আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ওরা উপজাতি, আদিবাসী নয়ঃ জোর করে আদিবাসী বানানোর মতলব কি ১

ছবিঃ উপজাতি অধ্যুষিত তিন পার্বত্য জেলা বিগত কয়েক বছর ধরে ঘটা করে পালন করা হচ্ছে কথিত আদিবাসী দিবস। মস্তিক বিক্রিকারী দেশীয় মিডিয়া এক্ষেত্রে নাটের গুরু হিসেবে কাজ করছে। সাথে আছে কিছু বাম ইয়াতিম ও কথিত শুশীল গ্রুপ। শত-সহস্র প্রমাণ হাজির করার পরেও ওরা মানতে রাজি নয় যে পার্বত্য অধিবাসীরা আদিবাসী নয়। বলতে গেলে গায়ের জোরে ও মিডিয়ার জোরে বলতে চাচ্ছে পার্বত্য এলাকার অধিবাসীরা নাকি কথিত আদিবাসী ।

আজ ৯ আগষ্ট সেই কথিত আদিবাসী দিবস যাকিনা ডাকঢোল পিটিয়ে পালন করা হচ্ছে ! বাংলাদেশের মোট আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার ৷ তার এক-দশমাংশ আয়তন জুড়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম৷ রাংগামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান-এ তিনটি জেলা নিয়ে পার্বত্য অঞ্চল গঠিত ৷ এ তিনটি জেলার মোট আয়তন ১৩,২৯৫ বর্গ কিঃ মিঃ ৷ যা পুর্ব তিমুরের সমান ও ইসরাইলের কাছাকাছি। ২০০১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী এ অঞ্চলের মোট জনসংখ্যা ১৩,৪৪,৩০৩ জন৷ তন্মধ্যে উপজাতীয় জনসংখ্যা ৬,৯৯,১৯৪ এবং অ-উপজাতীয় জনসংখ্যা ৬,৪৫,১০৯ জন ৷ এ অঞ্চলের উপজাতীয় অধিবাসীদের মধ্যে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তনচৈংগ্যা, ম্রো (মুরং), লুসাই, বোম, পাংখো, খুমি, চাক, খেয়াং প্রভৃতি উপজাতি রয়েছে ৷ অ-উপজাতীয়দের এ মধ্যে মুসলমান, হিন্দু ও খ্রিষ্টান ধর্মালম্বী প্রধান ৷ এসব উপজাতীয় ও অ-উপজাতীয় জন গোষ্ঠী তাদের নিজ নিজ ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, ঐতিহ্য ও কৃষ্টির স্বকীয়তা বজায় রেখে যুগ যুগ ধরে একে অপরের পাশাপাশি বসবাস করে আসছে ৷ পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলটি ১৮৬০ সনে একটি স্বতন্ত্র জেলার মর্যাদা লাভ করে৷ পরবর্তীতে এ অঞ্চল তিনটি জেলায় রূপান্তরিত হয় ৷ পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীরা গত কয়েক শতক উপজাতীয় হিসেবেই পরিচিত ছিল। হঠাত করে বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে ১৯৯৬-২০০১ (সঠিকভাবে বলতে গেলে ১৯৯০ এর পর) কথিত শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকেই এদেরকে আবার আদিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করার ব্যাপক প্রবনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এরা আসলে উপজাতী নাকি আদিবাসী, এব্যাপারে ইতিহাস, দেশী, বিদেশী বিশেষজ্ঞরাই বা কি বলেন, তার একটি সারসংক্ষেপ তৈরী করা যাক এভাবে-- ১. উপজাতিদেরকে সাধারনত বলা হয় Tribal, অপরদিকে আদিবাসীদেরকে বলা হয় Aborginals বা Indigenous people. Aboriginal কাদেরকে বলা হয়, এব্যপারে, Cambridge Advanced Learner's Dictionary লিখেছে a person or living thing that has existed in a country or continent since the earliest time known to people (অর্থাৎ, মানুষের জানার মধ্যে ইতিহাসে যতদূর যাওযা যায় সেই পর্যায় পর্যন্ত ঘেটে যদি দেখা যায় অর্থাৎ প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে কোন এলাকার বিশেষ জনগোষ্টি যদি ঐ এলাকায় বসবাস করে তাহলে তাদেরকে ঐ এলাকার আদিবাসী হিসেবে গন্য করা হয়) দেখুন এখানে, Click This Link ছবিঃ আমেরিকার নৃবিজ্ঞানের জনক লুইজ মর্গান আমেরিকার প্রখ্যাত নৃতত্ত্ববিদ লুইজ মর্গান যাকে আমেরিকার নৃবিজ্ঞানের জনক বলা হয়, তার সংজ্ঞানুযায়ী আদিবাসী হচ্ছে ‘কোনো স্থানে স্মরণাতীতকাল থেকে বসবাসকারী আদিমতম জনগোষ্ঠী যাদের উৎপত্তি, ছড়িয়ে পড়া এবং বসতি স্থাপন সম্পর্কে বিশেষ কোনো ইতিহাস জানা নেই। মর্গান বলেন, The Aboriginals are the groups of human race who have been residing in a place from time immemorial ….. They are the true Sons of the soil…. (Morgan, An Introduction to Anthropology, 1972) ।

