আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দ্বীনের ঝান্ডাবাহী তাবলীগ জামাত নিয়ে বানানো প্রতারণামূলক একটি কথিত হাদীসের তাহক্বীক



প্রশ্ন: সম্প্রতি আমাদের আহলে হাদিস ভাইয়েরা একটি ‘হাদিস’ আবিষ্কার করেছেন এবং সেটিকে তাবলিগ জামাতের বিরুদ্ধে প্রচারণায় ব্যবহার করছেন। জনাব মুহাম্মদ আব্দুল গণি তাঁর ‘তাবলিগ জামাত ও তাবলিগে দ্বীন’ নামক বইয়ে সেটি উল্লেখ করেছেন (বইটির পাতাগুলো এটাচমেন্টে পাবেন)। ইন্টারনেটে এটির ব্যাপক প্রচার চলছে। ‘হাদিস’ টি নিম্নরূপ- সাহাবী আবূ সাইদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, আমার মৃত্যুর পর শেষ যামানায় আমার উম্মতের মধ্য হতে পূর্বের কোন দেশ থেকে একটি জামাআত বের হবে, তারা কুরআন পাঠ করবে, তাদের কুরআন পাঠ তোমাদের কুরআন পাঠের তুলনায় খুবই সুন্দর হবে । কুরআনের প্রতি বাহ্যত তাদের ভক্তি শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতা দেখে মনে হবে যেন ওরা কুরআনের জন্য কুরআন ওদের জন্য ।

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ওরা কুরআনের প্রতিটি আয়াতের উপরে ঈমান রাখবে না এবং কুরআনের কঠিন নির্দেশের উপর আমল করবে না । এই জামা’আতের অধিকাংশ লোক হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ । যেমন কুরআন ও হাদীসের জ্ঞানে হবে মূর্খ তেমন সাধারণ জ্ঞানেও হবে মূর্খ । এই জামাআতে যদি কোন শিক্ষিত লোক যোগদান করে তাহলে তার আচরণ ও স্বভাব হয়ে যাবে জামাআতে যোগদানকারী অন্যান্য মূর্খের মত । মূর্খের যেমন মূর্খতার আনুগত্য করবে তেমনি শিক্ষিত লোকটিও মূর্খদেরই আনুগত্য করবে ।

এই জামা’আতের বয়ান ও বক্তৃতায় থাকবে কেবল ফযিলাতের বয়ান । বিভিন্ন আমলে সর্বোচ্চ ফযিলাতের প্রমাণহীন বর্ণনাই হবে তাদের বয়ানের বিষয়বস্তু । হে মুসলমানগণ ! ঐ জামা’আতের লোকদের নামায, রোযা অন্যান্য আমল এতই সুন্দর হবে যে, তোমরা তোমাদের নামায, রোযা ও আমল সমূহকে তাদের তুলনায় তুচ্ছ মনে করবে । এই জামা’আতের লোকেরা সাধারণ মানুষকে কুরআনের পথে তথা দ্বীনের পথে চলার নামে ডাকবে, কিন্তু তারা চলবে তাদের তৈরী করা পথে, ডাকলেও তারা কুরআনের পথে চলবে না । তাদের ওয়াজ ও বয়ান হবে মধুর মত মিষ্টি, ব্যবহার হবে চিনির মত সুস্বাদু, তাদের ভাষা হবে সকল মিষ্টির চাইতে মিষ্টি ।

তাদের পোশাক পরিচ্ছদ ধারণ- ধরণ হবে খুবই আকর্ষণীয়, যেমন সুন্দর হরিণ তার হরিণির পিছনে যেমন ছুটতে থাকে তেমন সাধারণ মানুষ তাদের মিষ্ট ব্যবহার, আমলের প্রদর্শনী ও সুমধুর ওয়াজ শুনে তাদের জামা’আতের দিকে ছুটতে থাকবে । তাদের অন্তর হবে ব্যাঘ্রের মত হিংস্র । বাঘের অন্তরে যেমন কোন পশুর চিৎকার মমতা প্রকাশ করে না, তেমন কুরআন ও হাদীসের বাণী যতই মধুর হোক তাদের অন্তরে প্রবেশ করবে না । তাদের কথাবার্তা আমল আচরণ, বয়ান যেগুলি তারা তাদের জন্য নির্ধারণ করে নিয়েছে, তার-ভিতরকার কুরআন সুন্নাহ বিরোধী আমলগুলি বর্জন করে কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক আমল করার জন্য যতবার কেউ কুরআন ও সুন্নাহ প্রদর্শন করুক বাঘের অন্তরে যেমন মমতা প্রবেশ করে না তেমন তাদের অন্তরে কুরআন ও সুন্নার প্রবেশ করবে না । তাদের জামা’আতে প্রবেশ করার পর তাদের মিষ্টি ব্যবহারে মানুষ হবে মুগ্ধ, কিন্তু ঐ মনোমুগ্ধ ব্যবহারের পেছনে জীবন ধ্বংসকারী, ঈমান বিনষ্টকারী, ইসলামী মুল্যবোধ বিনষ্টকারী মারাত্মক বিষ বিরাজমান থাকবে ।

তাদের প্রশিক্ষন ধীরে ধীরে মানুষের অন্তর হতে আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ) এ আনুগত্যের প্রেরণা শেষ করে দেবে এবং জামা’আতের আমীরদের আনুগত্যের প্রতি মরণপণ আকৃষ্ট করবে । আমীরগণ দেখতে হবে খাঁটি পরহেজগার দ্বীনদার ব্যক্তিদের মত, কিন্তু তার অন্তর হবে শয়তানের মত, কুরআন সুন্নাহের প্রতি বিদ্রোহী । আমীরগণ যা করে যাচ্ছে তার মধ্যে কুরআন সুন্নাহ বিরোধী কোন কাজ কখনো কেউ ধরিয়ে দিলে কোনক্রমেই তা পরিবর্তন করতে প্রস্তুত হবে না । অর্থাৎ কুরআন হাদীস উপস্থাপন করার পর তারা কুরআন হাদীস দেখেও কুরআন হাদীস বর্জন করে মুরব্বীদের কথা মানবে । কুরআন হাদীসের প্রতি তাদের অনীহা এতই তীব্র হবে যে, তারা অর্থসহ কুরআন হাদীস কখনই পড়বে না, পড়ানোও যাবে না ।

