আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গ্রিক মিথ: পার্সিউস

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ পার্সিউস । আমরা যে ক’জন গ্রিক বীরের কথা জানি, পার্সিউস তাদের মধ্যে অন্যতম। পার্সিউস জাতে শঙ্কর।

অর্থাৎ, পার্সিউস - এর মা মর্ত্যরে মানবী হলেও পার্সিউস- এর পিতা দেবতা জিউস; যে কারণে পার্সিউস- এর উপর অন্যান্য দেবতাদের আর্শীবাদ ছিল। পার্সিউস যে সমস্ত ঝুঁকিপূর্ণ অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন, সে সব অভিযানে পার্সিউস অন্যান্য দেবতাদের সাহায্য সহযোগীতা পেয়েছিলেন। বীর পার্সিউস- এর উপাখ্যানে যেমন রয়েছে দেবতাদের ভূমিকার তেমনি অপ্রতিরোধ্য নিয়তির অন্ধ আক্রোশ । দৈববাণী হয়েছিল যে: পার্সিউস তার মাতামহ কে হত্যা করবে, অনেক ঘটনার পর তাই কিন্তু হয়েছিল ... প্রাচীন গ্রিসের মানচিত্রে আর্গস-এর অবস্থান । সুপ্রাচীনকালে আর্গস এর রাজা ছিলেন অ্যাক্রিসিউস।

তার একমাত্র কন্যা ড্যানি। দৈববানী হয়েছিল: রাজা অ্যাক্রিসিউস তার দৌহিত্রের হাতে খুন হবেন। কন্যাকে ভালোবাসতেন রাজা অ্যাক্রিসিউস। হত্যা না করে কন্যাকে মাটির নিচে অন্ধকার কুঠুরিতে বন্দি করে রেখেছিলেন । রাজপ্রাসাদের প্রাঙ্গনের নিচে ছিল সেই অন্ধকার কুঠুরি।

কেবল প্রাঙ্গনের দিকে অল্পখানি সরু ছিদ্র ছিল নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য। দেবতা জিউস। দেবতা জিউস অনাঘ্রাতা কুমারীর স্পর্শলাভের জন্য উতলা হলেন। দেবতার পক্ষে সবই সম্ভব। স্বর্নবৃষ্টির রূপ ধারণ করে অন্ধকার কুঠুরিতে উপস্থিত হলেন দেবতা জিউস ।

রাজা অ্যাক্রিসিউস সবই জানলেন। তবে তিনি কোনও পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারলেন না। যথা সময়ে ড্যানি এক পুত্রসন্তানের মা হল। সে পুত্রের নাম রাখল পার্সিউস। ... দৌহিত্রের কান্না সহ্য হয় না রাজা অ্যাক্রিসিউস -এর।

তার কানে দৈববানী বাজে: রাজা অ্যাক্রিসিউস তার দৌহিত্রের হাতে খুন হবে। পার্সিউস জিউসপুত্র বলে তাকে হত্যাও করতে পারছেন না। ড্যানি ও তার শিশুপুত্রকে একটি বাক্সে ভরে সমুদ্রে ভাসিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন রাজা। উত্তাল সমুদ্রে একটি বাক্স ভেসে যাচ্ছে ... সমুদ্রদেবতা পোসাইদোন । সম্পর্কে দেবতা জিউস-এর ভাই।

দেবতা জিউস পোসাইদোন কে অনুরোধ করলেন সমুদ্রতরঙ্গ শান্ত রাখার জন্য। যা হোক। শেষ পর্যন্ত বাক্স ভিড়ল সেরিফস নামে এক দ্বীপে। ডিকটিস নামে এক যুবক সৈকতে মাছ ধরছিল। সে বাক্স খুলে অবাক।

ড্যানি ও শিশু পার্সিউস কে ঘরে নিয়ে এল ডিকটিস। আশ্রয় দিল। সেরিফস দ্বীপে বড় হতে লাগল পার্সিউস। পার্সিউস এখন সুদর্শন যুবক। সাহসী।

সেরিফস দ্বীপে তার বীরত্বের জন্য নাম ছড়াল। বিশেষ করে ডিসকাস নিক্ষেপে। প্রাচীন গ্রিসে ডিসকাস নিক্ষেপ জনপ্রিয় ছিল । পলিডিসটিস ছিল ডিকটিস এর ভাই। বেশ ধনী।

তার চোখ পড়ল ড্যানির ওপর। দেবতা জিউস-এর কথাই ভাবে সারাক্ষন। ড্যানি পলিডিসটিস-এর আচরণে ক্ষুব্দ। পলিডিসটিস এ প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয় ড্যানি। পার্সিউস ও বিরক্ত পলিডিসটিস-এর ওপর।

