সুন্দর ফল
মিঠা নদীর পানি
খোদা...
তোমার মেহেরবানী... খোদা...'

সেইসময়টাতে কাছেপিঠে আরেক জায়গাতেও খোদাকে স্মরন করা হয়। তবে তা লেপের ভেতর নীচুকন্ঠে। আর বিরক্তিমেশানো।


'হায়রে খোদা... ঘুমটা... '


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।