এই জামা’আতটি ইসলামের তাবলীগ করার কথা যতই বলুক কুরআন যত সুন্দরই পাঠ করুক, নামায রোযা যতই সুন্দর হোক, আমল যতই চমৎকার হোক, মূলতঃ ঐ জামা’আতটি ইলসালম হতে বহির্ভূত হবে । সাহাবাগণ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) ঐ দলটি চিনবার সহজ উপায় কি হবে ? আমাদিগকে জানিয়ে দিন । রাসূল (সাঃ) বললেন, এই ইসলাম বহির্ভূত জামা’আতটি চিনবার সহজ উপায় হল- ১) তারা যখন তালীমে বসবে, গোল হয়ে বসবে । ২) অল্প সময়ের মধ্যে এই জামা’আতের লোকসংখ্যা খুব বেশী হবে । ৩) এই জামা’আতের আমীর ও মুরব্বীদের মাথা নেড়া হবে ।

তারা মাথা কামিয়ে ফেলবে । তীর মারলে ধনুক থেকে তীর বেরিয়ে যায় । ঐ তীর আর কখনও ধনুকের দিকে ফিরে আসে না, তেমন যারা এই জামা’আতে যোগদান করবে তারা কখনও আর দ্বীনের দিকে ফিরে আসবে না । অর্থাৎ এই জামা’আতকে দ্বীনের পথে ফিরিয়ে আনার জন্য কুরআন হাদীস যত দেখানো হোক, যত চেষ্টাই করা হোক না কেন দলটি দ্বীনের পথে ফিরে আসবে না । এদের সাথে তোমাদের যেখানেই স্বাক্ষাত হোক, সংগ্রাম হবে তোমাদের অনিবার্য ।

এই সংগ্রাম যদি কখনও যুদ্ধে পরিণত হয় তাহলে তা থেকেও পিছ পা হবে না । এই সংগ্রামে বা যুদ্ধে যারা মৃত্যুবরণ করবে, তাদেরকে যে পুরষ্কার আল্লাহ দান করবেন তা অন্য কোন নেক কাজে দান করবেন না। (বুখারী, আরবী দিল্লীঃ ২য় খন্ড, পৃঃ ১০২৪, ১১২৮, মুয়াত্তা ইমাম মালেক, আরবী ১ম খন্ড, পৃঃ ১৩৮, আবূ দাউদ, আরবী দিল্লী, ২য় খন্ড, পৃঃ ৬৫৬, তিরমিযী, মিশকাত, আরবী, ২য় খন্ড, পৃঃ ৪৫৫, মুসলিম,মিশকাত, আরবী, ২য় খন্ড, পৃঃ ৪৬২) হাদীস সমূহের বর্ণনাকারী হলেন আবূ সাঈদ খুদরী, আলী, আবূ হুরায়রা, আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) । (দেখুন সহীহ আল বুখারী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৬৪৪৯, ৬৪৫০, ৬৪৫২, ৭০৪১ (আ.প্র.), বাংলা অনুবাদ মুয়াত্তা মালেকঃ ই.ফা. ১ম খন্ড, হাঃ নং- ৫৭৮) এ “হাদিস” কি সঠিক, নাকি কিছু সত্যের সাথে বহু মিথ্যার মিশ্রণ, এ ব্যাপারে জানাবেন। প্রশ্নকারী- Faruk Mozumder এবং ba lok সহ আরো অনেকে জবাব: بسم الله الرحمن الرحيم উল্লেখিত এ বিশাল বক্তৃতাটি সাধারণ নজরে একবার তাকালেই স্পষ্ট হয়ে যায় এটি রাসূল সাঃ এর হাদীস নয়।

হাদীসের নামে জঘন্য মিথ্যাচার। তাবলীগ জামাতের মত একটি মকবুল দ্বীনী জামাতকে ভ্রান্ত প্রমাণের জন্য ইংরেজ সৃষ্ট কথিত আহলে হাদীস দলটি কি মারাত্মক ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করেছে এ প্রোপাগান্ডার প্রকৃত হালাত দেখলেই গা শিউড়ে উঠবে। উল্লেখিত জাল ও বানোয়াট কথাটি প্রমাণে কতগুলি মিথ্যাচার ও জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে তার কয়েকটি ফিরিস্তি এক নজরে বুলিয়ে নিন- জালিয়াতি নং-১ বক্তব্যটির শুরুতে হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ এর নাম বলে তারপর রাসূল সাঃ এর দিকে নিসবত করে সুদীর্ঘ মনগড়া বর্ণনাটি লিখার পর যেভাবে হাদীসের কিতাবের রেফারেন্স দেয়া হয়েছে, একজন সাধারণ পাঠক মনে করবেন যে, হাদীসটি বুঝি এভাবেই আরবী কিতাবে বর্ণিত। অথচ এমন সুবিশাল হাদীসের কোন নাম গন্ধই নেই হাদীসের কোন কিতাবে। জালিয়াতি নং-২ ইসলামি ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত মুয়াত্তা মালিকের বাংলা অনুবাদের রেফারেন্স দেয়া হয়েছে যে, ১ম খন্ডের হাদীস নং ৫৭৮।

অথচ ইসলামী ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত বাংলা মুয়াত্তা মালিকের অনুবাদ সাজানো হয়েছে পরিচ্ছেদ পরিচ্ছেদ আকারে। প্রতিটি পরিচ্ছেদের জন্য আলাদা হাদীস নাম্বার উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে কোন পরিচ্ছেদের হাদীসই ৩০০ সংখ্যার উপর যেতে পারে নি। যেখানে কোন পরিচ্ছেদের হাদীস সংখ্যা ৩০০ই ছাড়ায় নি। সেখানে ৫৭৮ নং হাদীস আসলো কোত্থেকে? জালিয়াতি নং-৩ হাদীসে বর্ণিত খারেজী সম্প্রদায়ের সিফাত, যাদের উত্থান ও পতন হযরত আলী রাঃ এর সময়ে হয়েছে মর্মে হাদীসটি বর্ণনাকারী হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ নিজের মুখেই স্বীকার করে গেছেন।

