আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গ্রিক মিথ: ফিলোমিলা

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ গ্রিক উপকথায় পারিবারিক নির্যাতনের অজস্র মর্মান্তিক কাহিনী রয়েছে । তার মধ্যে ফিলোমিলার কাহিনীটি সবচেয়ে করুন বলে মনে হয়। এথেন্স নগরের রাজকন্য ফিলোমিলা কে ধর্ষন করে জিভ কেটে ফেলেছিল তারই বড় বোনের স্বামী তেরেউস ।

অনিয়ন্ত্রিত কাম কী রকম সর্বনাশা হয়ে উঠতে পারে গ্রিক উপকথার ফিলোমিলার বিষাদিত উপাখ্যানটি যেন তারই জ্বলন্ত নিদর্শন । যে উপাখ্যানে মা-বাবার পাপের চরম মূল্য দিতে হয়েছে এক নির্দোষ সন্তানকে। তেরেউসএর লাম্পট্য সুখের সংসার তছনছ করে দ্রুত এক ট্র্যাজিক পরিনতির দিকে চলে যায়। আজও যে দুঃখময় ঘটনার স্মৃতি বহন করছে হুপি, নাইটেঙ্গেল এবং চাকত পাখি ... প্রাচীন গ্রিসের মানচিত্রে থ্রাস এর অবস্থান। দক্ষিণের সুসভ্য গ্রিক জগৎ থেকে থ্রাসকে খানিকটা অনুন্নত ও বর্বর মনে করা হত।

থ্রাসের রাজা তেরেউস এথেন্স নগরের রাজা প্যান্ডিয়ন- এর দুঃসময়ে পাশে দাঁড়িয়েছিল । এতে করে দু’জনের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। এথেন্স নগরের রাজা প্যান্ডিয়ন-এর দুই কন্যা ছিল। প্রকনি এবং ফিলোমিলা। কৃতজ্ঞ রাজা তেরেউস-এর হাতে বড় মেয়ে প্রকনি কে তুলে দিলেন।

বিয়ের পর প্রকনি কে থ্রাসে নিয়ে যাবে তেরেউস। ফিলোমিলা ভাসল চোখের জলে । কত কত দিন বোনের সঙ্গে প্রাসাদের উদ্যানে একান্ত সময় কাটিয়েছে। সে বোন এখন সুদূর থ্রাসে চলে যাবে। আর কবে বোনকে দেখবে কে জানে।

প্রকনি কাঁদতে কাঁদতে ফিলোমিলাকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দিল। প্রকনি স্বামীর সঙ্গে থ্রাসে এল। এসে বড় নিরানন্দ বোধ করল। নির্জন প্রাসাদটি নিবিড় অরণ্যে ঘেরা । কাছেই এজিয়ান সমুদ্র।

সে সমুদ্র থেকে মেঘ ভেসে আসে। কালো মেঘেরর পুঞ্জে ফুটে ওঠে মিলার অনিন্দ্য মুখোশ্রী। প্রকনি হু হু করে কাঁদে। বিষন্ন প্রকনি। বছর ঘুরতে এক ফুটফুটে পুত্র সন্তানের মা হল প্রকনি।

বংশধর পেয়ে তেরেউস আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠল । সে ভালোবেসে শিশুটির নাম রাখল ইটিস। দিনে দিনে ইটিস হয়ে উঠল তেরেউস এর চোখের মনি। যা হোক। একদিন প্রকনি তার স্বামীকে বলল, আমার একবার এথেন্স যেতে ইচ্ছে করছে।

কেন? বারে, আমার কি মিলা কে দেখতে ইচ্ছে করে না বুঝি? তোমার এথেন্স যেতে হবে না। তেরেউস গম্ভীর কন্ঠে বলল। মানে। প্রকনি অবাক। কান্নাও পাচ্ছে।

