আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গ্রিক উপকথা: দাফনি

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ
লরেল গাছ। এই গাছটির সঙ্গে এক গ্রিক পুরাণের এক বিখ্যাত জলপরীর বিস্ময়কর এক উপাখ্যান জড়িত। সেই জলপরীর নাম দাফনি।

দাফনির বাবা পিনিউস নদীর দেবতা পিনিউস । কী কারণে জলপরীটির পুরুষ-সঙ্গ কিংবা দৈহিক প্রেম ভালো লাগত না। পিনিউস নদীর গাছে-ঘেরা পাখি-ডাকা নির্জন তীরে একা একা ঘুরে বেড়াত দাফনি । একা একা কী যেন ভাবে জলপরী। সে একাকী ভাবনায় বুঝি ভারী সুখ।

দাফনি অতীব সুন্দরী বিধায় কত সুদর্শন তরুন যে ওর নিকটে প্রেম নিবেদন করত। হায়, দাফনি সব কামার্ত পুরুষদের ফিরিয়ে দিত। দাফনির পিতা দেবতা পেনেউস কন্যার এরূপ শীতলতায় হতাশ। ( frigid ইংরেজি এই বিশেষনটির একটি অর্থ ... sexually unresponsive: unable or unwilling to respond sexually, to enjoy sexual intercourse, or to experience orgasm during intercourse. কাজেই গ্রিক পুরাণের রচয়িতাগন মন মানসিকতায় তুমুল আধুনিক?) ... দাফনি ওর বাবাকে বলে, বাবা আমি আজীবন কুমারীই থাকব। কখনও বিয়ে করব না।

কি আর করা। পিতা কন্যার ইচ্ছে মেনে নেন। কিন্তু এভাবে বেশি দিন কাটল না। পুরুষের লোভার্ত দৃষ্টির সমুখে পড়ে যায় দাফনি... দাফনির বিপদের সূত্রপাত একেবারেই অন্য জায়গায় ... খুলে বলা যাক। গ্রিক উপকথার কামদেবতা এরস।

যুদ্ধের দেবতা আরেস ও সৌন্দর্যের দেবী আফ্রোদিতির সন্তান এরস । এরসের পিঠে ডানা আর হাতে তীর-ধনুক। এরসের দুই ধরনের তীর ছিল। এক ধরনের তীর ছুড়লে তীরবিদ্ধ নারীপুরুষের হৃদয়ে তীব্র প্রেমের আবেগ সৃষ্টি হত; আর অন্য ধরনের তীর ছুড়লে তীরবিদ্ধ নারীপুরুষের হৃদয় হয়ে উঠত প্রেম শূন্য । এখন প্রশ্ন ওঠে দাফনি কে কি কখনও এই প্রেমশূন্য তীরটি নিক্ষেপ করেছিল এরস? যা হোক।

রোমান উপকথায় এরস কিন্তু কিউপিড নামে পরিচিত। এরস। আরেস ও আফ্রোদিতি আবার সম্পর্কে দেবতা অ্যাপোলোর ভাই এবং বোন। কাজেই সম্পর্কে এরস দেবতা অ্যাপোলোর ভ্রাতুস্পুত্র এবং বোনের ছেলে হয় । দেবতা অ্যাপোলো।

আলো, আরোগ্য (হিলিং) ও অ্যাপোলো ধর্নুবিদ্যার দেবতা অ্যাপোলো। যা হোক। একদিন। অ্যাপোলো বনপথে দেখলেন তীরধনুক নিয়ে বসে আছেএরস । দেবতা অ্যাপোলো কি কারণে এরসকে খোঁচা মেরে বললেন, বালক।

এই কঠিন অস্ত্র নিয়ে কত দুশ্চিন্তা তোমার? এই অস্ত্র আমার কাঁধেই মানায়। কেবল আমিই পারি আমার শত্র“ কিংবা বুনো পশুর শরীরে অব্যর্থ ক্ষত সৃষ্টি করতে। আর তুমি? তুমি শরবিদ্ধ করে অন্যের হৃদয়ে প্রেমের আগুন জ্বেলে তৃপ্তি পাও। হাঃ হাঃ হাঃ। কিন্তু, যার জন্য আমি বিখ্যাত, সে অতুলনীয় দক্ষতার দারী কি তুমি করতে পার এরস? অ্যাপোলোর এরকম তিক্ত কথায় এরস ভীষণ রেগে উঠল।