যা বুখারীতে স্পষ্ট উল্লেখ আছে। তারপরও খারেজীদের গুণাগুণ সম্বলিত হাদীসকে তাবলীগ জামাতের উপর চাপানোর জন্য হাদীসে বর্ণিত খারেজীদের নিদর্শনের হাদীসগুলোর সাথে তাবলীগ জামাতের গুণগুলোকে একসাথে গুলিয়ে এক জগাখিচুরী বানিয়ে পূর্ণ বাক্যটির নিসবত হাদীসের দিকে করা হয়েছে। রেফারেন্স দেয়া হয়েছে খারেজীদের ব্যাপারে বর্ণিত হাদীসের দিকে। জোড়ে দেয়া হয়েছে মনগড়া কথার এক ভাগাড়। এরকম প্রতারক চক্রও যদি দ্বীনের খাদিম হয় তাহলে ইসলামের দুশমন কাদের বলে? আরো অনেক জালিয়াতি আছে।

পূর্ণ লেখাটি পড়ার পর পাঠকগণ নিজেরাই আরো জালিয়াতী বের করে নিতে পারবেন। মিথ্যাচারের প্রমাণ স্পষ্টভাবে বুঝার জন্য প্রতারক ভাইটির উদ্ধৃত করা কিতাবসমূহের আরবী সংস্করণের পূর্ণ পৃষ্ঠাগুলোতে কী হাদীস আছে তা জেনে নিন- বুখারী, আরবী দিল্লীঃ ২য় খন্ড, পৃঃ ১০২৪, ১১২৮ এ কী আছে? উদ্ধৃত বুখারী শরীফ আরবী সংস্করণের ২য় খন্ডের ১০২৪ নং পৃষ্ঠায় মোট ৩টি বাব তথা অধ্যায় আছে। যথা- ১-বাব {শিরোনামহীন} ২-باب قتل الخوارج والملحدين بعد إقامة الحجة عليهم তথা খারেজী সম্প্রদায়ের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পর তাদের হত্যা করা প্রসঙ্গে ৩- باب من ترك قتال الخوارج للتألف ولئلا ينفر الناس عنهতথা যারা মনোরঞ্জনের নিমিত্তে খারেজীর সাথে যুদ্ধ ত্যাগ করে এবং এজন্য যে, যাতে করে লোকেরা তাদের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ না করে। আর হাদীস আছে ৬টি। এর মাঝে উপরোক্ত বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট ৪টি হাদীস।

যথা- ১- قال علي رضي الله عنه : إذا حدثتكم عن رسول الله صلى الله عليه و سلم حديثا فوالله لأن أخر من السماء أحب إلي من أن أكذب عليه وإذا حدثتكم فيما بيني وبينكم فإن الحرب خدعة وإني سمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم يقول ( سيخرج قوم في آخر الزمان أحداث الأسنان سفهاء الأحلام يقولون من خير قول البرية لا يجاوز إيمانهم حناجرهم يمرقون من الدين كما يمرق السهم من الرمية فأينما لقيتموهم فاقتلوهم فإن في قتلهم أجرا لمن قتلهم يوم القيامة হযরত আলী রাঃ বলেছেন যে, আমি যখন তোমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাঃ এর কোন হাদীস বর্ণনা করি, আল্লাহর কসম! তখন তাঁর উপর মিথ্যা কথা আরোপ করার চেয়ে আকাশ থেকে নিচে পড়ে যাওয়াটা আমার কাছে শ্রেয়। কিন্তু আমি যদি আমার ও তোমাদের মধ্যকার বিষয় সম্পর্কে কিছু বলি, তাহলে মনে রাখতে হবে যে, যুদ্ধ একটি কৌশল। আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ কে বলতে শুনেছি, শেষ যুগে এমন এক সম্প্রদায়ের আবির্ভাব হবে যারা হবে অল্পবয়স্ক যুবক, নির্বোধ। তারা সৃষ্টির সবচাইতে শ্রেষ্ঠতম কথা থেকে আবৃত্তি করবে। অথচ ঈমান তাদের গলদেশ অতিক্রম করবে না।

তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে, যেমন তীর শিকার ভেদ করে বের হয়ে যায়। তাদেরকে যেখানে ই তোমরা পাবে হত্যা করবে। কেননা তাদেরকে হত্যা করলে হত্যাকারীর জন্য কিয়ামত দিবসে প্রতিদান রয়েছে। {সহীহ আল বুখারী, হাদীস নং-৩৪১৫} ২- عن أبي سلمة وعطاء بن يسار : أنهما أتيا أبا سعيد الخدري فسألاه عن الحرورية أسمعت النبي صلى الله عليه و سلم ؟ قال لا أدري ما الحرورية ؟ سمعت النبي صلى الله عليه و سلم يقول ( يخرج في هذه الأمة – ولم يقل منها – قوم تحقرون صلاتكم مع صلاتهم يقرؤون القرآن لا يجاوز حلوقهم أو حناجرهم يمرقون من الدين مروق السهم من الرمية فينظر الرامي إلى سهمه إلى نصله إلى رصافه فيتمارى في الفوقة هل علق بها من الدم شيء হযরত আবূ সালামা ও আতা বিন ইয়াসার থেকে বর্ণিত। তারা তারা আবূ সাঈদ খুদরী রাঃ এর কাছে এলেন।

তারা তাকে “হারুরিয়্যাহ” সম্প্রদায় সম্প্রদায় সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন যে, আপনি কি নবীজী সাঃ থেকে এদের সম্পর্কে কিছু শুনেছেন? তিনি বললেন, হারূরিয়্যাহ কি তা আমি জানি না। তবে নবীজী সাঃ কে বলতে শুনেছি এ উম্মতের মধ্যে বের হবে। তার থেকে সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটবে কথাটি বলেননি। যাদের নামাযের তুলনায় তোমরা তোমাদের নামাযকে তুচ্ছ মনে করবে। তারা কুরআন পড়বে বটে কিন্তু তা তাদের গলদেশ অতিক্রম করবে না।

