আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

[ইতিহাসের এই দিনে] শহীদ রুমী এবং তার সহযোদ্ধারা পাকবাহিনীর হাতে ধরা পড়েন (২৯শে আগস্ট, ১৯৭১)

হা হা হা পায় যে হাসি!!! /* এই পোস্ট ঢাকা অপারেশনের ইতিহাস বা একাত্তরের দিনগুলি বইয়ের রিভিউ না। */ শাবাশ বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়! জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়। জাহানার ইমামের একাত্তরের দিনগুলি মুক্তিযুদ্ধের উপর রচিত প্রথম বই তো অবশ্যই নয়, এমনকি এটি কোন পূর্নাঙ্গ ইতিহাসের বইও নয়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সর্বাধিক পঠিত বই বোধহয় অনায়াসেই দাবি করা যায়। টা প্রথম প্রকাশিত হয় '৮৬ সালের একুশে বইমেলায় এবং প্রকাশের সাথে সাথেই তুমুল জনপ্রিয় ও আলোচিত হয় (ধন্যবাদ ব্লগার কাঊসার রুশোকে প্রকাশসালটা নিশ্চিত করার জন্য)।

এক মায়ের সহজ-সরল ভাষায় লেখা তার শহীদ পুত্রের স্মৃতিচারন আর তার ফাঁকে ফাঁকে যুদ্ধকালীন সময়ের দমবন্ধকরা পরিবেশের বর্ননা পাঠকসমাজ সাদরে গ্রহন করে নেয়। জাহানারা ইমাম উপাধি পান "শহীদ জননী"। বইটা পড়েননি, শিক্ষিত সমাজে এমন মানুষ বিরল। তবুও একটা সংক্ষিপ্ত বর্ননা দিয়ে সবার একবার স্মৃতিকে ঝালিয়ে নিতে চাই। এটা মূলত লেখিকার ৭১ সালের পয়লা মার্চ থেকে আঠারই ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের ব্যক্তিগত দিনপঞ্জি।

বই প্রকাশের আগে অবশ্য তিনি তার আসল দিনপঞ্জিটার কিছু কাঁটাছেড়া করেছেন। সদ্য ইন্টারমিডিয়েট পাস বড় ছেলে রুমী বাবা-মায়ের অনুমতি নিয়ে তাদের সহযোগিতায়ই ৭ই মে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেবার জন্য রওনা হন। কিছু সমস্যার কারনে আবার ১১ই মে ফিরে আসতে বাধ্য হলেও শেষ পর্যন্ত পাকাপাকিভাবে ১৪ই জুন চলে যান। মুক্তিবাহিনীর হাইকমান্ড ঢাকাতে অব্যহত গেরিলা আক্রমন চালানোর সিদ্ধান্ত নিলে ঢাকার মুক্তিযোদ্ধার বিরাট গ্রুপ আগস্ট মাসের দিকে রাজধানীতে প্রবেশ করে। রুমীও এই গ্রুপের সাথে ৮ই আগস্ট ঢাকা ফিরে নিজেদের বাড়িতেই ওঠে।

অনেকগুলি ছোটবড় অপারেশনের মাধ্যমে পাকবাহিনীর জন্য যথেষ্ট ভোগান্তি সৃষ্টির পর দূর্ভাগ্যক্রমে রুমী এবং বিভিন্ন স্থানে অবস্থানকারী তার দলের বহু মুক্তিযোদ্ধা ২৯শে আগস্ট রাতে প্রায় একই সময় ধরা পড়ে যায়। রুমীর সাথে তার বাবা এবং ছোট ভাই জামীকেও ধরে নিয়ে যায়, তবে ৩১ তারিখেই তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। ৩০ তারিখ দুপুরে তারা শেষবার রুমীকে দেখেছিল। এরপর রুমীর আর কোন খবর পাওয়া যায়নি। ছেলে হারানোর শোক রুমীর বাবা শরীফ সাহেব খুব বেশি সহ্য করতে পারেননি।

