আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা আর গিনেজ বুক

আসলে লিখতে বসেছিলাম অন্য একটা বিষয়ে। তারপর মনে হল কমেডি ধাচের একটা কিছু লিখতে পারলে ভালো হত। কিন্তু কমেডি ধাচের কিছু না পেলেও দেশের আত্মসন্মান নিয়ে যে কমেডি করা যায়, সে রকম একটা বিষয় পেয়ে গেলাম আর তার বিরুদ্ধে কমেডি করার ইচ্ছাটাও রুখতে পারছিলাম না।
বলাবাহুল্য কিছুদিন আগে কোটি টাকা খরচ করে দেশের সর্বাধিক সংখ্যক লোকের কন্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়াকে গিনেজ বুকে স্থান দেয়ার যে প্রচেষ্টা আমাদের প্রান প্রিয় দেশের ভাড় মুখি গম্ভীর নেতারা করেছিলেন, তাদের চালে কি মনে হল না কিছু ভুল হয়ে গেল? চাল ভালোই চেলেছিল কিন্তু দাদাদের কষ্ট দিতে মনে হয় মনে চায় নাই খুব একটা। যতটা স্বতস্ফুর্ততা ছিল জাতীয় পতাকার রেকর্ড ভাঙ্গার ক্ষেত্রে , তার চেয়ে বেশি দেহায় মুরগী খাওয়ায় ডাইল হয়ে গেল না? কেনরে ভাই? ওইটা পাকি-স রেকর্ড, এই কারনে? আর এইটা ভাড়-স রেকর্ড ভাঙ্গার প্রতিযোগিতা , কারন কি এইটাই? তারমধ্যে মাল সাহেব কিছুদিন আগে ডিক্লেয়ার দিয়ে বসলেন কে অথবা কোন অংগ প্রতিষ্ঠান থেকে উনি চান্দা আদায় করবেন, তাও গ্রেন্ড টোটাল ১০০ কোটি টাকা।

কে কত টাকা তার থালে ঢালবেন তার লিষ্টিও মহাশয় দিলেন। ভালো, ভালোতো, ভাল না? উনি সৎ মানুষ, বলে কয়ে চান্দা নিচ্ছে। আর বাকি ছাগল স্যারেরা তো খালি ভ্যা ভ্যা করে কিন্তু গোমড় ফাক করে না। আরেকজন আছে, সিএনজি স্কুটারের মিটারে যাওয়াই ঠিক করতে পারল না, ফুটপাত রাস্তা খালি করে জ্যাম কমাতে পারল না, ইজি নামক আজব বাইক বন্ধ করতে পারল না, কিন্তু চিবায়া চিবায়া কথা বলে দেশ উদ্ধার করছে। সো কল্ড ফ্লাই ওভারের দুইটা ঠ্যাং খাটা করেই উদ্ভোধনের ঘোষনা দেন।

আর ওইদিকে বাকের ভাই, সাংস্কৃতিক দেলোয়ার না পলিটিক্যাল খেলোয়ার বোঝা মুশকিল, উনি আবার নতুন মন্ত্রীত্ব পেয়েছেন, কিছু একটা না দেখালে তো প্রেষ্টিজ থাকে না, তাই ব্যাপক এই জাতীয় পতাকা আর জাতীয় সংগীতের রেকর্ড ভাঙ্গার আয়োজন তারই অনুপ্রেরনা আর তত্ত্বাবধায়নের বদান্যতা লাভ করেছে এই বদনা মুখি অনুষ্ঠানের খবর টেলিভিশন ৭১, দেশ আর এটিএন এর মত আরো কিছু ছুচো চ্যানেল যা না তার চেয়ে বেশি ফলাও করে প্রচার শুরুও করল, আর বুবু আর বুবু পুত্রের গুন গানের তালে তালে গাইলো ও ভালো। সবচেয়ে মজার ব্যপার পুরো ইভেন্টের কাজ পেলেন বাকের ভাইয়েরী প্রতিষ্ঠান এশিয়াটিক আর তার অংগ প্রতিষ্ঠান। অমুনাফা ভোগী দ্বায়ীত্বে থেকে কিভাবে মুনাফা অর্জন করা যায়, এইটা একটা শেখার মত ব্যাপার বটে। আলী জাকের সাহেব এক সাক্ষাতকারে দেখলাম ধান ভাঙ্গতে শিবের গীত গেয়ে বাকের ভাইকে বাচানোর চেষ্টাও করছেন কিন্তু খেয়াল করে দেখেছেন কি কেউ অনুষ্ঠানের পরদিন থেকে আতকা ওই চ্যানেল গুলাতে গান বন্ধ, কোন খবর-ও নাই। যদিও গুন বন্ধ হয় নাই, তাইলে তো আবার রেজিষ্ট্রেশন বন্ধের ভয় থাকে, তাই না? তাই তো।



আবার আজকে ফেসবুকে একজনের একটা পোষ্টিং দেখলাম এইরকম, "সর্বাধিক মানুষ মিলে জাতীয় সঙ্গীত গাইবার রেকোর্ডটা হয় নাই। গিনেস কতৃপক্ষ রেকোর্ডটা গ্রহন করে নাই। মিডিয়া এবং চেতনা সমাজ নীরব কেনো!! চ্যানেল ৭১ এই বিষয়টা ধামাচাপা দিয়ে অন্য দিকে দৃষ্টি ফেরাতে মুসা ইব্রাহীমের এভারেশট জয় নিয়ে ফালতু রিপোর্টিং করেছিলো!!