দেখুন, http://en.wikipedia.org/wiki/Lewis_H._Morgan ২. চকমা বা পার্বত্য এলাকার অধিবাসীরা কি আদিবাসী? ছবিঃ ড সৈয়দ আনোয়ার হোসেন এব্যপারে বিশিষ্ট সেকুলার বুদ্ধিজীবী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর, বাংলা একাডেমীর সাবেক মহাপরিচালক, বর্তমানে ডেইলী সান পত্রিকার সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন লিখেছেন, ‘Most of the tribal people move into this land from areas now in Myanmar (former Burma) during the period from the 15th to the mid-nineteenth centuries. The tribes belonging to the Koki group were the earliest to settle, and the Chakmas came much later (War and Peace in the Chittagong Hill Tracts, P.5, published by Agamee Prakashni Dhaka, 1999). অপরদিকে নৃতত্ত্ববিদ T.H Lewin-এর মতে, ‘A great portion of the Hill tribes, at present living in the Chittagong Hills, undoubtedly came about two generations ago from Arakan. This is asserted both by their own traditions and by records in the Chittagong Collectroate (1869, P. 28)„ ৩. ছবিঃ ড এবনে গোলাম সামাদ বাংলাদেশের অন্যতম প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী ও একাত্তরের অন্যতম বুদ্ধিবৃত্তিক সৈনিক ড এবনে গোলাম সামাদ বলেন, “যাদের বলা হচ্ছে এ অঞ্চলের অধিবাসী, তারা এ অঞ্চলের অধিবাসী কতটা, তা নিয়ে ঘোর সন্দেহ আছে। এরা প্রায় সবাই আরাকান থেকে ইংরেজ আমলে এসে এই অঞ্চলে তাদের পূর্বপুরুষরা উপনিবিষ্ট হয়। এরা হলো কার্যত অভিবাসী (Immigrants)। এরা কোনো পৃথক জাতিসত্তার দাবিদার হতে পারে না। জাতিসত্তার দাবিদার হতে পারে না আন্তর্জাতিক নিয়মানুসারে।

কিন্তু এরা নিজেদের দাবি করছে পৃথক জাতিসত্তা হিসেবে, যার কোনো বৈধতা দেয়া যেতে পারে না। এ রকম কোনো দাবির সমর্থনে ইতিহাসের কোনো ধারাবাহিকতা খুঁজে পাওয়া যায় না। ......চাকমারা যে ভাষায় কথা বলেন, বিখ্যাত ভাষাতাত্ত্বিক গ্রিয়ার্সনের মতে সেটা হলো চট্টগ্রাম অঞ্চলের বাংলা উপভাষারই একটি রূপ মাত্র। মারমাদের ভাষা চাকমাদের ভাষা থেকে আলাদা। তারা যে ভাষায় কথা বলেন, তাহলো আরাকানি ভাষার একটি রূপ।

আরাকানি ভাষা আবার প্রাচীন বর্মি ভাষার সাথে সম্পর্কযুক্ত। ভূতাত্ত্বিক দিক থেকে চাকমা ও মারমা উভয়ই পরে বৃহৎ মঙ্গলীয় মানবধারায়। কিন্তু এরা উৎপত্তিগতভাবে এক নয়। চাকমাদের মাথার খুলির আকৃতি খুবই গোল, যা অন্যদের নয়। চট্টগ্রামের পার্বত্যাঞ্চলের বৃহত্তর মঙ্গলীয় মানব ধারার মধ্যে মারমা ও চাকমারাই প্রধান।