তারা দ্বীন থেকে বের হয়ে যাবে যেমন তীর শিকার ভেদ করে বের হয়ে যায়। তীর নিক্ষেপকারী তীরের প্রতি, তার অগ্রভাগের প্রতি, তীরের মুখে বেষ্টনীর প্রতি লক্ষ্য করে, তীরের ছিলার বেলায়ও সন্দেহ হয় যে, তাতে কিছু রক্ত লেগে রইল কি না? {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৫৩২} ৩- عن عبد الله بن عمر وذكر الحرورية فقال : قال النبي صلى الله عليه و سلم ( يمرقون من الإسلام مروق السهم من الرمية হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি হারূরিয়্যাহ সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন। তিনি বলেন, নবীজী সাঃ বলেছেন, তারা ইসলাম থেকে এরূপ বের হয়ে যাবে যেমন তীর শিকার থেকে বের হয়ে যায়। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৫৩৩} ৪- عن أبي سعيد قال : بينا النبي صلى الله عليه و سلم يقسم جاء عبد الله بن ذي الخويصرة التميمي فقال اعدل يا رسول الله فقال ( ويحك ومن يعدل إذا لم أعدل ) . قال عمر بن الخطاب ائذن لي فأضرب عنقه قال ( دعه فإن له أصحابا يحقر أحدكم صلاته مع صلاته وصيامه مع صيامه يمرقون من الدين كما يمرق السهم من الرمية ينظر في قذذه فلا يوجد فيه شيء ثم ينظر إلى نصله فلا يوجد فيه شيء ثم ينظر إلى رصافه فلا يوجد فيه شيء ثم ينظر في نضيه فلا يوجد فيه شيء قد سبق الفرث والدم آيتهم رجل إحدى يديه أو قال ثدييه مثل ثدي المرأة أو قال مثل البضعة تدردر يخرجون على حين فرقة من الناس ) قال أبو سعيد أشهد سمعت من النبي صلى الله عليه و سلم وأشهد أن عليا قتلهم وأنا معه جيء بالرجل على النعت الذي نعته النبي صلى الله عليه و سلم قال فنزلت فيه ومنهم من يلمزك في الصدقات হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিত।

তিনি বলেন, রাসূল সাঃ কোন কিছু বন্টন করছিলেন। ঘটনাক্রমে আব্দুল্লাহ বিন যুলখওয়ায়সিরা তামীমী এল এবং বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ইনসাফ করুন! তিনি বললেন, আফসোস তোমার জন্য! আমি যদি ইনসাফ না করি তাহলে আর কে ইনসাফ করবে? ওমর বিন খাত্তাব রাঃ বললেন, আমাকে অনুমতি দিন, তার গর্দান উড়িয়ে দেই। তিনি বললেন, তাকে ছেড়ে দাও! তার জন্য সাথীবৃন্দ রয়েছে। যাদের নামাযের তুলনায় তোমরা তোমাদের নামাযকে তুচ্ছ মনে করবে। যাদের রোযার তুলনায় তোমরা তোমাদের রোযাকে তুচ্ছ মনে করবে।

তারা দ্বীন থেকে এরূপ বেরিয়ে যাবে যেমন তীর শিকার ভেদ করে বেরিয়ে যায়। তীরের পরে লক্ষ্য করলে তাতে কিছু পাওয়া যায় না। তীরের মুখের বেষ্টনীর প্রতি লক্ষ্য করলেও কিছু পাওয়া যায় না। তীরের কাঠের অংশের দিকে তাকালেও তাতে কিছু পাওয়া যায় না। বরং তীর তীব্র গতিতে বেরিয়ে যাওয়ার কালে তাতে মল ও রক্তের দাগ পর্যন্ত লাগে না।

তাদের পরিচয় এই যে, তাদের একটি লোকের একটি হাত অথবা বলেছেন, একটি স্তন্য হবে মহিলাদের স্তনের মত। অথবা বলেছেন, বাড়তি গোস্তের টুকরার মত। লোকদের মধ্যে বিরোধের সময় আবির্ভাব হবে। আবূ সাঈদ রাঃ বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি তা নবীজী সাঃ থেকে শুনেছি। এও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আলী রাঃ তাদের হত্যা করেছেন ।

তিনি বলেন, ওর সম্পর্কেই নাজিল হয়েছে-ওদের মধ্যে এমন লোক আছে যে সাদকা সম্পর্কে তোমাকে দোষারোপ করে। {৯:৫৮} {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৫৩৪} বুখারী শরীফের আরবী সংস্করণের ১০২৪ পৃষ্ঠা শেষ। এবার আসুন দেখি ১১২৮ এ কি আছে? ১১২৮ এ কী আছে? বুখারী আরবী সংস্করণ দিল্লির ১১২৮ পৃষ্ঠায় মোট দুটি বাব রয়েছে। যথা- ১- باب قراءة الفاجر والمنافق وأصواتهم وتلاوتهم لا تجاوز حناجرهم তথা গোনাহগার ও মুনাফিকের কিরাত ও তাদের স্বর ও তিলাওয়াত তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করে না। ২- باب قول الله تعالى { ونضع الموازين القسط } / الأنبياء ৪৭ / . وأن أعمال بني آدم وقولهم يوزن তথা কিয়ামত দিবসে আমি কায়েম করব ন্যায় বিচারের দন্ড {২১: ৪৭} আদম সন্তানের কথা ও আমল পরিমাপ করা হবে।

উক্ত পৃষ্ঠায় মোট হাদীস আছে ৮টি। এর মাঝে উক্ত বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট হাদীস হল ১টি। হাদীসটি হল- عن أبي سعيد الخدري رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه و سلم قال ( يخرج ناس من قبل المشرق ويقرؤون القرآن لا يجاوز تراقيهم يمرقون من الدين كما يمرق السهم من الرمية ثم لا يعودون فيه حتى يعود السهم إلى فوقه قيل ما سيماهم ؟ قال سيماهم التحليق أو قال التسبيد আবু সাঈদ খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিত। নবীজী সাঃ বলেছেন, পূর্বাঞ্চল থেকে একদল লোকের অভ্যুদয় ঘটবে। তারা কুরআন পাঠ করবে, তবে তাদের এ পাঠ তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না।

তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে, যেভাবে শিকার [ধনুক] থেকে তীর বেরিয়ে যায়। তারা আর ফিরে আসবে না, যে পর্যন্ত ধনুকের ছিলায় না আসে। বলা হল, তাদের আলামত কি? তিনি বললেন, তাদের আলামত হল মাথা মুন্ডন। {সহীহ আল বুখারী, হাদীস নং-৭১২৩} এই হল বুখারীতে বর্ণিত হাদীসের হালাত। আবু দাউদের ৬৫৬ নং পৃষ্ঠায় কী আছে? আবু দাউদ শরীফের আরবী সংস্করণের ৬৫৬ নং পৃষ্ঠায় বাবু কাতলিল খাওয়ারিজ তথা খারেজীদের হত্যা করার অধ্যায় নামক পরিচ্ছেদে এ বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট যেসব হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

তা হল - ১- عن عبيدة أن عليا ذكر أهل النهروان فقال : فيهم رجل مودن اليد ، أو مخدج اليد ، أو مثدون اليد ، لولا أن تبطروا لنبأتكم ما وعد الله الذين يقتلونهم على لسان محمد صلى الله عليه وسلم ، قال : قلت : أنت سمعت هذا منه ؟ قال : إى ورب الكعبة ওবায়দা থেকে বর্ণিত। হযরত আলী রাঃ আহলে নাজরান তথা খারেজীদের কথা উল্লেখ করে বলেন, যাদের মাঝে এক ব্যক্তির হাত মহিলাদের স্তনের মত ছোট ছোট হবে। যদি তোমরা আমার কথা বিশ্বাস কর, তাহলে আমি তোমাদের বলছি, এরাই সে সকল লোক যাদের বিরুদ্ধে লড়তে আল্লাহ তাআলা রাসূল সাঃ এর জবানে ওয়াদা করেছেন। আমি বললাম-আপনি তার থেকে একথা শুনেছেন? তিনি বললেন, কাবার কসম, শুনেছি। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৭৬৫} ২- عن ابى سعيد الخدرى ، قال : بعث على عليه السلام إلى النبي صلى الله عليه وسلم بذهيبة في تربتها ، فقسمها بين أربعة : بين الاقرع بن حابس الحنظلي ثم المجاشعى ، وبين عيينة بن بدر الفزارى ، وبين زيد الخيل الطائى ثم أحد بنى نبهان ، وبين علقمة بن علاثة العامري ثم أحد بنى كلاب ، قال : فغضبت قريش والانصار ، وقالت : يعطى صناديد أهل نجد ويدعنا ، فقال : (إنما أتألفهم) قال : فأقبل رجل غائر العينين مشرف الوجنتين ناتئ الجبين كث اللحية محلوق ، قال : اتق الله يا محمد ، فقال : (من يطيع الله إذا عصيته ، أيأمنني الله على أهل الارض ولا تأمنوني) ؟ قال : فسأل رجل قتله أحسبه خالد الوليد ، قال : فمنعه ، قال : فلما ولى قال : (إن من ضئضئ هذا ، أو في عقب هذا ، قوما يقرؤن القرآن لا يجاوز حناجرهم ، يمرقون من الاسلام مروق السهم من الرمية ، يقتلون أهل الاسلام ويدعون أهل الاوثان ، لئن أنا أدركتهم قتلتهم قتل عاد) হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ বলেন, হযরত আলী রাঃ মাটি মাখা কিছু স্বর্ণ রাসূল সাঃ এর কাছে পাঠালেন।

তখন রাসূল সাঃ তা চারজনের মাঝে বন্টন করে দেনদ। তথা আক্বরা বিন হাবেস হানজালী মুজাশিয়্যী, উয়াইনা বিন বদর আল ফাযারিয়্যী, এবং জায়েদ বিন খায়েল আত তায়ী ও আলক্বামা বিন উলাসাহ আল আমেরেয়্যী। এতে কুরাইশ ও আনসারীরা অসন্তুষ্ট হল। তারা বলতে লাগল, নজদের ধনীদের দেয়া হল, অথচ আমাদের দেয়া হল না! রাসূল সাঃ বললেন, আমি তাদের অন্তরে ইসলামের প্রতি মোহাব্বত দিতে চাচ্ছি। তখন এক ব্যক্তি এগিয়ে এল, যার চোখ ছিল কোটরগত, গন্ডদেশ ছিল উঁচু।

স্ফীত ললাট। ঘন শুশ্র“মন্ডিত, ন্যাড়া [মাথা]। বলতে লাগল- হে মুহাম্মদ! আল্লাহকে ভয় করুন! তখন রাসূল সাঃ বললেন, আমি আল্লাহর নাফরমানী করলে কে আল্লাহর অনুসরণ করবে? আল্লাহ তাআলাতো আমাকে ধরিত্রীর মাঝে আমানতদার নির্ধারণ করেছেন, তুমি কি আমাকে আমানতদার মনে কর না? তখন একজন তাকে হত্যা করা অনুমতি চাইলেন। আমার ধারণায় তিনি খালিদ বিন ওলীদ হবেন। তখন রাসূল সাঃ তাকে নিষেধ করলেন।

যখন লোকটি ফিরে গেল। তখন রাসূল সাঃ ইরশাদ করলেন- এর সন্তান বা তার বংশধরদের মাঝে এম লোক হবে, যারা কুরআন মাজীদ পড়বে, কিন্তু তাদের কণ্ঠনালীর নিচে তা নামবে না। ওরা ইসলাম থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে, যেমন তীর ধনুক থেকে বেরিয়ে যায়। তারা মুসলমানদের হত্যা করবে। আর মূর্তিপূজকদের ছেড়ে দিবে।

আমি যদি তাদের পেতাম তাহলে আদ জাতির মত তাদের ধ্বংস করতাম। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৭৬৬} ৩- عن أبى سعيد الخدرى وأنس بن مالك عن رسول الله -صلى الله عليه وسلم- قال : « سيكون فى أمتى اختلاف وفرقة قوم يحسنون القيل ويسيئون الفعل ويقرءون القرآن لا يجاوز تراقيهم يمرقون من الدين مروق السهم من الرمية لا يرجعون حتى يرتد على فوقه هم شر الخلق والخليقة طوبى لمن قتلهم وقتلوه يدعون إلى كتاب الله وليسوا منه فى شىء من قاتلهم كان أولى بالله منهم ». قالوا : يا رسول الله ما سيماهم قال : « التحليق » হযরত আবূ সাঈদ খুদরী ও আনাস বিন মালিক রা^ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, অচিরেই আমার উম্মতের মাঝে মতভেদ হবে। যাদের মাঝে একদলের ভাষা হবে মিষ্ট। কিন্তু কাজ হবে জঘন্য।

