আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হঠকারী সিদ্ধান্তঃ দুই সপ্তাহের নোটিশে অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা

সত্যই সুন্দর, সুন্দরই সত্য- জন কীট্স জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৫-০৬ সেশনের চার বছর মেয়াদী অনার্স কোর্সের চতুর্থ তথা শেষ বর্ষের পরীক্ষার রুটিন দেওয়া হয়েছে গতকাল ২৮ জুলাই । রুটিন অনুযায়ী পরীক্ষা শুরু হবে আগস্টের ২১ তারিখ থেকে । নিয়মমাফিকভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে এই পরীক্ষা ২০০৯ সালের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল । সেশন জটের কারণে প্রতি বছরই পরীক্ষা পিছিয়েছে এবং তারই ধারাবাহিকতায় চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা বর্তমান সময় পর্যন্ত গড়িয়েছে । তাই পরীক্ষার রুটিন হয়েছে— স্বাভাবিবক দৃষ্টিতে এ বিষয়টিকে সবাই সাধুবাদই জানাবেন ।

কিন্তু আমি একজন পরীক্ষার্থী হিসেবে এই রুটিন গ্রহণ করতে পারছি না । জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্সের যেকোন পর্যায়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার অন্তত দুই মাস আগে পরীক্ষার ফর্ম ফিলাপ করা হয়ে থাকে, পরীক্ষা শুরু হওয়ার অন্তত ৩০ থেকে ৪৫ দিন আগে রুটিন দেওয়া হয় এবং যে বর্ষের পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে তার পূর্ববর্তী বর্ষের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার অন্তত ২/৩ মাস পরে পরবর্তী বর্ষের পরীক্ষা নেওয়া হয়ে থাকে । অর্থাৎ পরীক্ষার চূরান্ত প্রস্তুতির জন্য পরীক্ষার রুটিন দেওয়ার পরও পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয় এবং অনার্স পর্যায়ের পরীক্ষাগুলো এভাবেই অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে । সকলের অবগতির জন্য জানানো প্রয়োজন যে বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং এই পরীক্ষা আগস্টের ৭ তারিখে শেষ হবে । তৃতীয় বর্ষ পরীক্ষা শেষ হওয়ার দুই সপ্তাহের মাথায় শুরু করা হচ্ছে চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা যা প্রচলিত নিয়মের ব্যতয় ।

সাধারণতঃ তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার অন্তত ২ মাস পরে চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা নেওয়া হয় । এখানে আমাদের আপত্তির কারণ হলো যারা তৃতীয় বর্ষের মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিচ্ছে তাদেরকে মাত্র দুই সপ্তাহের প্রস্তুতি নিয়ে চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে। দুই সপ্তাহের প্রস্তুতি নিয়ে নিশ্চয়ই অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব নয় । অন্যদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় চতুর্থ বর্ষের ফর্ম ফিলাপ শেষ করেছে ২৮ জুলাই । প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ফর্ম ফিলাপের পরও কমপক্ষে ২ মাস পরে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

নিয়মমাফিকভাবে হলে সেটাই হওয়ার কথা । কারণ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় চতুর্থ বর্ষের ফর্ম ফিলাপ করার অন্তত ২ মাস আগে প্রথম বর্ষের ফর্ম ফিলাপ করে রেখেছে । সুতরাং প্রথম বর্ষের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দুইমাস আগে ফর্ম ফিলাপ করা প্রথম বর্ষের সাথে সদ্য ফর্ম ফিলাপ করা চতুর্থ বর্ষকে জুরে দিয়ে একসাথে পরীক্ষার রুটিন দিয়েছে। এটা শুধু নিয়মের ব্যতিক্রম ও অন্যায় নয়, ছাত্রদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এক ধরণের ছিনিমিনি খেলা ।

ধারণা করা যায়, সেশন জট কমানোর জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দুই বর্ষের পরীক্ষা একসাথে নেওয়ার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেশন জট কমানোর উদ্যেগ অবশ্যই সাধুবাদযোগ্য, কিন্তু তার জন্য কেন চতুর্থ বর্ষের ছাত্রদের বলি হতে হবে? দুই সপ্তাহের নোটিশে কিভাবে শিক্ষা জীবনের এমন এক গুরুত্ব পূর্ণ পরীক্ষার জন্য (অনার্স ফাইনাল) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের বাধ্য করতে পারে? যদি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনায় আমাদের পরীক্ষা আগষ্টেই নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে তাহলে তারা কেন তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা আরো আগে নেয়নি? চতুর্থ বর্ষের ফর্ম ফিলাপ কেন আরো আগে করেনি? কেন অন্তুত ৪৫ দিন আগে রুটিন দেয় নি? এ থেকে বুঝা যায় তারা এ সিদ্ধান্ত হঠাৎই নিয়েছেন, এবং ছাত্রদের প্রস্তুতির জন্য সময়ের সুযোগের কোন কথা না ভেবেই নিয়েছেন । এ সিদ্ধান্ত চূরান্ত হঠকারী। তাদের এই হঠকারী সিদ্ধান্তের জন্য আমরা বলি হবো কেন? পরীক্ষায় ভালো না করা মানেই মানোন্নয়নের জন্য আরো অন্তত দের বছরের জন্য পিছিয়ে যাওয়া। আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এমন ছিনিমিনি খেলার অধিকার কি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আছে? আমরা এ রুটিন মানি না, মানতে পারি না, পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য জন্য তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর থেকে অন্তত দের মাস সময় দিয়ে চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষার নতুন রুটিন করা হোক ।

আবু সালেহ সুমন সরকারি বাঙলা কলেজ, ইংরেজি বিভাগ, চতুর্থ বর্ষ, সেশন ২০০৫-০৬। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.