আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ট্রানজিট : ওজন ও দূরত্বের ভিত্তিতে মাসুল আদায়

ভালবাসি মাসুলের বিনিময়ে ভারতকে ট্রানজিট দেয়ার সুপারিশ করেছে ট্রানজিট বিষয়ক কোর কমিটি। তবে এ সময় বিপজ্জনক কোনো পণ্য পরিবহন করতে দেয়া হবে না। সাধারণ পণ্যের জন্য দূরত্ব ওজনের ওপর ভিত্তি করে মাসুল আদায় করা হবে। তবে কী হারে মাসুল নেয়া হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, কোর কমিটি প্রতি কিলোমিটার এবং ওজনের ওপর ভিত্তি করে মাসুল বা ফি নির্ধারণ করেছে।

এছাড়া পণ্য ভেদেও মাসুলের তারতম্য হবে। একই সঙ্গে আদায় করা হবে পরিবেশেগত ক্ষতির ফি, দুর্ঘটনার ফি, পরিবহন ফি, অবকাঠামো উন্নয়ন ফি, ট্রানজিট ট্রাফিক ফি এবং নিরাপত্তা ফি। তবে তা আলাদাভাবে নেয়া হবে না। সব ফি সমন্বয় করেই প্রবেশ পথে ফি আদায় করা হবে। এ জন্য একটি ট্রানজিট অথরিটি গঠন করা হবে।

এছাড়া বন্দর ফি, কাস্টম ফি, নিরাপত্তা ফি, স্টেন ফিসহ, যেসব ফি দেয়ার বিধান আছে তাও আলাদা দিতে হবে। জানা গেছে, যে পথে যানবাহন চলাচল করে সে পথে দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। তাই বিদেশি কোনো যানবাহন বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে চলাচল করলে এ জন্য তাদের আগেই নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিতে হবে। একই সঙ্গে দুর্ঘটনা কবলিত পরিবহনের ইন্স্যুরেন্স কী পদ্ধতিতে আদায় হবে তাও নির্ধারণ করা হচ্ছে। এছাড়া শব্দ দূষণ, পানি দূষণ, পরিবেশ দূষণের বিষয়গুলো বিশেষভাবে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।

এছাড়া দেশের অভ্যন্তরে চলাচলরত যানবাহন যেসব ফি ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে থাকে তার সবটাই দিতে হবে বিদেশি যানবাহনকে। এ ক্ষেত্রে দেশি যানবাহন বিদেশি পণ্য পরিবহনে ব্যবহার হলে সে যানবাহনকেও একই পদ্ধতিতে তা পরিশোধ করতে হবে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, নদী ভাঙনের জন্য জাহাজ চলাচল ২০ শতাংশ দায়ী। নদী দিয়ে জাহাজ চলাচল করলে যে ঢেউ হয় তাতে নদীর পাড় ভেঙে যায়। তাই বিদেশি জাহাজ চলাচল করলে তাদের কাছ থেকে এর ক্ষতিও আদায় করা হবে।

দেশের কৃষি খাতের উন্নয়নের জন্য সরকার প্রতি লিটার ডিজেলে ২৬ টাকা ৩১ পয়সা ভর্তুকি দিয়ে থাকে। বিদেশি মাসুল : পৃষ্ঠা ২ কলাম ৬ কোনো যানবাহন যাতে এ সুবিধা না পায় তার পদ্ধতিও নির্ধারণ করেছে কোর কমিটি। সূত্র জানায়, বিদেশি কোনো যানবাহন দেশে প্রবেশ করার সময়ই জ্বালানির দাম রেখে দেয়া হবে। এক্ষেত্রে তারা জ্বালানি না নিলেও দাম দিয়ে যেতে হবে। আর তা নিতে হবে নির্দিষ্ট স্টেশন থেকে।

একই সঙ্গে লক্ষ্য রাখা হবে জ্বালানি তেল যাতে দেশের বাইরে চলে না যায়। তাই রাস্তার দূরত্ব অনুযায়ী তেল সরবরাহ করা হবে। কোর কমিটি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহারকারী দেশগুলোকে, বিশেষ করে ভারতকে প্রস্তাব দেয়া হবে; অবকাঠামোগুলো ডোনেশন হিসেবে উন্নয়ন করে দিতে। যদি ভারত তা মেনে নেয় তাহলে ট্রানজিট ফি অনেকাংশে কমে যাবে। এতে তাদের দেশের পরিবহন ব্যয়ও কম হবে।

