আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একদলীয় শাসনের কায়েমের পূর্বাভাস

নতুন লেখক সংবিধানে ৭(ক) ও (খ) সংযোজনে একদলীয় আধিপত্যের পথ সুগম হলো : অনুচ্ছেদ দুটি মৌলিক অধিকার খর্বকারী ও সংসদের হাত-পা বেঁধে ফেলেছে: পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত ৭(ক) ও ৭(খ) অনুচ্ছেদ দুটিকে অগ্রহণযোগ্য, বিপজ্জনক এবং সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে সংঘাতপূর্ণ বলে মত দিয়েছেন বিশিষ্ট আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, এ দুটি অনুচ্ছেদের মাধ্যমে দেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকার ও বাকস্বাধীনতাকে সম্পূর্ণরূপে হরণ করা হয়েছে। এতে সরকারের জন্য একদলীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পথকে আরও সুগম করে দেয়া হয়েছে। এ অনুচ্ছেদ দুটি দিয়ে সার্বভৌম সংসদেরও হাত-পা বেঁধে দেয়া হয়েছে। পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এ ধরনের গণবিরোধী বিধান সংবিধানে নেই।

দেশের জনগণের প্রতি সরকারের বিন্দুমাত্র আস্থা নেই। পঞ্চদশ সংশোধনীই তার অন্যতম প্রমাণ। তারা বলেন, গণভোট ছাড়া এভাবে সংশোধন করাটা সংবিধানের মূলনীতির বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ। সংবিধানের ৭(ক) ও (খ) সংযোজন করে সরকার জনগণকে মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। সংবিধানের ৭(ক) ও ৭(খ) অনুচ্ছেদের বিষয়ে আমার দেশকে দেয়া বক্তব্যে উপরোক্ত মতামত ব্যক্ত করেন সংবিধান প্রণেতা ও খ্যাতিমান আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, প্রখ্যাত আইনবিশারদ ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল এবং বিশিষ্ট সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক।

বিতর্কিত অনুচ্ছেদ দুটি : বিরোধী দলবিহীন একদলীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নতুন করে সংযোজিত ৭(ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘(১) কোন ব্যক্তি শক্তি প্রদর্শন বা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বা অন্য কোন অসাংবিধানিক পন্থায়- (ক) এই সংবিধান বা ইহার কোন অনুচ্ছেদ রদ, রহিত বা বাতিল বা স্থগিত করিলে কিংবা উহা করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করিলে; কিংবা (খ) এই সংবিধান বা ইহার কোন বিধানের প্রতি নাগরিকের আস্থা, বিশ্বাস বা প্রত্যয় পরাহত করিলে কিংবা উহা করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করিলে- তাহার এই কার্য রাষ্ট্রদ্রোহিতা হইবে এবং ঐ ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী হইবে’। একই অনুচ্ছেদের ২ নং উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোন ব্যক্তি (১) দফায় বর্ণিত- (ক) কোন কার্য করিতে সহযোগিতা বা উস্কানি প্রদান করিলে; কিংবা (খ) কার্য অনুমোদন, মার্জনা, সমর্থন বা অনুসমর্থন করিলে- তাহার এইরূপ কার্যও একই অপরাধ হইবে’। ৩ নং উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘এই অনুচ্ছেদে বর্ণিত অপরাধে দোষী ব্যক্তি প্রচলিত আইনে অন্যান্য অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ দণ্ডে দণ্ডিত হইবে’। ‘সংবিধানের মৌলিক বিধানাবলী সংশোধন অযোগ্য উল্লেখ করে নতুন করে সংযোজিত ৭(খ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা প্রথম ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, দ্বিতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, নবম-ক ভাগে বর্ণিত অনুচ্ছেদসমূহের বিধানাবলী সাপেক্ষে তৃতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ এবং একাদশ ভাগের ১৫০ অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের অন্যান্য মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদসমূহের বিধানাবলী সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা অন্য কোন পন্থায় সংশোধনের অযোগ্য হইবে’। ড. কামাল হোসেন : সংবিধান প্রণেতা ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী ড. কামাল হোসেন বলেছেন, গণভোট ছাড়া সংবিধানের মূল কাঠামো পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই।

অথচ এ কাজটিই বেআইনিভাবে করে ফেলেছে সরকার। এটা কোনো অবস্থায়ই গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। চাইলেই কেউ সংবিধান সংশোধন করতে পারে না। কোনো বিশেষ গোষ্ঠী বা ব্যক্তির মতামতের ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধন হতে পারে না। সংবিধান কারও উত্তরাধিকার থেকে পাওয়া সম্পত্তি নয়।