পলিডিসটিস পার্সিউস কে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে চায়। এই উদ্দেশ্যে পলিডিসটিস বলে, লোকে বলে তুমি নাকি বড় বীর পার্সিউস। পার্সিউস ঠোঁট ওল্টায়। পলিডিসটিস ক্রর হেসে বলে, মেডুসার মাথা কেটে আনতে পারবে? যদি পার তো তোমায় আমি বীর মানব। নইলে নয়।

পলিডিসটিস-এর দর্প চুরমার করতে মেডুসার মাথা কেটে আনার সিদ্ধান্ত নেয় পার্সিউস। ইটালিয় চিত্রকর Carvaggio -এর আঁকা Medusa (1595) গর্গন হল তিন শক্তিশালী দানবী । এরা তিন বোন। মেডুসা স্থেননো এবং ইউরায়ালি। এদের মধ্যে মেডুসা মরণশীল।

এই কারণে পলিডিসটিস তারই মাথা কেটে আনার জন্য বলেছিল । পার্সিউস কে দেবতারা এলেন সাহায্য করতের। হাজার হলেও পার্সিউস জিউসপুত্র। দেবতারা পার্সিউস কে ঢাল, বাঁকানো তরবারি, ডানা এবং আয়না দিয়েছিল। আয়না কেন? কারণ কেউ মেডুসার দিকে তাকালেই পাথর হয়ে যেত।

আয়না সে জন্যই। যেন মেডুসার দিকে না-তাকাতে হয়। কাটা মাথা রাখার জন্য একটি থলেও দিয়েছিল দেবতারা। যা হোক। তো গর্গনরা থাকে কই? পার্সিউস তো তা জানে না।

কে জানে? জানে গ্রেইয়াই। কে গ্রেইয়াই? গ্রেইয়াই হল গর্গনদের বোন। গ্রেইয়াই আসলে তিনজন। একটি মাত্র চোখ। পালাক্রমে তারা সে চোখ ব্যবহার করত।

যা হোক। গ্রেইয়াই কে কাবু করে পার্সিউস গর্গনদের ডেরার সন্ধান পেল । মেডুসাকে আঁকা হয়েছে নানাভাবে। মেডুসার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল মাথায় চুলের পরিবর্তে সাপ! পার্সিউস যখন গর্গনদের ডেরায় পৌঁছল তখন গর্গনরা ঘুমিয়ে ছিল। আয়নায় দেখে বাঁকানো তরবারিতে মেডুসার মাথা কেটে নিতে অসুবিধে হয়নি পার্সিউস- এর।

কাটা মাথা থলে তে ভরে নিল সে । এখন সেরিফস দ্বীপে ফেরার পালা। পার্সিউস আকাশপথে উড়ে যাচ্ছিল। অ্যাটলাস। পৃথিবী কাঁধে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল অ্যাটলাস।

পার্সিউস -এর প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল সে। থলে থেকে মেডুসার কাটা মাথা দেখিয়ে অ্যাটলাস কে পাথরে পরিনত করে পার্সিউস। অ্যান্ড্রোমিডা। পার্সিউস উড়ে যাচ্ছিল। হঠাৎই নীচের দিকে তাকিয়ে সমুদ্রর তীরে একটি তরুণি দেখে চমকে উঠল।

তরুণিকে যেন পাথরের সাথে বেঁধে রেখেছে। কি ব্যাপার? সে দ্রুত নীচে নেমে আসে। তরুণি সুন্দরী। পার্সিউস-এর ভালো লেগে যায়। কি ব্যাপার? তোমাকে কে বেঁধে রেখেছে? সমুদ্রদানো।

তরুণি বলল । কি নাম তোমার? অ্যান্ড্রোমিডা। পার্সিউস সমুদ্রদানো হত্যা করে। তারপর অ্যান্ড্রোমিডা কে নিয়ে ইথিওপিয়ায় যায়। কারণ অ্যান্ড্রোমিডার বাবা সেপেউস ছিলেন ইথিওপিয়ার রাজা।

রাজা সেপেউস সব শুনে বললেন, পার্সিউস, আমি অ্যান্ড্রোমিডা কে তোমার হাতে তুলে দিলাম। অবশ্য বিয়ের দিনই ঘটল ধুন্ধুমার ঘটনা। অ্যান্ড্রোমিডা কে পছন্দ করত ইথিওপিয়ার এক লোক। সে বিয়ের দিন লোকজন নিয়ে এসে রাজপ্রাসাদে হামলা করে। পার্সিউস মেডুসার কাটা মাথা দেখিয়ে আক্রমনকারীদের পাথরে পরিনত করে।

