আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রিভার্স ইভোল্যুশন

শারদশশীর অনন্ত অপেক্ষায় তোর চোখের সবুজ রঙ আকাশনীল হয়ে গেলে ঠিক ধরে নিস আমি হারিয়ে গেছি ঘাসেদের দলে... প্রথমে আসুন একটা ফেসবুক নোট পড়ি আমরা! প্রতিদিন খবরের কাগজ হাতে নেয়ার পর আর পড়ার রুচি হয়না ৷ কেন হবে? সেই একই খবর বারবার-খুন,ধর্ষণ্,ডাকাতি৷ আমার বিবেক ও এখন ঘুমিয়ে গেছে, এক ডাকে আর কত সারা দিবে? তাই হয়ত ‍খবর গুলো একটু বদলে গেল৷ পরিমল নামক শিক্ষক ভিকারুননিনসা স্কুলের এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে৷ ভাবি,এ আর নতুন কি? তবে এটাকেই নতুন করে তুলল কিছু কোমলমতি মেয়ে,যাদের বিবেক আমার মত ঘুমিয়ে যায়নি। তারা প্রতিবাদ করল রাজনৈতিক আর সংবাদমাধ্যেমর বাধা উপেক্ষা করে এবং মিডিয়ার চরম অসহযোগিতার পরও নিজেদের দাবি সবাইকে জানাতে সক্ষম হল ফেসবুক ও ব্লগের কল্যাণে। যখন ফেসবুক প্রতিবাদের মাধ্যম তখন এখানেই চলে আরেক খেলা৷ কিছু ফ্যান পেজ শুরু হয় অভিনব কায়দায়। ইভটিজিং সচেতনতা বাড়ানোর নামে মেয়েদের শরীর নিয়ে বিকৃত আড্ডা চলে এসব পেজে ৷এই পেজগুলোর পুরুষ(!) সদস্যরা মনে করে পরিমল ঠিক করেছে, সে তাদের অনুসরণীয় বীর! পেজগুলোর মন্তব্য আর ছবি দেখে শিউরে উঠতে হয়! বাংলায় যে কত নোংরা কথা থাকতে পারে তা আবিষ্কার করি৷ আমার বিবেক হেরে গিয়ে অসহায়ত্ত্ব হাহাকার করে উঠে, মনে হয় আমি মানুষ না, আমি মেয়ে! আমাকে নিয়ে পুরুষরা নোংরা কথা বলবে ,চিন্তা করবে,আর সুযোগ পেলেই ভোগ করবে! কিন্তু তাদের শাস্তি হবেনা কারন এদেশে খুনের আসামীও ক্ষমা পেয়ে যায়৷ খুব শখ ছিল আমার একটা মেয়ে হবে, তাকে যত্ন করে মানুষ করব৷ কিন্তু এখন চাইনা কারন মেয়েরা এই সমাজ এ মানুষ হয়না, তারা হয় ভোগ্যবস্তু৷ আবার ভাবি আমার ছেকে যদি অন্য কোন মেয়ের আত্মহত্যার কারন হয় অথবা নেশা করতে গিয়ে গণপিটুনি খায় কিংবা মিরসরাই এর শিশুদের মত মারা যায়! কি করব আমি!! এখন আমি দিশেহারা! আসেল আমি একজন বিবেকবর্জিত, অসহায়, দিশেহারা, হতবুদ্ধি মানুষ!! নাহ! ভুল বললাম, আমি তো মানুষ না! এই সমাজ আমাকে সেই স্বীকৃতিই তো দেয় না! তাহলে আমি কি? নোটটি এখান থেকে নেয়াঃ আমি আসলে কি? লিখেছেন হেভেনলি ক্লাউড কিছু কথা বলা প্রয়োজন। এসব পেইজে কেউ কখনো ঢুকে দেখেছেন কিনা আমি জানিনা।

অশ্লীল ফটো আপলোড আর অকথ্য ভাষায় "সমাজ উন্নয়নমূলক" কথাবার্তা বলা হয় এসব পেজে। অ্যাডমিনদের বক্তব্য হচ্ছে তারা নাকি সমাজে ঘটতে থাকা অনাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াচ্ছেন! এই পেইজগুলো র‍্যাপিডলি বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিনই হয়ত একটা করে নতুন পেইজ খুলছে। এই পেইজ গুলো কারা খোলে, আর এইসব পেইজ এত বিপুল সংখায় কারা লাইক করে? এরা আসলে মানুষ না। এরা পুরুষ... আপনি চান বা না চান এরা সেটা প্রমাণ করে ছাড়বেই!! এদের কাজ কর্ম দেখলে আমি নিজেও যে পুরুষ এটা ভাবতে ঘৃণা লাগে।

এসব পেজে কমেন্টস গুলো দেখলে মনে হয়, মেয়েরা মানুষ না। তারা শুধুই ভোগ্যবস্তু। আর তাদের অধিকার মেয়েদের সঠিক ভাবে ভোগ করার। বাংলায় যে এতসব নোংরা কথাবার্তা আছে, এসব পেজেই মনে হয় বেচে আছে সেগুলো। কোন সভ্য মানুষ এত কুৎসিত ভাষায় কথাবার্তা বলতে পারেনা।

আমরা একজন পরিমল কে শাস্তি দিতে পারি। এসব সহস্র লাইকার দের মাঝে যেসব পরিমলের বাস, তাদের আমরা কিভাবে শাস্তি দেব? কাল আমাদের ছেলে সন্তান রাও যে পরিমলের মন মানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠবে না এই গ্যারান্টি কি আমরা দিতে পারি? হয়ত বলবেন আমি আমার সন্তান কে ভাল-মন্দের শিক্ষা দিতে পারব, সে অমানুষ হবেনা। আপনি না হয় শেখালেন। কিন্তু সে যখন বন্ধুদের সাথে মিশবে, তখন যে একজন পরিমল এর মত চিন্তা করতে শিখবে না, তার কি কোন নিশ্চয়তা আছে? পোস্টে ছবির জন্য গুগলে ইমেজ সার্চ দিতে গিয়ে শিউরে উঠলাম! এগুলো কি দেখছি আমি? "মেয়ে" লিখে সার্চ দিলে যা দেখাচ্ছে, তাতেই বোঝা যায় আমাদের মানসিকতা কোন পর্যায়ে এসে ঠেকেছে! বড় করে দেখুন সমাজটা পচে গ্যাছে। এই সমাজে একজন মেয়ে একজন মেয়েই, মানুষ না সে! একটু একটু করে পচন ধরতে ধরতে এখন পচে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে।

এরপরও কি আমাদের ঘুম ভাংবেনা? আমরা কি আমাদের সন্তানদের জন্য এই ঘুণে ধরা সমাজ রেখে যাবো? যে সমাজে ৬ বছরের শিশুও পুরুষদের লোলুপ কামনার হাত থেকে রেহাই পায় না, আমি থুতু দেই সেই সমাজের মুখে! আমরা কি আবার অসভ্য বর্বর হয়ে যাচ্ছি??? রিভার্স ইভোল্যুশন?  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.