এভাবে সংশোধন করাটা সংবিধানের মূলনীতির বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ। বিতর্কিত অনুচ্ছেদ ৭(ক) ও ৭(খ) প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের সংবিধানে কোনো বিধানের ঘাটতি নেই। বরং প্রয়োগের ঘাটতি রয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, সংবিধানের ৭(ক) ও (খ) সংশোধন করে সরকার জনগণকে মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। সংবিধান হচ্ছে দেশের জনগণের মূল দলিল।

জনগণের মতামত নিয়ে সংবিধানে কী ঘাটতি আছে, তা সংশোধন করতে হবে। কারও খেয়াল-খুশিমত তা হতে পারে না। ব্যারিস্টার রফিক-উল হক : সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও খ্যাতিমান প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেন, ৭(ক) অনুচ্ছেদের কিছু অংশ দ্বারা সংবিধানের কোনো অনুচ্ছেদ রদ, রহিত বা স্থগিত করলে শাস্তির কথা বলা হয়েছে। আবার পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে কিছু অনুচ্ছেদ সংযোজন করা হয়েছে, যার প্রতি মানুষের সমর্থন নেই। এমন অনেকগুলো অনুচ্ছেদ পরিবর্তন ও সংযোজন করা হয়েছে যেগুলো গ্রহণ করার চেয়ে দেশের মানুষ সমালোচনাই বেশি করছে।

অগ্রহণযোগ্য ওই অনুচ্ছেদগুলোর বিষয়ে মানুষ যাতে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করতে না পারে, সেজন্যই এ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে নতুন বিধান সংযোজন করা হয়েছে। মূল কথা হচ্ছে, মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এ সংশোধনী আনা হয়েছে বলেই এটাকে টেকসই করতে পৃথকভাবে এ অনুচ্ছেদটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে সামরিক শাসন জারির পথকে রুদ্ধ করার কথা বলা হচ্ছে। আমি বলব, সামরিক শাসকরা সংবিধান পড়ে আসে না। তারা ক্ষমতা দখল করতে চাইলে পুরো সংবিধান বাতিল করে দিয়েই ক্ষমতা দখল করে।

সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সামরিক শাসনের পথ রুদ্ধ করা যাবে না। সামরিক শাসনকে নিরুত্সাহিত করতে হলে প্রয়োজন গণতন্ত্রকে সুসংহত করা। নতুন করে অন্তর্ভুক্ত ৭(খ) অনুচ্ছেদের বিষয়ে তীর্যক মন্তব্য করে ওয়ান-ইলেভেনের পর দুই শীর্ষ নেতা শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে আইনি সহায়তাদানকারী প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, সংবিধানের কোনো বিধান সংশোধন করা যাবে না, এটা আপনারা কোন আইনে পেলেন? সংসদ হচ্ছে সার্বভৌম। সংসদ সংবিধান সংশোধন ও সংযোজন করবে—এটাই হচ্ছে বিশ্বের স্বীকৃত রীতি। একবার সংবিধান সংশোধন হলে পরবর্তীতে ওই সংসদ সেটা আর সংশোধন কিংবা পরিমার্জন করতে পারবে না—এমন কোনো বিধান বিশ্বে নেই।

ক্ষমতার জোরে সংবিধানে এ ধরনের পরস্পরবিরোধী ও অসঙ্গতিপূর্ণ বিধান সংযোজন করা যায়। তবে তার ভবিষ্যত্ খুব ভালো হয় না। অতীতে ক্ষমতার জোরে সংবিধানের ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পরিবর্তে একদলীয় বাকশাল কায়েম করা হয়েছিল। সেখানে বঙ্গবন্ধুর ব্যাপারে এ বিধানও সংযোজন করা হয়েছিল যে, ‘ধরে নিতে হবে তিনি নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি’। অথচ নির্বাচনই হয়নি।

দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে এ ধরনের উদ্ভট সংশোধনী আনা যায়; কিন্তু সেটার পরিণাম ওই ৪র্থ সংশোধনীর মতোই হবে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীকে অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে দেশের শীর্ষস্থানীয় এই আইনজীবী বলেন, সংবিধান কোনো ব্যক্তিবিশেষের জন্য নয়। সংশোধিত সংবিধানের মাধ্যমে হয়তো আমি ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হতে পারি; কিন্তু আমাকে দেখতে হবে দেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীর দিকে। সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধন হলে সেটা হবে জাতির জন্য কল্যাণকর। খন্দকার মাহবুব হোসেন : সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, ‘সংবিধানের কোনো বিধান সংশোধন কিংবা সংযোজন ও পরিমার্জন করা যাবে না’ এ ধরনের কোনো বিধান বিশ্বের কোনো সভ্য দেশের সংবিধানে রয়েছে বলে আমার জানা নেই।

