আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা যখন তিরস্কৃত হন

রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা যখন তিরস্কৃত হন ফকির ইলিয়াস =================================== একটি ছোট খবর। ‘অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় কাঁচামরিচ ও শিম ছিনতাই করেছে দুর্বৃত্তরা। দহকোলা গ্রামের কাঁচামাল ব্যবসায়ী গোলাম নবী সাংবাদিকদের জানান, উপজেলার মদনডাঙ্গা সবজি বাজার থেকে ১৭০ টাকা কেজি দরে ৮৬৫ কেজি কাঁচামরিচ ও ৯৫ টাকা দরে ৪০০ কেজি শিম কিনে আলমসাধুতে (ইঞ্জিনচালিত যানবাহন) করে ঝিনাইদহ নিয়ে যাচ্ছিলেন। ২৩ আগস্ট দুপুর দেড়টার দিকে বড়দাহ সেতুর ওপর ১০-১২ দুর্বৃত্ত তাদের গতিরোধ করে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে সব কাঁচামরিচ ও শিম নিয়ে যায়। শৈলকুপা থানার ওসি ছগির মিয়া সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

’ প্রিয় পাঠক, পরিস্থিতি কতোটা মারাত্মক হলে কাঁচামরিচ ছিনতাই হয়! না বর্তমান সরকারের শীর্ষমহল তা অনুধাবন করছেন বলে মনে হয় না। যদি করতেন, তবে তারা এমন বড় বড় বুলি আওড়াতেন না। আমরা প্রকাশিত সংবাদে দেখেছি, সড়ক ব্যবস্থা নিয়ে ব্যাপক অসন্তোষের কারণে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক বৈঠকে মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও সড়ক বিভাগের সচিব মোজাম্মেল হক খানকে তিরস্কার করেছেন শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, দেশের অভ্যন্তরীণ পরিচালনা কাঠামো কতোটা ভেঙে পড়েছে। এর জন্য দায়ী কে? কেন এই বিপর্যয়? যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহালদশার জন্য জাতীয় সংসদে দুঃখ প্রকাশ করেছেন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন।

তিনি আরো বলেছেন, ‘পবিত্র ঈদ পালনে মানুষের যাতায়াতের কোনো অসুবিধা হবে না। অর্থমন্ত্রী রাজি হলে সারা দেশের রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন ও সংস্কারে দাতা দেশগুলোর কাছ থেকে সাহায্য নেয়া হবে। ’ তার ভাষায়- ‘সড়ক-মহাসড়কের দুর্দশার জন্য মন্ত্রী হিসেবে আমি দুঃখিত। তবে আমার সীমাবদ্ধতার কথা সবাইকে বুঝতে হবে। ঈদের আগেই সব রাস্তা পরিপূর্ণ সংস্কার করতে না পারলেও যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে তোলা হবে।

এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। ’ কথা হচ্ছে, গেলো আড়াই বছর তারা ছিলেন কোথায়? মহাসড়কের এমন অবস্থা তো একমাসে হয়নি। কেন শেষ সময়ে এসে সবকিছু করার তাগিদ দিতে হয় ? যোগাযোগমন্ত্রী জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন, ‘আমরা বড় প্রকল্পগুলো বিদেশী সহযোগিতায় সম্পন্ন করছি। সারা দেশে সড়ক-মহাসড়কগুলো মেরামত করতে এ বছর প্রায় পাঁচ হাজার ১০০ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। অর্থমন্ত্রী যদি রাজি হন, তবে আমরা এ টাকা দাতা সংস্থার কাছ থেকে সংগ্রহ করতে পারবো।

আর এটা আনা সম্ভব হলে আগামীতে দেশের কোনো রাস্তা আর কখনো নষ্ট হবে না। সারা দেশের রাস্তাঘাটের আমূল পরিবর্তন করা সম্ভব হবে। ’ দেশবাসী একটা বিষয় স্পষ্ট লক্ষ করছেন, মন্ত্রী ও নেতাদের মাঝে চরম সমন্বয়হীনতা চলছে। কোনো কোনো নেতা দাঁড়াচ্ছেন, মন্ত্রীদের বক্তব্যের বিরুদ্ধে। সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু বর্তমান আইন প্রতিমন্ত্রী এড. কামরুল ইসলামকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যদি নিরাপদে না থাকেন, তাহলে আপনারা কী করতে আছেন।

মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিন। অতিরিক্ত কথা বলবেন না। ’ ২৩ আগস্ট মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের উদ্যোগে ২১ আগস্ট শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। এর আগে অন্য একটি সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘ব্যর্থতার দায়ে অমুক মন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত, অমুক মন্ত্রীকে বাদ দিতে হবে। সরাসরি এ ধরনের কথা আমি বলি না, বলতে বিব্রত বোধ করি।

কারণ বললে মানুষ মনে করবে মন্ত্রী হতে পারিনি বলে নিজস্ব ক্ষোভ থেকে এসব কথা বলছি। কোনো কোনো মন্ত্রীর ব্যর্থতা নিয়ে সংসদের ভেতর-বাইরে যে আলোচনা-সমালোচনা চলছে, আমি বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের অনুভূতির খবর রাখেন। জনগণের অনুভূতির প্রতি দায়িত্ববোধের তাগিদ সম্পর্কে তিনি ওয়াকিবহাল। আমার বিশ্বাস, প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই অবিলম্বে জনগণের চাওয়ার অনুকূলেই প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেবেন। শুধু বলবো, ওয়েট এন্ড সি, ধৈর্য ধরুন এবং দেখুন।

’ তিনি বলেন, জনগণ প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে দলের ও সরকারের বিচার-বিশ্লেষণ করছে। অনেকে বলছেন, গণবিস্ফোরণ ঘটবে, কিন্তু আমি এতে বিশ্বাস করি না। তবে হ্যাঁ আমি এটা বিশ্বাস করি- মানুষ নীরব বিপ্লব ঘটিয়ে দেয়, ব্যালটের মাধ্যমে। যেমনটি করেছিল ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর। সেদিন জনগণ আমাদের পক্ষে যেমন বিপ্লব ঘটিয়েছে, এখন ব্যর্থ হলে ঠিক একইভাবে বিপক্ষে বিপ্লব ঘটাবে।

ইতিহাস তো তা-ই বলে। কয়েকজন মন্ত্রীর কর্মকা- ও অতিকথনের তীব্র সমালোচনা করেন এই নেতা। তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের অর্থমন্ত্রী বললেন ‘ফটকাবাজ’। কিন্তু মন্ত্রীর বোঝা উচিত, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা নয় বরং যারা কারসাজি করে মানুষের টাকা লুটে নিয়েছে, তারাই ফটকাবাজ। তিনি বলেন, ভারত-পাকিস্তানেও বর্তমানে নিত্যপণ্যের দাম চড়া।

তাই বলে কোনো মন্ত্রী জনগণকে বলতে পারেন না, ‘একদিন বাজারে যাবেন না’ কিংবা ‘কম খান’। আরেক মন্ত্রী বলছেন ‘রাস্তাঘাটের অবস্থা ঠিক আছে, কোনো সমস্যা নেই। ’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন ‘শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে, একথা বলে কেউ কেউ আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন। এর আগে যখন তার ওপর আক্রমণ হয়েছে, আমরা কি আগে আশঙ্কা করতে পেরেছি।

প্রধানমন্ত্রীকে আমাদেরই বাঁচাতে হবে। আমরা ক্ষমতায় আছি । আতঙ্ক না ছড়িয়ে আমাদেরই দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিদ্র করা। ’ দেশের শীর্ষস্থানীয়দের বাক্যবাণ থেকে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারছেন গোটা দেশ এক অশুভ সময়ের মুখোমুখি। দেশের অবকাঠামো ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

কোথাও কোনো সুস্থ বোধের উন্মেষ নেই। মনে রাখা দরকার, অস্ত্রবাজ সন্ত্রাসীকে মদদ দেয়া আর প্রশিক্ষণবিহীন চালককে রাস্তায় নামানো একই সমান্তরাল অপরাধ। দেশে এতোগুলো শ্রমিক ইউনিয়ন, ট্রেড ইউনিয়ন রয়েছে। এরা চাইলে দেশের যুবসমাজকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ ড্রাইভার বানাতে পারেন। তারা তা করছেন না কেন? একটা দেশ কারো একার পক্ষে গড়ে তোলা সম্ভব নয়।