“ ( নয়া দিগন্ত, ০১/০৩/১০, Click This Link ) আদিবাসী, উপজাতি নিয়ে তার আরো তথ্যবহুল লেখা পড়তে ক্লিক করুন, Click This Link উল্লেখ্য বাংলাদেশের উপজাতি নিয়ে গোলাম সামাদের বই বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। ৪. ছবিঃ ড মোহাম্মদ আব্দুর রব আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ভূ-রাজনীতি বিশ্লেষক প্রফেসর ড, আবদুর রব, যিনি পার্বত্য-চট্রগ্রাম নিয়ে বহুদিন গবেষণা করেছেন ও কয়েকটি বইও প্রকাশ করেছেন, তিনি বলেছেন, উপজাতি এবং আদিবাসী। আদিবাসী বলতে ইংরেজিতে Aboriginals বা indigenous people-ও বলে। উপজাতি হলো Tribe এটা উপনিবেশিক শব্দ। আমাদের দেশে বাঙালি মূলধারার বাইরে যারা আছে তারা আদিবাসী নয়।

তাদের আমরা উপজাতি বলতেও নারাজ। বরং তাদেরকে বলা যেতে পারে ethnic বা নৃতাত্ত্বিক ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী । নৃতাত্ত্বিক সংজ্ঞায় আদিবাসী বা ‘এবোরিজিন্যালস’রা হচ্ছে- ‘কোনো অঞ্চলের আদি ও অকৃত্রিম ভূমিপুত্র বা Son of the soil। ’ প্রখ্যাত নৃতত্ত্ববিদ মর্গানের সংজ্ঞানুযায়ী আদিবাসী হচ্ছে ‘কোনো স্থানে স্মরণাতীতকাল থেকে বসবাসকারী আদিমতম জনগোষ্ঠী যাদের উৎপত্তি, ছড়িয়ে পড়া এবং বসতি স্থাপন সম্পর্কে বিশেষ কোনো ইতিহাস জানা নেই। ’ মর্গান বলেন, The Aboriginals are the groups of human race who have been residing in a place from time immemorial…they are the true Sons of the soil…’ (Morgan, An Introduction to Anthropology, 19972). উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, খর্বাকৃতির স্ফীত চ্যাপ্টা নাক কুঁকড়ানো কেশবিশিষ্ট কৃষ্ণবর্ণের ‘বুমেরাংম্যান’রা অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী বা যথার্থ এবোরিজিন্যালস।

তারা ওখানকার ভূমিপুত্রও বটে। ঠিক একইভাবে মাউরি নামের সংখ্যালঘু পশ্চাৎপদ প্রকৃতিপূজারী নিউজিল্যান্ডের ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী সেখানকার আদিবাসী। আমেরিকার বিভিন্ন নামের মঙ্গোলীয় ধারার প্রাচীন জনগোষ্ঠী যাদেরকে ভুলক্রমে ‘রেড ইন্ডিয়ান’ (উত্তর আমেরিকা) বলা হয় এবং সেন্ট্রাল আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকায় ইনকা, আজটেক, মায়ান, আমাজানসহ আরো অসংখ্য ক্ষুদ্র বিলুপ্ত কিংবা সঙ্কটাপন্ন (Extinct or Endangered groups) জনগোষ্ঠীকে সঠিক ‘এবোরিজিন্যালস’ বলে চিহ্নিত করা যায়। তথাকথিত সভ্য সাদা, ইউরোপীয় নতুন বসতি স্থাপনকারী অভিবাসীরা (A New Settlers and Immigrants) ঐসব মহাদেশের আদিবাসীদের নির্মম বিদ্বেষ, হিংস্র প্রবঞ্চনা, লোভ আর স্বার্থপর আগ্রাসনের দ্বারা আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডসহ অন্যান্য অঞ্চল থেকে বিলুপ্তির পথে ঠেলে দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকোসহ সেন্ট্রাল ও ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে ব্রিটিশ, স্প্যানিশ, ফরাসি, পর্তুগীজ প্রভৃতি উপনিবেশবাদী শক্তি বিগত ৩/৪টি শতক ধরে অত্যন্ত নিষ্ঠুরতার সাথে জাতিগত নির্মূল তৎপরতার মাধ্যমে (Ethnical Cleansing) এসব মুক্ত স্বাধীন আমেরিকান আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোকে পৃথিবী থেকে প্রায় নির্মূল করে দিয়েছে।