মাতুলকে উচিৎ শিক্ষা দেওয়ার কথা ভাবল এরস। কিন্তু, কি করা যায়। ঠিক তখনই জলপরী দাফনির কথা মনে পড়ে গেল এরসের ... যথাযথ সময়ের অপেক্ষায় রইল এরস। একদিন। দেবতা অ্যাপোলো বনপথেহেঁটে যাচ্ছেন।

সহসা দাফনি কে দেখতে পেলেন। হুমম, জলপরীটি তো ভারি সুন্দরী। দেবতা ভাবলেন। তীর-ধনুক হাতে আড়ালেই ওৎ পেতে ছিল এরস । সে মাতুলের দিকে প্রেমশর ছুঁড়ে মারল।

তারপর মুচকি হাসল। দেবতা অ্যাপোলো মুহূর্তেই দাফনির প্রেমে পড়ে গেলেন। কি এক ঘোরে দেবতা সুন্দরী জলপরীর দিকে এগিয়ে যেতে লাগল। দাফনি মেয়ে বলেই যা বোঝার বুঝল। ও নিজেকে বাঁচাতে দৌড়তে শুরু করল।

শোন, শোন। তোমার সঙ্গে আমার কথা আছে। পিছন থেকে দেবতা অ্যাপোলো বললেন। অ্যাপোলোর কথায় কান না-দিয়ে বনের ভিতর দিয়ে দৌড়াতে থাকে দাফনি । এই মেয়ে শোন, আমি স্বয়ং দেবতা জিউসের পুত্র।

এই কথায় কোনও লাভ হল না। একজন ইউরোপীয় চিত্রকরের তুলিতে দাফনির দৌড়নো দৃশ্যটা এমন-দাফনি বনপথে উর্ধ্বশ্বাসে দৌড়াচ্ছে। দেবতা অ্যাপোলো ওর পিছন পিছন যাচ্ছে। কাছেই পিনিউস নদী। ওই নদীর বুকে কোনওমতে ঝাঁপিয়ে পড়লেই রক্ষা।

বাবা ওকে আশ্রয় দেবে। দাফনি দৌড়াতে থাকে। দেবতা অ্যাপোলো এবার হুমকি দিলেন। তাতেও কোনও লাভ হল না। অ্যাপোলো এবার বিলাপ করে বললেন, নিরাময় আমার আবিস্কার।

ভেষজের সমস্ত লুক্কায়িত শক্তি আমার অধীন। আর আমি এখন বিশ্বের সমস্ত নিরাময়কারীকে ডাকছি। হায়, প্রেমের যন্ত্রণা ভেষজে নিরাময় হয় না! যে ভেষজে মানুষের উপকার হয়, সে ভেষজ তার প্রভূকে নিরাময় করতে পারে না! যাক। দাফনি দৌড়াতেই থাকে। তবে অ্যাপোলোর গতি ঈশ্বরতুল্য ।

অ্যাপোলো জানতেন তিনি ঠিকই জলপরীকে ধরে ফেলবেন। ... ততক্ষণে অবশ্য দাফনি পিনিউস নদীর কাছে পৌঁছে গেছে। নদীর কিনারে পৌঁছে আতঙ্কিত মেয়েটি চিৎকার করে বাবাকে বলল, বাবা! বাবা! তুমি আমার রূপ নিয়ে নাও। বলতেই দাফনির হাত দুটি বাদামী আর রুক্ষ হয়ে উঠল। আর কী আশ্চর্য! ... পা দুটি হয়ে গেল শিকড়।

চোখের নিমিষে চুলগুলি হয়ে গেল পাতা। দেখতে দেখতে দাফনি সুন্দর একটি লরেল গাছ হয়ে গেল। দেবতা অ্যাপোলো আক্ষেপ করে বলল, আমি বনপরীকে না পেলেও লরেল গাছটিকে তো পেলাম। এই ঘটনার পর থেকে লরেল পাতা সেনাপতিদের সম্মানের প্রতীক হবে ও পবিত্র বিবেচিত হয়ে উপাসনালয়ে থাকবে। একজন ইউরোপীয় চিত্রকরের তুলিতে দাফনির লরেল গাছ হয়ে যাওয়া লরেল মালা।

উৎস: প্রতীচ্য পুরাণ: ফরহাদ খান। এবং Hendricks, Rhoda A. Classical Gods and Heroes. New York: Morrow Quill Paperbacks, 1974. ছবি: ইন্টারনেট
 


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।