মিলা কে ভীষণ ভীষণ ভালোবাসে প্রকনি। আজও মনে মনে কত কথা বলে মিলার সঙ্গে। তেরেউস বলল, আমিই এথেন্স যাব। ফিলোমিলা কে নিয়ে আসব। প্রকনি খুশি হল।

এবং বোনের অপেক্ষায় রইল। ওভিদ। (৪৩ খ্রিস্টপূর্ব-১৭ খ্রিস্টপূর্ব) বিশিষ্ট রোমান কবি। গ্রিক উপকথা অবলম্বনে ১৫ খন্ডে লিখেছিলেন Metamorphoses নামে একটি গ্রন্থ। ওভিদের সরস রচনার কারণে গ্রিক উপকথায় নতুন প্রাণ সঞ্চার হয়েছিল ।

ফিলোমিলার উপাখ্যানটিও ওভিদের রচনায় রয়েছে। তেরেউস এথেন্স পৌঁছল। সুন্দরী ফিলোমিলা কে দেখে তার মাথার ভিতরে নষ্ট পোকারা সব কিলবিল করে ওঠে। এ প্রসঙ্গে ওভিদ লিখেছেন: Tereus conceived an illicit passion for Philomela. যাহোক। তেরেউস এবং ফিলোমিলা জাহাজ উঠল।

জাহাজে ফিলোমিলা কে বিয়ের প্রস্তাব দেয় তেরেউস । (আসলে ওটা ছিল ফিলোমিলা কে একান্তে পাবার জন্য ছলনা ...) ফিলোমিলা সবই বোঝে। ও হাসতে হাসতে বলে, যাঃ! তাই হয় নাকি। আপনি রসিকতা করছেন দুলাভাই। তেরেউস - এর চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে।

সে আরও ভয়ানক পরিকল্পনা আঁটে। ফিলোমিলা মনে মনে বলে, আমি প্রকনিকে ভালোবাসি। আমি কেন ক্ষণিকের সুখের জন্য বোনের সংসার ভাঙতে যাব? যথাসময়ে জাহাজ থ্রাসের উপকূলে এসে ভিড়ল। উপকূলে গভীর অরণ্য। এই লেখার প্রারম্ভে বলেছিলাম: দক্ষিণের সুসভ্য গ্রিক জগৎ থেকে থ্রাসকে খানিকটা অনুন্নত ও বর্বর মনে করা হত।

জাহাজ থেকে নামার পরপরই ফিলোমিলার হাত ধরে টানতে টানতে অরণ্যে নিয়ে যায় তেরেউস । ... তারপর অরণ্যের গভীর নির্জনতায় ফিলোমিলাকে ধর্ষন করে পাষন্ডটা! তেরেউস গভীর অরণ্যে ফিলোমিলাকে ধর্ষন করছে। কাঠের ওপর এই খোদাই কাজটি ওভিদের রচনা অবলম্বন করে করা হয়েছে অস্টাদশ শতকে। ধর্ষনের পর ফিলোমিলা অত্যন্ত কাতর বোধ করে। সে প্রসঙ্গে ওভিড লিখেছেন: ফিলোমিলা বলল ... Now that I have no shame, I will proclaim it. Given the chance, I will go where the people are, Tell everybody; if you shut me here, I will move the very woods and rocks to pity. The air of Heaven will hear, and any god, If there is any god in Heaven, will hear me. (এখন আমার কোনও লজ্জ্বা নেই, আমি এই কথাই বলব।

আমাকে সুযোগ দেওয়া হলে আমি মানুষের কাছে যাব। বলব সবাইকে। যদি আটকে রাখ এখানে- আমি অরণ্য আর পাথর কে বলব দয়াশীল হতে । স্বর্গীয় বাতাস শুনবে আর দেবতারা, স্বর্গে যদি দেবতা থাকে তারাও শুনবে। ) তেরেউস রেগে ওঠে।