আজ ঐ শ্বেতাঙ্গ মার্কিন, ব্রিটিশ, অস্ট্রেলীয় এবং ইউরোপীয় তথাকথিত সুশিক্ষিত, ধ্বজাধারী সাবেক উপনিবেশবাদীদের নব্য প্রতিনিধিরা তাদের নব্য উপনিবেশবাদী অর্থাৎ তথাকথিত মুক্ত অর্থনীতিকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বার্থে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর নানা পশ্চাৎপদ রাষ্ট্রসমূহের জন্য ‘আদিবাসী সংরক্ষণ’ (Conservation of Aboriginal)-এর ধুয়া তুলে তাদের অর্থের মদদপুষ্ট এনজিও এবং মিশনারী চক্রের সুনিপুণ প্রচারণায় ও ষড়যন্ত্রে উপজাতিগুলোর জন্য মায়াকান্না শুরু করেছে। আরম্ভ করেছে ভয়ানক সূক্ষ্ম সম্প্রসারণবাদী ষড়যন্ত্র আর আধিপত্যবাদী চাণক্য চাল। এসব উপজাতি, আদিবাসী কিংবা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর এই মায়াকান্নার পেছনে মূলত ভূ-রাজনৈতিক, সামরিক, ভূ-অর্থনীতিক এবং সর্বোপরি আধিপত্যবাদী স্বার্থই প্রবলভাবে কাজ করছে। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় প্রকৃত আদিবাসীদের তারা যেখানে গণহত্যা, জাতিগত নির্মূলসাধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ধ্বংস করে দিয়েছে। সেখানে তারা এখন ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন সম্ভাবনাময় স্বাধীনচেতা উঠতি শক্তি- বিশেষ করে ইসলামী রাষ্ট্রগুলোতে এসব উপজাতি (Tribals) ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার পক্ষে ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন, জাতিসত্তার বিকাশ, আদিবাসী সংরক্ষণ’ ইত্যাদির কথা বলে ভাষাগত, বর্ণগত, ধর্মগত, সাংস্কৃতিক বিভাজন ও দাঙ্গা-হাঙ্গামার প্রেক্ষাপট তৈরির অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

সাম্রাজ্যবাদীদের ঐ হীন চক্রান্তের ফলশ্রুতিতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ইত্যাদি এককালীন ঔপনিবেশিক শক্তিদের নিয়ন্ত্রণাধীন ও আজ্ঞাবহ জাতিসংঘের (ইউএনও) সহযোগিতায় বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ার যৌক্তিক সার্বভৌম অঞ্চল তিমুর দ্বীপের পূর্বাঞ্চলকে (ইস্ট-তিমুর) বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। ইস্ট-তিমুরের এই বিচ্ছিন্নতার পেছনে আসলে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র কাজ করেছে এবং এখানেও আদিবাসী, উপজাতি ইত্যাদি বিষয়কে সামনে নিয়ে এসেছে সর্বনাশা খ্রিস্টবাদী এনজিও চক্র, মিশনারি গ্রুপ এবং তথাকথিত মানবাধিকার সংরক্ষণ (Human Rights activists) চক্র। এশিয়ার উদীয়মান ব্যাঘ্র (Emerging Tiger of Asia) ২০ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত মুসলিম রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ার তিমুর দ্বীপের কাছের দক্ষিণেই হালকা জনসংখ্যা অধ্যুষিত শ্বেতাঙ্গ ও খ্রিস্টান অধ্যুষিত অস্ট্রেলিয়াসহ ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান এবং অস্ট্রেলিয়া এই কৌশলগত ও অবস্থানগত দুর্বলতাকে চিরতরে দূর করাতেই খ্রিস্টবাদী পরাশক্তিসমূহ জাতিসংঘকে ব্যবহার করে অত্যন্ত সুকৌশলে ইন্দোনেশিয়া থেকে পূর্ব তিমুরকে স্বাধীন করে দেয়। আর ঐ একই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বাংলাদেশেও একই খ্রিস্টবাদী সাবেক ঔপনিবেশিক শক্তিসমূহ তাদের আধিপত্যবাদী ভূ-রাজনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থকে (Geo-political and Strategical Interests) সংরক্ষণ ও চরিতার্থ করার জন্য তাদের সেই কৌশলকে বাস্তবায়িত করতে চাচ্ছে। এ জন্য তারা বেছে নিয়েছে দেশের এক-দশমাংশ অঞ্চল পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী চাকমা, মার্মা, ত্রিপুরা, মগসহ বিভিন্ন বসতি স্থাপনকারী উপজাতীয় ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীগুলোকে।

