আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ড্রাইভিং লাইসেন্সের রমরমা বাণিজ্য বিআরটিএ’র উত্তর জোন

বিআরটিএ উত্তর জোনে চলছে ড্রাইভিং লাইসেন্সের রমরমা বাণিজ্য। প্রতি সপ্তাহে শুধু লাইসেন্স খাতেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দালালচক্র হাতিয়ে নিচ্ছে ন্যূনতম ২৫ লাখ টাকা। মাসে যার পরিমাণ প্রায় এক কোটি টাকা। সব কিছু ঠিক থাকার পরও ঘুষ না দিলে লাইসেন্স মেলে না এখানে। আবার টাকা দিলে নামমাত্র পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ঘরে বসেই পাওয়া যায় ড্রাইভিং লাইসেন্স।

আর এসব কিছুই এখানে ওপেন-সিক্রেট। ড্রাইভিং লাইসেন্সকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী একটি চক্র। বিআরটিএ’র ঢাকা সার্কেল (উত্তর)-এর সহকারী পরিচালক ও পরীক্ষা গ্রহণের সাথে সংশ্লিষ্টরা ওতপ্রোতভাবে এ দুর্নীতির সাথে জড়িত। এদিকে যথাযথ পরীক্ষা ছাড়াই লাইসেন্স দেয়ায় প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনা। জানা যায়, ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রতি সপ্তাহে ৪ দিন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় বিআরটিএ’র দক্ষিণ জোন ইকুরিয়ায়।

পেশাদার ও অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য সরকার নির্ধারিত ফি ছাড়াও বাড়তি ন্যূনতম ২ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত গুণতে হয় পরীক্ষার্থীদের। তা না হলে লাইসেন্সের জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয় আবেদনকারীকে। এসব টাকার মধ্যে ১৫শ’ টাকা পান পরীক্ষা গ্রহণকারী কর্মকর্তা ও মোটরযান পরিদর্শকরা। আরকেটি অংশ পান লইসেন্স শাখার সহকারী পরিচালক। সূত্র জানায়, সহকারী পরিচালক প্রতি মাসে লাইসেন্সের পরিমাণ হিসেব করে তার ভাগের অর্থ নিয়ে নেন।

মূলত নূর হোসেন, নাদের হোসেন ও আব্দুল খালেক পরীক্ষা গ্রহণ কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট। তাদের সাথে স্থানীয় দালাল চক্রের রয়েছে বিশেষ সখ্যতা। সূত্র জানায়, প্রতি সপ্তাহে পেশাদার ও অপেশাদার মিলিয়ে (মোটরসাইকেল ও ভারী যান ব্যতীত) ৬শ’ থেকে ৭শ’ পরীক্ষার্থী ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে কতজন উত্তীর্ণ হয়; তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যন জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) মো. মোহসিন। তবে পরীক্ষায় অংশ নেয়া ৮০ শতাংশকেই অর্থের বিনিময়ে উত্তীর্ণ হতে হয় বলে সূত্র জানায়।

প্রতিজনের কাছ থেকে ঘুষ হিসেবে ৫ হাজার টাকা করে গড়ে ৫শ’ পরীক্ষাথীর কাছ থেকে প্রতি সপ্তাহে এ চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছে ২৫ লক্ষ টাকা। সূত্র মতে, খালেক, সামসু, আরিফ, বাচ্চু, ফায়েক, বাবলু, শশিসহ ১০-১২ জনের একটি শক্তিশালী গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করছে ড্রাইভিং লাইসেন্স শাখাটি। খালেক এদের গ্রুপ লিডার। মিরপুর সনি সিনেমা হলের সামনে পূর্ণিমা টেকনিক্যাল নামে খালেকের একটি নামসর্বস্ব ড্রাইভিং স্কুল আছে। মূলত এ স্কুলসহ অন্য আরো কয়েকটি ট্রেনিং স্কুল থেকে সেসহ অন্যরা পরীক্ষার্থীদের সাথে চুক্তি করে।

বিআরটিএ সূত্রে জানা যায়, ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে একজন পরীক্ষার্থীকে ৫টি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। এগুলো হলো লিখিত, মৌখিক, জিগজ্যাগ, র‌্যাম ও রোড। এ ৫টি পরীক্ষায় পাশের কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে ন্যূনতম ২ থেকে ১০ হাজার টাকা। গত ৫-৬ মাস আগে ড্রাইভিং লাইসেন্স খাতে এসব দুর্নীতি বন্ধ করতে একজন ম্যাজিস্ট্রেট সরাসরি উপস্থিত থাকতেন পরীক্ষা গ্রহণের সময়। সেই সময় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও বর্তমানে আবার আগের অবস্থা ফিরে এসেছে এখানে।

এসব বিষয়ে লাইসেন্স শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক মো. মোহসীনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এক সময় এখানে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে কিছুটা অনিয়ম হলেও এখন নেই। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।