তারা কুরআন পড়বে, কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তার দ্বীন থেকে এভাবে বেরিয়ে যাবে, যেমন ধনুক থেকে তীর বেরিয়ে যায়। আর ফিরে আসবে না, যে পর্যন্ত ধনুকের ছিলায় না আসে। যারা তাদের হত্যা করবে তাদের সাধুবাদ। তারা আল্লাহর কিতাবের দিকে আহবান করবে, কিন্তু আল্লাহর কিতাবের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক থাকবে না।

যারা তাদের হত্যা করবে তারা তাদের থেকে উত্তম হবে। সাহাবাগণ প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাদের নিদর্শন কী? তিনি বললেন, ন্যাড়া মাথা। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৭৬৭} ৪- عن أنس أن رسول الله -صلى الله عليه وسلم- نحوه قال : « سيماهم التحليق والتسبيد فإذا رأيتموهم فأنيموهم হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ উপরোক্ত বর্ণনা করে বলেন, তাদের নিদর্শন হল, মাথা ন্যাড়া করা ও চুল জড় থেকে উপরে ফেলা। যখন তোমরা তাদের দেখবে তখনই হত্যা করবে।

{সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৭৬৮} ৫- قال على : إذا حدثتكم عن رسول الله -صلى الله عليه وسلم- حديثا فلأن أخر من السماء أحب إلى من أن أكذب عليه وإذا حدثتكم فيما بينى وبينكم فإنما الحرب خدعة سمعت رسول الله -صلى الله عليه وسلم- يقول : « يأتى فى آخر الزمان قوم حدثاء الأسنان سفهاء الأحلام يقولون من قول خير البرية يمرقون من الإسلام كما يمرق السهم من الرمية لا يجاوز إيمانهم حناجرهم فأينما لقيتموهم فاقتلوهم فإن قتلهم أجر لمن قتلهم يوم القيامة হযরত সুয়াইদ বিন গাফালা থেকে বর্ণিত। হযরত আলী রাঃ বলেন, যখন তোমাদের কাছে আমি রাসূল সাঃ থেকে কোন হাদীস বর্ণনা করি, তখন তার দিকে মিথ্যার নিসবত করার চেয়ে আসমান থেকে পরে যাওয়া আমার কাছে উত্তম। যখন আমার ও তোমাদের মাঝে কোন কথা হয়, তখন জেনে রেখ “যুদ্ধ হল ধোঁকাবাজী”। আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি যে, শেষ জমানায় এক জাতি আসবে। বয়সে হবে তরুণ।

বুদ্ধিতে হবে কাঁচা। তারা রাসূল সাঃ এর কথা বর্ণনা করবে। কিন্তু তারা দ্বীন থেকে ইসলাম থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে, যেমন ধনুক থেকে তীর বেরিয়ে যায়। তাদের ঈমান তাদের কণ্ঠনালী ভেদ করে নিচে নামবে না। তোমরা তাদের যেখানে পাবে সেখানেই হত্যা করবে।

কেননা যারা তাদের হত্যা করবে তারা কিয়ামতের দিন সওয়াব পাবে। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৭৬৯} এছাড়া বাকি সকল কিতাবগুলোতেও উপরোক্ত বিষয়ই বিভিন্ন শব্দে বর্র্ণিত হয়েছে। উল্লেখ করার মত নতুন কিছু নেই। হাদীসের কিতাবে বর্ণিত বাতিল দলটির গুণগুলো কি? উপরে বর্ণিত হাদীসগুলো থেকে আমরা বাতিল দলটির ব্যাপারে কয়েকটি বিষয় জানতে পারলাম- ১- মক্কা থেকে পূর্বের কোন এলাকা থেকে দলটির আবির্ভাব হবে। {সহীহ আল বুখারী, হাদীস নং-৭১২৩} ২- তারা আসবে শেষ জমানায়।

{সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৭৬৯} ৩- কুরআন ও হাদীসের দলিল দিয়ে তারা নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করবে। {সহীহ আল বুখারী, হাদীস নং-৩৪১৫} ৪- যারা হবে অল্প বয়স্ক, যুবক, নির্বোধ। {সহীহ আল বুখারী, হাদীস নং-৩৪১৫} ৫- যারা অনেক নামাযী ও ইবাদতগুজার হবে। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৫৩৪} ৬-যাদের একজনের হাত বা স্তন হবে মহিলাদের স্তনের মত। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৫৩৪} ৭- ঈমানের কথা বললেও তাদের মাঝে ঈমানের লেশ মাত্র থাকবে না।

{সহীহ আল বুখারী, হাদীস নং-৩৪১৫} ৮- তাদের নিদর্শন হল, তাদের মাথা থাকবে ন্যাড়া। {সহীহ আল বুখারী, হাদীস নং-৭১২৩} ৯- মুসলমানদের উপর এদের হত্যা করা জরুরী। যারা তাদের হত্যা করবে তারা কিয়ামত দিবসে সওয়াবের অধিকারী হবে। {সহীহ আল বুখারী, হাদীস নং-৩৪১৫} ১০- মতভেদ ও মতানৈক্যের সময় এদের আবির্ভাব হবে। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৫৩৪} ১১- পথভ্রষ্ট হওয়ার পর এরা আর ঈমানের দিকে ফিরে আসবে না।

যেমন তীর আর ধনুকের কাছে ফিরে আসে না। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৭৬৬} ১২- আবু সাঈদ খুদরী রাঃ এর মতে হাদীসে বর্ণিত সেই দলটি হল খারেজী, যাদের হযরত আলী রাঃ হত্যা করেছেন বলে তিনি স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছেন। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৫৩৪} এবার সবাই নিজেরাই বের করে নিতে পারবেন। আহলে হাদীস নামধারীরা কিভাবে হাদীস বিকৃতি করেছে। কী পরিমাণ মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে এরকম জঘন্য কথা প্রচার করা শুরু করেছে যে, তাবলীগ জামাত বাতিল, কেননা হাদীসে তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে।