একই সাথে এই সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী ও তাদের অর্থপুষ্ট এনজিও চক্র বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলে যেমন: সিলেটের খাসিয়া, মণিপুরী, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের গারো, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুরের বনাঞ্চলের কুচ রাজবংশীয় বহিরাগত ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীকে এদেশের আদিবাসী বলে প্রচার-প্রপাগাণ্ডা চালাতে শুরু করেছে এবং এর মাধ্যমে এদের এসব সংশ্লিষ্ট বৃহদায়তনের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের ভূমিপুত্র (Son of the soil) বলে প্রতিষ্ঠিত করার এক হীন চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও নৃতাত্ত্বিক ও জাতিতাত্ত্বিক ইতিহাস বিশ্লেষণে দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট ও প্রতিষ্ঠিত যে বাংলাদেশে বসবাসরত কোনো ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী এদেশের আদিবাসী নয়। বরং তারা পার্শ্ববর্তী কিংবা বিভিন্ন দূরবর্তী স্থান থেকে দেশান্তরী হয়ে এদেশের নানা স্থানে অভিবাসিত হয়ে ক্রমে স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে বসবাস করে আসছে। কিন্তু কোনোক্রমেই বাংলাদেশে বসবাসকারী চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো, খাসিয়া কিংবা কুচ রাজবংশীয় সাঁওতালরা এদেশের আদিবাসী হতে পারে না। বিস্তারিত এখানে, Click This Link ৫. চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর বিশিষ্ট গবেষক ড হাসান মোহাম্মদ লিখেছেন, “কয়েকটি দেশে আদিবাসীদের জন্য সংরক্ষিত অঞ্চলের ধারণাকে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে যারা প্রয়োগ করতে চান, তাদের উদ্দেশে বলা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয়রা এতদঞ্চলের আদিবাসীও নন।

ধারণা পাওয়া যায়, ষোড়শ শতাব্দী কিংবা তার আগে-পরে আগমনকারী উপজাতীয়রা এতদঞ্চলের আদিবাসী নন। ভূমি সংলগ্নতাসহ বিভিন্ন কারণে সংখ্যাল্প হলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূখণ্ডে আগে থেকে অন্যান্য ভাষা ও নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যধারী জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিল। এ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী ১৩টি উপজাতি সমন্বয়ে যে ‘জুম্ম জাতি’ (এক সময়ে জুম চাষে অভ্যস্ত) তত্ত্ব প্রচার করা হয়, সেটি তাত্ত্বিকভাবেও সঠিক নয়। গত শতাব্দীর ষাটের দশকে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির আগে এসব উপজাতির অনেকেই সমতল ভূমিতে চাষাবাদ করতেন। “ (নয়া দিগন্ত, ১৭ জ়ুলাই, ২০০৮, Click This Link ) ৬. বিগত আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার পর ২ ডিসেম্বর ১৯৯৭ ঢাকায় পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