স্বাধীনতার ঠিক আগমুহুর্তে ১৩ই ডিসেম্বর তিনি মারা যান। এ ধরনের একটা কাল্ট বই থেকে কালজয়ী নাটক বা সিনেমা তৈরী হতে পারত। কিন্তু দূর্ভাগ্য আমাদের যে তেমন কেউ সেই চেষ্টা করলেন না। খুব সম্ভব ৯৬ সালে বা তার আশেপাশে বিটিভিতে বইয়ের প্রথম কিছু অংশ নিয়ে একটা সাপ্তাহিক নাটক নির্মান করা হয়। শহীদুজ্জামান সেলিম রুমী চরিত্রে অভিনয় করেন।

একে তো নাটকটা ছিল বইয়ের খন্ডিতাংশ, তার উপর ৯৬তে সেলিমের বয়স ছিল ৭১এ রুমীর বয়সের প্রায় দ্বিগুন। এছাড়া দুর্বল নির্মানশৈলীর কারনে দর্শকের বিরক্তি উৎপাদন ছাড়া এই নাটকের তেমন কোন সাফল্য নাই। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রুমী কোন সারির ছিলেন সেটা আমি জানি না। যুদ্ধ শেষে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে তিনি কোন পদক/উপাধি পাননি। স্বাধীনতা যুদ্ধের ৩০ লক্ষ শহীদের মধ্যে কতজন সরাসরি মুক্তিযোদ্ধা সেটাও আমার জানা নাই।

শুধু আলোচনার সুবিধার্থে আন্দাজ করে নিচ্ছি সংখ্যাটা ৫০ হাজারের মত। এই অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা শহীদের মৃত্যুদিবস বা গ্রেফতার দিবস মনে রাখা বাস্তবে সম্ভব না। তাহলে এই ২৯শে আগস্টের তাৎপর্য কি? স্বাধীনতার ১৫-১৬ বছর পর অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনে ব্যর্থতা আর দালাল-রাজাকারদের পূনর্বাসন ও ক্ষমতার শীর্ষে আরোহনের পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার যখন প্রায় মৃত্যু ঘটছিল, সেই সময় রুমীর এই কাহিনী আমাদেরকে তীব্র একটা ঝাঁকুনি দিয়ে মনে করিয়ে দিয়েছিল আমাদের পূর্বপ্রজন্মের আত্মত্যাগ, সাহসিকতা আর দেশপ্রেমের কথা। রুমী এখন আর একজন ব্যক্তি নন, তিনি একটা প্রতীক। যেসব মুক্তিযোদ্ধা ধরা পড়ে ভয়াবহ টর্চারের মুখোমুখি হয়েছিলেন বা টর্চারের ফলে শহীদ হয়েছেন, তাদের সবার প্রতীক হয়ে উঠেন রুমী।

আজকের এই দিনটাকে স্মরন করার মাধ্যমে আমরা তাদের সবাইকে একযোগে সম্মান জানাতে পারি। পুনশ্চঃ একই বছর বা কাছাকাছি সময়েই শফিক আহমেদের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় "একাত্তরের ঘাতক ও দালালরা কে কোথায়" (প্রকাশের অল্পদিনের মাথায় নিষিদ্ধ ঘোষিত)। এই বইতে দালালের তালিকায় ৭১ সালে রোকেয়া হলের প্রভোস্ট আখতার ইমামের নাম আছে। নামের মিল থাকার কারনেই হোক অথবা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শিবিরের চক্রান্তেই হোক, গুজব ছড়ায় যে এই আখতাম ইমাম জাহানারা ইমামের মা। অনেকেই এটা বিশ্বাস করতেন, যারা বিশ্বাস করতেন না তাদের মধ্যেও একটু দ্বিধা ছিল।

একাত্তরের দিনগুলি বইটাতে জাহানারা ইমামের মায়ের কথা বহুবার উল্লেখ আছে, বর্ননায় একজন সাধারন গৃহবধু বলেই মনে হয়। খুব দুর্বল সংবাদপত্র বা অন্যান্য গনমাধ্যমগুলি এই গুজবের সত্যতা যাচাইয়ের কোন চেষ্টা করেনি। অনেক পরে নব্বই দশকের শুরুর দিকে কোন এক পত্রিকায় এই গুজবকে সম্পূর্ন ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করা হয়।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।