অথচ মূল কিতাবে যেসব বর্ণনা আছে তার সাথে তাবলীগ জামাতের ন্যুনতম কোন সম্পর্ক নেই। বরঞ্চ কথিত আহলে হাদীস ভাইদের অনেক মতাদর্শের মিল আছে হাদীসে বর্ণিত ভ্রান্ত দলটির সাথে। সামনে এ বিষয়ে আলোকপাত করা হবে। আরেকটি মজার ব্যাপার হল মিথ্যাচারপূর্ণ বর্ণনাটিতে বাতিল দলের যে সিফাত বলা হয়েছে, তাতেও উল্লেখ আছে যে, বাতিল দলটির লোকদের মাথা ন্যাড়া হবে। তাবলীগী ভাইদের কি সবার মাথা ন্যাড়া? এ একটি পয়েন্টই যথেষ্ঠ এ বক্তব্যটিকে তাবলীগ জামাতের বিরুদ্ধে প্রচারণা করাটা কত বড় মিথ্যাচার ও প্রতারণা।

এক নজরে প্রশ্নে বর্ণিত বর্ণনাটির মিথ্যার বেসাতি ১- ভ্রান্ত দলটি গোল হয়ে বসবে। ২-ভ্রান্ত দলটির মুখে থাকবে শুধু ফযীলতের বয়ান। ৩- মুরুব্বীদের কথাই শুনবে। কুরআন হাদীস মানবে না। ৪- খুব দ্রুত দলটির লোক সংখ্যা বৃদ্ধি হবে।

৫- সেখানে যোগদান করা শিক্ষিতরাও মুর্খদের মত আচরণ করবে। ৬- নিজেরাও কুরআন হাদীস পড়বে না, আবার অন্যদেরও কুরআন হাদীস পড়তে দিবে না। ৭- এ দলটির সাথে যুদ্ধের ফলে যে সওয়াব দান করা হবে সে সওয়াব অন্য কোন কাজে দান করা হবে না। রেফারেন্স দেয়া কিতাবের কোথাও একথাগুলো পাওয়া যায়নি। যদি থাকে তাহলে আরবী ইবারতসহ দিতে বলুন।

এরকম মিথ্যুকদের ক্ষেত্রে শুধু বলব- মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর অভিশম্পাত। {সূরা আলে ইমরান-৬১} সহীহ হাদীসে বর্র্ণিত বাতিল দলটির সাথে কথিত আহলে হাদীসদের মিল মৌলিকভাবে হাদীসে উল্লেখিত বাতিল জামাতটি খারেজী দল। যারা হযরত আলী রাঃ এর আমলে আবির্ভূত হয়েছিল এবং তাদের তিনি হত্যা করেছেন। তবে উপরে উল্লেখিত বুখারী ও আবু দাউদে বর্ণিত বাতিল দলটির যেসব গুণ উল্লেখ করা হয়েছে। তা ভাল করে লক্ষ্য করে দেখুন এসব গুণ দ্বীনের মুখলিস জামাত তাবলীগী ভাইদের মাঝে নয় বরং বেশিরভাগই পাওয়া যায় কথিত আহলে হাদীস ভাইদের মাঝে।

যেমন- ১- মক্কা থেকে পূর্বের কোন এলাকা থেকে দলটির আবির্ভাব হবে। {সহীহ আল বুখারী, হাদীস নং-৭১২৩} কথিত আহলে হাদীসদের উত্থান ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে। মুহাম্মদ হাসান বাটালবীকে দিয়ে “আল ইকতিসাদ ফি মাসায়িলিল জিহাদ” নামক কিতাবে ইংরেজদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা হারাম ফাতওয়া দিয়ে ইংরেজদের পা চেটে এ দলটির আবির্ভাব। প্রমাণ স্বরূপ দেখুন প্রসিদ্ধ কথিত আহলে হাদীস আলেমের স্বীকারোক্তি- মাওলানা সানাউল্লাহ এর সত্য স্বীকার গায়রে মুকাল্লিদদের শাইখুল ইসলাম ২০ শে অক্টোবর ১৯৩৩ ঈসাব্দে একটি ঘোষণা নিজেদের ফেরক্বাবাজী মুখপত্র “আহলে হাদীস” পত্রিকায় প্রকাশ করে। তাতে তিনি লিখেন-“মুসলমান ভাইয়েরা! [গায়রে মুকাল্লিদরা] অধিকাংশ মানুষ জানে যে, মাওলানা আহমাদ সাহেব দেহলবী সাত আঠ বছর যাবত মদীনায় অবস্থান করছেন।

তিনি সেখানে পৌঁছার পর সে পবিত্র শহরে বসবাসকারী কাউকেই আহলে হাদীসের অনুসারী পান নি। এ জামাতের কোন মাদরাসাও ছিল না, ছিল না কোন দাওয়াতী কাজ। সেখানে এ জামাতের কোন কার্যক্রমই ছিল না, ছিল না কোন নামও। এমন মনে হচ্ছিল যে, এ জামাতের কার্যক্রম থেকে কয়েক শতাব্দী যাবত রাসূল সাঃ এর মদীনা শহর বঞ্চিত। এ অবস্থা দেখে তার মনে অনেক কষ্ট লাগে।