মজার ব্যাপার হচ্ছে সেই চুক্তিতে পার্বত্যবাসীদের উপজাতি বলা হয়েছে, আদিবাসী নয়। The Chittagong Hill Tracts (CHT) peace accord was signed on December 2, 1997 in Dhaka at the Prime Minister's office between the government and the Parbatya Chattagram Jana Sanghati Samity (PCJSS) B. HILL DISTRICT LOCAL GOVT. COUNCIL/HILL DISTRICT COUNCILS Both sides agreed to change, amend, add and repeal the Hill District Local Government Council Acts, 1989. (Rangamati Hill District Local Government Counci1 Act, 1989, Bandarban Hill District, Local Government Council Act, 1989 and Khagrachari Hill District Local Government Council Act, 1989) and its various sections described as below : The term 'Upajati' shall be in force. (উপজাতি কথাটি ব্যবহার করা হবে) বিস্তারিত দেখুন এখানে, Click This Link ৭. বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশিত বাংলা এনসাইক্লোপিডিয়া হিসেবে পরিচিত বাংলাপিডিয়াতেও আদিবাসী হিসেবে কোন কিছুর স্থান নেই। আজকে যাদেরকে আদিবাসী হিসেবে পরিচিত করা হচ্ছে, বাংলা পিডিয়ার গবেষকরা তাদেরকে উপজাতি হিসেবেই অবহিত করেছেন। বিস্তারিত এখানে, Click This Link উল্লেখ্য বাংলাদেশের সংবিধানের কোন ভার্শনেই আদিবাসী বলে কোন শব্দের অস্ত্বিত ছিল না। ৮. রাজশাহী উপজাতীয় কালচারাল একাডেমীর সাবেক পরিচালক ড. মোঃ আজিজুল হক তার, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং আদিবাসী বিতর্ক শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছেন, এ দেশের ভূমিজ সন্তান বাঙালি এবং ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর সব সদস্যের কাছে আমার একটি বিনীত প্রশ্ন/প্রস্তাব, তিন দশক আগে বার্মার তৎকালীন স্বৈরাচারী সামরিক একনায়কের সীমাহীন অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন স্থানে মানবেতর জীবনযাপনকারী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কি মানবিক বিবেচনায় এ দেশের আদিবাসী বলে স্বীকৃতি দেওয়া যায়? অথবা বাংলাদেশী হিসেবে? নিশ্চয়ই দেশপ্রেমিক পাঠকমাত্রই এ প্রস্তাবে আঁতকে উঠছেন, দ্বি-মত পোষণ করছেন।

কারণ তারা এ দেশে শরণার্থীমাত্র। তারা যদি এ দেশের নাগরিক বা আদিবাসী না হন তবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষেরাও এককভাবে বাংলাদেশের আদিবাসী নন। কারণ রোহিঙ্গারা যেমন বাধ্য হয়ে এ দেশে এসেছেন বিংশ শতাব্দীতে, তেমনি চট্টগ্রাম বিভাগের সব ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ঠিক একই অঞ্চল আরাকান থেকে এবং বাধ্য হয়ে এ অঞ্চলে এসেছেন ষোড়শ ও সপ্তদশ শতকে। কয়েক শতকের ব্যবধান মাত্র। পার্থক্য এই যে, রোহিঙ্গারা বাঙালি ও বাংলাদেশী হওয়ার চেষ্টা করছেন কিন্তু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা এককভাবে নিজেদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি চাচ্ছেন।

কিন্তু তারা এ দেশের আদিবাসী নন। প্রকৃত প্রস্তাবে তারা এক একটি ক্ষুদ্র জাতি। স্ব স্ব গৌরবময় পরিচয়ে বাংলাদেশী। এ দেশের বৈচিত্র্যময় ও সমৃদ্ধ সংস্কৃতির অংশীদার হয়েছেন। বিস্তারিত এখানে, Click This Link ৯. ছবিঃ মেজর জেনারেল মোহাম্মদ শামীম চৌধুরী আদিবাসী ও উপজাতি নিয়ে আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীরও পরিস্কার ধারনা আছে।

দেখুন এই খবরটি, পার্বত্যাঞ্চলের তিন জেলায় বসবাসরত উপজাতিরা নয়, বাঙালিরাই ওই এলাকার আদিবাসী বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চট্টগ্রামের ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ শামীম চৌধুরী। চট্টগ্রাম সেনানিবাসের ডিভিশন সদর দপ্তরের আজ বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘আদিবাসী বলতে যেটা বুঝায় সেটা হচ্ছে, কোন একটি স্থানে যাদের বসবাস ইতিহাসের আগে অর্থাৎ কেউ জানে না কবে থেকে তারা বসবাস শুরু হয়েছে, সেই হিসেবে বাঙালিরাই ওই অঞ্চলের আদিবাসী। তিনি আরও বলেন, উপজাতিরা বহিরাগত। ঐতিহাসিকভাবে তারা এখানে এসেছেন।

তাদের ইতিহাস খুব অল্প দিনের। ’ বিস্তারিত এখানে, (১৯/০৮/২০০৯, আরটিএনএন, Click This Link ) বা দেশটিভির নিউজ, Click This Link ১০. বর্তমান সরকার আদিবাসী ও উপজাতি নিয়ে তার অবস্থান পরিস্কার করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা দিপু মনি ও আইন মন্ত্রী শফিক আহমেদ পরিস্কার ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, চাকমা বা অন্যান্য উপজাতিরা আদিবাসী নয়, ক্ষুদ্র নৃত্বাত্তিক জনগোষ্টি মাত্র। "ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলো আদিবাসী নয়: দীপু মনি। বাংলাদেশে বসবাসরত ক্ষুদ্র গোষ্ঠীগুলোর জাতিগত পরিচয় নিয়ে 'ভুল ধারণা' নিরসনে মঙ্গলবার বিভিন্ন দেশের কূটনীতিবিদ ও গণমাধ্যমের সম্পাদকদের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি।