বিচিত্র কাহিনীতে পরিপূর্ণ বলেই পার্সিউস এর উপাখ্যান আজও বিশ্বময় এত জনপ্রিয়। আজও হলিউডি মুভির কাহিনীতে পার্সিউস এর উপাখ্যান-এর ছায়া দেখতে পাই ... সেরিফস দ্বীপে ফিরে এল পার্সিউস এবং অ্যান্ড্রোমিডা কে নিয়ে। অ্যান্ড্রোমিডা কে বুকে জড়িয়ে ধরল ড্যানি। (অবশ্য গ্রিকমিথে একথা লিখেনি ) ... তারপর ছেলেকে আড়ালে ঢেকে নিয়ে ফিসফিস করে ড্যানি বলল, পলিডিসটিস বাড়াবাড়ি করছে। ভেবেছে তুই মরে গেছিস।

সে আমাকে বিয়ে করতে চায়। যা কখনোই সম্ভব না! এ কথা শুনে পার্সিউস ক্রদ্ধ হয়ে ওঠে। সে পলিডিসটিস বাড়িতে যায়। পলিডিসটিস তখন বিবাহের আয়োজন করছিল। তুমি! পার্সিউস কে দেখে চমকে ওঠে পলিডিসটিস।

পার্সিউস ক্রর হেসে বলে, হ্যাঁ আমি। এই নিন মেডুসার কাটা মাথা। বলে থলে থেকে বার করে মেডুসার কাটা মাথা দেখাল পার্সিউস। মেডুসার কাটা মাথা দেখে পলিডিসটিসসহ অন্যরা পাথরে রূপান্তরিত হল । পার্সিউস কে দেবতারা ঢাল, বাঁকানো তরবারি, ডানা এবং আয়না দিয়ে সাহায্য করেছিলেন ।

পলিডিসটিস ধ্বংস হয়েছে। এবার ওই দৈব বস্তুগুলি দেবতাদের ফিরিয়ে দেয় পার্সিউস। এই সব ঘটনায় আমরা দৈববাণীর কথা বিস্মৃত হয়েছি । যে দৈববাণীতে বলা হয়েছিল যে ... পার্সিউস তার মাতামহ কে হত্যা করবে। অবশ্য গ্রিক পুরাণের রসিক রচয়িতা ঠিক মনে রেখেছেন।

ড্যানি এবার পার্সিউস কে সব খুলে বলল । আমার বাবা আর্গস- এর রাজা অ্যাক্রিসিউস। আমি জিউসপত্নী ... মাতামহের সঙ্গে দেখা করার জন্য পার্সিউস আর্গস নগরে আসে। তার সঙ্গে তার মা এবং অ্যান্ড্রোমিডা ছিল কি না সে বিষয়ে গ্রিক মিথ রচয়িতারা নীরব । ধরা যাক তারাও ছিল।

কিন্তু, রাজা অ্যাক্রিসিউস তো আর্গস নগরে নেই! দেখেন, গ্রিক পুরাণের রসিক রচয়িতা আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে কাহিনীতে কী রকম সাসপেন্স তৈরি করেছেন ... রাজা অ্যাক্রিসিউস কোথায়? তিনি স্পার্টায়। স্পার্টায়? কেন? স্পার্টায় বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার প্রধান অতিথি তিনি। পার্সিউস স্পার্টায় যায়। তখন ডিসকাস নিক্ষেপ চলছিল। এটি তার প্রিয় খেলা।

মাতামহকে খোঁজার বদলে ডিসকাস নিক্ষেপে অংশ নেয়। এবং অ্যাক্সিডেন্টালি ডিসকাস গিয়ে পড়ল দর্শক সারিতে । ওখানেই ছিলেন রাজা অ্যাক্রিসিউস। তিনি নিহত হলেন। দৈববাণী সত্য হল! তারপর? তারপর মাতামহের পরিচয় পেল পার্সিউস।

মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে সে। দেশত্যাগ করে। একটি সূত্রমতে পার্সিউস প্রাচ্যে চলে গিয়েছিল। কারও কারও মতে পার্সিউস পারস্য সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা ... কারও মতে আবার পার্সিউস মাইসিনি রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। যা হোক।

পার্সিউস- এর মৃত্যুর পর দেবতা জিউস তাকে নক্ষত্রলোকে অ্যান্ড্রোমিডার পাশে স্থাপিত করেছিলেন। পার্সিউস স্মরণে ভাস্কর্য! ছবি: ইন্টারনেট। তথ্যসূত্র: http://thanasis.com/perseus.htm Click This Link Click This Link Click This Link  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।