জানা গেছে, কলকাতা থেকে ভারতের ওপর দিয়ে আগরতলা যেতে ১৬০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। আর কলকাতা থেকে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে আগরতলা যেতে ৪৭০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে। এর মধ্যে বাংলাদেশের অংশ হচ্ছে ৩৭০ কিলোমিটার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোর কমিটির এক কর্মকর্তা যায়যায়দিনকে বলেন, তারা ট্রানজিট ফি এমনভাবে নির্ধারণ করবেন যাতে একটি পরিবহনের বর্তমান ব্যয়ের তুলনায় কম হয়। আবার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের ব্যয় ওঠে লাভ হয়।

এখন এই জটিল অংকই করা হচ্ছে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা শেষ করা হবে। জানা গেছে, ট্রানজিটের জন্য স্থল পথের যে সব রাস্তা তৈরি করা হবে তার আয়ু কাল ধরা হবে ২০ বছর। আর প্রতি ৪ বছর অন্তর একবার করে তা সংস্কার করা হবে। ফলে যেভাবেই হউক এ সময়ের মধ্যেই লাভসহ ব্যয় তুলে নেয়ার অংক করছে কোর কমিটি। প্রস্তাবিত রুটের রূপরেখা সড়ক রুট : ট্রানজিটের রুটের বাস্তবায়নে সম্ভাব্য করণীয় হিসেবে দিকগুলো নির্ভর করছে দূরত্ব, যাতায়াত সময়, আর্থিক ব্যয়ের সুবিধা চিহ্নিত করা।

তবে নদীপথে ও রেলপথে চলাচল অধিক সুবিধা প্রাপ্তি এবং সড়ক পথে যাতায়াতে অতিরিক্ত ব্যয়ভার বহন করতে হয়। যদিও নদী ও রেলপথ পরিবেশবান্ধব এবং দুর্ঘটনার আশঙ্কাও কম। তবে যেহেতু স্বল্প সময়ে পণ্য পরিবহনের প্রয়োজনীয় রয়েছে সেক্ষেত্রে সড়ক রুটের গুরুত্বও কোনো অংশে কম নয়। এ কারণে কোর কমিটি ট্রানজিট রুটের উন্নয়নে সাতটি সড়ক রুট প্রকল্প বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে রুট-১ প্রকল্প কলকাতা-পেট্টাপোল/বেনাপোল-ঢাকা-আখাউড়া-আগরতলা পর্যন্ত সড়ক।

রুট-২ প্রকল্পে উভয়দেশের মধ্যকার আগরতলা-আখাউড়া-চট্টগ্রাম। রুট-৩ সিলচর-সুতাকান্দি-চট্টগ্রাম বন্দর। রুট-৪ প্রকল্পের আওতায় সিলচর-সুতাকান্দি-পাটুরিয়া ফেরিঘাট-বেনাপোল/পেট্টাপোল-কলকাতা। রুট-৫ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশ-নেপালের মধ্যে সংযোগ সড়ক তৈরি। এর আওতায় ভুটানের ওপর দিয়ে স্যামড্রপ জনখার-গোহাটি-শিলং-তামাবিল-সিলেট-চট্টগ্রাম রুট উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