এবং ফিলোমিলার জিভ কেটে ফেলে! তারপর ফিলোমিলাকে অরণ্যের মাঝে এক পোড়োবাড়িতে ফেলে রেখে যায়। অসহায় ফিলোমিলা কাঁদে আর হাহাকার করে। পোড়েবাড়ির পাশ দিয়ে থ্রাসিয় শিকারীরা যাতায়াত করে। তাদের চিৎকার করে ডাকতে পারে না যন্ত্রণাকাতর ধর্ষিতা মেয়েটি । তারপর পরনের কাপড়ে সেলাই করে দুর্দশার কাহিনী বর্ননা করল ফিলোমিলা ।

এক শিকারী সেটি নিয়ে প্রাসাদে গেল এবং গোপনে প্রকনির কাছে পৌঁছে দিল। প্রকনি উদভ্রান্ত হয়ে অরণ্যে ছুটে আসে। বোনকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কাঁদে । অনেকক্ষণ। তারপর প্রতিশোধের পরিকল্পনা আঁটে।

এর পরের ঘটনা অতি ভয়ানক। ওভিদ লিখেছেন: প্রাসাদে ফিরে প্রকনি তার ছেলে ইটিস কে হত্যা করে! তারপর মৃত ছেলের মাংস রান্না করে তেরেউস কে খেতে দেয়। তেরেউস কোনও সন্দেহ না-করেই খায়। তারপর প্রকনি তেরেউস কে ইটিস- এর কাটা মাথা দেখায়। রুবেন্সের আঁকা Tereus Confronted with the Head of his Son Itys সন্তানের করুন পরিনতি দেখে তেরেউস মুহূর্তে উন্মাদ হয়ে ওঠে এবং হাতে কুঠার তুলে নিয়ে প্রকনি এবং ফিলোমিলা কে হত্যা করতে নিয়ে ছোটে।

প্রকনি এবং ফিলোমিলা দৌড়াতে থাকে এবং দেবতার কাছে প্রার্থনা করে। দেবতারা সবই দেখছিলেন। এখন তারা তিনজনকেই পাখিতে রূপান্তরিত করেন ... হুপি পাখি। দেবতারা তেরেউস কে হুপি পাখিতে রূপান্তরিত করেছিলেন। দেবতারা ফিলোমিলা কে নাইটেঙ্গেল এবং প্রকনি কে চাতক পাখি তে রূপান্তরিত করেছিলেন।

এই জন্য আজও নাইটেঙ্গেল এবং চাতক পাখির কন্ঠে ঝরে আর্ত করুন সুর। নাইটেঙ্গেল পাখিকে ইউরোপীয় সাহিত্যে ফিলোমিলা বলা হয়। ইংরেজ কবি ম্যাথিউ আরর্নল্ড (১৮২২-১৮৮৮) PHILOMELA নামে একটি কবিতা লিখেছেন। কবিতাটি পাঠ করা যাক। ARK! ah, the Nightingale! The tawny-throated! Hark! from that moonlit cedar what a burst! What triumph! hark--what pain! O wanderer from a Grecian shore, Still, after many years, in distant lands, Still nourishing in thy bewilder'd brain That wild, unquench'd, deep-sunken, old-world pain-- Say, will it never heal? And can this fragrant lawn With its cool trees, and night, And the sweet, tranquil Thames, And moonshine, and the dew, To thy rack'd heart and brain Afford no balm? Dost thou to-night behold Here, through the moonlight on this English grass, The unfriendly palace in the Thracian wild? Dost thou again peruse With hot cheeks and sear'd eyes The too clear web, and thy dumb Sister's shame? Dost thou once more assay Thy flight, and feel come over thee, Poor Fugitive, the feathery change Once more, and once more seem to make resound With love and hate, triumph and agony, Lone Daulis, and the high Cephissian vale? Listen, Eugenia-- How thick the bursts come crowding through the leaves! Again--thou hearest! Eternal Passion! Eternal Pain! ছবি: ইন্টারনেট।

তথ্যসূত্র: http://www.paleothea.com/Myths/Procne.html Click This Link Click This Link Click This Link http://en.wikipedia.org/wiki/Ovid Click This Link  ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।