সংবিধান সংসদে জনগণের প্রতিনিধিদের দ্বারা রচিত হয় আবার তাদের দ্বারাই সংশোধন ও সংযোজন হয়। বর্তমান সরকার উচ্চ আদালতের বিতর্কিত কিছু রায়ের বরাত দিয়ে ঢালাওভাবে সংবিধানের ৫০টির অধিক বিধান সংশোধন ও কিছু অনুচ্ছেদ সংযোজন করেছে। অথচ এজন্য ক্ষমতাসীন সরকার জনগণের কাছ থেকে কোনো ম্যান্ডেট নেয়নি। দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সরকার সংবিধানকে একটি দলীয় ইশতেহারে পরিণত করেছে। ভবিষ্যতে যাতে তাদের এ দলীয় ইশতেহার ঠিক থাকে এবং যাতে কেউ এটা পরিবর্তন করতে না পারে সেজন্য সাংবিধানিক ও বেআইনিভাবে ৭ অনুচ্ছেদের পর ৭ক ও ৭খ অনুচ্ছেদ নামে আরও দুটি অনুচ্ছেদ অন্তর্ভুক্ত করেছে।

জনপ্রতিনিধি ও ভবিষ্যত্ সংসদের ক্ষমতাকে খর্ব করা হয়েছে। এটা জাতির কাছে মোটেও গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। সংবিধান কোনো ধর্মগ্রন্থ নয়। এটা মানুষের জন্য মানুষের তৈরি একটি বিধান। সময়ের প্রয়োজনে ও দেশের কল্যাণে জনপ্রতিনিধিরা এটা সংশোধন করবেন।

এটাই স্বীকৃত রীতি। অথচ ৭খ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে সে পথ রুদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। সরকার এ সংশোধনী নিয়ে নিজেই সন্দিহান। জনগণের প্রতি তাদের বিন্দুমাত্র আস্থা নেই। এ কারণেই তারা সংশোধনীর বিষয়ে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

এটা মূলত জনগণের প্রতি সরকারের চরম আস্থাহীনতার বহিঃপ্রকাশ। ক্ষমতাসীনদের মনে রাখা উচিত ছিল ৪র্থ সংশোধনীর কথা। আওয়ামী লীগের দলীয় লোকেরাও বিতর্কিত ওই সংশোধনীকে মেনে নিতে পারেনি। পঞ্চদশ সংশোধনীর ভবিষ্যত্ও একই দিকে যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি। অধ্যাপক আসিফ নজরুল : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, নতুন করে সংযোজিত ৭ক ও ৭খ সংবিধানের মূল কাঠামোর সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে সাংঘর্ষিক।

আনোয়ার হোসেন মামলার রায়ে বলা হয়েছে, সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদ হচ্ছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অনুচ্ছেদ। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এই ৭ অনুচ্ছেদের পরে ৭ক ও ৭খ নামে আরও দুটি অনুচ্ছেদের সংযোজনই হচ্ছে বেআইনি ও সংবিধানের মূল চেতনার পরিপন্থী। তিনি ৭ক ও ৭খ অনুচ্ছেদকে অত্যন্ত বিপজ্জনক উল্লেখ করে বলেন, ৭ক এর একটি অংশে অসাংবিধানিক পন্থায় সংবিধান বা এর কোনো অনুচ্ছেদ বাতিল ও স্থগিতকরণকে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু এই অনুচ্ছেদের আর একটি অংশে ‘এই সংবিধান বা ইহার কোন বিধানের প্রতি নাগরিকের আস্থা, বিশ্বাস বা প্রত্যয় পরাহত করিলে কিংবা উহা করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করিলে’ তাকেও রাষ্ট্রদ্রোহ হিসেবে আখ্যায়িত করে সর্বোচ্চ দণ্ডের বিধান করা হয়েছে। মূলত এই অংশের মাধ্যমে বাকশালীয় চেতনা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়েছে।