এজন্য চাই সম্মিলিত উদ্যোগ। সরকার ও জনগণ যে যে অবস্থানে আছেন সবাইকে হাত প্রসারিত করে এগিয়ে আসতে হবে। বিদেশের রাজনীতি থেকে আমাদের রাজনীতিকরা অনেক উচ্চাভিলাষ ধারণ করেন। তারা বিদেশের রাজনীতিকদের অধ্যবসায় ধারণ করতে কার্পণ্য করেন কেন? আরো একটি খবর চমকে দিয়েছে দেশবাসীকে। যারা রক্ষক, তারাই ভক্ষক-চাঁদাবাজ হয়ে নেমেছে প্রকাশ্যে।

রাজশাহীতে চিকিৎসকের বাড়িতে চাঁদাবাজির ঘটনায় রাজশাহী মহানগর পুলিশ সদর দপ্তরের অভিযুক্ত সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) তৌফিকসহ আট পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে রাজপাড়া থানা পুলিশ। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের আবেদন জানিয়ে আদালতে চালান দেয়া হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মহানগরীর রাজপাড়া থানার ওসি মোকাররম হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে- এসি তৌফিকুল ইসলাম, রাজপাড়া থানার দুই এসআই যথাক্রমে মতিউর রহমান ও মাসুদ রানা এবং এসি তৌফিকের গাড়িচালক কনস্টেবল আক্তার হোসেন, সুজন, আতিকুর রহমান, গোলাম মোস্তফা ও ইসলাম আলী। এর আগে একই অভিযোগে বৃহস্পতিবার এসি তৌফিককে চলতি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি এবং অন্যদের পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মহানগরীর রাজপাড়া থানার ওসি মোকাররম হোসেন জানান, ঘটনার পর তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করার জন্য পুলিশের তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এরই মধ্যে বাদী পুলিশ কমিশনারের কাছে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। পরে তদন্ত কমিটি ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় মহানগর পুলিশ কমিশনার এম ওবাইদুল্লাহর নির্দেশে বাদীর সেই অভিযোগটিই সোমবার মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়। ওই মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয় এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের সময় চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। খবরে জানা গেছে, গত ১৭ আগস্ট সন্ধ্যায় তল্লাশির নামে আরএমপির সহকারী কমিশনার (সদর) তৌফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল সাদা পোশাকে নগরীর ঝাউতলা মিঠুর মোড় এলাকায় ডা. আবদুর রফিক বাসুনিয়ার বাড়িতে যায়।

তার বাড়িতে ভারত থেকে আনা অবৈধ রসুন মজুদ রয়েছে বলে তল্লাশির নামে তারা বাসায় প্রবেশ করে। সে সময় ওই বাসায় ডা. বাসুনিয়া এবং তার সহধর্মিণী ডা. ফাতেমা জাহানারা ছিলেন। এ সময় তারা বাড়ি তল্লাশির নামে বাড়িতে থাকা এক লাখ টাকা নিয়ে সটকে পড়ে। এসব ঘটনা রাষ্ট্রের অশুভ শক্তিচক্রকে প্ররোচনা দিচ্ছে। এরা সাহস পাচ্ছে আরো অপরাধের।

এগুলোকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যদি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে চালাতে চায় তবে ভুল করবে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ছাড়া এই দুষ্টচক্রের হাত থেকে সরকার ও জনগণের বাঁচার উপায় নাই। কারণ আজ প্রধানমন্ত্রী তার নীতিনির্ধারকদের তিরস্কার করছেন। ভোটের সময় এলে দেশের মানুষ তাদের ভোটশক্তি দিয়ে জমানো তিরস্কার চরমভাবেই প্রকাশ করতে বাধ্য হবে। সুপ্রিয় পাঠক-পঠিকা, সিয়াম সাধনার পবিত্র মাস শেষে পবিত্র ঈদুল ফিতর সমাগত।

ঈদ সবার জন্য শান্তি বয়ে আনুক। সবার জীবন নিরাপদ, আনন্দময় হোক। ঈদ মোবারক। নিউইয়র্ক ২৪ আগস্ট ২০১১ -------------------------------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ / ঢাকা । ২৭ আগস্ট ২০১১ শনিবার ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.