রেকোর্ড বুক এবং তাদের ফেসবুক পেজ আর টুইটারে বিভিন্ন রেকোর্ড হওয়া এবং তার অন্তর্ভুক্তির সময় কালের ফারাক বিবচনা করে নিশ্চিত করে দিলাম, বিশাল অংকের টাকা ব্যায় করে সর্বাধিক মানুষ মিলে জাতীয় সঙ্গীত গাইবার রেকোর্ডটা হয় নাই বলেই গিনেস রেকোর্ড বুকে স্থান পায় নাই। এখন সাংস্কৃতিক পীর এবং মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর কি বলবেন?

নিজেরাই গিনেস রেকর্ডের ওয়েব পেজে দেখুনঃ
Click This Link

আমি হুবুহু তুলে দিলাম পোষ্টিং টা।

আচ্ছা আমাদের কি আর কোন কাজ নাই? আমাদের আর কোন সমস্যা নাই? যদি ধরেও নেই এই সরকারের গুরুত্বপূর্ন একটা কৌশল হচ্ছে সবাইকে ব্যস্ত রাখা, কোন না কোন একটা ইস্যু নিয়ে সবাইকে ব্যস্ত রাখা, সেটা জাতীয় সংগীত হোক, জাতীয় পতাকা হোক, যাত্রা পালাই হোক আর বিশ্ববিদ্যালয়ে খুনের ঘটনাই হোক, একটা কিছু হতে হবে এইটাই মূখ্য ব্যাপার।

একদিকে বিরোধী দল বলে এখন আর কিছু নাই, কথা বলবে কে আর শুনবে কে, সেটা চিন্তা করলে নিজেকেই বলদা মনে হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের ১২ মাসে তেরো পূজোর মত এখন জে এস সি, জি এজ সি, এস এস সি, এইচ আস সি আরো কত কি যে পরীক্ষা। বিতাড়িত বিরোধী দলরা আন্দোলনের সময়-ও পায় না। তো কথা বলবে কে? কত রকম খেলা আর নোংরামি চলছে। গোদের ওপর বিষ ফোড়ার মত আমাদের সবচেয়ে নাজুক জায়গা জাতীয় সংগীত আর জাতীয় পতাকাকে কেনো এই ইঁদুর দৌড়ে সামিল করা হল? একটা ছিল পাকিদের রেকর্ড আরেকটা ভাড়দের।

ঈশ্বরের অশেষ কৃপায় দুইটাই পণ্ডূল। কাজের কাজ যেটা হল পাকিরা প্যাক প্যাক করার আরেকটা সু্যোগ হাতিয়ে নিল আর এক সপ্তাহের মধ্যেই উষ্টা। অন্য দিকে দ্বিতীয় ইস্যুটা মানে হচ্ছে জাতীয় সংগীতের ইস্যুটায় নগদ নারায়ন, বাকীতেও যায়নাই, আবারো উষ্টা। আমাদের দাদাদের তলা চাটুনিরা কি জানতেন না, ভারতের জাতীয় সংগীতে লোকের সংখ্যা কত ছিল? ক্রাইটারিয়া গুলো কি? গিনেজ বুকে নাম উঠাতে গেলে কি করে আগের রেকর্ড ভাংতে হবে? খেলা ভাল, কিন্তু সেই খেলা যদি মা আর মাতৃকাকে নিয়ে শুরু হয়ে যায়, সেটা কি সুস্থ মস্তিষ্কের লক্ষন? সাকিব আল হাসান, দেশ রত্ন, এক সাক্ষাতকারে কিছু সত্য আর উচিত কথা বল্ল, সব যুক্তিবাদী সনাতনীরা কথার মারপেচে তুলোধুনা করতে ছাড়ল না। আমরা সবাই জানি, সে যা বলছে তা নির্ভেজাল সত্য।

তাহলে ভয় পাই কেনো? সে বলতে ভয় পেলো না আর আমরা শুনতে ভয় পেলাম। তেমনি এই ব্যপারটাতেও কিছু লোক টাকা হাতিয়ে নিল, কিছু লোক চাটুকারিতার সুযোগ পেল আর বাকি সবাই কিছুদিনের জন্য ব্যস্ত থাকল। মুখবন্ধ।

এখন কথা হচ্ছে অসুস্থ বলব কাকে? দেশ যে অথবা যারা চালায় তাদের নাকি তাদের চেলাদের? যারা কোটি টাকায় উদরপূর্তী করল তাদের? যাদের কারনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা লাঞ্চিত হল তাদের? যারা রোদে দাঁড়িয়ে গান গাইল তাদের? যারা উতসাহ নিয়ে সংগীত গাইতে গিয়ে পোটলা নিয়ে চলে আসল, তাদের? তারা নিশ্চয়-ই বুঝেছিল যে এই আহম্মকের দুনিয়া্য থেকে লাভ নাই, কোন ফায়দা নাই, পোটলা তো পাইছি। নাকি আসলে আমরা সবাই, যারা এইসব ভাড়ামি সহ্য করছি? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.