এই বিধানকে একদলীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা এবং বিরোধী দল ও ভিন্নমত দমন করার কাজে ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। এটি সংবিধানের যে কোনো অনুচ্ছেদ নিয়ে মুক্ত ও মননশীল চিন্তা, বাকস্বাধীনতা এমনকি বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনার পথ রোধ করতে পারে। পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এ ধরনের গণবিরোধী বিধান সংবিধানে নেই। ৭খ অনুচ্ছেদের বিধানের কথা উল্লেখ করে ড. আসিফ নজরুল সরকারের প্রতি পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, সংবিধানের মৌলিক নীতিমালাসহ অন্তত অর্ধশত অনুচ্ছেদকে মৌলিক কাঠামো হিসেবে আখ্যায়িত করে তা সংশোধনের অযোগ্য বলে বিধান করা হয়েছে। সংবিধানের ৮(২) অনুচ্ছেদ অনুসারে যে বিষয়গুলো আদালতের মাধ্যমে বলবত্ করার অধিকার পর্যন্ত নাগরিকদের নেই, তা কীভাবে মৌলিক কাঠামো হতে পারে? আর সংবিধানের মৌলিক কাঠামো ঘোষণা করার অধিকার সংসদকে কে দিয়েছে? এই ক্ষমতা এমনকি উচ্চ আদালত প্রয়োগ করতে পারেন কিনা, এ নিয়েই বিশ্বব্যাপী বিতর্ক রয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ বলেছেন, তারা ’৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাবেন। ৭খ বহাল থাকলে সেটা কীভাবে সম্ভব? তিনি বলেন, ভবিষ্যতে কোনো সংসদ রাষ্ট্রধর্ম বাতিল করতে চাইলে, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে, শিক্ষা-স্বাস্থ্যের অধিকার মৌলিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে তা করারও তো কোনো সুযোগ থাকবে না। ৭খ থাকলে সংবিধান নিয়ে বর্তমান সংসদের প্রায় সব চিন্তাচেতনাই বাংলাদেশের সব সংসদকে অনন্তকাল পর্যন্ত চূড়ান্ত ও অলঙ্ঘনীয়ভাবে মেনে নিতে হবে। যা ৪র্থ সংশোধনীর মতোই জাতির কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। তিনি বলেন, সংবিধান সংশোধন প্রশ্নে ভবিষ্যত্ সংসদ ও সাধারণ জনগণের ক্ষমতা মারাত্মকভাবে কেড়ে নেয়ার এসব অপচেষ্টা একদলীয় বাকশালী দর্শনের প্রকাশ ছাড়া আর কিছুই নয়।

ড. শাহদীন মালিক : সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, নতুন করে সংযোজিত ৭ক অনুচ্ছেদটি সরকার হয়তো সামরিক সরকারকে নিরুত্সাহিত করার উদ্দেশ্যে করেছে। সংশোধিত সংবিধান এখনও ছাপা হয়নি এবং তা সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছেনি। তার আগেই সরকারদলীয় সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বিরোধীদলীয় নেতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনেছেন। এ থেকেই এ অনুচ্ছেদের অপ-প্রয়োগের বিষয়ে একটা উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। আমার মনে হয় সুরঞ্জিত বাবু নিজেও এ সংশোধনীটা ভালো করে পড়ে দেখেননি।

ড. মালিক বলেন, ৭ক অনুচ্ছেদ যেমন-তেমন হলেও ৭খ অনুচ্ছেদ অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। এ অনুচ্ছেদ কোনো অবস্থায় গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘মৌলিক অধিকার’ সংশোধন তো দূরের কথা সংযোজনও করা যাবে না। সংবিধানে এ ধরনের বিধান সংযোজনের অধিকার কারও নেই। সংবিধান সংশোধন বা পরিবর্তন করা যাবে না, বিশ্বে এ ধরনের কোনো আইনও নেই।

উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ধরুন আজকে দেশের সব নাগরিক সিদ্ধান্ত নিল খাদ্য, বস্ত্র কিংবা শিক্ষাই হবে মৌলিক অধিকার। এগুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এখন সংবিধানে ৭খ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে এগুলো অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। তিনি বলেন, বিতর্কিত এই অনুচ্ছেদটির কারণেই এ ধরনের সংশোধনী দেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। তাছাড়া সংবিধানেই বলা হয়েছে যে, আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে জাতীয় সংসদ হচ্ছে সার্বভৌম।

এই অনুচ্ছেদের মাধ্যমে সংসদের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত দেয়া হয়েছে। (পত্রিকা থেকে নেওয়া) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.