আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দ্বীনের প্রতি ভালবাসা স্বজনদের প্রতি ভালবাসার চাইতে গুরুত্বপূর্ণ

দ্বীনের প্রতি ভালবাসা আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি ভালবাসার চেয়ে বেশি গভীর হতে হবে এটাই ঈমানের দাবি। এ দাবি পূরণ করতে সাহাবাগণ যে নজির সৃষ্টি করেছেন তা অনন্তকাল ধরে ঈমানী চেতনার উৎস হয়ে থাকবে। দ্বীনের প্রতি গভীর ভালবাসা কিভাবে রক্তের সম্পর্ককে তুচ্ছ জ্ঞান করে তার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন হযরত আবু উবায়দা ইবনুজ-জাররাহ্ (রাঃ)। ইসলাম প্রচারের প্রথম ভাগেই যারা মুসলমান হয়েছিলেন হযরত আবু উবায়দা ছিলেন তাদের অন্যতম। মক্কায় মুসলমানদের তিক্ত অভিজ্ঞতার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আবু উবায়দা শরীক ছিলেন।

প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ)-এর প্রতি বিশ্বাস ও ভালবাসার চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। বদর যুদ্ধের দিন ঈমানের দাবি পূরণে তিনি যে কঠোর পরীক্ষায় কামিয়াব হলেন তা সাধারণ ধ্যান-ধারণা ও কল্পনার ঊর্ধ্বে। যুদ্ধের ময়দানে তিনি নিজের জীবনের মমতা ত্যাগ করে কাফিরদের প্রতি বেপরোয়াভাবে আক্রমণ চালাতে থাকেন। উবায়দার সিংহবিক্রম আক্রমণের মুখে কাফেররা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে, তাদের অশ্বারোহী সৈনিকরা প্রাণের ভয়ে দিশেহারা হয়ে পালাতে থাকে। এমন একরকম অবস্থায় শুরু হয় এক কঠিন পরীক্ষা।

শত্রু পক্ষের এক ব্যক্তি বারবার ঘুরেফিরে উবায়দার সামনে এসে দাঁড়াতে লাগল। হযরত আবু উবায়দা ইচ্ছা করেই বারবার তার সাক্ষাৎ এড়িয়ে যেতে লাগলেন। এক সময় লোকটি শত্রুপক্ষ ও আবু উবায়দার মাঝখানে এসে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াল। এবার আবু উবায়দা আর দেরী করলেন না। তার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেল।

তিনি আর তরবারির আঘাতে লোকটির মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেললেন। লোকটি মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। আবু উবায়দা বিজয়ী হলেন ঈমানের অগ্নিপরীক্ষায়। কার মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেললেন আবু উবায়দা? সে আর কেউ নয়, সে ছিল উবায়দারই পিতা আবদুল্লাহ ইবনুজ-জাররাহ। আল্লাহর কাছে আবু উবায়দার এ কাজটি পছন্দনীয় হল।

কারণ, আবু উবায়দা তার পিতার মহববতের চেয়ে আল্লাহর মহববত তথা দ্বীনের মহববতকে অধিকতর প্রাধান্য দিয়ে ছিলেন। তিনি তার পিতাকে হত্যা করেননি বরং হত্যা করেছেন পিতার আকৃতিতে শেরক ও কুফরীকে। আল্লাহর প্রতি তার দৃঢ় ঈমান, দ্বীনের প্রতি নিষ্ঠা তার মধ্যে এমনভাবে প্রকাশিত হয়েছিল যে তা দেখে অনেক মহান ব্যক্তিও ঈর্ষা পোষণ করেছিলেন। আল্লাহ আবু উবায়দার এ আচরণের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করে নাযিল করলেন, ‘‘তোমরা কখনো এমনটি দেখতে পাবে না যে, আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমানদার লোকেরা কখনো তাদের প্রতি ভালবাসা পোষণ করে যারা- আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করেছে- তারা তাদের পিতাই হোক কিংবা তাদের পুত্রই হোক বা ভাই হোক অথবা হোক তাদের বংশ পরিবারের লোক। ’’ (আল মুজাদালা) এই সেই আবু উবায়দা যিনি উহুদের যুদ্ধে বুক পেতে রাসূলকে মুশরিকদের তীর থেকে রক্ষা করেছিলেন।

এই সেই আবু উবায়দা যিনি রাসূলের গন্ডদেশে বিদ্ধ হওয়া দু'টি লোহার বেড়ি দাঁত দিয়ে কামড়ে তুলতে গিয়ে তার দু'টি দাঁতকে ভেঙ্গে ফেললেন। ইসলাম গ্রহণের পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আবু উবায়দা সর্বক্ষেত্রে ছায়ার ন্যায় সর্বদা তাকে অনুসরণ করেছিলেন। দ্বীনের প্রতি ভালবাসা ও ঈমানের প্রতি এমন অবিচল নিষ্ঠার কারণেই তার শানে রাসূল (সাঃ) বলেছিলেন, ‘‘প্রত্যেক জাতির একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি আছে, আর এ মুসলিম জাতির পরম বিশ্বস্ত ব্যক্তি আবু উবায়দা। ’’ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.