আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হয়তো টু-লেট, ঝুলতে আর বেশি সময় বাকি নেই।

অপ্রয়োজনে অনেক কথা বলে যাই, কিন্তু বলা হয়না আরো অনেক বেশী কথা- অনেক আপন মানুষদেরকে। তাইতো, এই খোলা চিঠি। হয়তো কারোর চোখে পরবে কোনদিন, যখন আমি থাকবোনা..... ২০০৬ এর কথা। শুক্রবার দুপুর। ঢাকার গোপীবাগ সেকেন্ড লেনের উল্টো দিকে।

রামকৃষ্শ মিশন রোড থেকে জজগলি বলে রাস্তায় ঢুকতেই, হাতের বাদিকের দ্বিতীয় বাসাটা । একটা বাড়ীর নতুন তৈরী হওয়া কাঠামো মাত্র। টু-লেট, ঝুলতে আর আট , কি নয় মাস লাগবে। বিকালে ইউনির্ভাসিটির ল্যাবে কাজ করতে যাবো, তাই জুম্মার নামাজের পরপরই বের হতে হবে- নতুবা রিক্সা পেতে ঝামেলা হবে। দুপুরের খাবার খেয়ে, যেতে যেতে বেশ খনিকটা দেরী হয়ে গেল।

সচরাচর এসময়টাতে রাস্তা-ঘাট ফাকা থাকে। তবে বাসা থেকে রামকৃষ্শ মিশন রোডের দিকে এগোলেই রিক্সা পাবো। কিন্তু আজ অনেক মানুষের ভীর- পুলিশও আছে। নতুন বাড়িটার সামনের জায়গাটাকে ঘিরে মানুষ দাড়িয়ে। জটলা এরিয়ে যাওয়া আমার স্বভাব।

আজ উপায় না দেখে ভীরের মাঝ দিয়ে যাবার সময় , হঠাৎ দেখলাম -রাস্তায় অনেক রক্ত আর পাশেই পরে আছে ইট। এরিয়ে যেতে পারলামনা। " জুম্মার নামাজ শেষে, এক যুবক বাসায় যাচ্ছিল। নতুন তৈরী হওয়া সেই বাড়ীর উপর থেকে এক টুকরী ইট, তার বাড়ী ফেরার রাস্তা আর শেষ হতে দেয়না সেদিন। " ভাবলাম- আম্মুর রান্নার দেরীর কারনে হয়তো, আমার উপর ইট না পরে, পরেছিল ঐ ছেলেটার উপর।

রাতে বাসায় ফেরার সময়ও দেখলাম, মানুষের জটলা। পরদিন পেপারের এক কোনায় ছাপা হলো খবরটা। কেইস হলো। পরিবর্তন কেবল বাসাটার সামনে ঝুললো "পাটের ছালা"। তার মাস ছয়েক পরের কথা।

রাত আটটার দিকে, আমার এক বন্ধু, আমার বাসা থেকে কিছু কাজ শেষে, হলে ফিরবে। ও বের হবার সাথে সাথে , আমার কি যেন বলার কথা মনে পরায় , মোবাইলে কল দিলাম। কল রিসিভ হলো। আমার বন্ধুর গলা শুনতে না পেয়ে আমি বার কয়েক, ওর নাম ধরে ডাকলাম। বেশ খানিকক্ষন পর কথা বললো সে- "আমি তোকে পরে ফোন করছি"।

দশ-পনের মিনিট পর আমার বন্ধু জানালো- আমার ফোনের কয়েক সেকেন্ড আগে, বাসার সামনের নতুন তৈরী হওয়া বাসাটার উপর থেকে , তার রিক্সার খোলা হুটের উপর কয়েকটা ইট আর কাঠের টুকরা পরায় , রিক্সার হুটটা ভেংগে গেছে। ওর কেবল পিঠে ব্যাথা পেয়েছে। কয়েক সেকেন্ডের জন্য, আমি হারিয়ে গেলাম- সেই শুক্রবারে। ভাবলাম- "কেবল পিঠে ব্যাথা" টাই কয়েক ইন্চির ব্যবধানে দ্বিতীয় আরেক শুক্রবারের জন্ম দিত। পরদিন, সকালে কাম্পাসে যাবার সময় ,দেখলাম কিছু ইট আর একটা কাঠের তক্তা রাস্তায় পরে আছে।

উপরে তাকিয়ে দেখলাম- বাড়ীর ঝুল বারান্দাটা, বাড়ির সীমানা ছাড়িয়ে রাস্তার উপর ঝুলছে। রাস্তার বেশ খানিকটা জায়গা ইতিমধ্যেই দখল করে নিয়েছে গ্যারাজের ঢালটা। সামনে দাড়িয়ে তদারকী করছেন , মালিকগোছের কেও। হয়তো টু-লেট, ঝুলতে আর বেশি সময় বাকি নেই। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।