অন্যদিকে ভারত-বাংলাদেশ-নেপালের মধ্যদিয়ে রুট-৬ প্রকল্পের বাস্তবায়নের জন্য কাঠমুন্ডু-কাকারভিটা/ফুলবাড়ি-বাংলাবান্ধা-মংলা-চট্টগ্রাম সড়ক রুট নির্মাণ এবং রুট-৭ এর আওতায় ভুটান-ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে থিম্পু-ফুয়েন্টশলিং-জয়াগঞ্জ/ভুরিমারি-মংলা/চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ উন্নয়ন। রেল রুট : রেল রুট-১ এর আওতায় ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সিলচর-মহিষসান/শাহবাজপুর-ঢাকা আইসিডি-ধীরাসরাম বাংলাবান্দা ব্রিজ-দর্শনা গেজ-কলকতা রেল রুট। রুট-২ এর আওতায় উভয় দেশের মধ্য দিয়ে সিলচর-মহিষসান/শাহবাজপুর-চট্টগ্রাম বন্দর, রুট-৩ এর আওতায় আগরতলা-আখাউড়া-ঢাকা আইসিডি-ধীরাসরাম বাংলাবান্দা ব্রিজ-দর্শনা গেজ-কলকাতা, রুট-৪ প্রকল্পে আগরতলা-আখাউড়া-চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত রেলপথের উন্নয়ন ও চালুকরণ, রুট-৫ প্রকল্পে কলকাতা-পেট্টাপোল/বেনাপোল-খুলনা-মংলা বন্দর এবং রুট-৬ প্রকল্পে নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যকার রেলপথের উন্নয়ন ও চালুকরণে বীরগঞ্জ-কাটিহার-সিংহাবাদ/রোহনপুর-খুলনা অঞ্চলের যাতায়াত উন্নয়নে রেলপথের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এছাড়া অদূর ভবিষ্যতে ভারত-বাংলাদেশ-নোপাল ও ভুটানের মধ্যকার সম্পর্কোন্নয়নের ভিত্তিতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আগরতলা-আখাউড়া-ঢাকা আইসিডি-ধীরাসরাম-পদ্মা সেতু-বেনাপোল/পেট্টাপোল-কলকাতার রেল যোগাযোগের উন্নয়নের ওপর জোর দেয়ার জন্য রাজনৈতিক সরকারগুলোকে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। নেপাল-বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কের ভিত্তিতে জগবানি-বিরাতনগর-রাধিকাপুর/বিরল-পার্বতীপুর পর্যন্ত রেল পথের বিস্তৃতকরণ এবং ভুটান-বাংলাদেশের মধ্যে হাসিমারা-হলদিবাড়ি-শিলাহাটি-পার্বতীপুর-খুলনা পর্যন্ত রেলপথের প্রশস্তকরণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

নৌ-রুট : যদিও প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বর্তমানেও কয়েকটি নৌ রুট উন্মুক্ত রয়েছে। তারপরও ট্রানজিট প্রশ্নে গঠিত কোর কমিটি আরো কয়েকটি নৌ-রুট চালু করার পরামর্শ দিয়েছে। রুট-১ ভারতের ত্রিপুরা-মিজোরামের মধ্যে নৌ যোগোযোগের উন্নয়নে কলকাতা-নামখাতা-শেখবাড়িয়া-মংলা-কাউখালী-বরিশাল-চন্দপুর-ভৈরববাজার-আশুগঞ্জ-শেরপুর-জাকিগঞ্জ-করিমগঞ্জ পর্যন্ত নৌ যোগাযোগ বিস্তৃত করা। রুট-২ বাংলাদেশের সঙ্গে আসামের গোহাটি পর্যন্ত নৌ-পথ বিস্তৃত করতে কলকাতা-নামখাতা-শেখবাড়িয়া-মংলা-কাউখালী-বরিশাল-চন্দপুর-মাওয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাট-সিরাজগঞ্জ-চিলমারি-দইখাওয়া-ডুবুরি-পান্ডু-সিলেট এবং রুট-৩ ত্রিপুরা-মিজোরামের মধ্যকার প্রস্তাবিত কলকাতা-নামখাতা-শেখবাড়িয়া-মংলা-কাউখালী-বরিশাল-চন্দপুর থেকে নদীপথে আশুগঞ্জ এবং আশুগঞ্জ থেকে সড়কপথে আখাউড়া পর্যন্ত মাল্টিমডেল রুট চালু করার প্রস্তাব করেছে কোর কমিটি। এছাড়া ভবিষ্যৎ সম্পর্কোন্নয়নের ভিত্তিতে আসামের দক্ষিণাঞ্চল এবং ভুটানের পূর্বাঞ্চলে আরো দুইটি নৌ-রুট চালু করার পরামর্শ থাকছে।

এর প্রথম প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আসামের দক্ষিণাঞ্চলে প্রস্তাবিত নৌ-রুট ধুলিয়ান-গোদাগারি-রাজশাহী-পাকশি-দৌলতদিয়া-মাওয়া-ভৈরববাজার/আশুগঞ্জ/শেরপুর-জাকিগঞ্জ-করিমগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃতকরণ ও দ্বিতীয় প্রস্তাবে বলা হয়েছে-বাংলাদেশের সঙ্গে ভুটানের পূর্বাঞ্চলের নৌ যোগাযোগের আরো উন্নয়নে মংলা-কাউখালী-বরিশাল-চন্দ্রপুর-মাওয়া-পাটুরিয়া-সিরাজগঞ্জ-চিলমারি-দইখাওয়া-ডুবুরি নৌপথের বিস্তৃতকরণ এবং এরপর সড়ক পথে ভুটানে প্রবেশের পথ নির্মাণ করা যেতে পারে। Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.