নাজমুল ইসলাম মকবুল
দেশে মানবাধিকার নয় চলছে দানবাধিকার
নাজমুল ইসলাম মকবুল
বর্তমানে দেশের মানুষ যে চরম অশান্তির সাগরে হাবুডুবু খেতে খেতে কোন কুল কিনারা পাচ্ছেন না তা প্রতিদিনের সংবাদপত্রের পাতা ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের দিকে একটু নজর দিলেই পিলে চমকে যায়। চারিদিকে শুধু হতাশা আর হতাশা যেন আমাদেরকে অক্টোপাসের মতো ঘিরে ধরেছে। দিন দিন যে দুরবস্থার সয়লাব ধেয়ে আসছে তাতে দেশ তথা দেশের মানুষের অস্তিত্ব কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা একমাত্র মহান আল্লাহপাকই জানেন। দেশে মানবাধিকারের যে উদ্বেগজনক চিত্র, মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের গত জুলাই মাসের চিত্রে ফুটে উঠেছে তাতে আতকে না উঠে উপায় নেই।
গত ১লা আগস্ট অধিকারের রিপোর্টে বলা হয়, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে নতুন করে ৭ক ও খ অনুচ্ছেদ স্থাপন করায় জনগণের মৌলিক মানবিাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে।
লীপুরে অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলামের হত্যাকারীদের রাষ্ট্রপতি মা করে দেয়ায় অধিকারের প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয় হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা এভাবে মাপ্রাপ্ত হলে বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা হারাবে এবং যে কেউ অপরাধ করে পার পেয়ে যেতে পারে, সে দৃষ্টান্তই দেশে প্রতিষ্ঠিত হবে।
অধিকারের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, কোনো প্রকার জনমত তৈরি ও গণভোটের ব্যবস্থা ছাড়া একতরফাভাবে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সংবিধানের এ আমুল পরিবর্তনে অধিকার অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। বিরোধী দলের সম্পৃক্ততা এমনকি সংবিধান সংশোধন কমিটি যাদের ডেকেছে তাদের মতামতও উপেতি হওয়ায় অধিকার মনে করে এর ফলে দেশ এক গভীর সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংকটে নিপতিত হয়েছে। এ সংশোধনীর ফলে সমাজ ও রাজনীতির সর্বেেত্র অস্থিতিশীলতা তৈরি হবে এবং এতে দেশের গণতন্ত্রায়নের প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে তিগ্রস্ত হবে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, জুলাই মাসের শুরুতে হরতালের আগে ও হরতালের দিন ভ্রাম্যমান আদালতের নামে পথচারিদের বিভিন্ন মেয়াদে দন্ড দিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে।
এ বিচারে আত্মপ সমর্থনের কোনো পথ ছিলনা। রাজনৈতিক কারণে হরতালের সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের নামে এ ধরনের দন্ড না দেয়ার জন্য অধিকার সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে। অধিকারের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী গত একমাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় দেশে ৭ জন খুন হয়েছে এবং আহত হয়েছেন আরও ১২৪৭ জন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণরসায়ন বিভাগের স্নাতকোত্তর বিভাগের ছাত্র আব্দুল কাদেরকে আটকের পর নির্যাতনের ঘটনায় অধিকার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আব্দুল কাদেরের নির্যাতনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয় অধিকারের প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে জানানো হয় গত জুলাই মাসেও একজন নাগরিককে বিনা বিচারে হত্যা করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়া ভারতীয় বিএসএফ দেশের বিভিন্ন সীমান্তে জুলাই মাসে ৩ জন বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে একজনকে গুলি করে ও বাকি ২ জনকে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়।
তাদের প্রতিবেদনে জানানো হয়, জুলাই মাসে ৬০ নারী ও কিশোরী দুর্বৃত্তদের হাতে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে ৬ জন আত্মহত্যা করেছে।
এছাড়াও আরও ৭০ নারী ও শিশু সরাসরি ধর্ষণের শিকার হন জুলাই মাসে। এদের মধ্যে ২৩ জন নারী ও ৪৬ জন মেয়ে শিশু। ২৩ জন নারীর মধ্যে ২ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এবং ৬ জন গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ৪৬ জন মেয়ে শিশুর মধ্যে ৪ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা এবং গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ১০ জন।
এই যদি হয় গত এক মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতির খতিয়ান, তাহলে এক বছরের খতিয়ানের পাল্লা কতো ভারি হবে তা সহজেই অনুমেয়।
স¤প্রতি জনপ্রিয় অনলাইন দৈনিক ও বার্তা সংস্থা শীর্ষ নিউজ ডটকম ও সাপ্তাহিক শীর্ষ কাগজ সম্পাদক মোঃ একরামুল হককে একটি সাজানো চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন হলো এবং গ্রেফতারের পর থেকে আরও মামলা দায়েরের ধারা অব্যাহত রয়েছে। পত্র পত্রিকার মাধ্যমে জানা গেল মামলার বাদীর কোন হদিস নেই। এমনকি বাদীর ঠিকানাও ভুয়া। মামলার এজাহারে উল্লেখিত বাদীর ঠিকানায় খোজ নিয়ে তা নিশ্চিত করা হয়। এথেকে সহজেই অনুমিত হয় যে, সরকার যখনই যাকে ইচ্ছা করবে তখনই তাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেওয়া এখন ডাল ভাত।
আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার রিমান্ড ও নির্যাতন এবং অনলাইন দৈনিক ও বার্তা সংস্থা শীর্ষ নিউজ ডটকম ও সাপ্তাহিক শীর্ষ কাগজ সম্পাদক মোঃ একরামুল হককে গ্রেফতার একই সুত্রে গাঁথা বলেই প্রতিয়মান হচ্ছে। মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের পর যেভাবে দেশের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার একটি অংশ মুখে কুলুপ এটে বসেছিল ঠিক একরামুল হকের বেলায়ও একই চিত্র পরিলতি হচ্ছে। বর্তমান সরকার সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে আমার দেশ বন্ধ করে দিয়ে, মাহমুদুর রহমান ও একরামুল হককে গ্রেফতার করে নির্যাতনের মাধ্যমে দেশের স্বাধীন সংবাদপত্রের ইতিহাসে কলংক তিলক রচনা করলো। এই কলংক তিলক আমাদের কপালে আর কতোকাল থাকবে তা একমাত্র আল্লাহ পাকই জানেন। স¤প্রতি দেশের সর্বোচ্চ আদালতে যে তেলেসমাতি কারবার ঘটে গেল এবং আইনজীবিদের গ্রেফতার ও অবরুদ্ধ করে রাখার যে নতুন নিয়ম আমদানি হলো তাতে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি যে আরও নাজুক হচ্ছে তা আর বলার অপো রাখেনা।
যে দেশে মানুষের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলা ডালভাতে পরিণত হয় সেদেশে গণতন্ত্রের ফাঁকা বুলি শোভা পায়না। গণতন্ত্রের পুর্বশর্ত হচ্ছে সকল নাগরিক সমান অধিকার ভোগ করবেন। কিন্তু বাস্তবে আমাদের দেশে সকল নাগরিক সমান অধিকার ভোগ করতে পারছেন কী?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।