বিদেশি দূতাবাস ও হাইকমিশনের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে এই ভূখণ্ডের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ব্যখ্যা করে তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যে ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী বসবাস করছে তারা এ দেশের 'অধিবাসী', কোনাভাবেই 'আদিবাসী' নয়। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে এইসব জাতিগোষ্ঠীকে 'উপজাতি'র বদলে 'ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী রাষ্ট্রদূতদের বলেন, নৃতাত্ত্বিক পরিচয়, ঔপনিবেশিক ইতিহাস ও জাতি হিসেবে বাঙালির পরিচয় নিয়ে বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতি এক ধরনের বৈশ্বিক 'ভুল ধারণার' শিকার হচ্ছে। সকালে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার পর দুপুরে কূটনীতিবিদদের সঙ্গে বৈঠক করেন মন্ত্রী। এরপর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় একই বিষয়ে সম্পাদক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রধানদের সঙ্গে বসেন তিনি। এই বৈঠকে একজন ইতিহাসের অধ্যাপক 'আদিবাসী' পরিচয়ের সংজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

তবে অধিকাংশ সম্পাদক মন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে একমত হন। দুই বৈঠকেই দীপু মনি জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র গোষ্ঠীগুলোকে বিভিন্ন ফোরামে 'আদিবাসী' হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে- যা নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন। আদিবাসী বিষয়ক জাতিসংঘের স্থায়ী ফোরামের ২০১১ সালের প্রতিবেদনের দুটি প্যারায় পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের ভুলভাবে 'আদিবাসী' উল্লেখ করার বিষয়টি তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সহযোগীরা যাতে এ জাতির সঠিক ইতিহাস জানতে পারে, সেজন্য এসব আন্তর্জাতিক নথিতে সঠিক তথ্য প্রকাশ করা উচিৎ। "বাঙালিরা অভিবাসী হিসেবে এই ভূ-খণ্ডে আসেনি। তারাই এই দেশের আদি অধিবাসী।

" বিস্তারিত এখানে, Click This Link ১১. ছবিঃ মেজর জেনারেল (অব) ইব্রাহীম বীর প্রতিক মেজর জেনারেল (অব) ইব্রাহীম বীরপ্রতিক দীর্ঘ দিন ধরে পার্বত্য চট্রগ্রামে সেনাবাহিনীর দ্বায়িত্বে ছিলেন। সেই দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে কয়েকটি বইও লিখেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি প্রক্রিয়া ও পরিবেশ পরিস্থিতির মূল্যায়ন তার মধ্যে অন্যতম। জেনারেল ইব্রাহীমের মতে পার্বত্য-চট্রগ্রামের অধিবাসীরা আদিবাসী নয়। বিশিষ্ট গবেষক ও সাবেক রাষ্ট্রদুত রাশেদ চৌধুরী ও মেজর জেনারেল (অব) ইব্রাহীমের সাক্ষাতকার দেখুন এখানে, আদিবাসী, উপজাতির সংগা ও উপোরক্ত গবেষকদের গবেষণা থেকে এটা পরিস্কার, পার্বত্য-চট্রগ্রামের অধিবাসীরা আদিবাসী নয়। বাস্তব অবস্থা বিশ্লেষণ করে অভিজ্ঞদের বদ্ধমূল ধারনা, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ডামা-ডোলের সুযোগ নিয়ে পশ্চিমা খৃষ্টাবাদী শক্তি দেশের এক দশমাংশ এলাকা পার্বত্য চট্রগ্রামকে আগামী ১০-১৫ বছরের মধ্যে একটি খৃষ্টান অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে জাতি সঙ্ঘের অধিনে গণভোটের মাধ্যমে আলাদা রাষ্ট্র করার প্রক্রিয়া প্রায়ই পাকাপোক্তই করে ফেলেছে।

তার প্রথম ও প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে তথাকথিত আদিবাসী ইস্যু। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.