খুবই আফসোস লাগে যে, ইসলামের মারকায ও দরবারে নবী সাঃ, যাতে সারা দুনিয়ার মুসলমানরা একত্রিত হয়, সেখানে কোন আহলে হাদীস নামধারী, এবং মাযহাবে আহলে হাদীসের কোন মুবাল্লিগ নেই?! কতটা লজ্জাজনক কথা! সুন্নাতের দাবিদার! অথচ পবিত্র সুন্নাতধারীর গৃহ মদীনা তায়্যিবায় সে দাবিদারদের কোন নাম নিশানাই নেই! আফসোস! ইন্নালিল্লাহ! এভাবেই ওদের প্রথম মাদরাসা ‘মাদরাসায়ে দারুল হাদীস মুহাম্মদিয়া’ ১২ ই রবিউল আউয়াল ১৩৫২ হিজরীতে শুরু হয়। এর প্রতিষ্ঠা হলেন আব্দুল হক নুনারী [পূর্ব আহমদপুর]। এর দ্বারা এ বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, যেমন কাদিয়ানী ফেতনা, পারভেজী ফেতনা আরব দেশে পাক ও হিন্দ থেকে ঢুকেছে ঠিক তেমনি গায়রে মুকাল্লিদিয়্যাত ফিতনাও পাক ও হিন্দ থেকেই ঢুকেছে আরবে। ২- কুরআন ও হাদীসের দলিল দিয়ে তারা নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করবে। {সহীহ আল বুখারী, হাদীস নং-৩৪১৫} একাজটি তাবলীগী ভাইয়েরা নয়, বরং কথিত আহলে হাদীসরা কুরআন ও সহীহ হাদীস বলে সারা দিন বকবক করে বেড়ায়।

যদিও কাজেকর্মে অস্বিকার করে অনেক ক্ষেত্রে। ৩- যারা হবে অল্প বয়স্ক, যুবক, নির্বোধ। {সহীহ আল বুখারী, হাদীস নং-৩৪১৫} তাবলীগ জামাতের দিকে আর কথিত আহলে হাদীসদের দিকে তাকালেই এর সত্যতা বেরিয়ে আসবে। তাবলীগে যায় বেশিরভাগই মুরব্বী শ্রেণী। তরুণ যুবকও আছে অনেক।

কিন্তু কথিত আহলে হাদীস সম্প্রদায়ের দিকে তাকান। দেশের ভার্সিটিগুলোর কুরআন হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞ মুর্খ ইংরেজী শিক্ষিত যুবক শ্রেণীই বেশির ভাগ কথিত আহলে হাদীস জামাতের সদস্য। যাচাই করেই দেখুন। এছাড়া আরো অনেক মিল খুঁজে পাবেন। শেষ কথা ইসলামের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য চেষ্টা করে আসছে ইহুদী খৃষ্ট শক্তি।

একাজ সূচারুরূপে করার জন্য সব সময়ই ওরা মুসলমান নামধারী কিছু ব্যক্তিত্বহীন দালালদের ব্যবহার করেছে। মুসলানদের ধর্মীয়-সামাজিক শান্তি, শৃংখলা বিনষ্ট করে, ভাইয়ে ভাইয়ে দ্বন্দ লাগিয়ে ফায়দা লুটেছে আজীবন ইহুদী খৃষ্ট চক্র। বর্তমানেও একই পদ্ধতিতে কাজ করে যাচ্ছে ওরা। হাজার বছরের ধর্মীয় ঐতিহ্যিক দেশ আমাদের বাংলাদেশ। সহীহ ইসলামী আক্বিদায় পরিচালিত হয়ে আসছে দীর্ঘদিন যাবত।

কোন দিন ভালবাসা ও সম্প্রীতির নিদর্শন ৫ ওয়াক্ত ও ঈদের নামায, একতার নিদর্শন ইবাদতের মাসে ২০ রাকাত তারাবীহের নামাযে দ্বন্দ হয়নি। কিন্তু বর্তমানে অনেক মসজিদেই দ্বন্ধ-বিবাদ কলহ সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়েছে ইংরেজ সৃষ্ট দলটি। মুসলমান মুসলমান বিবাদ লেগে, বিভক্ত হয়ে শক্তি ক্ষয় করলে তাদের উপর ছড়ি ঘুরানো সহজ হয়ে যায়, একথা আমরা না বুঝলেও ইহুদী খৃষ্ট ভালই বুঝে। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। যেন কোন প্রোপাগান্ডা আমাদের কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিক ঐতিহ্যিক আমলকে বিনষ্ট না করতে পারে।

তাবলীগ জামাতের দ্বারা কোটি মানুষ নামাযী হচ্ছে। সুদখোর সুদ ছাড়ছে। ঘোষখোর ঘোষ ছাড়ছে। হারামখোর হারাম ছাড়ছে। বেদ্বীন দ্বীনদার হচ্ছে।

বে আমল আমলওয়ালা হচ্ছে। বেদআতি সুন্নাতের পাবন্দ হচ্ছে। এ জামাতকে কলংকিত করতে ইহুদী খৃষ্ট শক্তি কতটা মরিয়া প্রশ্নে উল্লেখিত কথিত বানোয়াট হাদীসটি এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ। আল্লাহ তাআলা আমাদের এসব প্রোপাগান্ডা থেকে মুসলিম জাতিকে হিফাযত করুন। আমীন।

ছুম্মা আমীন। والله اعلم بالصواب উত্তর লিখনে লুৎফুর রহমান ফরায়েজী সহকারী মুফতী-জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া-ঢাকা ইমেইল প্রশ্নকারী- Faruk Mozumder এবং ba lok সহ আরো অনেকে জবাব: بسم الله الرحمن الرحيم উল্লেখিত এ বিশাল বক্তৃতাটি সাধারণ নজরে একবার তাকালেই স্পষ্ট হয়ে যায় এটি রাসূল সাঃ এর হাদীস নয়। হাদীসের নামে জঘন্য মিথ্যাচার। তাবলীগ জামাতের মত একটি মকবুল দ্বীনী জামাতকে ভ্রান্ত প্রমাণের জন্য ইংরেজ সৃষ্ট কথিত আহলে হাদীস দলটি কি মারাত্মক ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করেছে এ প্রোপাগান্ডার প্রকৃত হালাত দেখলেই গা শিউড়ে উঠবে। উল্লেখিত জাল ও বানোয়াট কথাটি প্রমাণে কতগুলি মিথ্যাচার ও জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে তার কয়েকটি ফিরিস্তি এক নজরে বুলিয়ে নিন- জালিয়াতি নং-১ বক্তব্যটির শুরুতে হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ এর নাম বলে তারপর রাসূল সাঃ এর দিকে নিসবত করে সুদীর্ঘ মনগড়া বর্ণনাটি লিখার পর যেভাবে হাদীসের কিতাবের রেফারেন্স দেয়া হয়েছে, একজন স।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.